চুপকথা - পর্ব ১১ - মুশফিকা রহমান মৈথি - ধারাবাহিক গল্প


ওপাশ থেকে ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ কানে এলো। জেদের বসে কথা না বললেও মানের ভার অশ্রুতে পরিণত হয়েছে এতে সন্দেহ নেই। অসামান্য এই টান বাবা-মেয়ের। জেদ-রাগ আছে অথচ ভালোবাসা এখনো অম্লান। আরশিয়া ফোনটা কেটে দিল। তার চোখ ভিজে এসেছে। গলার কাছে বিষাদ দলা পাকাচ্ছে। পৃথুল রুমাল এগিয়ে দিয়ে ধীর স্বরে বলল,
 “মুছে নিন, কাজল লেপ্টে যাবে।”

আরশিয়া রুমালটি নিল। মুছে নিল বিষাদজোয়ার। তারপর ধীর কণ্ঠে শুধাল,
 “আপনি জানলেন কি করে, মানুষটার জেদের দেওয়াল ভাঙবে?”
 “তার সাথে আমার বড্ড মিল আছে তো, তাই একটা আঁধারে ঢিল ছুড়লাম।”
 “তাহলে আপনারো দূর্বলতা আছে? তার নামটি জানতে পারি কি?”

পৃথুল মৃদু হেসে সম্মুখে তাকালো। ধীর স্বরে বলল,
 “আমার দুর্বলতা আমাকে ধ্বংস করে চলে গেছে। এখন আর কোনো দূর্বলতা নেই।”

কথাটার মাঝে প্রগাঢ় বিষাদের ছাপ পেলো আরশিয়া। তার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মাঝে মাঝে কিছু নিষিদ্ধ কথা থাকে যা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না। সেগুলো অব্যক্তই ভালো। আরশিয়া দৃষ্টি বাহিরের দিয়ে নিল। বাস ছেড়েছে কিছু সময় হয়ছে। বিদ্যুৎ ডাকার শব্দ কানে আসছে। ঝুমঝুমে বৃষ্টির মাঝে পিচের রাস্তা চিরে চলছে বাস। কাচের উপর বিন্দু বিন্দু জমেছে শীতল বর্ষণের কনা। সেই সাথে মিশে আছে কিছু বিষাদ, কিছু সুখ, কিছু অপ্রাপ্ত আশ্বাস_______

********

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে অনেকক্ষণ। কিন্তু আত্মিকা পরলো বিশাল বিপাকে। তার সাথে যে ছেলেটির গিটার বাজানোর কথা সেই ছেলেটা হুট করেই পেট খারাপের জন্য অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। ফলে শেষ মুহূর্তে বিপাকে পড়তে হল তাকে। ভীষণ উদ্বিগ্নতায় তার হাত পা ঠাণ্ডা হতে লাগল। এখন একটিই উপায়, পারফরম্যান্স ক্যান্সেল করা। ব্যাপারটি তার জন্য অতিমাত্রায় আফসোসের। এই প্রথম এতো কষ্ট করে তোলা পারফরম্যান্স সে তুলবে না। আর ছেলেটিকেও বলিহারি, তোর পেট খারাপ হবে, তুই আগ থেকে জানাবি না? এভাবে হুট করে না বলে দিলে কি করে চলে? অনুষ্ঠান কতৃপক্ষ বার বার জিজ্ঞেস করছে,
 “এখন উপায় কি? কি করব? তুমি কি অন্যকারো সাথে স্টেজে উঠবে নাকি বাতিল করে দিব?”

বেশ দ্বিধায় পরে গেল আত্মিকা, এতো কষ্ট করে প্রাকটিস করার পর সেই পারফরম্যান্স না তোলাটা কষ্টদায়ক। কিন্তু একা ওঠাও সম্ভব না। কারণ গানের সেগমেন্টটা যেভাবেই সাজানো। আত্মিকার বন্ধুবান্ধবরা সহানুভূতি দেখিয়ে বলল,
 “দোস্ত তুই ক্যান্সেল করে দে।”
 “ক্যান্সেল করে দিব?”
 “উপায়ও তো নেই।”

এর মাঝেই এক বন্ধু প্রত্যুষ বলে উঠলো,
 “রাইয়ানকে বলে দেখবি? রাইয়ান অস্থির ইন্সট্রুমেন্ট বাজায়। তোদের সেগমেন্টটা একদম শেষের দিকে। একবার প্রাকটিস করার সুযোগ পাবি।”
 
সাথে সাথেই বাধ সাধল আত্মিকা। দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
 “অসম্ভব, উনার সাথে কি করে আমি স্টেজে উঠব?”
 “রিদিদের সাথে তো উঠতে পারছিস না। সে তো এখন টয়লেট গোয়িং এবং কামিং করছে।”
 “তাহলে পারফরম্যান্স ক্যান্সেল করে দিব।”
 “সেটার জন্য ও রাইয়ানের সাথেই কথা বলতে হবে তোর। কারণ দায়িত্বে সে।”
 
প্রত্যুষের উপর কেন জানে অনেক ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। এমন একটা ভাব যেন আত্মিকা জানে না রাইয়ানের দায়িত্ব এটা। সে জানে। তবুও শুনিয়ে তাকে কথাটা বলা হলো। আত্মিকা জানে বিধায়ই সে রাইয়ানের থেকে সাহায্য চাইবে না। ছেলেটি থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো। আত্মিকা কথা না বাড়িয়ে রাইয়ানের কাছে গেল। ক্লাবের জেনারেল স্যাক্রেটারি হওয়ার জন্য এই পুরো দায়িত্ব তার। সে স্টেজের কাছে দাঁড়ান। কানে হেডপিস, হাতে পারফরমারদের লিস্ট। খুব দক্ষভাব নিয়ে সে কাজ করছে। আত্মিকার কাছে সব কিছুই ফাও মনে হয়। সে তার কাছে গেলো। ধীর স্বরে বলল,
 “এক্সকিউজ মি?”
 
রাইয়ান তাকে সম্পূর্ণ না চেনার ভান করে বলল,
 “জি?”

রাইয়ান এই আলগা ঢংটা যে আত্মিকাকে বিরক্ত করার জন্য তা বুঝতে বাকি রইল না তার। সে ইচ্ছে করে এমনটা করছে, রিজেকশনের পর অধিকাংশ মানুষ এই ভাবটা ধরে। যেন তাদের অহমিকায় চোট না লাগে। আত্মিকা স্বাভাবিক ভঙিতে বলল,
 “আমার পারফরম্যান্সটা ক্যান্সেল হবে। আমার পার্টনার অসুস্থ, তাই আমি আজ অংশ নিবো না।”
 “এই লাস্ট মোমেন্টে তো পারফরম্যান্স ক্যান্সেল হবে না।”
 “মানে কি?”
 “মানে আপনাকে স্টেজে উঠতে হবে। একা বা অন্য কাউকে নিয়ে উঠতেই হবে।”
 “কিন্তু আমার পার্টনার অসুস্থ হয়ে গিয়েছে, আমিও মাত্রই জানলাম।”
 “এতে আমার কি করার আছে? সাধারণত ক্যান্সেলেশনের সময় থাকে, আগের দিন বা অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে। আমি আপনাদের সেগমেন্ট দিয়ে দিয়েছি। সবকিছুর একটা রুলস আছে তো নাকি? এখন হুট করেই সব গুবলেট করতে পারবো না।”

রাইয়ানের দায় সারা কথাগুলো শুনে প্রচন্ড রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো আত্মিকা। অগ্নিদৃষ্টিতে কাউকে বধ করা গেলে আজ রাইয়ানের মৃত্যু অনিবার্য ছিল। ফলে আগামীকাল শোকসভার ব্যাবস্থা হত, “কৃতি ছাত্র এবং সাংস্কৃতিক ক্লাবের জিএস রাইয়ান আহমেদের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত”। কিন্তু আফসোস তেমন কিছুই হল না। রাইয়ান তার ক্রোধাগ্নি দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেই স্টেজের চলমান পারফরম্যান্সে মনোযোগ দিলো। আত্মিকা কঠিন স্বরে বলল,
 “আপনি আমার উপর শোধ তুলছেন?”
 “বেয়ান, এত চাইল্ডিশ কাজ আমি করি না। দায়িত্ব বলেও একটি জিনিস আছে। আমি ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে দায়িত্বকে গুলাই না।”
 “আমি তো বলছি আমি আজ পারফর্ম করতে পারবো না। আমি স্টেজে উঠে যদি গান না গাই, তখন কি ক্লাবের বদনাম হবে না? সেটার দায়িত্ব আপনার নয়? আর ক্লাবের মানুষের খেয়াল রাখাটাও কিন্তু দায়িত্ব।”
 
