চুপকথা - অন্তিম পর্ব ১৪ - মুশফিকা রহমান মৈথি - ধারাবাহিক গল্প


দিনটি শনিবার, সকাল থেকেই তীব্র মেঘের ঘনঘটায় কাঁপছে পৃথিবী। বৃষ্টি নামার আন্দোলন চলছে। দক্ষিণা বাতাসে তোলপাড় হচ্ছে পৃথিবী। এমন আবহাওয়ায় স্ত্রীর ছবি দেখতে ভালোবাসেন হাসান সাহেব। স্ত্রীর সাথে বৃষ্টিবিলাস করার এক অদম্য ইচ্ছে তার অপূর্ণ। সেই নারীর বৃষ্টি ভালো লাগত না। তাই কখনো জোরও করা হয় নি। তাই এখন যখন সে নেই তখন তার ছবি দ্বারাই ইচ্ছে খানা পূর্ণ করে সে। বারান্দার বাগানবিলাসটা বারবার দুলছে। এমন সময় আনহার চিৎকার শোনা গেল,
 “বাবা, বুবু দুলাভাই আসছে।”

আনহা অতিউল্লাসে বাবার ঘরে ছুটে এসেছে। তার কথা শুনে হতভম্ব হলেন হাসান সাহেব। নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করলেন,
 “আরশিয়া এসেছে?”
 “হ্যা বাবা। দুলাভাই এবং তার চাচাতো ভাইও এসেছেন।”

হাসান সাহেবের ভ্রু কুঞ্চিত হল। নির্লিপ্ত স্বরে বললেন,
 “আমাকে জানাচ্ছিস কেন? 
 “বাহ রে, তারা ড্রয়িংরুমে বসে আছে তুমি যাবে না?”
 “না।”

রুক্ষ্ণ কণ্ঠে উত্তর দিলেন হাসান সাহেব। আনহা বাবার উপর চরম বিরক্ত হলেও প্রকাশ করলো না। হতাশ স্বরে বলল,
 “ঘরে জামাই আর কুটুম বাড়ি এসেছে, কি ভাববে? আমরা ম্যানারলেস। আহা! বুবু, ওর সম্মানে কাঁথায় আগুন জ্বালিয়ে দিলে।”
 “এতো কথা কেন বলিস তুই? বেশি পাকা হয়েছ তাই না?”
 “ছোট বলে কথার দাম দিলে না তো, কি আর করার। কাঙ্গালের কথা বাসি হলে ফলে।”

বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। হাসান হাসেব মিয়ে গেলেন। স্ত্রীর ছবির দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। সেদিনের পর থেকে মেয়েটি প্রতিনিয়ত তাকে ফোন করেছে কিন্তু একটিবারের জন্য ফোন ধরেননি তিনি। অভিমানের পাহাড় যে তাহলে হাটু ভেঙ্গে গুড়িয়ে পড়বে। মেকি জেদটা তখন কর্পূরের মত উবে যাবে। এর মাঝেই ধীর কণ্ঠ কানে এলো,
 “তুমি এখনো আমার উপর রেগে আছো বাবা? তোমার অভিমান এতটাই গাঢ় যে, আমি আসার পর ও নিজেকে আড়াল করে রেখেছো?”

আরশিয়ার কণ্ঠ কানে আসতেই চমকে উঠলেন হাসান সাহেব। পেছনে ফিরতেই দেখলেন, মূর্ছানো মুখশ্রীতে আরশিয়া তার দিকে চেয়ে আছে। চোখগুলো টলমল করছে তার। হাসান সাহেবের অভিমানের পাহাড়ে ফাটল বাধলো। মেয়েটির টলমলে চেহারা দেখতেই কাবু হয়ে পড়লেন। মনে হল তার সামনে সেই ছোট আরশিয়া, খেলতে যেয়ে হাটুতে ব্যাথা পেয়ে বাবার কাছে এসেছে অভিযোগ জানাতে। কত শত অভিযোগ! বান্ধবীদের নিয়ে, খেলনা নিয়ে। সেই ছোট আরশিয়া এখন কত বড় হয়ে গেছে, সে এখন অন্যের গৃহে জ্যোতিরুপে প্রজ্জ্বোলিত হচ্ছে। আরশিয়া এগিয়ে এলো। বাচ্চাসুলভ কণ্ঠে বলল,
 “বাবা, তুমি আমার উপর এখনো রেগে থাকবে? মা নেই, তুমিও মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি কোথায় যাবো?”

আরশিয়ার কথাতে আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না হাসান সাহেব। এই দীর্ঘদিনের অভিমান নোনা জল রুপে গড়িয়ে পড়ল চোখ থেকে। হাতের উল্টোপৃষ্ঠ দিয়ে চোখের জল মুছলেন হাসান সাহেব। মেয়ের মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
 “কেমন আছিস মা?”

*******

বাবা মেয়ের অভিমানের আজ ইতি টানার দিন। ভেতরের ঘরে তারা সেই অভিমান মেটাতে ব্যস্ত। মিলনমেলায় ব্যাঘাত ঘটাতে দিল না পৃথুল। রাইয়ানকে নিয়ে বসার ঘরেই বসে রইল। রান্নাঘর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আত্মিকা তাদের দেখছে। বুবু এই ছেলেটিকে কেন আনলো, হিসেব মিলাতে পারছে না সে। ছেলেটির মতলব বুঝতে পারছে না। আজকাল তার মনোবস্থা বোঝা যাচ্ছে না। ভেবেছিলো ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলে সে লাগাতার ম্যাসেজ দিবে। জ্বালাতন করে তার ধারণা বদলে দিবে। ফলে আবারো ছেলেটিকে সহ্য সীমার দাগের বাহিরে রেখে দিবে আত্মিকা। কিন্তু তেমন কিছুই হল না। উলটো বিগত সতেরো দিনে একটি ম্যাসেজ ও দেয়নি সে। এমন কি ভার্সিটিতেও তার সাথে দেখা হয় না। যদি কালেভাদ্রে সামনে পরেও যায়, ছেলেটি তাকে এড়িয়ে চলে যায়। যেনো মানুষটি চিনেও না আত্মিকাকে। কি অদ্ভুত। অথচ এখনো তার প্রোফাইলের কভার পিকে তাদের দুজনের ছবি। ব্যাপারটা বড্ড ভাবাচ্ছে আত্মিকাকে। সাধারণত আত্মিকা এসব ব্যাপারকে তেমন তোয়াক্কা করে না। কিন্তু এখন করছে। এতোটাই যে দিনে একটি বার হলেও মানুষটির প্রোফাইলে ঢু মারে সে। নিজের এই কাজটিও তাকে উত্যোক্ত করছে। এতটা প্রাধান্য একটা আজাইরা ছেলেকে দেবার মানেই নেই। এই যে এখনো সে তাকে নিয়েই ভাবছে। চাইছে না ভাবতে, ভাবার বিষয়ের ও অভাব নেই তার কাছে। এই যে যেমন, বুবু আর বাবার কি কথা হচ্ছে? আর সাতাশ দিন পর বুবু কি ভেবে বাসায় এসেছে? এসেছে ভালো কথা এই ছেলেটিকে কেনো এনেছে?----- ঐ ঘুরে ঘুরে ফিরে চিন্তার সুঁই রাইয়ানে যেয়েই আটকাচ্ছে। ব্যাপারটি অসহ্য। এর মাঝেই আনহা পাশ থেকে বলে উঠল,
 “এভাবে চোরের মতো দুলাভাই আর কুটুমকে দেখছিস কেন আপা?”
 
আনহার কথায় চমকালো আত্মিকা। ভড়কে উঠলো বেশ। আমতা আমতা করে বলল,
 “আমি মোটেই তাদের দেখছি না।”
 “দেখছিস, আমি দেখেছি।”

আত্মিকা তার কথা পাত্তা না দিয়েই বলল,
 “কথা কম, নাস্তাগুলো নিয়ে যা।”
 “আমি কেন যাব? দেখছো না আমি পড়ছি?”
 “তা বিদ্যাসাগর তোমার বই কোথায়?”
 “আমি মনে মনে পড়ি, আমার বই এর দরকার হয় না।”

বেশ ভাব নিয়ে কথাটা বলল আনহা। আত্মিকা তার দিকে চোখ ছোট করে তাকায়। কড়া স্বরে বলল,
 “তুই যাবি নাকি পিঠ ভাঙব?”

আনহা মুখ বাকিয়ে বলল,
 “দূর্বল পেয়ে সবাই আমার উপরই হুকুম চালাচ্ছো তো, উপরওয়ালা দেখছেন।”
 “যা, যা।”

*******

খাবার টেবিলে পিনপতন নীরবতা। কারোর মুখে কোনো কথা নেই। পৃথুলের পাশে আরশিয়া বসে রয়েছে। তাদের ঠিক মুখোমুখি বসে রয়েছেন হাসান সাহেব। তিনি চুপচাপ খাচ্ছেন। পৃথুল আরশিয়াকে ইশারা করে জানতে চাইলো,
 “বরফ গলল?”

আরশিয়া মৃদুভাবে মাথা দোলালো। ফলে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো পৃথুল। খাওয়া শেষে হাসান সাহেব ভরাট গলায় বললেন,
 “পৃথুল তোমার সাথে আমার কথা রয়েছে।”

পৃথুল বিনয়ী কণ্ঠে বলল,
 “জি।”

তারপর তার পিছু পিছু তার ঘরে গেলো। আরশিয়াকে খুব একটা বিচলিত দেখালো না। সে স্বাভাবিক চিত্তেই বোনদের সাথে আড্ডায় মগ্ন হল। নিজ ঘরে গেলো সে। এই ঘরে হাজারো স্মৃতি জুড়ে আছে, অথচ এই ঘরটি এখন তার নয়______

*******

নিগূঢ় রাত, কালো আকাশে কালো মেঘের বিস্তারণ। বারান্দায় হাটু গেড়ে বসে রয়েছে আরশিয়া। উড়ছে তার অবিন্যস্ত খোলা চুল। এর মাঝেই এক কাপ চা এগিয়ে দিলো পৃথুল। মৃদু স্বরে বলল,
 “যদিও অনেকে বলে চা খেলে ঘুম হয় না, তবে সারাদিনের ক্লান্তির শেষে এই চায়ের এক চুমুক শান্তির দোলা দেয়।”
 “বাবার সাথে আপনার কি কথা হয়েছে?”

আরশিয়ার স্পষ্ট প্রশ্নে মৃদু হাসলো পৃথুল। পৃথুল এবং হাসান সাহেবের মাঝে ঠিক কি কথা হয়েছে সেটা তারা বাদে কেউ জানে না। আসার পর আরশিয়া তাকে শুধায়নি, ভেবেছিলো পৃথুল নিজ থেকে বলবে। কিন্তু কৌতুহল ঠিক দমাতে পারলো না। পৃথুল তার মুখে আসা চুলগুলো আলতো হাতে গুজে দিলো কানের পেছনে। তারপর রুক্ষ্ণ আঙ্গুল দ্বারা বিক্ষিপ্তভাবে স্পর্শ করতে লাগলো কোমল গাল। মৃদু স্বরে বলল,
  “তিনি আমাকে আকাশসম দায়িত্ব দিয়েছেন। এবং অনেকটা হুমকিও দিয়েছেন। যদি দায়িত্ব পালন না করি তবে আমাকে তিনি দেখে নিবেন।”
  “কি দায়িত্ব?”
 “আপনার প্রাণোচ্ছ্বল হাসি যেনো কখনো মলিন না হয়।”

আরশিয়ার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে কথাখানা বললো পৃথুল। আরশিয়া চোখ নামিয়ে নিল। ঠোঁটের কোনে অমলিন হাসি। আজ তাদের বিয়ের একমাস পূর্ণ হল, এই একটা মাসে অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে সে। যার অন্যতম হল, 
 “পৃথুল তাকে ভালোবাসে।”

*********

খা খা রোদ্দুরে ছাতি হাতে ক্যাম্পাসের পিচের রাস্তায় হাটছে আত্মিকা। হাতে মোটা মোটা চারটে বই। ব্যাগে জায়াগা নেই। এখন একবার নীলক্ষেত যেতে হবে। একটি ভুল বই আনা হয়ে গেছে। বইটি বদলাতে হবে। আগামীকাল থেকে ফাইনাল টার্ম শুরু হবে। এর পর বদলানোর সময় পাবে না। এরমাঝে পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠলো তাকে, পেছনে তাকাতেই দেখলো চতুর্থ বর্ষের ইসমাইল ভাই। ইসমাইল ভাইকে দেখেই মুখ ম্লান হয়ে গেল তার। এই লোকের একটি চরম বাজে স্বভাব রয়েছে। তার দুদিন পর পর প্রেমে পড়া রোগ রয়েছে। আজ এর প্রেমে পড়ে তো কাল তার প্রেমে পড়ে। তার মনখানা যেনো উড়োপাখি। জুনিয়র কাউকেই তিনি বাদ রেখেছেন বলে ধারণা নেই আত্মিকার। গত মাসেও তাকে অন্য মেয়ের সাথে দেখেছিলো আত্মিকা। ফলে লোকটি কথা বলতে এলেই এক অজানা অস্বস্তি তাকে ঘিরে ধরে। তবুও সিনিয়র ভাই তাই জোরপূর্বক হাসি একে বলল,
 “জি ভাই?”
 “কই যাচ্ছো?”
 “এই তো ভাই বাসায়?”
 “এতো রোদে হেটে যাবা? আমার বাইক আছে চলো পৌছে দেই?”
 “না ভাই দরকার নেই, আমি যেতে পারবো। আপনি কেনো শুধু শুধু ওদিকে যাবেন।”
 “আরে আমার ওদিকে কাজ আছে, চলো তো।”
 “আসলে ভাই, আমি তো সরাসরি বাসায় যাবো না। বুবুর বাড়ি ঘুরে যাবো। আপনি তো যাচ্ছেন আমার বাড়ির দিকে, বুবুর বাড়ি তার উলটো দিকে। খামোখা এতোটা কষ্ট করার প্রয়োজন নেই। আপনি রোদে কালো হয়ে যাবেন।”

ইসমাইল ভাই তার রুপের বিষয়ে খুব সচেতন। তাই এই কালো হবার কথা শুনতেই তিনি একটু পিছিয়ে গেলেন। আমতা আমতা করে বললেন,
 “কালো হয়ে যাবো না?”
 “জি।”
 “ঠিক আছে, অন্যদিন পৌছে দিবো তোমায়।”

কথাটা শুনেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো আত্মিকা। তার কাছ থেকে বিদায় নিতেই যাবে, তখনই ইসমাইল হাসি বিস্তার করে বলল,
 “সেদিন তোমার গান শুনলাম, গলা তো নয় যেনো রুনা লায়লা। তুমি গান শিখো?”
 “শিখতাম ভাইয়া।”
 “তাই তো এতো সুন্দর। সেদিন তোমাকে লাল পাড়ের শাড়িতেও অনেক সুন্দর লাগলো। এটা কি জানো আত্মিকা?’
 “জি না, আপনি বললেন তাই জানলাম।”
 “দেখো ঘুরিয়ে কথা বলার স্বভাব আমার নয়, তবে সেদিন তোমাকে একেবারেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বনলতা সেনের মতো লাগছিল।”
 “ভাইয়া বনলতা সেন জীবনানন্দ দাশের....”
 “অহ, মিস্টেক। আসলে আমি আমার ধ্যানজ্ঞান খুঁইয়ে ফেলেছি। আমার সব চিন্তার কেন্দ্র এখন তুমি আত্মিকা।”
 
আত্মিকার বুঝতে বাকি রইলো না, কথা কোথায় যাচ্ছে। সে কিছু বলার পূর্বেই একটি শক্ত হাত তার কাঁধ আকড়ে ধরলো। ভারী স্বরে বলল,
 “ভাইয়া অন্যের গার্লফ্রেন্ডকে চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু বানানোটা খুব একটা ভালো নয় বলে আমি মনে করি।”

পাশের পুরুষের এরুপ কথা শুনতেই আত্মিকা এবং ইসমাইল বিমূঢ় দৃষ্টিতে চাইলো তার দিকে। রাইয়ান স্থির, সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ইসমাইলের দিকে। যেনো গিলে খেয়ে ফেলবে এখন ই। ইসমাইল আমতা আমতা করে বলল,
 “সে তোমার গার্লফ্রেন্ড?”

রাইয়ান মাথা দুলিয়ে বলল,
 “জি, আমাদের দেড় মাসের নিব্বা নিব্বি লাভ। অনুষ্ঠানের রাত থেকেই স্টার্ট হয়েছে।”

কথাটি শুনতেই যেনো আকাশ থেকে পড়লো আত্মিকা। এই ছেলে বলে কি? মাথা নষ্ট নাকি? ইসমাইল নিজের কাজে বেশ লজ্জা পেল। ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
 “সরি আত্মিকা, আমি জানতাম না। সরি রাইয়ান।”

বলেই উল্টো দিকে হাটা দিলো সে। রাইয়ান পারমিশন ছাড়াই আত্মিকার হাত ধরে তাকে রিক্সায় তুললো। নিজে বসল পাশে। আত্মিকা এতটাই শক যে সে বুঝতে পারছে না ঠিক কি হচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে শুধালো,
 “আপনি মিথ্যে বললেন কেন?”
 “আমি মনে করি ওই মনফেকু ইসমাইলের সত্যি সত্যি গার্লফ্রেন্ড হবার থেকে আমার মিথ্যে গার্লফ্রেন্ড হওয়া ঢের ভালো।”
 “আমি মোটেই উনার গার্লফ্রেন্ড হতাম না, আমি উনাকে মানা করে দিতাম।”
 “আজ পর্যন্ত কেউ উনাকে বয়ফ্রেন্ড ব্যাতীত মানা করেছে কি না আমার জানা নেই। আপনি এই ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করবেন আগে বলবেন না? খামোখা আমি অনন্ত জলিল সাজতে গেলাম।”

এই ছেলের সাথে সোজা ভাষায় কথা বলাই বিপদ। ফলে হাল ছেড়ে দিল আত্মিকা। পাশাপাশি বসে রইলো মুখে কুলুপ এটে।

আত্মিকা নীলক্ষেতের কাজ সেরে বাড়ি এলো। এতোটা সময় বডিগার্ডের মতো রাইয়ান তার সাথেই ছিলো। কোনো কথা বলেনি, শুধু সিগারেট টেনেছে। মোট দুটো সিগারেট সে শেষ করেছে। ছেলেটি যেনো মোটেই পড়োয়া করল না তার পাশে একটি মেয়ে। আত্মিকাও তাকে পরোয়া করলো না। সারাটা সময় কোনো কথাই হলো না তাদের। শুধু আত্মিকা গেটে ঢুকবার সময় হতাশ গলায় বলল,
 “কফিটা বোধ হয় তার খাওয়া হলো না। শুধু উপকারই করে যাও, আর নদীতে ভাসাও।”

আত্মিকা মৃদু হাসলো। উত্তর না দিয়েই ভেতরে চলে গেলো সে_______                                                                                                                                                                                                                                           

*******

খোলা চুলগুলো দু হাতে খোঁপায় বাধলো আরশিয়া। সামনে মোট দুশত চল্লিশটা খাতা। এগুলো আজকেই দেখে শেষ করতে হবে। তারপর রেজাল্ট শিট বানিয়ে অফিসে জমা দিতে হবে। ঘাড় বেয়ে নামছে ঘামের নোনারেখা। অসহ্য গরম আজ। গরমে যেনো জীবন যায় যায় হাল। এসিটাও কাজ করছে না। রতন ভাইকে বলতে হবে এসি ঠিক করার কথা। তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে পুনরায় মনদিল খাতায়। এমন সময় দরজায় নক করলো কেউ। আরশিয়া ভেবেছিলো রতন ভাই। তাই মাথা না তুলেই বলল,
 “কাম ইন।”

রুমে প্রবেশ করতেই একটি চিকন কণ্ঠ কর্ণপাত হল,
 “ম্যাডাম রেজাল্ট শিট কি বানানো হয়ে গেছে? মোল্লা স্যার আমাকে মেইন রেজাল্ট বানাতে বলেছেন।”

আরশিয়া মাথা তুলে চাইলো। সামনে থাকা নারীর মুখোপানে চাইতেই তার মস্তিষ্ক স্তব্দ হয়ে গেলো। কপালে জমলো বিন্দু বিন্দু ঘাম। হৃদস্পন্দের বেগ বেসামাল হলো। হৃদয়ের মাঝে ঘাপটি মারা ভয় উঁকি দিলো মুহূর্তেই। মেয়েটিকে সে চিনে না, কিন্তু সে তাকে চিনে। সেই মেয়েটি তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী, শতরুপা। আরশিয়া বিমূঢ় কন্ঠে শুধালো,
 “আপনি?”
 “ওহ, আমি এখানে নতুন। পার্টটাইম টিচার হিসেবে জয়েন করেছি। আমার নাম শতরুপা হালদার।”

মেয়েটির কথার উত্তরে কিছুই বলতে পারলো না আরশিয়া। মেয়েটি যখন আবারোও রেজাল্ট শিটের কথা বলল, তখন খুব কষ্টে আরশিয়া বলল,
 “আমার সময় লাগবে, আমি পরে আপনাকে দিব।”

মেয়েটি মৃদু মাথা দুলিয়ে চলে গেলো। কিন্তু রেখে গেলো একরাশ অনাকাঙ্খিত ভয়, দুশ্চিন্তা, উচাটন________

বিকেলের সূর্য পশ্চিম কাখে নুইয়ে পড়েছে। অলস পা জোড়া হাটতে চাইছে না আরশিয়ার। তবুও জোর করে নিজেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। একাডেমিক ভবন থেকে বের হতেই দেখলো বুকে হাত বেঁধে পৃথুল দাঁড়িয়ে আছে। পরণে কালো একটি শার্ট। তার চোখ খুঁজছে আরশিয়াকে। পৃথুলের শান্ত মুখশ্রী দেখতেই সবল দুশ্চিন্তারা উবে গেলো। কাছে গিয়ে শুধালো,
 “আপনি কি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন?”
“দশটা নয় পাঁচটি নয়, একটি বউ। আর কার জন্য অপেক্ষা করবো?”

পৃথুলের কথা শুনেই হাসির মাত্রা বিস্তারিত হল। মৃদু স্বরে বলল,
 “চলুন।”

তাদের এই সুখময় মুহূর্ত কারোর নজর এড়ালো না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখলো সে_______

*********

আষাঢ় মাসের সূচনা পর্ব। গতকাল রাতে তীব্র বর্ষনে পৃথিবী এখন শীতল। এই শীতলতার মাঝে নিজস্ব শান্তি কুড়াতে কাদাপানি পেরিয়ে কফি শপে পৌছেছে রাইয়ান। অবশেষে বহুকাঙ্খিত কফি অফারটি পেয়েছে সে। গত পরশু সেই আত্মকেন্দ্রিক নারীটি অবশেষে তাকে কফি অফার দিল। প্রায় তিন মাসেরও অধিক এই অপেক্ষা। তবুও অপেক্ষাটি যেনো বড্ড মধুর ছিল। রাইয়ান এর কাছে মোটেই বিরক্ত লাগেনি এই অপেক্ষা। কারণ, সেই বলেছে অনুরাগ এভারেষ্ট জয়ের সমকক্ষ। রাইয়ান একনজর ঘড়ির দিকে তাকালো। মেয়েটি বলেছিলো সে পাঁচটা নাগয়াদ পৌছাবে। এখন পাঁচটা পনেরো। এই পনেরো মিনিটের অপেক্ষা যেন সহস্র বছরের সমতুল্য। কিন্তু রাইয়ানের আপত্তি নেই। সে আসলেই চলবে। এমন সময় মনে হল সাদা সালোয়ার কামিজ পরিহিত একটি নারী তার দিকে ছুটে এলো। সাদা রঙ্গ সর্বদাই শুদ্ধ, কিন্তু নারীটির দেহে যে তার স্নিগ্ধতা বর্ধিত হয়েছে। অপলক নয়নে বহুক্ষণ চেয়ে রইলো রাইয়ান। তার অবাধ্য নয়ন হামলে পড়লো নারীর প্রতিটি রন্ধে। নারী কিঞ্চিত লজ্জিত স্বরে বলল,
 “দেরী করে ফেললাম তাই না?”

রাইয়ান উত্তর দিলো না। তার দৃষ্টি স্থির মনোহরিনীর মুখশ্রীতে। মনে মনে আওড়ালো,
 “মনোহারিণী, 
এমন চুপিচুপি এলে, হৃদয় মাঝে! 
হৃদ কুঠুরিতে তোমার নামেই সাঝ নামে! 
সাঝের বেলার স্নিগ্ধ আলোয়, প্রেমে পড়েছি তোমার! 
তোমার আখিদ্বয়ের গভীর মায়ায় প্রেম হয় বারবার! 
মনোহারিণী মন কাড়িলে আমার! 
চলো না ডুব দেই প্রেম মহোনায়!” (জান্নাতুল মিতু)

আত্মিকা আবারো শুধালো,
 “আপনার অপেক্ষা করতে সমস্যা হয় নি তো?”
 “আপনার জন্য আমি সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারি বেয়ান।”
 “আবার ফ্লার্ট করছেন?”
 “উহু, এবার সত্যি প্রেমে পড়েছি। আসলে বারবার পড়ি, তাও হাটু ভেঙ্গে। আপনার কাছে সেটা অতি সহজ মনে হতেই পারে। কিন্তু আমার অনুরাগটি এমনই। তবে তা এভারেষ্ট জয়ের থেকে কম কিছু না। হৃদয় দহণ সহ্য করা পাহাড় পাড়ি দেবার থেকেও কঠিন।”

আত্মিকা নতজানু দাঁড়িয়ে রইল। এই প্রথম রাইয়ানের চোখে তাকাতে ভয় হচ্ছে তার। শীতল দিঘীতে হৃদ্যয় হারানোর ভয় হচ্ছে। মৃদু স্বরে বলল,
 “ভেতরে চলুন। কফি খাব।”
 
রাইয়ান মৃদু হাসলো। তারপর রুক্ষ্ণ হাতের ফাঁকে পুরলো কোমল হাতটি। মেকি গার্লফ্রেন্ড, বেয়ানকে সত্যি সত্যি হৃদয় জালে আটকাবার পালা_______________

**********

সকাল থেকেই প্রচন্ড ব্যস্ত আরশিয়া। মোট চারটী ক্লাস নিয়েছে। এখনো একটি বাকি। আজ বাসায় তাড়াতাড়ি যাবে যে। কারণ আজ তার এবং পৃথুলের বিয়ের একশত দিন হবে। মোতালেব সাহেবকে ফোন করে বলবে, 
 “মামা, আমি এই সম্পর্কে সারা জীবন আবদ্ধ থাকতে চাই।”

কেন হবে না, পৃথুলের প্রতি মোহটা এখন প্রণয় রুপে তাকে ঘিরে রয়েছে। এই একশত দিতে পৃথুলকে প্রতিদিন একটু একটু করে আবিষ্কার করেছে সে। মাঝে মাঝে তর্ক লেগেছে, মাঝে মাঝে ঝগড়াও হয়েছে। কিন্তু মানোমালিন্য হয়নি। বরং নিজেদেরকে বোঝার সময় নিয়েছে তারা। এখন পৃথুলের অনেক পছন্দ অপছন্দের কথা আরশিয়া জানে। পৃথুল স্বীকার না করলেও তার চুপকথাগুলো বুঝে। অব্যক্ত কথাগুলো বোঝার ক্ষমতা নেই কে বলেছে। বরং আরশিয়া থেকেও অধিক সে আরশিয়াকে চিনে। তাই তো এই একশ দিনের সময়টা ঠিক কখন কেটে গেছে টের ও পায় নি তারা। আরশিয়া দিন গোনাও ছেড়ে দিয়েছে। কারণ জানে এই মানুষটির সাথেই তার নিয়তি। দরজায় কড়ার শব্দ কানে আসতেই আরশিয়া ব্যস্ত স্বরে বলল,
 “ভেতরে আসুন।”
 “ম্যাম এখানে আপনার সিগনেচার লাগবে।”

কণ্ঠটি শুনতেই মাথা তুলে তাকাল আরশিয়া। শতরুপার ব্যাপারটি প্রথমদিন তাকে বিরক্ত করলেও এখন করেনি। মেয়েটি প্রতিনিয়ত তার সম্মুখে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু এতে আরশিয়া ভাবলেশহীন। সে পৃথুলকেও ব্যাপারটি জানায় নি। অতীতের কাঁদা ঘেটে বর্তমানের সুখ হারাবা পক্ষপাতী নয় সে। মৃদু স্বরে বলল,
 “বসো শতরুপা।”
 
শতরুপা বসল, তাকে চিন্তিত ঠেকলো। যেনো একটি প্রশ্ন তাকে ভেতর থেকেই বিরক্ত করছে। আরশিয়া কাগজগুলো পাল্টাতে পাল্টাতে শুধালো,
 “কিছু বলবে?”
 “ম্যাম, পৃথুলের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”

কথাখানা শুনতেই চোখ কুচকে এলো আরশিয়ার ভ্রুজোড়া একবিন্দুতে এনে শান্ত গলায় বলল,
 “সে আমার হাসবেন্ড।”
 “পৃথুল বিয়ে করেছে?”
 
মেয়েটির প্রশ্নের বাহারে বিরক্তি বাড়ছে বই কমছে না। খানিকটা থেমে বলল,
 “কেনো বলো তো, তার কি বিয়ে করার কথা নয়?”
 “না না, এমন কিছু না। আসলে ও আমার প্রতি যেভাবে অবসেসড ছিলো। আমার সাথে যখন ডিভোর্সের কথা হচ্ছিলো, সে আমার বাসার সামনে এসে বসে থাকতো। আমার সাথে কথা বলার জিদ করতো। ভীষণ পাগলামি। আমি তো ভেবেছিলাম সে বিয়েই করবে না!”

আরশিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শতরুপার দিকে। শতরুপা তখনো তার কথায় মগ্ন। আরশিয়া শীতল কণ্ঠে বলল,
 “সেই ঘটনার চার বছর হয়ে গেছে। চার বছর আগের ক্ষত এর দাগ মিটেনি ঠিকই, কিন্তু এখন তার যন্ত্রণা নেই।”
 
শতরুপার মুখ কালো হয়ে গেলো। সে কথা খুঁজে পেলো না। আরশিয়া সাথে সাথেই প্রশ্ন করলো,
 “আপনি বিয়ে করেননি? “

উত্তরে মিয়ে যাওয়া কণ্ঠে সে বলল,
 “নাহ।”

আরশিয়া সব কাগজে স্বাক্ষর করে শতরুপার কাছে দিল। শতরুপা যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো, পরমুহূর্তে বলল,
 “পৃথুলকে বলবেন, আমাকে ক্ষমা করে দিতে। অনেক যন্ত্রণা দিয়েছি আমি। কারণ ছাড়া তাকে ডিভোর্স দিয়েছি। ডিভোর্সের কারণ মেন্টাল টর্চার দেখিয়েছি। ফলে তাদের অনেক হয়রান হতে হয়েছে। এখন বুঝি কি ভুলটাই না করেছিলাম।”
 “এই ভুলটা করার কারণটি জানতে পারি?”
 
শতরুপা কিছুসময় চুপ করে থেকে বলল,
 “আমাদের বিয়েটা আমার অমতে হয়েছিল। আমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো। পৃথুল বলেছিল সে ডিভোর্স দিবে আমাকে। প্লান আমার সেটাই ছিলো। কিন্তু অহেতুক আমি কেন খারাপ হব? তাই পৃথুলকে বললাম, আমি তার সাথে সংসার করবো। সংসার ভালো চলছিলো। সে আমাকে এতোটা বেশি প্রাধান্য দিল যে আমার গিল্ট শুরু হল। আমার বয়ফ্রেন্ড যখন দেশে ফিরে এলো। আমি তখন তাকে বলতে পারলাম না। তারপর পৃথুল রাজশাহী গেলো। আমাদের সেদিন বিয়ের একশত দিন। আমি পৃথুলের কাছে গেলো। একটি স্বর্ণালী স্মৃতি তাকে দিলাম। রাজশাহী থেকে যাবার পর আমি আর ওই বাড়ি যাইনি। সরাসরি আমার বাবার বাড়ি গেলাম। বাবা মাকে সবসময় আমি বলতাম পৃথুল খুব জেদি। আমার ব্যাপারে সে অবসেসিভ। সে আমাকে কারোর সাথে কথা বলতে দেয় না, কলেজে যেতে দেয় না। মানসিক যন্ত্রনা দেয়। ফলে বাসায় যখন বলেছি, এই বিয়ে আমার পক্ষে টেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বাবা অমত করলেন না। আর প্রমাণ হিসেবে পৃথুলের পাগলামি তো ছিলোই। সে রোজ সকাল থেকে রাত আমার সাথে কথা বলার জন্য বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। মাঝে মাঝে ঝামেলাও করতো। এখন মনে হলে আফসোস হয় আমার।”

শতরুপার কথাগুলো নিঃশব্দে শুনলো আরশিয়া। কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বক্ষস্থলে চিনচিনে ব্যথা করছে। ইচ্ছে করছে সব ছেড়েছুড়ে পৃথুলের কাছে ছুটতে। শতরুপা বেড়িয়ে যাবার পর কিছুটা সময় সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রইলো না। বিক্ষিপ্ত পৃথুল এখন নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে বটে, কিন্তু সেই রেশ এখনো যায়নি। আসলে তার দূর্বলতা তাকে নিঃশেষ করেছে। 

বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরশিয়া। বাতাসে ভেজা গন্ধ, আবারো ধরনীতে মেঘপতন হবে। বারিধারার শীতলকনা তপ্ত ধরণীকে শান্ত করবে। কিন্তু তার হৃদয় দগ্ধ হচ্ছে। একটি প্রশ্ন তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। সেই সময় ঘাড়ে তপ্ত স্পর্শ অনুভূত হল,
 “বৃষ্টি হবে, ভিজে যাবেন শিক্ষিকা?”
 “আপনি আছেন তো, সামলে নিয়েন।”
 “আপনার কি মন খারাপ?”
 “না, শুধু একটি প্রশ্ন জেগেছে। কিন্তু কিভাবে বলবো বুঝছি না।”
 “আমার কাছে সংকোচ কিসের?”

আরশিয়া হাসলো। নিবিড় চোখে তাকালো মানুষটির দিকে। থমথমে কণ্ঠে বলল,
 “যদি জানতে পারেন কখনো, যে মানুষটি আপনাকে নিঃস্ব করেছে সে অপরাধ বোধে কুঁড়ে খাচ্ছে। কি করবেন? পুরাতন অনুভূতিগুলো কি চড়াও হবে তখন?”

আরশিয়ার প্রশ্নে কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ পড়ল। শান্ত গলায় বলল,
 “শতরুপাকে কোথায় পেলেন আপনি?”

আরশিয়া একটু দম নিল। তারপর ধীরে ধীরে সবটা বলল সে। শান্ত ভাবেই শুনলো পৃথুল। ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি। খুব একটা বিচলিত তাকে দেখালো না। আরশিয়া উত্তরের অপেক্ষায় তার পানে চাইলো। পৃথুল পকেটে হাত গুজলো, তারপর শান্ত কণ্ঠে বলল, 
 “যে অতীত চার বছর পূর্বেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে তার সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু এখন আমার বর্তমান।”

পৃথুলের কথা শুনে মৃদু হাসলো আরশিয়া। মৃদু কণ্ঠে বলল,
 “আপনি কিন্তু এখনো আমাকে চিঠি লিখেন না। আমার চিঠি প্রেম কিন্তু এখনো অসম্পূর্ণ।”
 “আমার হাতের লেখা যে খারাপ।”
 “আমি বুঝে নিবো। ছাত্রদের কাকের ঠ্যাং দেখতে দেখতে আমি পারদর্শী।”

পৃথুল একটু ভাবলো। তারপর নিজ ঘরে গেলো। যত্নে রাখা কাঠের বক্সটি নিয়ে এলো। বক্সে এই যাবৎ লেখা আরশিয়ার সব চিঠি রয়েছে। বক্সটি এনে আরশিয়ার সম্মুখে দাঁড়ালো। একটি লাল ছোট কাগজ দিল আরশিয়াকে। আরশিয়া কাগজটিতে চোখ বুলালো। সত্যি বাজে হাতের লেখা। কিন্তু কথাগুলো অতি মাত্রায় সুন্দর। সেখানে লেখা,
 “প্রিয় শিক্ষিকা মহোদয়া,
অল্প কথার ভিরে, তুমি গল্প হয়ে এলে!
রূপকথার গল্পে তুমি চুপকথা বুঝে নিলে! 
তুমি শ্রাবণ মেঘের দিনে, 
বৃষ্টি হয়ে ঝরলে!
তুমি অল্প কথার গল্পে, 
আমার চুপকথা বুঝে নিলে! 
তুমি সাগর তীরের ঢেউয়ে আছড়ে পড়া নোনা, 
তুমি ছোট্ট এ বুকে, আমার চুপকথা। (জান্নাতুল মিতু)

ইতি আপনার সাংবাদিক”

আরশিয়া গাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো পৃথুলের দিকে। তার মুখে স্নিগ্ধ হাসি। কোমল স্বরে শুধালো,
 “তাহলে আপনার চুপকথার গল্পের ভিড়ে আমি আছি?”
 “কি মনে হয়?”

আরশিয়ার হাসি প্রসারিত হল। বাহিরে বর্ষণের শব্দ কানে আসছে। শীতল বর্ষণে তৃপ্ত ধরণী। অন্যদিকে ভেতরে অনুভূতির জোয়ার। দিন গোনার প্রহর শেষ, ভালোবাসার প্রারম্ভ______ 
.
.
.
সমাপ্ত...............................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন