শাহজাহান তন্ময় - পর্ব ০২ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলছে। শিক্ষার্থীগণ ভাগে-ভাগে দলবেঁধে মিলে-মিশে গাছ লাগাচ্ছে। খুবই মনোযোগ সহকারে। তাদের সাহায্য করছে স্বয়ং প্রিন্সিপাল। 

পূর্বদিকের দেয়ালের সর্বত্র জুড়ে একটি দল হাঁটু গেড়ে বসে। দলের মধ্যে মোট সাতজন তারা। প্রত্যেকের হাত জোড়া কাদা মাটিতে একাকার অবস্থা। সে-সময় তন্ময়ের উরুতে একটি হাত এসে বসে। হাতটা কাদায় মাখোমাখো পর্যায়ে। সাদা প্যান্টে বড়সড় ছাপ বসিয়ে দেয় মূহুর্তে। চমকে ওঠে ইব্রাহীম। মুখে হাত চেপে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় ভিক্টিমে দিক। ভিক্টিম তন্ময় তখন নির্বিকার। তারপর তাকায় মাহিনের দিক। এতো বড়ো তাণ্ডব করে মাহিন তখন দাঁত বের করে হাসছে। পরমুহূর্তে সামনের মাটির বালতিটা উঠিয়ে নেয় তন্ময়। সবটুকু মাটি উবুড় করে ঢেলে দেয় মাহিনের মাথায়। এভাবেই শুরু হয় কাদায়-কাদায় গোসল করা। তাদের বন্ধুদের এই কাদামাটি খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যসন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যেও এই খেলা জমে ওঠে। 
নির্বিকার হয়ে দেখতে থাকে শিক্ষকগণ। দূর থেকেই নির্দেশনা দিচ্ছে এসব বাচ্চামো বন্ধ করার। কাজ হলো না। সকলেই তখন তুখোড় মেজাজে রয়েছে। 

কাদায় লেপ্টে থাকা তন্ময় ক্যাম্পাসের পশ্চিমে বসে। মাথা এবং মুখশ্রী বাদ রেখে সম্পূর্ণ সে কাদায় মেখে। হাতে চেপে রাখা সিগারেটের নিচের অংশটুকু কাদায় ভেজা। গরম চোখে তাকাচ্ছে মাহিনের দিক। মাহিন তখন বুক ফুলিয়ে হাসছে। সেও সম্পূর্ণ কাদায় মেখে। তার মাথাটাও বাদ রয়নি। বেচারা ইব্রাহীম থেকে ধরে বাকি সদস্য গুলো ছাড় পাইনি। সবাই কাদায় ভেজা। রিহান বিরক্ত গলা বলল, 'ওরে মাইর দিচ্ছস না কেন? এই ছোটো মাহিন মজুমদার শুরু করছে বালের খেলা! আমি কোন মুখ নিয়া বাসায় যামু? রাস্তায় গেলে আমারে জোকার কইব.. জোকার!'

মাহিন চুইংগাম চিবুচ্ছে। মূলত সিগারেটের সাথে মাটিও একটু মুখে ঢুকেছিল কিছুক্ষণ আগে। তাই বাধ্যতামূলক একটা চুইংগাম মুখে নিয়েছে। মুখটা ফ্রেশ করা দরকার ছিল। সেই চুইংগাম মুখ থেকে বের করে আঙুলে নিয়ে রিহানকে দেখিয়ে প্রশ্ন করে, 'খাবি?'

রিহানের নাক ফুঁসে ওঠে। তেড়েমেরে যায় মাহিনের দিক। মাহিন ও পেছায় না। দুজন সমানে বুক ফুলিয়ে আসে একচোট যুদ্ধ করতে। একপর্যায়ে করেও। তাদের এই মারামারি আর ছেলেমানুষী একই কথা। ঘাসের মাটিতে পড়ে দুজন একে-ওপরের ওপর উঠে কিল-ঘুষি দিতে ব্যস্ত। এই দু-পাগলকে থামানোর চেষ্টা করেনি কেউই। তন্ময় সিগারেট ফেলে দেয় দারোয়ানকে আসতে দেখে। ব্যাগ কাঁধে তুলে যেতে নিয়ে বলে, 'আমি গেলাম।'

এ-পর্যায়ে মাহিন আর রিহান ও উঠে দাঁড়ায়। বিরক্ত মুখে রিহান এগিয়ে গিয়ে মাহিনের পিঠের ময়লা ঝেড়ে দেয়। একই বিষয় মাহিন ও করে। চোখ রাঙিয়ে দুজনেই আলাদা পথে হাঁটা ধরে। ইব্রাহীম ছুটেছে তন্ময়ের পিছু। সৈয়দ ও তাদের সঙ্গে। তাদের বাসা আবার একই দিকে। যাতায়াত করতে সুবিধা।

______

সদরদরজা ঠেলে মাত্রই ঢুকেছে তন্ময়। কিছুটা সামনে এগোতেই ওপর থেকে একঝাঁক পানি এসে ঠিক তার মাথায় পড়ল। ঠান্ডা কনকনে পানি। জবজবে ভিজে তন্ময় মাথা তুলে তাকায়। বারান্দায় অরু দাঁড়িয়ে। হাতে বালতি। সে মনেহয় গাছে পানি দিচ্ছিল। বেচে ফেরা পানিটুকু নিঃসন্দেহে এখানে ঢেলেছে। অরু তখন ভ্যাবাচেকা খেয়ে চেঁচাল। মাবুদ-আল্লাহ বিড়বিড় করে ছুটে ভেতরে গেল। তন্ময় নির্বিকার মুখে থমকে রইল কিছুক্ষণ। শরীরে পানি ছুঁয়ে দিতেই শুকিয়ে যাওয়া কাদা গুলো নরম হয়েছে। শরীরে বেয়ে চলেছে সেগুলো। এক্ষুনি গোসল করা প্রয়োজন। নাহলে আজ সে নির্ঘাত অরুকে থাপ্পড় মেরে গাল লাল করে ফেলবে। নাক ফুঁসিয়ে ভেতরে ঢোকে। চেঁচিয়ে ডাকে জবেদা বেগমকে। ছুটে আসেন জবেদা বেগম। ছেলের এ-অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ তিনি, 'কী হইল? এই অবস্থা কেন?'
'একটা তোয়ালে দাও।'

সুমিতা বেগম তোয়ালে এনে দিলেন। চিন্তিত গলায় বললেন, 'অরু পানি ফেলছে? ওরে পাঠাইছি গাছে একটু পানি দিতে। মাইয়াডা একটা কাজ যদি ভালোমতো করে!

তন্ময় দ্রুত গতিতে দুয়ারে দাঁড়িয়ে শার্ট খুলে ফেলল। কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে প্যান্ট খুলে, সোজা ওপরে উঠে গেল। কাপড়চোপড় গুলো তুলে নিলেন জবেদা বেগম। সুমিতা বেগম তখন নিজের মেয়েটাকে ইচ্ছেমতো বকছে। বকতে বকতে ওপরে উঠছেন। অরুর নরম পিঠে নির্ঘাত দুটো চড় পড়বে। 

____

তন্ময় সন্ধ্যায় পড়ছিল। সে-মুহুর্তে দীপ্ত আর অরু আসে পড়তে। ছোটো দীপ্ত হৈচৈ করে এলেও অরু ছিল নিরব। যেটা সচরাচর সে থাকে না। তন্ময় অগোচরে কয়েকবার দেখে নিল মুখ গোমড়া করে থাকা অরুকে। ফুলোফুলো গোল-গাল মুখটা অসহায় হয়ে আছে। নিশ্চয়ই বকুনি খেয়েছে। মাথা দুলিয়ে বলল, 'বোস। হোমওয়ার্ক করে নে। তারপর কোন চ্যাপ্টারে সমস্যা দেখা আমায়।'

দীপ্ত ছোটো হাত-পায়ে বিছানায় ওঠে বসে। ব্যাগ এগিয়ে ধরে তন্ময়ের দিক। তন্ময় খাতা, পেনসিল এবং রাবার বের করে দেয়। দীপ্ত নিজের নার্সারির হোম-ওয়ার্ক করতে বসে মনোযোগ দিয়ে। মাঝেমধ্যে তন্ময় দেখিয়ে দিচ্ছে। সমস্যা হলো অরুকে নিয়ে। নাক-মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সবকিছুতেই সে নির্বিকার থাকতে পারে। সবকিছু এভোয়েড করতে পারে, হ্যান্ডেল করতে পারে। শুধু তার সামনে বসা এই আবেগী মেয়েটির সামনেই সে অসহায়। বড্ড অসহায়! 
.
.
.
চলবে................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন