শাহজাহান তন্ময় - পর্ব ২২ - নাবিলা ইষ্ক - ধারাবাহিক গল্প


বাড়িওয়ালা ভাবী ডেকেছে জবেদা বেগমকে। গুরুত্বপূর্ণ কথাবার্তা বলবেন। সন্ধ্যার দিক পুনরায় বাচ্চাদের জন্য রঙ চা বানিয়ে তিনি চেঁচিয়ে বলেন_'অরু চা-টা নিয়ে যা। ভাবী ডাকছে, আমি শুনে আসি।'

বেরোতে নিয়ে তিনি আরেকবার তন্ময়কে বলে গেলেন। মিনিট খানেক হলো অরু তবুও এসে চা নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সে শীতল কণ্ঠে ডাকে, 'অরু!'

অরু জবাব দিলো না, বেরিয়ে ও এলো না। সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল তন্ময়। ডাইনিং থেকে গরম চায়ের কাপটি তুলে নেয়। পা বাড়ায় নিজের রুমের দিক। দেখতে পায়, অরু বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁর রুমের বারান্দা বড়ো এবং সুন্দর। ফুলের বেশকিছু টব ঝোলানো। শীতল বাতাসে ফুলগুলো দুলছে, বৃষ্টির জলে ভিজছে। অরু সেই দৃশ্য উপভোগ করছে। গোসল নিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। কালো বড়ো চুলগুলো এখনো ভেজা। জল ঝরছে টপটপ করে। তন্ময় অশান্ত দৃষ্টি ফেরায়। গিয়ে দাঁড়ায় ওঁর পিছু। চায়ের কাপটা এগিয়ে দিয়ে বলে, 'ধর। চা-টা শেষ কর।' 

অরু ফিরে তাকাল। চায়ের কাপ নিবে পূর্বেই হঠাৎ লোডশেডিং হলো। বাইরে ঝংকার তুলে বজ্রপাত ঘটল। আঁধারে তলিয়ে গেল চারিপাশ। শীতল বাতাসের সঙ্গে লেপ্টে আসছে বৃষ্টির জল। অরু ভয় পেলো। আঁৎকে উঠল। অস্পষ্ট স্বরে ডাকল, 'তন্ময় ভাই।' 

তন্ময় আস্বস্ত করে, 'হ্যাঁ, আছি।'

হুড়মুড়িয়ে পিছু হাঁটল অরু। পিঠ গিয়ে ঠেকল তন্ময়ের প্রসস্থ বুকে। ভেজা লম্বা চুলের ঠান্ডা স্পর্শে শীতল হলো তন্ময়ের বুক। ফোঁটা ফোঁটা জলে ভিজল টি-শার্ট। মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে ভেসে এলো। তন্ময় হাতের কাপটা পুনরায় এগিয়ে ধরে, 'চা নে। আমি ফ্ল্যাশলাইট ওন করি।'

অরু চায়ের কাপ নিল। তবে সরল না। পড়ে রইল তন্ময়ের বুকে। ধীর, স্থির গলায় বলল, 'আলো লাগবে না। এমনই থাকুক। আমার ভালো লাগছে।'
'ভয় লাগছে না?'
'আপনি আছেন তো।'

তন্ময় আঁধারে শব্দহীন হাসে। দাঁড়িয়ে থাকে অরুর ইচ্ছেমতো। হুটহাট বজ্রপাতে আলো ফুটছে। সেই আলোয় অরুর মিষ্টিমুখ দৃশ্য হচ্ছে। তন্ময় অপলক নয়নে দেখছে। বাতাসে ওঁর চুলগুলো দুলছে। তন্ময়ের নাক-মুখ ছুঁয়ে দিচ্ছে। হাত উঠিয়ে অশালীন চুলগুলো ধরল। ধরেই রাখল। দু-আঙুলের সাহায্যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনুভব করল। অরু চায়ে চুমুক বসিয়ে বড়ো শ্বাস ছাড়ল, 'আহা! বড়ো মায়ের হাতে জাদু আছে। চা-টা দারুণ মজা। তাই না?'

তন্ময় জবাব দিলো না। আঁধারে অস্পষ্ট অরুর ভেজা ঠোঁট জোড়া অনিমেষ দেখল শুধু। 

কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যুৎ ফিরে আসে। জবেদা বেগম ও ফিরেছেন। ফিরেই বিরিয়ানি গরম বসিয়েছেন। অরুকে খেতে দেবেন। অরু তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে। পারছে না এখনই খেতে বসতে। ওসময় তন্ময় বেরিয়ে আসে টি-শার্ট পরিবর্তন করে। বলিষ্ঠ তন্ময়ের শরীরে আঁটসাঁট পোষাক ভীষণ রকমের মার্জিত লাগে। শরীরের পেশিবহুল, মাংসপেশি গুলো ফুলেফেঁপে ওঠে পোষাকের উপর দিয়ে। কনুই পর্যন্ত টই-শার্টের হাতা ফোল্ড করায়, পুরুষত্ব চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে! অরু ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে দেখছে৷ তন্ময় অগোচরে ওঁর বোকাসোকা দৃষ্টি ভীষণ উপভোগ করে। বিড়াল ছানার মতো আদুরে দেখায়। ইচ্ছে করে আদর করতে। পঁচা আদর, দুষ্টু আদর। 

___

গাড়ি ছাড়া চলাফেরায় বড্ড অসুবিধে হয় তন্ময়ের। একটা প্রাইভেট গাড়ি কেনা এই মুহুর্তে সম্ভব নয়। তবে বাইক কেনার মতো সামর্থ্য হয়েছে। গতকাল বন্ধুদের নিয়ে সাদাকালোর সংমিশ্রণের 'ইমাহা আরওয়ান ফাইভ- ভি,থ্রি বাইকটা কিনেছে, চারলাখ পঁচাশি হাজার দিয়ে। বাইক কিনে সঙ্গে সঙ্গে আর ফেরা হয়নি। বন্ধুদের সঙ্গে বেরোতে হয়েছে। ফিরতে ফিরতে গভীর রাত। পরদিন সকালে অফিস যেতে হয়েছে। সন্ধ্যা সাতটায় বাড়ি ফেরে। আজ অরুর পড়তে আসার কথা। তবে বাড়িতে ঢুকে অরুকে পেলো না। মেয়েটা আগ বাড়িয়ে এসে বসে থাকে প্রতিদিন। আজ এখনো এলোনা যে? সেসময় কল এলো আনোয়ার সাহেবের। উৎকন্ঠা গলায় বললেন, 'তন্ময়! অরু কী ওখানে আছে?'
'নেই। এখনো আসেনি। কী হয়েছে চাচ্চু?'
'ওঁকে পাওয়া যাচ্ছে না, দুপুর থেকে। মেয়েটা কোথায় চলে গেল!'

তন্ময় চেঁচিয়ে ওঠে, 'পাওয়া যাচ্ছে না মানে? কী বলছ!'

হাত ঘড়িতে রাত আটটা প্রায়। এতো রাতে কোথায় যাবে? আনোয়ার সাহেব খুলে বলেন, 'তোমার চাচীর সঙ্গে তর্ক করে বেরিয়েছিল। এখনো ফেরেনি। ওঁর বন্ধুবান্ধবদের কল করলাম। কারো কাছে যায়নি।'

আনোয়ার সাহেবের গলার স্বর ভেঙে আসছে। রুদ্ধশ্বাস ফেলছেন। তন্ময়ের বুকের ওঠানামার গতি বাড়ল। চিন্তায় কণ্ঠনালী আঁৎকে এলো। কোনোমতে বলল, 'আমি আসছি।'

পরপর হন্তদন্ত পায়ে চাবিটা টি-টেবিল থেকে তুলে বেরিয়ে পড়ল। পেছন থেকে জবেদা বেগম চেঁচালেন, 'কী হয়েছে অরুর!' তন্ময় হাতের ইশারায় 'এসে কথা বলবে' বোঝাল। গ্রাউন্ড ফ্লোরে বাইক রাখা। বাইকে বসে চাবি ঢুকিয়ে একটানে বেরিয়ে পড়ল। 

ইতোমধ্যে আনোয়ার সাহেব, মোস্তফা সাহেব, ওহী সাহেব তিনভাই এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। চেনাজানা সবাইও খুঁজতে নেমেছে। তন্ময় নিজের চেনাপরিচিত এলাকার পোলাপান জড়ো করে, পাঠিয়ে দিলো সব জায়গা জুড়ে। সে মাঝরাস্তায় দেখা পেলো মোস্তফা সাহেবের। তিনি তাঁর ড্রাইভার সহ এদিক-ওদিক খুঁজে চলেছেন। তন্ময়কে দেখতেই এগিয়ে গেলেন। উতলা গলায় শুধালেন, 'কোনো খবর পেয়েছ?'
'না। এখন অবদি না। ওদিকটায় দেখে আসি।'
'আমি যাব সাথে।'

মোস্তফা সাহেব ছেলের বাইকের পেছনে উঠে বসেন। তন্ময় একটানে সামনে অগ্রসর হয়। বাইক এলাকার অলিগলিতে ঢুকছে। মোস্তফা সাহেব চিন্তিত দৃষ্টিতে সবটায় নজর ফেলছেন। রাতের এখন নয়টা ত্রিশ। তন্ময়ের বুকের ভেতরটা ভয়ে শীতল হয়ে আসছে। আত্মীয় স্বজন কারো বাসায় নেই। কোনো বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি নেই। তাহলে কোথায়? তন্ময় অস্পষ্ট স্বরে আকুতি করে ওঠে 'কোথায় তুই? ফিরে আয়।'

আনোয়ার সাহেবের চোখজোড়া লাল। ভিজে জবজবে। এলোমেলো চুল। অবিন্যস্ত অবস্থা। তন্ময়কে দেখেই ভেঙে পড়েন, 'কী হলো আমার মেয়েটার? কোথায় ওঁ? খুঁজে এনে দাও ওঁকে! খুঁজে আনো!'
'শান্ত হও চাচ্চু। অরুর কিছু হয়নি। আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে আছে। ঠিই খুঁজে পাব।'

কথাগুলো বলতে বলতে তন্ময়ের গাঁ গুলিয়ে এলো। মাথা ঘুরছে। থরথর কাঁপছে শরীর। হাত চলছে না। মস্তিষ্ক ফাঁকা। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ফর্মাল শার্ট ঘামে ভিজে লেপ্টে দেহের সঙ্গে। ফ্যাকাসে হয়ে আছে মুখশ্রী। মোস্তফা সাহেব ছেলের কাঁধ ধরলেন। চোখমুখে একরাশ চিন্তা, 'আব্বা! খারাপ লাগছে? একটু বোস। পানি আন আকাশ।'
'লাগবে না।'
আকাশ প্রশ্ন করে তন্ময়ের উদ্দেশ্যে, 'থানায় যাব?'

রাত ঘনিয়ে চলেছে। দেখতে দেখতে রাত এগারোটা বিশ। আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। তন্ময় মাথায় দোলাবে, ওসময় তার ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে চটজলদি ফোন বের করে। অয়নের নাম্বার। ওঁ এলাকার ছেলেপেলে নিয়ে বেরিয়েছিল খুঁজতে। অরুকে পেলে কল দিয়ে জানাবে বলেছিল! পেলো কী? ওঁর কল তন্ময় দ্রুত রিসিভ করল। অয়নের গলার স্বর কাঁপছে, 'ভাই। অরুকে পেয়েছি। আহম্মদ এলাকার পার্কে। চার-পাঁচজন ছেলের দল ওঁর পিছু ছিল। ওঁকে কিডন্যাপ করার পঁয়তারা করছিল। ভাই আমাদের আরেকটু দেরি হলে আজ সর্বনাশ হয়ে যেতো।'

তন্ময়ের হৃদয় মুচড়ে ওঠে। চোয়াল শক্ত হয়। হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটা শক্ত করে ধরে বলে, 'ওঁকে দেখে রাখো অয়ন। আমি আসছি। এক সেকেন্ডের জন্য নজরের বাইরে করোনা, প্লিজ।'
'ভাই শান্ত হোন। আমি আছি, দেখছি। আপনি আসুন। অরু সহিসালামত আছে।'

তন্ময় দ্রুত বাইকে উঠে বসে। বাবার উদ্দেশ্যে ঠিকানা বলে একমুহূর্ত দেরি না করে বেরিয়ে পড়ে। পেছনে গাড়ি নিয়ে মোস্তফা সাহেব, আনোয়ার সাহেব ও আসছেন। 

