রহস্যময় জীবন - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - অনু গল্প


#রহস্যময়_জীবন 
#অনু_গল্প 
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া 



মধ্যরাত! পুরো ঘরে অন্ধকার বিরাজ করছে। বাইরে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। আকাশে হালকা পাতলা মেঘের গর্জনও শোনা যাচ্ছে। জানালা খোলা থাকার কারণে বাতাসের দাপটে বারবার তা খুলছে আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শাহেদ ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে পাশের লাইটের সুইচে একবার চাপ দিলো।কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই লাইট অন হলো না। অগত্যা শাহেদ ফোনের ফ্লাশ অন করে। ফোনের ফ্লাশ অন করতেই সে তার বিছানার দিকে খেয়াল করলো। আদৃতা কোথায় গেলো? মনে মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে শাহেদ। হয়তো বাথরুমে গেছে! আদৃতা শাহেদের অর্ধাঙ্গিনী। সে থেকে উঠে গিয়ে জানালা বন্ধ করে আবার বিছানায় গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন আদৃতাকে ফিরতে না দেখে তখন শাহেদ বাথরুমে গিয়ে দেখে আসে। কিন্তু আদৃতা বাথরুমেও নেই। এতরাতে মেয়েটা কোথায় গেলো! তার উপর ঘরের দরজা তো ভেতর থেকেই বন্ধ করা আছে। শাহেদ বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছে। এমনিতেই দিনকাল ভালো না। ইদানীং এলাকায় অদ্ভুতভাবে লোকজন মারা যাচ্ছে। কেউ মারা যাচ্ছে ভয়ে স্ট্রোক করে আবার কেউ রক্তশূন্য হয়ে মারা যাচ্ছে। আর সবার লাশ নিজের রুমে অথবা নিজের বাড়ির আশেপাশ থেকে পাওয়া গিয়েছে। এলাকার অনেকের ধারণা এটা কোন অলৌকিক শক্তির কাজ কিংবা শয়তানের নজর পড়েছে। কারণ স্বাভাবিক ভাবে কেউ মারা গেলে কি তার লাশ উধাও হয়? কিংবা দিনের বেলা কাউকে জানাজা দিতে গেলে মৃত ব্যক্তির শরীর আগুনে জ্বলে ওঠে! 
তবুও শাহেদ এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করে না। সে যাইহোক এখন মেইন কথা হলো আদৃতা কোথায় গেলো! শাহেদ আদৃতার নম্বরে ডায়াল করতেই বালিশের পাশ থেকে ফোনটা বেজে ওঠে। শাহেদের মনের ভেতরটা অজানা আশঙ্কায় কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। সে নিজের রুম থেকে বের হয়ে পুরো বাড়ি খোঁজে কিন্তু তাকে পায়না। 

আকাশে তীব্র মেঘের গর্জনের সাথে ইতোমধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আদৃতার নিথর শরীরটা পড়ে আছে মাটিতে। বিদ্যুৎ চকমকানোর আলোয় আদৃতার ফ্যাকাসে মুখটা কেউ নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তার লম্বা চুলগুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। পাশে বসে থাকা লোকটা খুব যত্ন করে চুলগুলো হাতের মুঠোয় ধরে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই চুলগুলো কেন জানি খুব করে আর্কষণ করছে তাকে। অন্ধকারে লোকটার চেহারা খুব করে দেখা যাচ্ছে না। তবে বিদ্যুৎ চকমকানোর আলোতে ঝাপসা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। চোখদুটো রক্তের মতো লাল তার। সমস্ত মুখমণ্ডল ফ্যাকাসে। দেখে মনে হয় কোন মৃত মানুষ কবর থেকে উঠে এসেছে। হলদেটে তার সমস্ত দাঁত আর মুখের দুপাশ থেকে বেরিয়ে এসেছে ভয়ংকর সুঁচালো দুটি দাঁত। পড়নে তার কালো আলখাল্লা টাইপের পোশাক। লোকটা এখনো অদৃতার দিকে তাকিয়েই আছে। হঠাৎ লোকটার চোখের সামনে কিছু দৃশ্যপট ভেসে ওঠে। 
আদৃতা খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা গিয়ে তাকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে। আদৃতা মুচকি হেসে তাকে বলে,
" কি মশাই! আকাশে মেঘ দেখতেই রোমান্স শুরু?" লোকটা আদৃতার কানে ফিসফিসিয়ে বলে, 
"বউয়ের সাথে রোমান্স করতে বারণ নাকি?"
আদৃতা একটু দুষ্টমি করে বলে,
"আমি ঘুমাতে গেলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই।"
লোকটা আদৃতার কথায় কর্ণপাত না করে উল্টো তার ঘাড়ে নাক গুঁজে দুষ্টমি করতে শুরু করে। আদৃতা হাসতে হাসতে বলে,
" ছাড়ো বলছি ভালো হবে না! "
হটাৎ ঘড়ির শব্দ বেজে ওঠে। ঠিক রাত বারোটা বেজেছে। লোকটা হুট করে আদৃতার ঘাড়ে শক্ত করে কামড় বসায়। আদৃতা ব্যথায় চিৎকার করে বলে,
" শাহেদ কি করছো! আমার লাগছে খুব। "
আদৃতার কথা শেষ হতেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।নিজের শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে জানালার বাইরে পড়ে যায় সে।তিন তলা থেকে পড়ে গিয়ে আদৃতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। 

আলখাল্লা পড়া লোকটা আদৃতার লাশটা বুকে ঝাপটে ধরে জোরে চিৎকার করে ওঠে। তার চিৎকারে যেন প্রকৃতিও ভয় পেয়েছে! হটাৎ করে বৃষ্টি থেকে গেছে। ভোরের আলো ফুটেছে প্রায়। শাহেদ তার স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসে। আদৃতাকে বুকে জড়িয়ে বসে আছে। এসবের কি খুব দরকার ছিল? এই অভিশপ্ত জীবন কেনই বা তার হলো! সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না এতদিন এতগুলো মানুষকে সে নিজেই খুন করেছে! 
হ্যাঁ আলখাল্লা পড়া লোকটা আর কেউ নয়, স্বয়ং শাহেদ নিজেই! সে এক অভিশপ্ত পিশাচ। সে নিজেই জানতো না যে সে একজন পিশাচ। নিজের অজান্তেই সবাইকে খুন করেছে এতদিন। কিন্তু কীভাবে তার ভিতরে এই পিচাশ সত্তা জাগ্রত হলো?আর কেনই বা তার কিছু মনে থাকে না! এই প্রশ্নগুলো নিয়েই কি আজীবন অভিশপ্ত জীবন কাটাতে হবে শাহেদকে!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন