হাওয়াই মিঠাই |
সরফরাজ হোসাইন এবং জাহানারা হোসাইন ড্রয়িং রুমে বসে আছেন। সরফরাজ সাহেবের হাতে রাফির বায়োডাটা। সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেটা দেখছেন। সামনে বসে আছেন সালওয়া, দিয়া ও তাহিয়া। সরফরাজ সাহেব বললেন,
"দেখুন আপা, আমার ছেলে মাসখানেক আগে এই প্রোপোজাল নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছিল। আমি তখনই তাকে বলে দিয়েছিলাম আমি এখানে আমার মেয়ে দেব না। সে কথা কি আপনাদেরকে জানানো হয়নি?"
সালওয়া বললেন,
"জি ভাই জানানো হয়েছে। তবু আমি আপনাদের সাথে সরাসরি কথা বলার জন্য এসেছি। আমার দিক থেকে যতটা চেষ্টা করা যায়, আমি করতে চাইছি।"
জাহানারা বললেন,
"কিন্তু আপা, আপনি নিজেই ভেবে দেখুন না মাস্টার্সে পড়ুয়া কোনো মেয়েকে কি ইন্টার পাশ ছেলের কাছে কোনো বাবা-মা বিয়ে দেয়? আপনার মেয়েকে দেবেন?"
সালওয়া বললেন,
"আপনাদের যুক্তিগুলো ঠিক আছে। আমিও হয়তো নিজের মেয়ের জন্য এমন প্রপোজাল পেলে ফিরিয়ে দেব। তবে পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করার মতো হয়, তবে আমি বিবেচনা করব। রাফি-মীরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। ভালোবাসার চেয়ে জরুরি কিছু কি আসলে এই পৃথিবীতে আছে? ছেলে-মেয়ে দুটোর কথা ভেবে আপনারা একটু দয়া করুন।"
"বায়োডাটায় তো দেখছি আপনার ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিল। সিক্সথ সেমিস্টার পর্যন্ত পড়ে আর পড়লো না কেন?"
"সিক্সথ সেমিস্টারে পড়ার সময় ওর বাবা মারা যায়। তারপর হঠাৎই পুরো ফ্যামিলির উপর দিয়ে ঝর বয়ে গেল। ও ইচ্ছে করে পড়াশোনা ছাড়েনি, বাধ্য হয়েছে। সার্টিফিকেট নেই বলে ওর মধ্যে খুব জ্ঞানের অভাব আছে তাও নয়। নিজের ছেলে বলে বাড়িয়ে বলছি না। ওর আচার-ব্যবহার, বিচক্ষণতা কোনো শিক্ষিত ব্যক্তির চেয়ে কম নয়।"
তাহিয়া এবাড়িতে সবার খুব আদরের। তাই এতক্ষণ এই বিষয়ে কথা বলতে চায়নি। এবার সাহস করে বলেই ফেলল,
"জি আংকেল। আন্টি এই কথাটা ঠিক বলেছে। আমি তো রাফি ভাইয়াকে দেখে অবাক। যতক্ষণ আপনি রাফি ভাইয়ার সামনে থাকবেন, কেমন একটা মোহগ্রস্ত হয়ে যাবেন। অনেক কঠিন হয়ে তার সামনে গেলেও আপনি নরম হয়ে যেতে বাধ্য হবেন। হি ইজ আ পিওর জেন্টলম্যান।"
সরফরাজ সাহেব তাহিয়াকে কিছু বললেন না। সালওয়াকে বললেন,
"আপা আপনি নিজে যখন কষ্ট করে এসেছেন আপনার প্রতি সম্মান দেখিয়েই আপনাকে আমি কিছু কথা খুলে বলি। নাহলে হয়তো আপনি বুঝবেন না। আপনার ছেলে যখন আমার মেয়ের সাথে সম্পর্ক ভাঙে, আমার মেয়ে তখন কলেজে পড়তো। যে মেয়ে কোনোদিন কারো মুখের উপর কথা বলেনি, যে মেয়েকে নিয়ে বাসার কারো কোনো অভিযোগ ছিল না, যে বংশের সবচেয়ে লক্ষী মেয়ে ছিল, সবার অনুগত ছিল; সেই মেয়েটাই সবচেয়ে অবাধ্য আর রগচটা হয়ে গেল। কথায় কথায় সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো, ভাঙচুর করতো, রাগ দেখাতো, কারো কোনো কথা শুনতো না, ভয় বলতে কিছু ওর মধ্যে আর ছিল না। কাউকেই পরোয়া করতো না। ওর যে রাফি নামের কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল এবং সেই ছেলে ওকে ছেড়ে চলে গেছে; ওর পাগলামির বদৌলতে এসব কথা জানতে কারো বাকী ছিল না। এই একই কাজ যদি আমার বড় মেয়ে বা ছোট মেয়ে করতো তাহলে আমি কিন্তু সহ্য করতাম না। কিন্তু মীরার বেলায় করেছিলাম। কেন জানেন? কারণটা হচ্ছে, আমার অন্য দুই মেয়ে ছোটবেলা থেকেই কিছুটা অবাধ্য এবং সাহসী। তারা এমন করলে স্বভাবগতভাবেই করতো। আর মীরা করেছে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে। কতটা কষ্ট পেলে মানুষ এতো বদলে যেতে পারে, বেপরোয়া হয়ে যেতে পারে ভাবুন একবার। নিজের চোখে মেয়ের কষ্ট দেখেছি, কিছু করতে পারিনি। আপনার ছেলে নিশ্চয়ই জানতো যে মীরা কতোটা অবুঝ ছিল। যে ছেলে ওইটুকু একটা অবুঝ মেয়েকে এতোটা কষ্ট দিতে পারে সে সংসার জীবনে কী করবে? আমার মেয়েকে কীভাবে ভালো রাখবে সে? সে যদি এতই ভালবেসে থাকে যে ৯ বছর পরেও বিয়ে করতে চায়, তাহলে তখন ছেড়ে গিয়েছিল কেন? সম্পর্কই বা করলো কেন আর ছাড়লোই বা কেন? আমার মেয়ে কি খেলনা?"
সালওয়া অপরাধীর মত করে বললেন,
"ভাই আপনি অনুমতি দিলে আমি এই ব্যাপারটা ক্লিয়ার করতে চাই।"
"জি বলেন, জানতে চাই বলেই তো প্রশ্ন করলাম।"
সালওয়া রাফি-মীরার প্রেম হওয়া থেকে শুরু করলেন। মীরার ব্যাপারে জানতে পারা, মীরার ছবি দেখা, তাপর তার টার্কি যাওয়া, রাফির বাবা মারা যাওয়া, তার এক্সিডেন্টের কারণে যোগাযোগ করতে না পারা, টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ছোট ভাই-বোন, বাড়ি-সংসার সবকিছু রাফির একা হাতে সামলানো, কম্পিউটারের দোকানে কর্মচারীর চাকরি নেয়া পর্যন্ত সব বললেন। এসব শুনে সবার কথা বন্ধ হয়ে গেল। ঘরময় পিনপতন নীরবতা। কিছুক্ষণ থেমে সালওয়া আবার বললেন,
"তখন রাফি ভবিষ্যতের কথা ভাবতে শুরু করলো। ওর মনে হতে লাগলো ও মীরার যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে না কখনোই। নিজের একটা ব্যবসা হবে এমনটাও আসলে ভাবতে পারেনি। একদিকে ভাইবোনকে মানুষ করার চিন্তা, আরেকদিকে আমার চিন্তা। আমার খোঁজ আদৌ কখনো পাবে কিনা তাও জানতো না ছেলেটা। সব মিলিয়ে খুব ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিলো। এমন একটা অনিশ্চিত জীবনে আপনার মেয়েকে সঙ্গী করতে চায়নি। ভালোবাসতো বলেই ওর ভাল চেয়েছিল। ভেবেছিল সবার মতোই মীরাও একসময় ওকে ভুলে যাবে। মীরা বারবার জানতে চেয়েছিল কেন রাফি সম্পর্ক রাখতে চাচ্ছে না। রাফি ইচ্ছে করেই বলেনি। বললে হয়তো সেই মূহুর্তে মীরা বুঝতো না। মীরা ওকে এতোই ভালোবাসতো যে ওই অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গী হতেও দ্বিধাবোধ করতো না। রাফি তো এখনো নিজেকে মীরার যোগ্য বলে মনে করেনা। এই অযোগ্যতা নিয়ে আপনার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর সাহস ওর নেই। তাই মীরা ওকে খুঁজে বের করার পরেও রাফি তাকে গ্রহণ করেনি। অথচ ভেতরে ভেতরে এখনো মীরাকেই পুষে রেখেছে মনে।
সরফরাজ সাহেব এবার বললেন,
"এসব জানতাম না।"
সালওয়া আর কিছু বললেন না৷ সরফরাজ সাহেব এবার বললেন,
"ঠিকাছে আপা আমাকে একটু সময় দিন। ভেবে দেখি। আসলে ভালোবাসা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনই শুধু ভালোবাসা থাকলেই সংসার সুখের হয় না। আমার সিদ্ধান্ত যাই হোক, আমি আপনাকে জানাব৷"
মীরা যখন অফিস থেকে ফিরল, ইরা দরজা খুলল। সে বাড়িরে ঢুকতে না ঢুকতেই ইরা চোখ নাচিয়ে বলল,
"আপু রাফি ভাইয়ার আম্মু এসেছিল।"
মীরা চমকে উঠে বলল,
"বলিস কী? কখন? কেন?"
"বিকেলে, বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।"
মীরা ইরার কাঁধ ধরে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,
"বাবা কী বলেছেন?"
"আমি বাসায় ছিলাম না। তারা চলে যাচ্ছেন অমন সময় ফিরেছি। কি সুন্দর দেখতে রাফি ভাইয়ার আম্মু ইশ!"
"রাফি এসেছিল?"
"না। তাহিয়া আপু ওনাদেরকে নিয়ে এসেছিল। আপু তোমার ঘরেই আছে৷ যাও আপুর কাছে সব জানতে পারবে।"
মীরা একরকম দৌড়ে গেল। ঘরে ঢুকে দরজা আটকে তাহিয়াকে বলল,
"কিরে রাফির আম্মু এসেছিল আমাকে ফোনে জানালি না কেন?"
তাহিয়া হেসে বলল,
"রাস্তাঘাটে তোমাকে টেনশন দিতে চাইনি। বাড়ি ফিরেছো, এখন সব বলি।"
তাহিয়া একে একে সব বলতে লাগলো।
একদিন বিকেলবেলা রাফি বাসায় যাবে বলে দোকান থেকে বের হতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই বয়স্ক এক ভদ্রলোক দোকানে এলেন। রাফি তাকে দেখে বলল,
"আসসালামু ওয়ালাইকুম। আংকেল কিছু খুঁজছেন?"
ভদ্রলোক বললেন,
"আপনি কি চলে যাচ্ছেন?"
"জি আমি একটু বের হচ্ছিলাম। সমস্যা নেই আপনি বলুন কী দরকার?"
"আমার দরকারটা আপনার সাথে। কিছুক্ষণ সময় নেব।"
রাফি খানিকটা অবাক হলো। ভদ্রলোককে চিনতে পারছে না সে। বলল,
"আচ্ছা তাহলে ভেতরে এসে বসুন।"
"দরকারটা ব্যক্তিগত এবং জরুরি। বাইরে কোথাও বসতে চাচ্ছি যদি আপনার আপত্তি না থাকে।"
রাফি হেসে বলল,
"আপত্তি থাকবে কেন? চলুন। আংকেল আপনি আমাকে আপনি আপনি করছেন কেন? আপনি আমার বাবার বয়সী, তুমি করে বলুন।"
বের হতে হতে রাফি হঠাৎ খেয়াল করলো দোকানের এক কর্মচারী তাকে কি যেন ইশারা করছে যার অর্থ তার বোধগম্য হচ্ছে না। যাই হোক, সে ভদ্রলোকের সাথে বের হয়ে গেল। বাইরে যেতে না যেতেই কর্মচারী ছেলেটা ফোন করলো যে দোকানে ইশারা করেছিল। রাফি ফোন ধরতেই সে বলল,
"ভাইয়া এই লোক আগে একদিন দোকানে আসছিল। আপনি দোকানে ছিলেন না। আপনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিল।"
রাফি একটু অবাক হলো,
"তাই নাকি? কি বলেছিল?"
"জিজ্ঞেস করছিল আপনি কেমন মানুষ, আমাদের সাথে ব্যবহার কেমন করেন, বেতন ঠিকভাবে দেন কিনা এইসব।"
"তারপর?"
"তারপর চলে গেল। আমি সেদিন বলতে ভুলে গেছিলাম।"
"আচ্ছা সমস্যা নাই। এখন রাখি।"
রাফির মনে হলো মা যেসব মেয়ে দেখছে সেসব মেয়ের ফ্যামিলির কেউ হবে হয়তো ভদ্রলোক।
রাফিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের এক কোণার টেবিলে বসলেন ভদ্রলোক। তারপর প্রথম কথাটা যেটা বললেন সেটা হলো,
"কথা শুরুর আগে নিজের পরিচয় দিয়ে নেই। আমি সরফরাজ হোসাইন। মীরার বাবা।"
রাফি চমকে উঠলো। মীরারা বাবা তার সাথে দেখা করতে আসবেন কেন? কেনই বা তার সম্পর্কে খোঁজখবর করছেন? বিস্ময় কাটিয়ে উঠে রাফি বলল,
"সরি আংকেল আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।"
"স্বাভাবিক। আমাকে নিশ্চয়ই আগে দেখোনি।"
"জি না।"
"যাই হোক, যা বলার সরাসরি বলি। তোমার মা কিছুদিন আগে তোমার আর মীরার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল আমার বাড়িতে। এ কথা তুমি জানতে?"
রাফি মাথা নিচু করে অপরাধীর গলায় বলল,
"মাফ করবেন, আমি জানতাম না।"
"তুমি কি মীরাকে এখনো ভালোবাসো?"
রাফি সরফরাজ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,
"জি।"
"তাহলে তোমার মাকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে মানা করেছিলে কেন?"
"আমি মীরার যোগ্য নই তাই। সম্পর্ক হওয়া উচিত সমানে সমানে। যেহেতু আমি তা নই তাই চাওয়ার সাহসও নেই।"
"কেন তুমি নিজেকে মীরার অযোগ্য বলে মনে করো? শুধুই কি তোমার পড়াশোনা হয়নি বলে নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?"
"অন্য কোনো কারণ নেই।"
"যদি আমি নিজেই তোমার হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিতে চাই। তখন কি করবে?"
রাফির মনে হলো তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। সে ঠিক শুনছে তো? নাকি কোথাও ভুল হচ্ছে? নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
"সেরকম হলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করব।"
"তোমার মা আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন ৫/৬ দিন আগে। তার আগ পর্যন্ত তোমার উপর আমি প্রচন্ডভাবে রেগে ছিলাম। কারণ তুমি আমার মেয়েকে কষ্ট দিয়েছো। কিন্তু তোমার মায়ের সাথে কথা বলে সব জানার পর আমার সেই রাগ ভেঙে যায়। তারপর তোমার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া শুরু করি। তোমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে শুরু করে তোমার দোকান, ক্লায়েন্ট, বাসার বাড়িওয়ালা, দারওয়ান পর্যন্ত যত জায়গায় খোঁজ নেয়া সম্ভব তার সব জায়গাতেই খোঁজ নিয়েছি। তোমার সম্পর্কে আমার ধারণা যা ছিল খোঁজ নেয়ার পর তা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। রাফি তুমি নিজেকে মীরার অযোগ্য ভেবো না। গ্রাজুয়েট না হলেও এখনো তুমি আমার গ্রাজুয়েট মেয়ের চেয়ে বহুগুণে বিচক্ষণ মাশাআল্লাহ। আমার মাথাখারাপ মেয়েটার জন্য এমন শক্ত এবং বিচক্ষণ একজন মানুষ দরকার। নাহলে ওকে সামলাতে পারবে না।"
রাফির যা কখনো হয় না তাই হচ্ছে এখন। আনন্দে আবেগে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। মীরাকে তবে সে পেতে চলেছে? সেই মীরাকে যে শুধু এক গোপন স্বপ্নই ছিল তার জীবনে? সরফরাজ সাহেব বললেন,
"পিয়াল আসবে মাস তিনেক পরে। বিয়েটা তখন হবে। ততদিনে আমরা বিয়ের প্রিপারেশন নিতে থাকব। সামনের শুক্রবার সন্ধ্যায় তোমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার বাসায় এসো। বাকী কথা ওখানেই হবে। তোমার মাকেও আমি ফোন করে জানিয়ে দেব।"
"শুকরিয়া আংকেল। আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে আরাধ্য জিনিসটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।"
সন্ধ্যা পর্যন্ত রাফির সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেন সরফরাজ সাহেব। তারপর চলে যেতেই রাফি মীরাকে ফোন করলো। মীরা ততক্ষণে খবর পেয়ে গেছে। তাই একটু ভাব নিয়ে আছে। রাফির ফোন ধরলো না সে। রাফি খুব অস্থির বোধ করছিল। বারবার ফোন করছিল। অবশেষে রাত ১০ টার দিকে মীরা ফোন ধরলো। রাফি বলল,
"ফোন ধরো না কেন?"
"বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলে মনে নেই? এখন আবার আমার কাছে কি চাই?"
"আরে! তুমি জানো না কিছু?"
"জানলেই কি হামলে পড়তে হবে তোমার ফোন দেখে?"
রাফি হেসে বলল,
"রাস্তাঘাটে যে মেয়ে হামলে পড়ে সে ফোনেও পড়তে পারে।"
মীরা হেসে বলল,
"৯ টা বছর যে কষ্ট আমাকে দিয়েছো তা সুদে আসলে উঠাব আমি।"
"তা নাহয় ওঠালে। তবে আমি ভাবছি তোমার বয়ফ্রেন্ডগুলোর কী হবে? আহারে বেচারারা!"
"কী আর হবে? দ্রুত কয়টা বাচ্চা ফুটিয়ে মামা বলে পরিচয় করিয়ে দেব।"
"ইশ কি নির্লজ্জ হয়েছো মীরা! বিয়ের আগেই বাচ্চার কথা বলছো!"
"আমি যে কী কী হয়েছি, সব টের পাওয়াবো তোমাকে। বিয়েটা হতে দাও শুধু। তোমার জীবনে আগুন লাগিয়ে দেব।"
রাফি হেসে বলল,
"কার যেন আমার নাক ফাটাবার কথা ছিল? পরে কী করেছিল সামনে এসে? যত গর্জে তত আবার বর্ষে না ভাই।"
"টের পাবে সময়মতো।"
"আচ্ছা এসব বাদ দাও এখন। জরুরি কথা শোনো।"
"বলো।"
"একটু বের হতে হবে তোমার।"
"এখন?"
"হ্যাঁ।"
"এত রাতে কিভাবে বের হব?"
"তো ফোনটা এত রাতে ধরলে কেন?"
"একটু মজা নিচ্ছিলাম।"
"জানি না মীরা কিভাবে বের হবে। কিন্তু এখন আমার দেখা করাই লাগবে।"
"এখন বের হলে ফিরব কখন? বাবা রাগ করবে।"
"আমরা কোথাও যাব না। আমি তোমার বাসার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। এক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। দুই মিনিট সময় দিলেই হবে। খুব জরুরি।"
"এতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছো! সরি সরি।"
"সমস্যা নেই, তুমি বের হও।"
"আচ্ছা এখানে এলে তো বাসায়ই চলে আসতে পারো।"
"আরে না। সবাই কী ভাববে? বিয়ে ঠিক হতে না হতেই বেহায়া বর একেবারে শ্বশুরবাড়ি চলে এসেছে! তুমি শুধু ২ মিনিটের জন্য বের হও।"
"আচ্ছা তুমি এক কাজ করো ছাদে চলে যাও, আমি ওখানে আসছি।"
রাফি মীরার বাসায় ছাদে চলে গেল। এক মিনিটের মধ্যেই মীরাও চলে এলো। একটুও জড়তা নেই তার মধ্যে। আজ সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। রাফির সামনে এসে হাসতে হাসতে বলল,
"কী ব্যাপার? বিয়ে ঠিক হতে না হতেই বেহায়া বর একেবারে শ্বশুরবাড়ি চলে এলো!"
রাফি কিছু বলল না। মাথা নাড়িয়ে হাসলো শুধু। তারপর আচমকা মীরাকে জড়িয়ে ধরলো। বুকের মাঝে বহমান সহস্র ঢেউ নিমেষেই থেমে গেল। রাফি বললো,
"সেদিন তোমাকে বলেছিলাম না তুমি নিজেরটা আদায় করতে শিখে গেছো? ঠিক বলেছিলাম। তুমি নিজেরটা আদায় করতে শিখেছো বলেই আজ আমরা আবার এক হয়েছি। থ্যাংক ইউ মীরা। থ্যাংক ইউ সো মাচ।"
মীরাও ধরলো এবার। আনন্দে আজ আত্মহারা সে। কথা বলতে পারছে না। একবার শুধু ফিসফিস করে বলল,
"কতবার তোমাকে ধরেছি, তুমি একবারো ধরোনি। কষ্ট পেয়েছিলাম।"
"তখন যে অধিকার ছিল না। আজ আবার ফিরে পেয়েছি।"
"তবুও কষ্ট পেয়েছিলাম।"
রাফি মীরাকে আরো শক্ত করে ধরে বলল,
"সব শোধ করে দেব আমার হাওয়াই মিঠাই।"
***(সমাপ্ত)***
পর্ব ২৮ | পর্ব ০১ |