আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

প্রিয়াঞ্জনা - পর্ব ২৬ - আনিকা রাইশা হৃদি - ধারাবাহিক গল্প


প্রীতম মানতেই পারছেনা তার কন্যা কৃষ্ণবর্ণ। কেবল কৃষ্ণবর্ণ নয় সে সাথে বিকলাঙ্গ। ডান হাতের গঠন সাধারণ মানুষের মতো নয়। হাতে আঙুল নেই। তারা হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছে আজ প্রায় সাতদিন হলো। স্বর্ণা এবং প্রীতম ঘরেই শুয়েছিলো সেদিন। স্বর্ণার ডেলিভারি ডেট আরো অনেক পরে দিয়েছিলেন ডক্টর। মাঝরাতে পানি পান করতে উঠেছিলো স্বর্ণা। ঘরে পানি না পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ডাইনিং টেবিলে পানি ছিলো। কাঁচের বোতল থেকে মগে পানি ঢালার সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করে সে। বুঝতে পারে তার পানি ভাঙছে। পেটে হাত দিয়েই নিচে বসে পড়ে। তীব্র আর্তনাদ করে উঠে। নিশুতি রাতে সে চিৎকার ভয়াবহ শুনায়। প্রীতি জেগেই ছিলো। প্রাপ্তি যাওয়ার পর থেকে তার তেমন একটা ঘুম হয় না। ঘরটায় তারা দুজন থাকতো একসাথে। কখনো অনেক ঝগড়া হতো কখনো দুবোনে গল্প, হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকতো। সেই মানুষটা নেই। প্রিয়া আপা নেই, সুমনা ভাবী নেই। বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে তার। কাউকে যে কষ্টের কথা বলে শান্তি পাবে সে মানুষটাও নেই। রাতে ঘুম হয়না। কখনো রাত জেগে ফেসবুক চালায় আবার কখনো বই পড়ে। খাটে হেলান দিয়ে বই পড়ছিলো সে। হঠাৎ এমন করুণ চিৎকারে বই ফেলেই ছুটে আসে ড্রয়িং রুমে। দেখে ডাইনিং টেবিলের কাছটায় নিচে বসে স্বর্ণা চিৎকার করছে। হাত পেটে। মুখ লালবর্ণ। প্রীতি দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে। কথা বলার পরিস্থিতিতে স্বর্ণা তখন ছিলোনা। প্রীতি চিৎকার করে মা, বাবাকে ডাকে। তার ডাক শুনে প্রবীর, প্রীতম, জোহরা বাইরে বেড়িয়ে আসেন। তড়িঘড়ি করে তাকে নিয়ে আসা হলো হাসপাতালে। ওটিতে নেওয়া হলো। সিজার করা হলো। নিজের সন্তানকে দেখে নিজেই হতাশ প্রীতম। একবার তার মনে উঁকি দিলো এটা কি আদোও তার সন্তান! পরক্ষণেই সে চিন্তা বাদ দিলো সে। কিন্তু এটা সত্যি সে বাচ্চাটাকে কোলে নেয়নি। ফাহিম এসেছিলো। অনেক কিছু নিয়ে এসেছিলো সাথে করে। জোহরা বেগম বেশ খুশি হয়েছিলেন। যদিও নাতনিকে তিনি মানতে পারছেন না। সুমনাকে পছন্দ না করার সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো সে শ্যামবর্ণ। একমাত্র ছেলের জন্য রূপসী মেয়ে চেয়েছিলেন তিনি। সুমনা অনেক চেষ্টা করেছিলো তার মন জয় করার। তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। কেমন