_____

অরু গুটিশুটি মেরে বসে বেঞ্চিতে। কাঁদতে কাঁদতে মুখশ্রী ফুলে আছে। ভয়ে হাত-পায়ের পশম দাঁড়িয়ে পড়েছে। কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে পড়তেই কেঁপে উঠছে শরীর। অয়ন পানির বোতল এনে একঢোক খাইয়ে দিয়েছে। মেয়েটা এখনো কাঁপছে। অয়ন আস্বস্ত করল, তবুও কাজ হলো না। তীব্র শব্দ আসছে শুনশান নীরবতা ভেঙে। বাইকটা শব্দ করে এসে থামলো পার্কের কাছাকাছি। তন্ময় দৌড় লাগাল। এক দৌড়ে সে পার্কের ভেতরে এসে পৌঁছেছে। বুকের ওঠানামার গতি অস্বাভাবিক দ্রুত। শ্বাসপ্রশ্বাস রুদ্ধ৷ পাগলের মতো অবস্থা। অরু তন্ময়কে দেখেই ভয়ার্ত মুখে দাঁড়াল। ছুটে আসতে চাইলো, পূর্বেই তন্ময়ের শক্ত হাতের চড় পড়ল ওঁর নরম গালে। পাঁচ আঙুলের দাগ বসে পড়ল। আচমকা থাপ্পড়ে অরু স্তব্ধ হলো। কেঁদে উঠল শব্দ করে। কিন্তু পাজোড়া থামালো না। তন্ময়ের কোমর জড়িয়ে হামলে পড়ল বুকে। শরীর কাঁপছে দুজনের। তন্ময়ের রাগান্বিত মুখশ্রী ভয়ংকর রকমের লাল হয়ে আছে। তাকালেই প্রাণপাখি উড়ে যেতে চায়। অরুকে বুক থেকে সরাতে নিয়ে চিৎকার করে ওঠে, 'এতবড় সাহস হয়ে গেছে। আজ তোর পা ভেঙে ফেলব।'

এভাবেই ভীষণ ভয় পেয়েছে আতঙ্কে এবার জ্ঞান হারিয়ে বসল। ঢলে পড়ল অরু তন্ময়ের বুকে। ওঁকে শক্ত করে দু'হাতে দ্রুত বুকে জড়িয়ে নিলো তন্ময়। মাথাটা শক্ত করে বুকে চেপে ধরে। অশান্ত, ভীতু বুকের ভেতরটা এখনো শব্দ করছে। শান্ত হচ্ছে না কোনোমতে। তন্ময় ওঁর এলোমেলো চুলগুলো পাগলের মতো গোছাতে থাকে। বিড়বিড়িয়ে আওড়ায়, 'কিছু যদি হয়ে যেতো! তোর যদি কিছু হয়ে যেতো, কী করতাম আমি! কীভাবে বাঁচতাম! আমাকে মেরে ফেলতে চাস। তুই আমাকে শান্তিমতো বাঁচতে দিবি না।'

মোস্তফা সাহেব, আনোয়ার সাহেব পৌঁছেছেন। তন্ময় অরুকে পাজাকোলে তুলে নেয়। পার্ক থেকে বেরিয়ে আসে। গাড়ির পেছনে শুইয়ে দেয়। আনোয়ার সাহেব মেয়ের মাথা রানে নিয়ে পেছনে বসেছেন। তন্ময় নিজের বাইকের চাবি অয়নের হাতে ধরিয়ে, গাড়ির ড্রাইভিং সিটে চড়ে বসে৷ রাস্তায় থাকাকালীন পরিচিত ডাক্তারকে বাসায় আসতে বলে দেন মোস্তফা সাহেব। গাড়ি থামে শাহজাহান বাড়ির ভেতরে। তন্ময় নেমে অরুকে পুনরায় কোলে তুলে নেয়। বাড়িতে ঢুকতেই শোনা যায় সুমিতা বেগমের কান্নার গলা। মুফতি বেগম ও হাহাকার করছেন। ওঁদের ছাড়িয়ে তন্ময় ওপরে ওঠে। সোজা অরুর রুমে ঢুকে ওঁকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। বাম গালটা দৃশ্যমান রূপে লাল হয়ে গেছে। বুকটা ছ্যাত করে ওঠে তন্ময়ের। রাগের মাথায় এতো শক্ত ভাবে চড় মেরেছে সে! কম্পিত আঙুল এগিয়ে দাগের যায়গায় ছুঁয়ে দেয়। নিজে ঝুকে সেখানে ঠোঁট ছোঁয়ায়। বেশ কয়েকবার চুমু বসায়। ধীর গলায় বারংবার বলে, 'সরি। রিয়্যেলি ভেরি সরি। আই ডিডন্ট মিন ইট। রাগের মাথায় কীভাবে হয়ে গেল! আম সরি জান।'

বেশকিছু পায়ের শব্দ পেয়ে সরে আসে তন্ময়। সবাই ছুটে এসেছে ঘরে। দীপ্ত কেঁদে মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। শাবিহার অবস্থাও ভালো না। সকলের চোখেই জল। কেউই শান্ত নেই। ডাক্তার আসলেন পরপরই। অরুর পাশে বসে ওঁর হাতের নল দেখলেন। চোখ পরিক্ষা করলেন। কপাল ছুঁয়ে শরীরের তাপ পরিক্ষা করলেন। শরীর দুর্বল ভীষণ। জ্বর এসেছে। ভয়ে এবং আতঙ্কে জ্ঞান হারিয়েছে। কিছু ঔষধপত্রের নাম লিখে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তন্ময় ডাক্তারের সঙ্গে বেরোল। ঔষধের নাম নিয়ে নিজেই আনতে গেল। ঔষধ নিয়ে ফিরে দেখল সকলে লিভিংরুমে বসে। সুমিতা বেগম দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। আনোয়ার সাহেব চেঁচিয়ে চলেছেন। তাঁর একেকটা চিৎকারে বাড়ি কাঁপছে, 'তোমার এতবড় স্পর্ধা! তুমি ওই পরিবারের কারণ ধরে আমার মেয়ের গাঁয়ে হাত তুলো। সাহস হয় কী করে তোমার! আমি কী মেয়ে পেলেছি ওদের ওকালতি করতে? আমার মেয়ে যেহেতু ওদের পছন্দ করে না, তারমানে এই বাড়িতে ওঁদের কোনো স্থান নেই। ওঁদের কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি কোন সাহসে হাত তুলবে।'

চাচ্চু যেহেতু কথা বলছে তন্ময় আর কিছুই বলল না। সে অনেক কিছু বলতে চাচ্ছিল, তবে শেষমেশ সুমিতা বেগমের করুণ মুখশ্রী দেখে কিছু বলল না। ঔষধ গুলো শাবিহার হাতে দিয়ে বেরোতে লাগলো। মোস্তফা সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। ছেলেকে রুখতে চাচ্ছিলেন কিন্তু মুখে বলার মতো সাহস পেলেন না। তন্ময় যাওয়ার পূর্বে বলে গেল, 'ওঁকে দেখ।'

____

মাহিন বন্ধুর শক্ত মুখপানে চেয়ে। মাস খানেক ধরে মারাত্মক গম্ভীর হয়ে আছে ছেলেটা। এভাবে তন্ময় শান্ত, গম্ভীর। তবে এই মাস ধরে সে আগুনের ফুলকি রূপে আছে। অল্পতেই ছ্যাত করে ওঠে। ভীষণ রকমের রাগ দেখা দিচ্ছে। প্রেয়সীর বিরহে একদম আগুনে ডুবেছে যেন! মাহিন জ্বলন্ত সিগারেট এগিয়ে দিলো। লম্বা আঙুলের ভাঁজে সিগারেট নিলো তন্ময়। সময় নিয়ে গোলাপি ঠোঁটে চেপে ধরল। সামনের টেবিলে সেলফোন কাঁপছে। স্ক্রিনে অরুর কল আসছে। তন্ময় ধরল না। গম্ভীরমুখে, অশান্ত মনে শুধু দেখল কল কেটে যেতে। কতদিন কথা হয় না? কতদিন দেখা হয় না? অনেকদিন, অনেক গুলো দিন হচ্ছে। হাত দিয়ে গুনে নেওয়া যাবে। তবে কেন মনে হচ্ছে শতাব্দ ধরে দেখা হয় না। ওই মিষ্টি মুখখানা বছর ধরে ছোঁয়া হয়না। কাকে শিক্ষা দিতে চাচ্ছে সে! ওই নাদান মেয়েকে শিক্ষা দিতে গিয়ে যে, সে নিজেই গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে প্রতিনিয়ত! জ্বলেপুড়ে আঙ্গার হচ্ছে হৃদয়। এই যন্ত্রণা যে ভীষণ ব্যথিত, প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক! 
.
.
.
চলবে............................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন