আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

প্রিয়াঞ্জনা - পর্ব ১৪ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প


শরতের ভোর। স্বচ্ছ নীল আকাশে পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো মেঘেরা উড়ে বেড়াচ্ছে। বাতাসে জুঁই ফুলের তীব্র ঘ্রাণ। পুকুরপাড়ের তাল গাছটায় বাসা বেঁধেছে এক বাবুই পাখি। শালিক, বাবুই সকলে শরতের ভোরকে আমন্ত্রণ জানাতে কিচিরমিচির শব্দ তুলতে ব্যস্ত। সুমনা ঘুমিয়ে ছিলো প্রিয়াঞ্জনার পাশে। আজ তার শরীর খারাপ। তাই ফজরের নামাজ আদায় করতে পারেনি। প্রিয়াঞ্জনা ফজরের নামাজ আদায় করেই বোরকা পরে নেয়। আস্তে করে ডাকে, 
"ভাবী, শুনছো?"

রাতে কান্নার কারণে এখন তীব্র মাথা ব্যথা করছে সুমনার। চোখ জোড়া খুলতেই চাইছেনা। বহু কষ্টে চোখ খুলে তাকায় সে। শোয়া থেকে উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে। 
"আমি চলে যাচ্ছি ভাবী। আবার কবে দেখা হবে জানিনা। ভাইয়া এরকম একটা ঘৃ ণ্য কাজ করেছে! আমি কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।"

সুমনা মলিন হাসে। প্রিয়াঞ্জনার নরম হাতটি নিজ হাতে নিয়ে বলে,
"ভালো থেকো বোন। সুখে থেকো। অনেক দোয়া রইলো।"
"তুমি কান্নাকাটি করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।"
"সবাই শাহবাজ ভাইয়ের মতো না প্রিয়া। শাহবাজ ভাই অমূল্য রত্ন। তাকে ভালো রেখো।"
"ঠিক আছে, ভাবী। তুমি তাহলে আবার শুয়ে পড়ো। তোমার শরীর তো ভালো না। আমি আসি।"

সুমনার মাথায় খুব য'ন্ত্র'ণা করছিলো। তাই শুয়ে পড়ে। প্রিয়াঞ্জনা নিজের ঘরের দরজা আটকে ড্রয়িং রুমে চলে আসে। ড্রয়িং রুমে অন্ধকার বিরাজ করছে। পা টিপে টিপে মেইন ডোর খুলে বেরিয়ে পড়ে বাইরে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আল্লাহ কে ডাকছিলো সে। কেউ যদি ধরে ফেলে তাহলে আর শাহবাজের কাছে যেতে পারবেনা প্রিয়াঞ্জনা। তাকে আটকে ফেলবে তারা। বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতন নিজের পিতৃভূমিটাকে দেখে নিচ্ছিলো প্রিয়াঞ্জনা। আর হয়তো কখনো আসা হবেনা। নিজের অজান্তেই চোখের কোণ ভিজে উঠে তার। মাকে সে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে। এতকিছুর পরও মার প্রতি কোনো ঘৃ ণা কিংবা ক্ষো'ভ তার নেই। কিন্তু একদিকে ভালোবাসার মানুষ আর অপরদিকে পরিবার। যেকোনো একটাই বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রিয়াঞ্জনা জানে তার ভালোবাসার মানুষটি এখন রিকশায় বসে তার অপেক্ষা করছে মেইন রোডে। বুকের ভিতর আজ কেন যেন চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে প্রিয়াঞ্জনার। নিজের আবেগকে দমিয়ে রেখে প্রিয়াঞ্জনা বেরিয়ে পড়ে কংক্রিটের রাস্তায়। কিছু দূর হেঁটে সামনে গেলেই মেইন রোড। রাস্তার দু'পাশে বিল। বিলে ফুটেছে শুভ্র শাপলা। বাবুই পাখির বাসা দেখে প্রিয়াঞ্জনার মন ভালো হয়ে যায়। আবার তার একটি নতুন রাজ্য হবে। সে হবে রাণী আর তার শাহ্ হবেন রাজা। হাসি ফুটে উঠে প্রিয়াঞ্জনার মুখে। মোবাইল তার কাছে নেই। গতরাতে প্রীতির মোবাইলে কথা হয়েছিলো শাহ্ এর সাথে। 
রিকশা থেকে নেমে বিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো শাহবাজ। তার বুক কাঁপছে। আদোও প্রিয়াঞ্জনা আসতে পারবে তো? যদি না আসতে পারে! রাস্তা শূন্য। রিকশাওয়ালা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছেন। হঠাৎ করেই শাহবাজ অনুভব করে তাকে পিছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরেছে। একেবারে আষ্টেপৃষ্টে। অধিকারবোধ নিয়ে। হাসি ফুটে উঠে শাহবাজ চৌধুরীর মুখে। মুখ উঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে আকাশ পানে তাকায় সে। তার অশান্ত বুক শান্ত হয়ে যায় নিমিষে। পিছু ফিরে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় নিজের অর্ধাঙ্গীকে। যেমন করে দূর্বাঘাসকে ভিজিয়ে স্নিগ্ধ করে তুলে শিশির বিন্দু, তেমন করে শাহবাজ চৌধুরীর অন্তরকে পুলকিত করে তুলেছে তার প্রিয়াঞ্জনা। বুকের পাশটায় ভেজা অনুভব করতেই ধ্যান ভাঙে তার। প্রিয়াঞ্জনা কাঁদছে। শাহবাজ বড়ই যত্নে মুছিয়ে দেয় প্রিয়াঞ্জনার আর্দ্র নয়নযুগল। 
"এত সুন্দর চোখ দুটোতে আর যেন পানি না দেখি।"

হালকা ধমক। হালকা শাসন। প্রিয়াঞ্জনার মন ভরে যায়। সেই শাহ্! পুরানো শাহ্! 
রিকশায় উঠে বসে দুজনে। মিষ্টি রোদে মুখরিত চারপাশ। দুপাশে বিলে সাদা, গোলাপি শাপলা। মাঝখান দিয়ে কংক্রিটের রাস্তা। আসমানে পেঁজা তুলোর মতন ভেসে বেরানো মেঘ। হুড তোলা রিকশায় প্রিয় মানুষের বুকে মাথা রেখে বসে থাকা। এই অনাবিল সুখ কি টাকা দিয়ে কেনা যায়! প্রিয়াঞ্জনার অন্তর চিৎকার করে বলে উঠে, 'কখনোই না'।
শাহবাজের হাতে প্রিয়াঞ্জনার ডানহাত। আঙুল গুলো নিয়ে খেলছে সে। ঠিক ছোট বাচ্চার মতো করে। 
"এই যে শাহ্!"
"হু"
"ক্ষুধা লেগেছে আমার।"

বিলের পাশে চায়ের দোকান। চা দোকানদার সবে মাত্র দোকান খুলে বসেছেন। শাহবাজ রিকশা থামায়। ভাড়া মিটিয়ে প্রিয়াঞ্জনার হাত নিজের হাতে ধরে চা দোকানে গিয়ে বসে। বুড়ো দোকানীকে বলে,
"দুটো চা দেন তো চাচা। একটা রং চা আরেকটা দুধ চা। একটা পাউরুটিও দিয়েন।"
"জ্বে, আচ্ছা।"

বলেই তিনি চা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিলে খুব সুন্দর শাপলা ফুটেছে। প্রিয়াঞ্জনা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সেদিকে। কিনারাতেই জন্মেছে। 
"কি শাপলা চাই?"

শাহবাজ জিজ্ঞেস করে দুষ্টু সুরে। প্রিয়াঞ্জনা মাথা ঝাঁকায়। অমনি বেঞ্চ থেকে উঠে বিলের পাশটায় গিয়ে শাপলা ফুল তোলার চেষ্টা চালায় শাহবাজ। কিনারা ঘেষে বেশ কচু জন্মানোতে শাপলার নাগাল পাওয়া যাচ্ছেনা। তবুও চেষ্টার ত্রুটি নেই তার। প্রিয়াঞ্জনা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে তার পুরুষের পানে। জিন্স প্যান্ট, নেভি ব্লু শার্ট পরনে অভূতপূর্ব যুবকটি তার। একান্তই তার। হঠাৎ মনে ভয় দানা বাঁধে। সা'পের দল ঘাপটি পেতে থাকে এরকম স্থানে। 
"চলে আসুন শাহ্। আমার শাপলা লাগবেনা।"

কে শুনে কার কথা! শাহবাজ দুটো শাপলা তুলে বিশ্বজয়ের হাসি দেয়। তুলে দেয় তা প্রিয়াঞ্জনার হাতে। চা চলে এসেছে। শাহবাজের রং চা আর প্রিয়াঞ্জনার দুধ চা। শাহবাজ প্রিয়াঞ্জনার কানের কাছে গিয়ে গায়,
প্রিয়াঞ্জনা, এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই, 
ডাইনে ও বায়ে আমি তোমাকে চাই, 
দেখা না দেখায় আমি তোমাকে চাই, 
না বলা কথায় আমি তোমাকে চাই.....

আবারও নিজের অজান্তে চোখ ভিজে উঠে প্রিয়াঞ্জনার। এই মানুষটাকে ছাড়া সে কখনোই বাঁচতে পারবেনা। কখনোই না। 
.
.
.
চলবে.........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।