বিতৃষ্ণা চলে এসেছিলো সুমনার প্রতি। তারপর শুনলেন সুমনার মা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিতৃষ্ণা কখন যে ক্ষোভে রূপ নিলো তিনি হয়তো নিজেও জানেন না। তিনি মনে মনে প্রীতমকে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। স্বর্ণাকে দেখে তিনি পারতপক্ষে খুশিই হয়েছিলেন। তারউপর স্বর্ণা ছিলো গর্ভবতী। মনে প্রাণে চাচ্ছিলেন সুমনা কোথাও চলে যাক। হয়েছোও তাই। সুমনা চলে গিয়েছে। কাউকে না বলে, সব অধিকার ছেড়ে অজানায় পাড়ি জমিয়েছে। ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিলো। কাগজটি প্রীতমের হাতে পৌঁছেছে। সেও সম্মতি দিয়ে দিয়েছে। এখন নব্বই দিন অতিক্রান্ত হলেই ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যাবে। সমঝোতা করার জন্য ডাকা হলেও প্রীতম তাতে যাবেনা। এটি জোহরা জানেন। তিনি বেশ অবাক হয়েছিলেন এটা দেখে যে, সুমনাকে দেওয়া সব গহনা সে খুলে রেখে গেছে। কাবিননামার টাকাও দাবি করেনি। সুমনাকে কখনো সে রকম আত্মসম্মানী মনে হয়নি জোহরার। সবসময় মন জুগিয়ে চলার চেষ্টায় থাকতো। সকালে চা, বিকেলে চা করে দিতো। স্বর্ণা তেমন নয়। তিনি তুলনা করতে চাইছেন না তবুও মনের অজান্তেই একটা তুলনা চলে আসে। প্রাপ্তিকে বাসায় রেখে গিয়েছে ফাহিম। সে আমেরিকা ফিরে গেছে। তার মা গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেখানে ফাহিমের বোন থাকে। প্রাপ্তি বাসায় আসার পর থেকেই চুপচাপ থাকে। কোনো কথা বলেনা। জোহরা ভাবলেন মেয়েটার সাথে তার কথাবলা প্রয়োজন। বিয়ে হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক হবে। এটা স্বাভাবিক। প্রাপ্তি যথেষ্ট বড় হয়েছে। এসব ব্যাপারে তার কাছে বলেছে। বাইরের মানুষের কাছেও বলতে পারে। তাহলে আর তামাশার বাকি থাকবেনা। বুঝাতে হবে তাকে। কড়া কথা শুনাতে হবে। সেই আগের চঞ্চল প্রাপ্তি আর নেই। কেমন মনমরা হয়ে বসে থাকে সবসময়। প্রীতি কতক্ষণ তার কানের কাছে ঘ্যানর-ঘ্যানর করেছে। তার কি হয়েছে জানতে চেয়েছে সে কোনো উত্তর দেয়নি। প্রীতি একপ্রকার বিরক্ত হয়েই প্রাইভেট পড়তে চলে গেছে। কি বলবে প্রাপ্তি? আমাকে আমার স্বামী ছাড়াও আরো দুজন পুরুষ ছুঁয়েছে? ফাহিম যাওয়ার আগে তাকে শাসিয়ে গেছে ঐদিনের কথাটা কাউকে বললেই সে ভিডিও ভাইরাল করে দিবে। প্রাপ্তি সেদিন প্রচুর কেঁদেছিলো। জানতে চেয়েছিলো কেন তার জীবন নষ্ট করলো ফাহিম। ফাহিম বাঁকা হেসে বলেছিলো,
"তোমার বোনের খুব দেমাগ তাই না প্রাপ্তি? ওর শাস্তিটা আমি তোমাকে দিলাম। তোমার বোন যখন শুনবে সারাজীবন অপরাধবোধে ভুগবে। এটা তার শাস্তি। আমাকে বিয়ে না করার শাস্তি।"

খাটে হেলান দিয়ে প্রাপ্তি ভাবছে, 'প্রিয়া আপা তোমার শাস্তিগুলো আমি পাচ্ছি। কেন আমার সাথে এমনটা করলে তুমি? আজ তোমার কারণে ফাহিম আমার সাথে এসব করেছে। তুমি, মা, প্রীতম ভাই সবাই দোষী। আমি তোমাদের কখনো ক্ষমা করবো না। কখনো না।'

আজ আকাশের রং পানসে হয়ে আছে। শরতকালে সচরাচর এমনটা হয় না। শরতের আকাশ থাকে মনোমুগ্ধকর। বিস্তৃত নীল সাগরের ন্যায় আকাশের মাঝে দেখা যায় সাদা, শুভ্র মেঘ ভেলার চলাচল, ছুটোছুটি। আজকের দিনটাও কেমন যেন। মরাটে। প্রবীরকে বিকেলে চা করে দিয়ে প্রাপ্তির ঘরে ঢুকলেন জোহরা। অবেলায় কাঁথা গাঁয়ে শুয়ে আছে। তিনি শিয়রের কাছে বসলেন। ডাকলেন প্রাপ্তির নাম ধরে। 
" প্রাপ্তি, উঠো। মাগরিবের আজান দিবো। সন্ধ্যা সময় কেউ এমনে ঘুমায়!"

প্রাপ্তি উঠে বসলো। চোখমুখ লাল হয়ে আছে। 
"চোখমুখের এই অবস্থা কেন তোমার?"

এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে করতে প্রাপ্তি বললো,
"কিছু না মা।"
"তোমার ভাইয়ের মেয়েরে দেখছো?"
"হুম"
"কি আর বলি। দুজনেই তো সুন্দর বাচ্চাটা এমন কেন হইলো। তাও আবার প্রতিবন্ধী।"
"থাক, এমনে বলো না। আল্লাহর দান সবই সুন্দর। চোখগুলো কত নিষ্পাপ।"

মেয়ের কথা শুনে জোহরা অবাক হলেন। অন্যসময় হলে তার সাথে তাল মেলাতো প্রাপ্তি। আজ কি হলো!
"প্রাপ্তি তোমার কি ফাহিমের জন্য মন খারাপ? চিন্তা কইরো না। তোমার পরীক্ষার পরই তোমাকে নিয়া যাইবো। আমার কাছে তাই বললো।"
"না, মা।"

প্রাপ্তি মুখে তাই বললো। তবে ওর অনেক ভয় হচ্ছে ও কিছুতেই আমেরিকা যাবেনা। যদি ওকে বিক্রি করে দেয় ফাহিম! ভিডিওটার ভয়ে মাকে কিছু বলেনি প্রাপ্তি। তাছাড়া মায়ের প্রতি তার অভিমানও প্রচুর। জোহরা বেগম চলে গেলেন। প্রাপ্তি অসময়ে গোসল করলো। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আজো ঘা গুলো স্পষ্ট। আয়নায় তাকালে নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হয় প্রাপ্তির। তার সুন্দর জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেলো। সে আজ অপবিত্র। মাঝেমধ্যে মনে হয় প্রাপ্তির জীবনটা দিয়ে দিক। মরণকে বরণ করে নিক। কিন্তু সাহসে কুলায় না। তবে ঘৃণা হয়। নিজের প্রতি, মায়ের প্রতি, ভাইয়ের প্রতি, আপার প্রতি। ফাহিমের প্রতি ঘৃণা হয় না। ক্ষোভ হয়। মনে হয় বটি দিয়ে তার মাথাটা শরীর থেকে আলাদা করতে পারলে প্রাপ্তি শান্তি পেতো। 

কলেজে ক্লাস নিচ্ছিলো শাহবাজ। হঠাৎ করেই পিয়ন তাকে এসে বললো তার সাথে দেখা করতে দুজন ব্যক্তি এসেছেন। অধ্যক্ষ স্যারের কক্ষে বসে আছেন। শাহবাজ জানেনা কেন তবে তার মন কু ডাকছে। এটাই তো হওয়ার ছিলো। পাঁচজন ব্যবসায়ী অনেক সমৃদ্ধশালী। তারা তাকে টাকার জন্য ধরবেই। তার খুঁজও তাদের কাছে আছে। বাসার পাশে মেলা জমেছে। শাহবাজ প্রিয়াঞ্জনাকে ওয়াদা করেছিলো আজকে ফিরে মেলায় নিয়ে যাবে। কিন্তু আদোও আজ বাসায় পৌঁছাতে পারবে তো? শাহবাজকে যদি ওরা মা র ধোরও করে তাও তো সে কিছু করতে পারবেনা। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কথাগুলো ভাবছে শাহবাজ।
.
.
.
চলবে..............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।