মেঘের বাড়ি - পর্ব ০৩ - ফারহানা ছবি - ধারাবাহিক গল্প

পড়ুন ফারহানা আক্তার ছবি'র লেখা একটি সামাজিক ধারাবাহিক গল্প মেঘের বাড়ি
মেঘের বাড়ি
মেঘের বাড়ি

"রানা কিছু জানতে পেরেছিস?"

"হ ভাবি এমন একটা খবর আছে৷ যেটা শুনলে তুমি খুশিতে নেচে উঠবে৷"

"কি খবর দ্রুত বল রানা৷ আমার আর তর সয় না৷"

রানা তিন ঢোকে পানি খেয়ে বলতে লাগলো," ভাবি সোহেল ভাইয়ের শাশুড়ি আর তার মাইয়ার নামে তো ওই গ্রামে নানান বাজে কথা রটে আছে৷"

আখি একটু বিরক্ত হয়ে বললো, রানা যা কয়তাছো খুইলা কও৷ হেয়ালি কইরো না৷"

"কয়তাছি ভাবি৷ আমি ওই গ্রামে যাইয়া ভাবির নাম তো জানি না তয় হের ভাইয়ের নাম নাজমুলের নাম জ্বিগায়তে কেউ চিনলো না তহন হের মার নাম কয়তে সবাই চিনলো৷ আর যা কয়লো তা হুনলে তোমাগো চোখ কপালে উঠবো৷"

মিলা এবার বেশ রাঙ্গানিত গলায় বললো,

"রানা ভাই আপনার চোখ জোড়া আপনার কপালে রাখেন আর দ্রুত বলেন কাহিনি কী?"

"রাগ করো ক্যান বেয়াইন বলতাছি শোন৷ ভাবির বড় ভাইয়ের নাম প্রথমে জ্বিজ্ঞাসা করলে কেউ চিনতে পারে নাই তারপর হের মার নাম কওনের পর দেখি হগ্গলে চিননা ফেললো৷ তারা বলে ওই মহিলা নাকি বে*শ্যা, হের মাইয়াও নাকি হের মত ৷ ভাবির মা নাকি কত গুলো বিয়া করছে হেইডাও কেউ ঠিক কইরা কয়তে পারে না৷"

রানার কথা শুনে আখি, সাথী, মিলা হতভম্ব হতবিহ্বল হয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে৷ কেউ বুঝতে পারছে না রানা ঠিক কী বললো! আখির জামাই যতদুর জানে আর তাদের জানিয়েছে তারা ভদ্র পরিবারের সন্তান৷ খারাপ কোন রেকর্ড তাদের নেই তবে এখন রানা যা বলছে তার সাথে আখির জামাইয়ের কথার কোন মিল নেই৷ আখি সাথী মিলা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে সোহেল কে খুঁজতে লাগলো৷ ঘরে সোহেল কে না পেয়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখে সোহেল সেখানে আনমনা হয়ে বসে আছে৷ আখি দ্রুত তার ভাইয়ের পাশে বসে বলে,

"ভাইজান তোমার লগে আমার কিছু কথা আছে৷"

"তোদের সাথে পরে কথা বলবো৷ এখন কথা বলতে ভালো লাগছে না৷"

"ভাইজান তোমার মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু কথা গুলা খুব জরুরী ভাইজান৷ আর কথা গুলা ভাবিরে লইয়া৷"

ভাবি অর্থাৎ মেঘের বিষয় বুঝতে পেরে সোহেল আখির দিকে তাকিয়ে বলে,

"কী বলতে চাস?"

আখি এবার হুবহু রানার কথা গুলো সোহেলকে বললো সাথে রঙ চঙ লাগিয়ে আরও কিছু বানিয়ে বললো মেঘের নামে৷

সব শুনে রাগে সোহেল উঠে নিজের রুমে ঢুকে ফোন টা খুঁজে বাড়ি থেকে বেশ দুরে চলে গেল৷

(৬)

দুপুরে কোন রকম খেয়ে নিজের রুমে ঢুকে বসে রইল মেঘ৷ অন্যদিকে শেফালী বেগমের কান্না এখন অব্দি থামে নি৷ মেঘের ভাই সোহাগ দুপুরে বাসায় ফিরে মেঘের সাথে কথা বলতে চলে গেল৷ বাড়ি এখন মোটামুটি ফাঁকা কারণ বড়ভাই, মেজভাই, সেজভাই ঢাকার উদ্দেশ্য সকালে বেড়িয়ে গেছে৷ আর এখানকার দায়িত্ব সোহাগকে দিয়ে গেছে৷

সোহাগ মেঘ বলে ডাকতে মেঘ সারা দিয়ে বলে,

"ছোটভাই আমি এ ঘরে৷"

সোহাগ সে রুমে গিয়ে বলে,

"মেঘ আমি সোহেলের চাচার সাথে কথা বলেছি৷ উনি বিষয় টা দেখছে৷ আর উনি যদি বিষয়টা সামলাতে না পারে তাহলে আমি বিষয় টা আমার মত করে দেখবো৷"

"ছোটভাই সোহেলের চাচা মানুষটা ভালো কিন্তু সোহেলের বোন জামাই আর ওর মা বাবা খারাপ৷ ওরা পারে না এমন কোন কাজ নেই৷ তুমি ভাই তাই তোমাকে আর কিছু বলতে পারছি না৷ তবে সব চেয়ে বড় সমস্যাটা আমি হয়তো ধরতে পেরেছি৷"

"কী সমস্যা?"

"বলছি তার আগে পানি টা খেয়ে নেও ছোটভাই৷"

সোহাগ পানি খেয়ে বললো,

"এবার তো বল?"

"ওদের বড় সমস্যা হলো আমি শিক্ষিত৷ আমি পড়াশুনা জানি৷ আর আমি যেহেতু ও বাড়ির বড় বউ তাই ওদের ধারণা তোমাদের জামাইয়ের সব টাকা পয়সা জমিজমার হিসেব আমি চাইবো৷ আর একটা কথা জানো ভাই ও বাড়ির তিন মেয়েই তাদের জামাই বাচ্চা সহ ওবাড়িতে ঘরজামাই হয়ে থাকে৷ সোহেলের সকল জমিজমা তারা দেখাশুনা করে৷ জানো ভাই দুলাভাই যে ফার্নিচার পাঠিয়েছিলো তার মধ্যে কাঠের ফার্নিচার গুলো তাদের রুমে নিয়ে গেছে আর আলনা টা শুধু আমাদের রুমে দিয়েছে৷ আর বিয়ের দ্বিতীয়দিন বড় ননদ জানালা দিয়ে এসিড ছুড়ে ফেলেছিলো আলনায়৷ আমি নিজের চোখে দেখেছি৷ সেখানে আমার শাড়ি গুলো এসিডে পুড়িয়ে দিয়েছে৷ ওখানে পদে পদে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যখন জানতে পারলো আমি পড়াশুনা জানি৷"

"কেন? তোকে যখন দেখতে এসেছিলো তোর শশুর তার জামাই আর সোহেল তখন তো আমরা জানিয়ে ছিলাম তুই উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছিস৷"

"আমি জানি না ছোটভাই! তারা সবটা জেনেও এমন কেন করছে!"

"যাই হোক আমি দেখছি কী করা যায়৷" সোহাগের কথা শেষ হতে না হতে মেঘের ফোনটা বেজে উঠলো৷ ফোনটা আলিয়ার কাছে থাকায় ছুটে এসে ফোনটা মেঘের হাতে দিয়ে বললো,

"আন্টি খালু ফোন করেছে৷"

মেঘ ফোন হাতে নিয়ে আলিয়াকে বলে,

"আম্মু আপুকে(আলিয়ার মা) বলো ছোটভাইকে খাবার দিতে৷ আর ছোটভাই তুমি বাইরে থেকে এসেছো গোছল করে ফ্রেস হয়ে নেও৷"

সোহাগ আলিয়া রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর আবারও ফোনটা বেজে উঠতে মেঘ কল রিসিভ করে কানে ধরতে ফোনের ওপাশ থেকে অকথ্য ভাষায় গা*লি গালাজ শুনতে পেলো মেঘ৷ একমুহূর্তের জন্য ভেবেছিলো সোহেলের ফোন থেকে হয়তো অন্যকেউ কল দিয়েছে কিন্তু পরক্ষণে সে ভাবনা মিথ্যা প্রমানিত করে বলে উঠলো,

"খা* মা* তুই তোর ফ্যামিলি মিলে আমাকে ঠকিয়েছিস৷ তোরা মা মেয়ে যে আগে ব্যাবসা করতি সেটা কেন লুকিয়েছিস বল? তোরা মা মেয়ে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলি৷ তোর মত বে* শ্যা আমার বউ কখনো হতে পারে না৷ তোকে আমি তালাক দিবো৷ তোর সাথে আমি সংসার করবো না৷"

মেঘ আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলো,

"চুপ একদম চুপ আমার নামে আর একটা বাজে কথা বলবেন না৷ যতটুকু সন্মান আপনাকে দেওয়া দরকার ছিলো আপনাকে দিয়েছি আমার মনে হয় না আপনি কোন সন্মানের যোগ্য৷ আপনার মত কাপুরুষের বউ হওয়াটা যে কতটা কষ্টের সেটা একমাত্র আমি জানি৷"

"চুপ কর বেয়াদপ মেয়ে৷ তোরা আমাকে ঠকিয়েছিস৷ তোরা মা মেয়ে ব্যবস্যা করিস সেটা তুই অস্বীকার করলেও তোর আশেপাশের মানুষ তো অস্বীকার করবে না৷"

"মুখ সামলে কথা বলুন৷ আমার মাকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে এর পরিনাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে এর ধারণা নেই আপনার৷ "

"তোকে আমি তালাক দিবো৷ তোর মত নষ্টমেয়ের সাথে আমি সংসার করবো না৷"

নষ্ট মেয়ে কথা শুনে মেঘের কী হলো জানে না হুট করে বলে উঠলো,

"আল্লাহর কসম সংসার তো তুই আমার সাথেই করবি আর তোর এই মিথ্যে বদনাম রটানোর জন্য মাথা নিচু করে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইবি ৷ এটা যদি না হয় তো আমার নাম মেঘ না৷"

মেঘ কল সাথে সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাগলের মত কাঁদতে লাগলো৷ এত গুলো বছরে কখনো কলঙ্কের দাঁগ নিজের গায়ে লাগতে দেয় নি আর আজ যে কেউ তার নামে অনায়াসে এমন জঘন্য মিথ্যা কলঙ্ক লাগিয়ে দিলো? এগুলো ভেবেই কান্নায় ভেঙে পড়লো মেঘ৷

(৭)

এতক্ষণ রুমের বাইরে দাড়িয়ে মেঘের প্রত্যেকটা কথা বাড়ির সকলে শুনেছে৷ আলিয়া রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে মেঘের কথাকে গিয়ে বলতে লাগলো,

"আন্টি কী বলেছে খালু আমাকে বলো?"

"মেঘ কান্নার জন্য তেমন কিছু বলতে পারছে না তবুও কান্নার ভেতর ছাড়া ছাড়া কয়েকটা কথা বলে৷ এটা যে, 'আমরা মা মেয়ে নাকি ব্যবস্যা করি আলিয়া৷' শুধু এতটুকু বললো৷ আলিয়ার বুঝতে আর বাকি নেই তার খালু কথা গুলো কাকে মিন করে বলেছে৷ আলিয়া মেঘকে একা রেখেই বাসা থেকে বের হয়ে পাশের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হয়৷ পাশের বাসায় মা মেয়ে আর তাদের এক ছোট ছেলে নিয়ে পরিবার৷ আলিয়া সে বাড়ির সকলের সম্পর্কে বেশ জ্ঞাত ৷ তাই শিওর হওয়ার জন্য ও বাড়িতে যাওয়া৷ আলিয়া বাসার ভেতরে ঢুকে নানী নানী বলে ডাকতে লাগলো৷ তখনি তার মেয়ে সাজিয়ার রুম থেকে একটা লোককে অর্ধনগ্ন অবস্থায় বের হতে দেখে আলিয়া ভিষণ পরিমানে ঘাবড়ে যায়৷ কারণ এবাড়িতে পুরুষ মানুষ বলতে কেউ নেই৷ নানীর ছোট ছেলের বয়স সাতের কাছাকাছি আর মেয়ে মেঘের সমবয়সী কিন্তু আলিয়া আপাতত সে সবে মন না দিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হতে নিলে লোকটি বলে,

"এই মেয়ে কে তুমি?"

"আপনি কে ? নানী আর আন্টি কোথায়?"

"খালা বাড়িতে নেই আর সাজিয়া ভেতরে রুমে আছে৷"

"ওহ আচ্ছা তাহলে পরে আসবো৷"

লোকটিকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত ও বাড়ি থেকে আলিয়া বেড়িয়ে গেল৷

"আল্লাহ বাঁচায়ছে৷ আমার সন্ধেহটাই ঠিক মনে হচ্ছে৷ সোহাগ মামা কে জানাতে হচ্ছে৷ আলিয়া বাসায় ঢুকতে শুনতে পায় তার নানী...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন