!!১২৪!!
ছোটবেলা থেকে একাই বড় হয়েছি আমি। আমার কোনো ভাই-বোন ছিলোনা। কানাডার প্রতিদিনকার আর্কটিক বরফাচ্ছন্নের শৈত্যপ্রবাহে আমি আনন্দ খুঁজে পেতাম। প্রজাপতি থেকে শুরু করে চিল প্রতিটা প্রাণীকে জানার প্রবল আগ্রহ ছিলো আমার। জীবন মানেই আমার কাছে রঙিন প্রজাপতি। বাবা-মায়ের আদরের ছেলে। ছয় বছর পর্যন্ত আমি ছিলাম এক হ্যাপি চাইল্ড । যে সব কিছুতে আনন্দ খুঁজে পায়। সবার সাথে মিশে। হাসি-খুশি থাকে। কারণ তখনো পর্যন্ত আমি সুন্দর একটা পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠছিলাম। বাবা-মায়ের মাঝে কখনো আমি ঝগড়া দেখিনি। আমার বাবা ডক্টর ফারহান। তাকে খুব ভালোবাসতাম আমি। আমার দুনিয়া ছিলো আমার বাবা। বাবার পিঠে চড়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলতাম। একসময় আমার মা প্রেগন্যান্ট হন। আমি শুনলাম আমার একটা বোন হবে। ছোট আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম সেদিন। বোন আসবে, বোন আসবে করে মাতিয়ে রাখতাম সারাবাড়ি। তবে ভালো সময়গুলো যে জলদি ফুরিয়ে যায়! বাবা-মায়ের মাঝে হঠাৎ প্রচুর ঝগড়া শুরু হয়। আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে শুরু করে সবকিছু। বাবা আমাকে আর আগের মতন ভালোবাসেন না। মা লুকিয়ে কাঁদতেন। আমি দরজার পিছনে লুকিয়ে থাকতাম যখন বাবা-মা ঝগড়া করতো। বাবা জিনিসপত্র ভাংচুর করতেন। উচ্চ গলায় মাকে বকতেন, মা'রতেন। আমার, আমার খুব কষ্ট হতো তখন। বাহিরের দুনিয়ার সামনে তারা আদর্শ স্বামী-স্ত্রী অথচ বদ্ধ কামড়ায় তারা বিচ্ছিন্ন দুই মানব মানবী।
এতটুকু পড়ে মাহার মনে হচ্ছে এটা তো সে আগেও কোথাও শুনেছে। কিংবা পড়েছে। দেজা ভ্যু কি? পাতা উল্টায় মাহা।
আমার বাবার এক কানাডিয়ান নার্সের সাথে খারাপ সম্পর্ক ছিলো। মা সেটা মেনে নিতে পারেন নি। আমি আর মা বাইরে বেরিয়েছিলাম সেদিন। বাসায় ফিরে খুবই অন্তরঙ্গ অবস্থায় দুজন কে হাতেনাতে ধরেন মা। বাবা-মায়ের ঝগড়া শুরু হয়। চিৎকার, চেঁচামেচি, ভাং'চুর। একসময় বাবা আমার মাকে ধাক্কা দেন। মা ছিটকে নিচে পড়ে চিৎকার করে উঠেন। পুরো ফ্লোর র'ক্তে ভরে গিয়েছিলো। আমার আমার মা যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছিলেন। আমি পর্দার আড়ালে কেবল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম সেই র'ক্তের পানে। আমার ছোট বোনটা র'ক্তের পিন্ড হয়ে বের হয়ে আসছে। বাবা ঘাবড়ে গেলেন। অনেকক্ষণ বাদে আমার মাকে হসপিটালে নেওয়া হলো। আমার মা সুস্থ হলেন। বাড়ি ফিরলেন। একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেলেন তিনি। যেনো কোনো জীবন্ত লা'শ। আমার চোখের সামনে আমার পরিবার আস্তে আস্তে ধ্বং'স হতে দেখেছি আমি। বাবা দিনের পর দিন বাড়ি ফিরতেন না। মা ঘরে দরজা দিয়ে বসে থাকতেন। একলা আমার সময় কাটতো আকাশ পানে তাকিয়ে। প্রাণবন্ত সেই আমি যেন কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রাণহীন হয়ে গেলাম। আমার দুইখালা কে কানাডা নিয়ে আমার মা ই বিয়ে দিয়েছিলেন। তারা আসতো মাঝেমধ্যে। তখন বাবা-মা খুবই স্বাভাবিক আচরণই করতো। আমার বাবা আমার মাকে ভ'য় দেখিয়েছিলেন। কানাডিয়ান নার্স বিবাহিত ছিলেন। উনার হাসবেন্ড পুলিশে চাকরি করতেন। তাদের অনৈতিক সম্পর্ক জানাজানি হলে ঝামেলায় পড়তে হতো বাবাকে। সেকারণে আমাকে মে'রে ফেলার ভয় দেখিয়ে আমার মাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। দিনদিন বেড়েই চলেছিলো অ'ত্যা'চার। আমার খুব ইচ্ছে করতো বাবাকে হ'ত্যা করি। চারটা বছরে প্রাণবন্ত আমি প্রাণহীন সত্তায় পরিণত হয়েছিলাম। দুয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম বাবাকে হ'ত্যা করার। আমার বয়স তখন সবে দশ। একদিন চা'কু দিয়ে পিছনে আ'ঘা'ত করতে গেলেই বাবা আমাকে ধরে ফেলেন। খুব মে'রেছিলেন সেদিন। কানাডায় উনার একটা রেপুটেশন ছিলো। চাইলেই আমাকে আর আমার মাকে কিছু করতে পারবেন না তিনি। নার্সের সাথে মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের নিয়ে বাংলাদেশ ফিরবেন তারপর হ'ত্যা করবেন। আমার মা তখন পাথর। কোনো কথাই তিনি বলেন না। এক অন্ধকার মানবী তিনি। আমি বাবার পরিকল্পনা ধরতে পেরে মাকে বারবার বললাম বাংলাদেশ যাবো না। বাংলাদেশে নিয়ে বাবা আমাদের হ'ত্যা করবেন কিংবা গু'ম করবেন । মা আমার কথার কোনো জবাবই দিলেন না। বাংলাদেশে আসার সময় ঘনিয়ে আসছিলো আর সাথে আমার মৃ'ত্যু শঙ্কা। কেউ আমার কথা শুনতো না। কেউ আমাকে বুঝার চেষ্টা করতো না। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম আমি। কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন আসতো আমার। কানাডা থেকে বাংলাদেশ ফিরার পথে আমাদের প্লেন এক্সিডেন্ট ঘটে। সাগরে আপতিত হয় প্লেন। আমি যখন চোখ খুলি তখন তীব্র অন্ধকার চারপাশে।
"Sightings of the Wendigo
Eating the flesh of the enemy's body"
চারপাশে ঘনজঙ্গল। হালকা চাঁদের আলো। আমি মাথা চেপে ধরে উঠে বসি। মাথাটা তখন ভিষণ ভারী লাগছিলো। পেটে খুব ক্ষুধা। কতক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফিরেছে আমি জানিনা। ক্ষুধায় ব্যথায় ক্লান্ত আমি। শরীরে কোনো শক্তিই পাচ্ছিলাম না। উঠে বসার শক্তিও আমার নেই। আবার জ্ঞান হারালাম। এরপর যখন চোখ খুললাম তখন সময়টা রাতের মধ্যভাগ। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। চারদিকে আলোকিত। কত রকমের গাছপালা। আমি ক্ষুধায় কাতরাচ্ছি। হঠাৎ কারো গোঙানির আওয়াজে সেদিকে লক্ষ্য করে দেখি বাবা গোঙাচ্ছেন। র'ক্তে ভরা চারপাশ। আমি বহু কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো আমার। দাঁড়ানোর সাথে সাথেই বুঝলাম আমাকে কারা যেন ঘিরে ধরেছে। কাকের মতো সরু মুখ, মাথায় গজানো অনেকগুলো হরিণের ন্যায় শিং। অদ্ভুত মানুষের আকৃতি বিশিষ্ট প্রাণী। নখগুলো বড় বড়। নখগুলো লাল, ঠোঁটও লাল। আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে রইলো তারা। আমি ভয়ে মিইয়ে গেলাম। তারা আমার চারপাশে ঘুরতে লাগলো। একেকটা ঘূর্ণনে আমি হিংস্র হয়ে উঠছিলাম। বাবার প্রতি রাগ, জিদটা বেড়ে যাচ্ছিলো বহুগুণে। আমার পিঠে হাত রাখলো প্রাণীটা। শীতল হাত। বাবার প্রতি রাগটা আরো বহুগুণে বেড়ে গেলো। চোখ জ্বলে উঠলো। পাশে থাকা পাথর নিয়ে থেঁ'ত'লে দিলাম বাবার মুখ। ক্ষুধার্ত আমি ভক্ষণ করলাম বাবার মাং'স। লাল টকটকে মাং'স। ছি'ন্ন বি'চ্ছি'ন্ন করে দিয়েছিলাম বাবার দেহ। কতরাত সেখানে ছিলাম মনে নেই। তারাও আসতো প্রতিরাতে। আমার সাথে ভক্ষণ করতো বাবার দেহ। বাবার হাড়গোড় মাটিতে পুঁতে রাখলাম। শরীরে আমার পৈশাচিক শক্তি। এর কয়েকঘন্টা বাদেই আমাকে উদ্ধার করা হয়। মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমার স্থান হলো মেঝো খালার বাসায়। বাবার সব সম্পত্তি তিনি নার্সকে দিয়ে দিয়েছিলেন। আমার জন্য কিছুই ছিলোনা। প্রতিদিন রাতে তারা আসতো আমার স্বপ্নে। অনেক চিৎকার করতাম আমি। মানুষের মাং'স আমাকে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে। র'ক্ত, মাং'স। আমার সব চাই। সব। এত স্বাদ! জিহ্বায় জল আনা স্বাদ। উফ্! আমার চাই। মাং'স আমার চাই। খুব চিৎকার করতাম আমি। সময় পেরিয়ে যাচ্ছিলো। আর আমিও উন্মাদ হয়ে যাচ্ছিলাম।
"Discover WCS and become an active member"
তখনই আমি 'World Cannibal Society' এর সন্ধান পেলাম। বড়ই অদ্ভুতভাবে সে সন্ধান পেয়েছি। সেদিন রাত একটার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছি। উদ্দেশ্য রাস্তায় কাউকে পেলে খু'ন করে তার মাং'স ভক্ষণ করবো। জন মানব শূন্য রাস্তা। এক মাতাল লোক হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। আমি তাকে অনুসরণ করছি। আমার মাং'স দরকার। বড় পাথরটা নিয়েছি আঘাত করবো তার আগেই মাঝ বয়সী এক লোক তাকে আঘাত করে। মাতাল ব্যাক্তিটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। লোকটা তাকে পাশে ঝোপঝাড়ে টেনে নেয়। আমিও তার পিছু নেই। মাতাল লোকটাকে কে'টে মাং'স গ্রহণ করছে সে। আমিও তীব্র নেশায় এগিয়ে গেলাম তার কাছে। মাঝ বয়সী ব্যাক্তি চমকে উঠেন। আমি আশ্বাস দেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমিও মাং'স গ্রহণ করতে চাই। দুজনে মিলে মাং'স ভক্ষণ করি। তার নাম শেলটন। শেলটন আমাকে WCS এর সাথে পরিচিত করায়। শেলটন ফিজির নাগরিক। তার পূর্ব পুরুষ মানুষের মাং'স গ্রহণ করতো। জঙ্গলের মাঝে বিশাল বাড়ি। সেখানে আমার মতো কতশত মানুষ। মাঝরাত্রি হাতে মাং'স সাথে হু'ই'স্কি। সাথে আদিবাসী নৃত্য। সবচেয়ে ছোট সদস্য আমি।
যত আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিলাম। ততই সেই বিস্তৃত দুনিয়ায় প্রবেশ করছিলাম। আমার প্রয়োজন টাকা। অনেক অনেক টাকা। আমরা রাতে শিকারে বের হতাম। মানব শরীরের মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড অতিশয় সুস্বাদু অংশ। আমরা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ চোখ, কিডনি বিক্রি করে দিতাম। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মানব সাপ্লাই করাও আমাদের কাজ। এর মাঝে আমি ডাক্তারি পেশা বেছে নিলাম। ছোটবেলা থেকেই আমি তুখোড় মেধাবী। আমার কেবল নেশা মানুষ খু'ন, ভক্ষণ আর সাপ্লাই। মধ্যমণি হয়ে উঠছিলাম আমি। অন্ধকার রাজ্যের রাজা।
"The story of becoming the king of the dark kingdom
Shadow man, the name of a terror"
আমার সাথে যোগ দিলো নিভা। আমার খালাতো বোন। রবার্ট, ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলের নাগরিক। আমি মানুষ সাপ্লাই করতাম তাকে। সে একজন বিজ্ঞানী। আমার পেশায় অনেক টাকা। তাই সেও যোগ দিলো আমার কাজে। মুইংচিন WCS এর পুরাতন সদস্য। চীনের নাগরিক, শান ধর্মাবলম্বী। আমি যখন মানুষ খু'নে নিখুঁত আর পারদর্শী হয়ে উঠলাম। আমার হিংস্রতা, ক্ষিপ্রতায় কেঁপে উঠতো সকলে। সার্জিক্যাল ব্লেড দিয়ে এলোমেলো মানব দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করায় এক অন্য রকম আনন্দ। 'will you drink juice' এটা আমার মানুষ মা'রা'র কোড। ছি'ন্ন পা রেখে যাওয়ায় বহুত ভালো লাগতো আমার। Everyone should know dark man, shadow man is a terror । অল্প বয়স থেকেই মুইংচিন আমার সেক্রেটারি। ডেভিড জাম্বিয়ার নাগরিক। আমার এক কথায় সে জীবন দিতেও রাজি। মেরি কে রাস্তায় পেয়েছিলাম আমি। প্রথম কয়েকদিন জোর করে মানুষের মাং'স দেওয়া হতো। পরে নিজেই পাগল হয়ে যেতো। কাজের বিনিময়ে মাং'স পেতো। লুবান, আমার বন্ধু। আমাদের সোসাইটির বাংলোতে তার সাথে দেখা হয়। নাহারসহ আরো অনেক অনেক সদস্য। কম বয়সী ছিন্নমূল তরুণ তরুণীদের ধরে আনতাম আমরা। প্রথম কয়েকদিন মানুষের মাং'স তাদের জোর করে দেওয়া হতো। পরে তারা নিজেরাই নেশাক্ত হয়ে উঠতো। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই আমাদের WCS কে বিস্তৃত করা। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। এডওয়ার্ড ছিলেন আমার মেঝো খালার হাসবেন্ড। সেই আমার বাবার মতো খালাকে ধোঁকা দিয়েছিলেন তিনি। তাকেও আমি নিজ হাতে হত্যা করেছি। এমিলিন খালার ছেলে ইফাতটা বড্ড জ্বালাতন শুরু করেছিলো। তাই ওকেও হ'ত্যা করি। অবশ্য খু'ন করারও কারণ ছিলো। ইফাতের রক্তে এক অবাক করা পদার্থ ছিলো। আমার এক বিজ্ঞানী বন্ধু দশ কোটির বদলে ওকে চেয়ে বসে। দশ কোটির বদলে আমিও তার দেহ বিক্রি করে দেই। এমিলিন খালা অবশ্য তখন থেকেই আমাদের পছন্দ করেন না। তবুও তিনি আমাদের সাথে রয়েছেন। রবার্ট, নিভা বিয়ে করে নিলো। আমারও MBBS, fcps ডিগ্রি অর্জন হয়েছে। আমি তখন কোটি কোটি টাকার মালিক। সব ভালোই চলছিলো। এর মাঝে মেঝো খালা মা'রা গেলেন। কোনো ভাবে প্রশাসন আমাদের কিছুটা খবর পেয়ে গেলো। এক ঘটনার মাধ্যমে। শেলটন কে ধরে নিয়ে গেলো। আমাদের এত বড় সোসাইটির মানুষজন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। শেলটন আমাদের সম্পর্কে কিছু বলেনি। নিজেকে দোষী করে নিয়েছিলো। ফাঁ'সি হলো তার। খুবই কষ্ট পেলাম আমরা। সিদ্ধান্ত নিলাম বাংলাদেশে আসবো। যোগাযোগ করলাম এদেশের WCS এর সদস্যের সঙ্গে। ততদিনে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আমার অনেক নাম ডাক। বাংলাদেশের সদস্য প্রধান আলবার্ট। ডেভিড কে পাঠালাম বাংলাদেশে। তার কিছুদিন পর আমরাও পাড়ি জমালাম বাংলাদেশ।
মাহার হাত পা কাঁপছে। বাকরুদ্ধ হয়ে বাকি লেখায় মনোযোগী হয় সে।
.
.
.
চলবে.............................