রাইয়ান এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইল আত্মিকার দিকে। তার মুখে হাসির বালাই নেই। চোখ মুখ শক্ত। যেন তার দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন করায় সম্মানে আঘাত হানা হয়েছে। আত্মিকার দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল,
 “ক্লাবের মানুষদের কথা ভেবেই বলছি। আপনার একার জন্য অন্যদের মুসিবতে ফেলাতে পারবো না। আপনি যদি অংশ না নিতে চান, তবে এই ক্লাব থেকে রিজাইন করতে পারেন। আর যদি বলে আমি একজন ক্লাবের মেম্বার, আপনার দিকটা দেখা উচিত। তবে আমি বলবো, দরকার পড়লে আমি আপনাকে পার্টনারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। লাস্ট মোমেন্ট পারফরমার অনেক আছে ক্লাবে।”
 “লাস্ট মোমেন্টে?”
 “হ্যা, একটুকু ছোঁয়া লাগে গানটি তোলা এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। দরকার হলে আমি পারফর্ম করছি।”

রাইয়ানের প্রস্তাবে হতভম্ব হয়ে গেল আত্মিকা। সে অনেক দৃঢ়তার সাথেই প্রস্তাবটি দিলো। যা অনেকাংশে অনাকাঙ্ক্ষিত। আত্মিকাকে ভাবার সময় দিল না রাইয়ান। বেশ ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
 “আপত্তি থাকলে বলুন, নয়ত ক্লাব থেকে রিজাইন করতে পারেন।”

রাইয়ানের কথায় বেশ অপমানিত বোধ হল আত্মিকার। যে ক্লাবে সে এতদিনের মেম্বার সেই ক্লাব থেকে তাকে বের করে দেবার কথাটা অপমানেরই বটে। তবে সেও দমে যাবার পাত্রী নয়। সে এই ক্লাবে থাকবে না। তবে সে আজ পারফর্ম করেই রিজাইন করবে। শক্ত গলায় বলল,
 “বেশ, আপনি আমার পার্টনার হবেন।”

রাইয়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। যেন এমন কিছু আশা করছিল। নির্দ্বিধায় বলল,
 “মাই প্লেজার।”

******** 

গাড়ি থামল একটি রেস্টুরেন্টের কাছে। এখানে যাত্রীদের ফ্রেশ হবার ব্যাবস্থা রয়েছে। আরশিয়া তখন ঘুমে মগ্ন। কখন যে মেয়েটি ঘুমিয়ে গেছে তার হয়তো নিজের ও খেয়াল নেই। একটা সময় অসর্তকতায় পৃথুলের ঘাড়েই মাথা রেখে দিয়েছে সে। পৃথুলের মানুষের সংস্পর্শে থাকাটা খুব একটা পছন্দ নয়। কিন্তু কেনো যেনো মেয়েটিকে সরিয়ে দিতে ইচ্ছে হল না। ক্লান্ত মুখশ্রীটা শান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে। তার অবিন্যস্ত চুলগুলো ক্ষণে ক্ষণে পৃথুলের মুখে পড়ছে। কিন্তু বিরক্ত লাগছে না। বরং পরম যত্নে তার কানের কাছে গুজে দিয়েছে সে। সুপারভাইজার সাহেব এসে জিজ্ঞেস করলেন,
 “স্যার আপনি নামবেন না?”
 
পৃথুল তাকে ইশারায় বুঝালো, 
 “আস্তে কথা বলুন আমার স্ত্রী ঘুমোচ্ছে।”

সুপারভাইজার সাহেব চলে গেলেন। তখন খেয়াল করলো আরশিয়ার ঠোঁট খানিকটা কাঁপছে। এসি গাড়ি, উপরন্তু আবহাওয়াটা কিঞ্চিত শীতল। তাই এমনটা হওয়াটা স্বাভাবিক। পৃথুল তাকে দেওয়া কম্বলটা খুলে আরশিয়ার গায়ে দিল। সেও খানিকটা কম্বলের নিচেই। মন্দ লাগছে না ব্যাপারটা। একই কম্বলের নিচে স্বামী-স্ত্রী। যদিও তাদের মাঝের ব্যাপারটি স্বামী স্ত্রীর মত কম, বন্ধুত্বের বেশি। আরশিয়া তাকে কোনো কিছু নিয়েই খুব একটা প্রেসার দেয় না। সে যেটুকু করে নিজ থেকেই করে। আশ্চর্যের ব্যাপার, এই কাজগুলোতে তার বিরক্ত আসে না। আত্মকেন্দ্রিক পৃথুলের আরশিয়ার রঙ্গে রঙ্গিন হতে সত্যি আপত্তি নেই। মেয়েটিকে যতটা ইন্টোভার্ট ভেবেছিলো মেয়েটি তার থেকে অধিক মিশুক। অন্যদিকে পৃথুল ততটা মিশুক নয়। ফলে আগামী দশ দিন নিজেরা একা একা কি করে কাটাবে এটা নিয়ে প্রচুর চিন্তায় রয়েছে সে। মেয়েটি হয়তো খুব বোর হবে। তবুও তাকে নিয়ে আসা। হয়তো সমুদ্রের কিনারায় কোথাও না কোথাও তাদের সম্পর্কটাও নতুন ডিঙ্গিতে পাল তুলবে_________________

********

এক ঘন্টায় পারফরমেন্স রেডি করে অবশেষে স্টেজে তোলা হল। সকলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আত্মিকার দিয়ে। এই প্রথম তাদের দৃষ্টি ভয়ংকর লাগছে তার কাছে। আড়চোখে পাশে থাকা পুরুষটির দিকে একনজর তাকালো আত্মিকা। তার মধ্যে ততটা হেলদোল দেখা গেল না। বড্ড নির্বিকার সে। নিপুন হস্তে সে টিউনিং করতে ব্যাস্ত। গাল ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল আত্মিকা। লাইট জ্বলে উঠল অডিটিরিয়ামের। গিটারের সুর তুললো রাইয়ান। আত্মিকাও সুর মেলালো,
 “কিছু পলাশের নেশা, কিছু বা চাঁপায় মেশা,
তাই দিয়ে সুরে সুরে, রঙে রসে জাল বুনি,
রচি মম ফাল্গুনি।
একটুকু ছোঁয়া লাগে... একটুকু কথা শুনি।”

সুরের তালে মুখরিত হল অডিটিরিয়াম। গান শেষে করতালির গুঞ্জন শোনা গেল। সাথে সাথে নিজের ভেতর জমায়িত ভয়ের সমাপ্তি হল। রাইয়ানের ঠোঁটে হাসি। স্মিত স্বরে বলল,
 “অহেতুক ভয় পাচ্ছিলেন বেয়ান।”

আত্মিকা উত্তর দিল না। চুপ করে রইল। এই মানুষের সাথে কথা বলবে না সে।

অনুষ্ঠান শেষ হল দশটা নাগাদ। সব গুছিয়ে এখন বাড়ি ফেরার পালা। বাবার বারোটা মিসড কল চলে এসেছে। বাসায় গেলে বকার পাহাড় তার জন্য অপেক্ষিত তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিজের ব্যাগ গুছিয়ে যখন ই বের হতে যাবে জিএস সাহেবের সাথে আবার দেখা হল। সে ধীর স্বরে বলল,
 “রিক্সা আনিয়েছি, চলুন পৌছে দেই।”
 “আমি যেতে পারবো।”
 “জিএস এবং বেয়াই কোনোটা হিসেবেই এই রাতে আপনাকে একা ছাড়তে পারছি না। মেম্বারের প্রতি দায়িত্বের কথা বলছিলেন না, সেই দায়িত্ব বোধ আমার আছে। আর ভাবির মুখোমুখি তো হতে হবে। তাই বলছি রিক্সায় উঠুন।”
 
রাইয়ানের মাঝে আজ সেই ফাজলামো, চাঞ্চল্য স্বভাবটা পরিলক্ষিত হল না। বরং একটি দায়িত্ববান পুরুষের প্রতিরুপ লক্ষিত হল। অমিতটা কোথায় চাপা পড়ে গেছে। আত্মিকা বাহিরের দিকে লক্ষ্য করলো। নিগূঢ় আঁধার গিলে খাচ্ছে পৃথিবীকে। যতই সে মুক্তমনা হোক না কেন, এত রাতে একা এতোটা পথ পাড়ি দেওয়াটা বুদ্ধিমানের হবে না। তাই আপত্তি করল না আত্মিকা। রাইয়ানের সাথেই যাবার জন্য রাজী হল। 

রিক্সায় পাশাপাশি বসে থাকলেও বেশ দূরত্ব রাখল আত্মিকা। নীরবতা দুজনের মাঝে আরোও বেশি দূরত্ব তৈরি করলো। হঠাৎ সেই নীরবতা চিরে রাইয়ান বলল,
 “কিছু মনে করবেন না, একটা বেয়াদবি করবো। আমার এখন সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছে। আসলে আমি চেইন স্মোকার। সিগারেটের বাজে নেশা, তিন ঘন্টার মধ্যে না খেলেই মাথা খারাপ হতে লাগে।”

আত্মিকা অবাক নয়নে তাকিয়ে রইল রাইয়ানের দিকে। এই ছেলেটা দুদিন আগে তাকে প্রেম নিবেদন করেছিল? ছেলেরা নিজের বদ-অভ্যাসের কথা এত সাবলীল ভাবে বলতে পারে না। সেখানে এই ছেলে তার সামনে সিগারেট ধরানোর কথা বলছে? রাইয়ান আত্মিকার সম্মতির জন্য অপেক্ষা করলো না। সুন্দর একটি সিগারেট বের করে ধরালো। এবং বেশ আয়েশ করেই তাতে সুখটান দিল। আত্মিকা বিস্মিত স্বরে বললেন,
 “আপনি আমার সামনে সিগারেট খাচ্ছেন?”
 “হ্যা, এখন তো আপনাকে ইম্প্রেস করার কোনো তাড়া নেই আমার। তাহলে ক্ষতি কি?”
 “সামান্য আদব কায়দার ও ব্যাপার আছে, মেয়ের সামনে সিগারেট?”
 “রাস্তার টঙ্গে বসে মেয়েরা সিগারেট টানছে, সেখানে মেয়ের সামনে ধরালেই আদব কায়দার বই এ আগুন ধরে যাবে?”

আত্মিকা আর কথা বাড়ালো না। ছেলেটি কথায় পটু। তার সাথে তর্ক করে লাভ নেই। সে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল। যা আড়চোখে লক্ষ করলো রাইয়ান। ঠোঁটে অঙ্কিত হল বিশ্বজয়ের হাসি। সেই হাসির অর্থ হয়তো শুধু তারই জানা।

আত্মিকাকে ঠিক তাদের বাসার গেটে নামালো রাইয়ান। আত্মিকা ভেতরে যাবে তখন বলে উঠল,
 “কারোর উপকার করতে নেই। এরা সাহায্য নিয়েই নোয়াখালীদের মত চলে যায়। একটা কফির অফার তো দেওয়াই যায়”
 “আমি কাউকে দিব্যি দেইনি সাহায্য করার জন্য। পরোপকারী যদি বিনিময়ে কিছু চায় সেটা আর যাই হোক উপকার হয় না।”
 “একটা কফি খাওয়াতেও এতো কার্পন্যতা, এমন শানিত বাক্যের প্রহারে জর্জরিত হতে হচ্ছে যেন আমি কিডনি চেয়ে বসেছে।”
 “ভেবে দেখবো।”

বলেই ভেতরে পা বাড়ালো আত্মিকা। তার মুখে অনাকাঙ্খিত হাসি। তখন পেছন থেকে শুনতে পেলো,
 “রিকুয়েস্টটা এপ্রুভ করলে ভাল হয়। তাহলে সময় জানিয়ে দিতাম।”

আত্মিকা উত্তর দিল না। ভেতরে চলে গেলো। রাইয়ান তখন ও বসে আছে রিক্সায়। তারপর হাসিমুখে সে রিক্সাওয়ালাকে বলল,
 “মামা, চল ঢাকা শহর ঘুরবো।”

*****************

আরশিয়ারা কক্সবাজারে পৌছালো ভোরের দিকে। ভোরের আলো এখনো ফোটেনি, পাখির কিচিরমিচির বাতাসে মিশে আছে। সিবিচের কাছেই একটি হোটেলে উঠল তারা। হোটেলে পৌছেই গা এলিয়ে দিল আরশিয়া। জার্নিটা ক্লান্তিময় ছিল না। কিন্তু অনেকক্ষণ বসে থেকে মাজা ধরে এসেছে। পৃথুল ব্যাগ রাখল। ব্যাগ থেকে নিজের জিনিসপত্র বের করেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো সে। বিশমিনিট পর সাহেব বনে বের হল। আরশিয়া জিজ্ঞেস করতেই বলল,
 “আমার আজ কিছু কাজ আছে, আপনি নাস্তা অর্ডার করে নিয়েন। আমার অপেক্ষায় থাকবেন না। চাইলে বিচটা ঘুরে দেখতে পারেন।”
 “আপনি নাস্তা করবেন না?”
 “ওখানেই করে নিবো। আসলে সবাই অপেক্ষা করছে তো।”

বলেই বেরিয়ে গেলো পৃথুল। আরশিয়া যেখানেই বসে রইলো একা। সন্ধ্যে নাগাদ যখন পৃথুল ফিরলো, তখন ঘরে নীরবতা। আরশিয়াকে ডাক দিতেও কোনো সাড়া নেই………… 
.
.
.
চলবে...............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন