হাওয়াই মিঠাই |
পিয়ালের জন্য সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল মীরা। তবে সে রাফির কাছে যখন জানতে চেয়েছিল পিয়াল ফোন করে কী বলেছে তখন রাফি অবাক হয়ে জানিয়েছিল যে, পিয়াল ফোনই করেনি। মীরা একটু অবাক হয়েছিল। ফোনই যদি না করবে তাহলে নাম্বার নিলাে কেন? কিন্তু তাই বলে সে এ কথা পিয়ালকে জিজ্ঞেস করবে, সেই সাহস তার ছিল না।
সেদিন রাতে মীরার সামনে এক বিরাট রহস্য উন্মােচিত হয়েছিল। রাফির একটা কথায় সে কষ্ট এবং সুখ মিশ্রিত এক অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে বসবাস করতে শুরু করলাে। বাসার পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে রাফির সাথে যখন কথা হচ্ছিল তখনকার ঘটনা। রাফি তাকে বলল,
"মীরা, আমাকে মাফ করে দাও। তােমাকে এতদূর নিয়ে আসা আমার ভুল ছিল।”
"তােমার কী দোষ? তুমি কি আর জানতে আজকেই অমন মরা জ্যাম পড়বে?"
রাফি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
"তা জানতাম না। তবে আমাদের মধ্যে সবকিছু আগের মতাে ঠিক থাকলে তােমাকে কখনােই এদিকে আনতাম না।"
"আমাদের মধ্যে তাে সবকিছু ঠিকই আছে।"
"তােমার দিক থেকে ঠিক আছে, আমার দিক থেকে ঠিক ছিল না সকাল পর্যন্ত।"
"মানে?"
"মীরা তুমি আসলে কে সেটা জানার পর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত আমি কতটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সময় কাটিয়েছি তুমি জানাে না। এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে একটা।"
মীরা উদগ্রীব হয়ে বলল,
"কী হয়েছে পুরােটা বলাে, জানােই তাে এভাবে বললে বুঝি না।"
"আমার মন তােমাকে বিশ্বাস করতে চাইতাে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া সাক্ষী-প্রমাণ সব ছিল তােমার বিপরীতে।"
"কীসের প্রমাণ?"
"শুভ, আরিফ, দীপু তিনজনের ফোনেই তােমার নাম্বার থেকে কল গেছে। তুমি বলেছাে ত্রিশা তােমার নাম্বার থেকে ওদের সাথে কথা বলেছে। অথচ ওরা তিনজনেই বলছে ওটা ত্রিশা ছিল না, ত্রিশার কণ্ঠস্বর ওরা চেনে। কাকে বিশ্বাস করব? আমার এতদিনের বন্ধুদের নাকি তােমাকে?"
মীরা নার্ভাস হয়ে পড়লাে। বলল,
"রাফি, কসম আমি সত্যি বলেছি।"
রাফি একটু দম নিয়ে বলল,
"আমার বন্ধুরা যে মিথ্যে বলবে এমন কোনাে কারণ নেই। ওরা জানেওনা যে নাম্বার থেকে ওদের কাছে কল যেতাে সেই নাম্বারেই আমি প্রেম করে বসে আছি। আমি শুধু ঢিল ছোঁড়ার মত করেই বলেছিলাম ওটা ত্রিশা হতে পারে। তখন ওরা বলেছিল যে ওটা ত্রিশা হতেই পারেনা, ত্রিশার কণ্ঠস্বর ওরকম না। আমি কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে পারিনা মীরা। তাই ওদেরকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আবার তােমাকেও না। তাই রাগের মাথায় তােমার সাথে যােগাযােগ বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই আমার মনে হচ্ছিল তােমাকে ছাড়া আমি দমবন্ধ হয়ে মারা যাব। কী পরিমাণ বিরক্ত লাগছিল আই কান্ট এক্সপ্লেইন। এক সপ্তাহ পর মনে হলাে এটা অসম্ভব। একটা সমাধানে আসা দরকার। আবার তােমাকে কল করলাম। কিন্তু আমার রাগ, বিরক্তি এবং যন্ত্রণা কোনােটাই কমছিল না। লাভ এন্ড হেট ফিলিংস বােঝাে?"
"না।"
"কাউকে যখন একইসাথে ভালােবাসবে এবং ঘৃণা করবে তখনই সেটা হয় লাভ এন্ড হেট ফিলিংস। এবং এটা হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে বিশ্রী ফিলিংস, এটা জাস্ট নেয়া যায় না। আনফরচুনেটলি প্রথম মীরার ক্ষেত্রেও সম্পর্কের শেষদিকে আমার এই একই ফিলিংস ছিল। অনেক কষ্টে সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে এসেছিলাম। আমি কোনােভাবেই চাচ্ছিলাম না তােমার জন্যও সেরকম কোনাে ফিলিংস হােক। কিন্তু সেটাই হয়েছিল। বিশ্রী সব ফিলিংসগুলাে ঘুরেফিরে আসতে থাকলে জীবন দুর্বিসহ হয়ে যায়।"
এই পর্যন্ত বলে রাফি একটু থামলাে। মীরার এসব শুনে কান্না পাচ্ছিল, আবার ভয়ও হচ্ছিল। রাফি এবার বলল,
"তুমি আমাকে কেমন ভাবাে আমি ঠিক জানি না। তবে আমার প্রচুর রাগ, অথচ তার সরাসরি প্রকাশ নেই। রাগগুলাে ভেতরে ভেতরে আগুনের মতাে জ্বলতে থাকে। আমি কাউকে মারি না, ধমকাই না। কড়া কথা অবশ্য বলি, তবে সেটাও ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আমি মানুষটাও খুব ভালাে নই। যারা আমার সাথে ভালাে, আমিও তাদের সাথে ভালাে। যারা আমার সাথে খারাপ, আমিও তাদের সাথে খারাপ। তােমাকে যে আজ আমার বাসায় নিয়ে এসেছিলাম, আমার উদ্দেশ্য খুব একটা ভালাে ছিল না।"
"ভালাে ছিল না মানে?"
"কোন শয়তান আমার উপর ভর করেছিল তা আমি জানিনা, নিজের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তােমাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জানালার পাশে যখন দাঁড়িয়েছিল? তখন তােমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার সব রাগ গলে পানি হয়ে গেছে। আমি আবার নতুন করে তােমার প্রেমে পড়েছি। তােমার আগে অমন সরল দৃষ্টি আমি আগে কখনাে দেখিনি মীরা। আমার বিশ্বাস কোথাও একটা গন্ডগােল আছে। তুমি আমাকে ঠকাওনি। আমার বিশ্বাস শুভ, আরিফ ও দীপুর সাথে কথা বলা মেয়েটা তুমি নও। সত্যি যেটাই হােক আমি খুঁজে বের করবই। যদি তুমিই হও সেটাও যেমন খুঁজে বের করব তুমি না হলেও সেটা খুঁজে বের করব। কতটা সময় লাগবে আমি জানি না। শুধু আমার ভালােবাসার জন্যই আজকে তুমি অক্ষত অবস্থায় ফিরে গেছাে। আমি চাইব আর কখনাে তুমি আমাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করাে। আজ আমার মনে যে খারাপ উদ্দেশ্য ছিল তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে মাফ করে দাও।"
এসব শুনে মীরার পৃথিবী দুলতে লাগলাে। রাফি বলল,
"যদি তুমি মিথ্যা প্রমাণিত হও, তাহলে আমার সামনে আর কখনাে এসাে না। আর যদি তুমি সত্য প্রমাণিত হও, সারাজীবন তােমাকে মাথায় করে রাখব। তােমাকে অবিশ্বাস করার জন্য যে শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব।"
পর্ব ১৫ | পর্ব ১৭ |