অন্তর্নিহিত কালকূট
পর্ব ১০
অনিমা কোতয়াল
.
.
.
গুলশান থানা। নিজের কক্ষে, চেয়ারে বসে আছে ইন্সপেক্টর আজিজ রহমান। গতরাতে ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। যারফলে সকালের আবহওয়াটা বেশ ঠান্ডা। আপাতত তার হাতে কোন কাজ নেই । সবুজের মৃ-ত্যু, খোকনের নিখোঁজ হওয়া আর তৃতীয় খু-নটা নিয়েই ভাবছিলো সে। যদিও খোকন নিখোঁজ হয়েছে এখনো দু-দিনও হয়নি। হতে পারে কোথাও একটা আটকে গেছে। চলে আসবে। কিন্তু বাকি খু-ন দুটো?
' আসতে পারি?'
আওয়াজ শুনে চমকে উঠল অফিসার। গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ভাবছিল; হঠাৎ ডাকে চমকে উঠেছে। মুখে অনুমতি চাইলেও 'আসতে পারি' কথাটা বলতে বলতেই ভেতরে ঢুকে পড়ল রুদ্র। ইন্সপেক্টরের বলার অপেক্ষা না করেই একটা চেয়ার টেনে বসল। পায়ের ওপর পা তুলে বলল, 'বাবা বলল আপনি স্মরণ করেছেন? হঠাৎ? ব্রেকফাস্ট করাবেন নাকি?'
আজিজ ভ্রু কোঁচকালো। খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করল রুদ্রর ঔদ্ধত্য। সোজা হয়ে তাকাল ওর মুখের দিকে। রুদ্র নির্বিকার ভঙ্গিতে পায়ে পা তুলে বসে আছে। তার মধ্যে চিন্তিত কিংবা বিচলিত হওয়ার কোন লক্ষণ মাত্র নেই। নিজের বাবার মতোই যে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী সত্ত্বাটা পেয়েছে, সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আজিজ বলল, 'সে করাতে পারি বৈকি। করবে?'
রুদ্র নির্বিকার থেকেই বলল, 'ধন্যবাদ। কিন্তু আমি খেয়ে এসছি। চা-কফিরও প্রয়োজন নেই। কাজের কথায় আসি?'
ইন্সপেক্টর আজিজ মাথা নাড়াল। টেবিলের ওপর দুটো হাত রেখে বলল, 'গত পরশু রাতে তোমাদের দলের_ স্যরি, তোমাদের ব্যবসার কর্মচারী, সবুজের ঘরের বাথরুমে ওর লা-শ পাওয়া গেছে। ভরা বালতিতে মুখ ডোবানো অবস্থায় পড়ে ছিল ডে-ড বডিটা।'
রুদ্র একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে থেকে বলল, 'শুনেছি, বাবা বলেছে আমায়। তো?'
'ছেলেটাকে কেন মা-রলে রুদ্র?' একদম শান্ত কন্ঠে বলে উঠল আজিজ। তার উদ্দেশ্যে ছিল হঠাৎ প্রশ্নটা করে রুদ্রকে চমকে দেওয়া। ওর প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝার চেষ্টা করা যে খু-নটায় আদোও রুদ্রর কোন হাত আছে কি-না। কিন্তু রুদ্রর মুখভঙ্গিতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলোনা। শুধু ভ্রু জোড়া সামান্য কুঁচকে ফেলল সে। যেন কিছুটা বিরক্ত হয়েছে। নিজের কন্ঠে কৃত্রিম বিরক্তি মিশিয়ে বলল, 'মানে?'
হতাশ হল আজিজ। ছেলেটা অত্যধিক চালাক। ওনার সেই বাচ্চা বাচ্চা টেকনিক আর যাই হোক রুদ্র আমেরের ওপর খাটবেনা। তবুও আরেকটু বাজিয়ে দেখতে আজিজ বলল, 'সবুজের খুনটা তো তুমিই করেছো। এবং গতকাল বিকেলে তোমাদের আরেক কর্মচারী স্বপনের লা-শ পাওয়া গেছে লেকের ধারে। সেটাও নিশ্চয়ই তোমার কাজ। ভুল বললাম?'
হাসল রুদ্র। আঙুল দিয়ে নাকের ডগাটা ঘষে নিয়ে বলল, 'নিঃসন্দেহে ভুল বলেছেন। এবং সম্পূর্ণ লজিক ছাড়া কথা বলেছেন। আমাদের কর্মচারীকে মেরে আমার কী লাভ?'
' আমাদেরও সেটাই প্রশ্ন। কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ আছে রুদ্র।'
এমন কথা শুনেও কোনরকম ব্যতিক্রম প্রতিক্রিয়া এলোনা রুদ্রর কাছ থেকে। বরং ঠোঁটের হাসির রেখাটা সামান্য বড় করে বলল, 'ভালো। তাহলেতো এতো কথার কোন প্রয়োজনই নেই। প্রমাণ পেশ করে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আনুন আর আমায় লকআপে ঢুকিয়ে দিন।'
চোয়াল খানিকটা শক্ত হয়ে উঠল আজিজের। বলল, 'একটু বেশিই চালাক তুমি। কিন্তু একটা কথা মাথায় রেখো কোনকিছুই চিরস্থায়ী নয়।'
রুদ্র কোন জবাব দিলোনা, শুধু স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ইন্সপেক্টরের দিকে। ঠোঁটে এখনো সেই ধূর্ত হাসি। যেই হাসিটা ইন্সপেক্টরের গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট। রুদ্র মনে মনে ভীষণ আনন্দ পাচ্ছে পুলিশকে জব্দ করতে পেরে। রুদ্রের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রেখেই আজিজ বললেন, 'গত পরশু বিকেলে কোথায় ছিলে রুদ্র?'
'শহরের বাইরে।'
'কেন?'
'কাজ ছিল?'
'কাজ? কী কাজ?'
'ব্যবসায়ীক কাজ। ডিটেইলসে বলার মতো কিছু না। কিন্তু বাইরে যে ছিলাম তার প্রমাণ চাইলে দিতেই পারি। অনেকদিনের সম্পর্ক আমাদের। খালি হাতে ফেরাবোনা আপনাদের।'
হাক ছেড়ে ডাকল কন্সটেবলকে। রুদ্র বসে আছে চুপচাপ। ওর মুখভঙ্গি এমন যেন ভীষণই একঘেয়ে একটা সিনেমা চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেটা দেখতে ও ইচ্ছুক নয়, তবুও বাধ্য হয়ে দেখতে হচ্ছে। কন্সটেবল দ্রুত একটা সচ্ছ প্লাস্টিক শিট এর মতো দেখতে পেপার নিয়ে এলো। সেটাকে রুদ্রের সামনে বিছিয়ে রাখল লোকটা। রুদ্র একঘেয়ে কোন বস্তু দেখার মতো দৃষ্টি নিয়েই দেখল কাগজটাকে। আজিজ অনেকটা আদেশের সুরে বলল, 'পেপারের ওপর নিজের হাত দুটো রাখো।'
রুদ্র কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে রইল ইন্সপেক্টর আজিজের দিকে। আজিজের চোখে চোখ রেখেই অলস ভঙ্গিতে হাত রাখল পেপারটার ওপর। আজিজ ইশারা করতে হাতটা ওপরে উঠিয়ে অনেকটা কৌতুকের ছলে বলল, 'আপনার চোর-পুলিশ খেলা শেষ?'
হেসে ফেলল ইন্সপেক্টর আজিজ। মাথা নাড়িয়ে বোঝালো, তুমি একটা জিনিসই বটে। মুখে বলল, 'আপাতত শেষ। প্রয়োজন পড়লে ভবিষ্যতে আবার না হয় খেলা যাবে।'
রুদ্রও হাসল। চুপচাপ উঠে দাঁড়াল। কোনরকম সৌজন্যতা না দেখিয়েই বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে। আজিজ সেদিকে তাকিয়ে রইলেন এক দৃষ্টিতে। রুদ্রের ভাবভঙ্গি স্পষ্ট বলে দিচ্ছে; এবারেও অতিরিক্ত ঠান্ডা মাথায় নিখুঁতভাবে নিজের কাজ সেড়েছে। অর্থাৎ এবারেও সে কিচ্ছু করতে পারবেনা। তবে ব্যর্থ চেষ্টাতো তাকে করে যেতেই হবে। এটাই তো তার কাজ।
-
বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে জ্যোতি। গালে হাত দিয়ে পা দোলাতে দোলাতে গভীর ভাবনায় মগ্ন সে। সামনে গোলাপি মলাটের একটা ডায়েরি খুলে রাখা। যার প্রতিটা পাতায় রুদ্র। কেবলই রুদ্র। রুদ্রকে নিয়ে নানান কল্পনা-জল্পনা মেশানো বাক্য জ্বলজ্বল করছে সেখানে। যা কোনদিন সামনাসামনি বলতে পারেনি রুদ্রকে। রুদ্র শুনতেই চায়নি। ভালোবাসায় স্নিগ্ধ সেই বাক্যগুলো পড়তে পড়তেই ভাবনায় হারিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। নিজের মনেই হাজার স্বপ্নের জ্বাল বুনে চলেছে। ডায়েরির ভাঁজ থেকে রুদ্রর ছবিটা বের করল জ্যোতি। চোখে এক সমুদ্র ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে রইল। এই নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন মানুষটাকে ও কেন এতোটা ভালোবাসে; নিজেও জানেনা। শুধু জানে ও ভালোবাসে, ভীষণ ভালোবাসে। ছবিটার ওপর হালকা করে ঠোঁট ছুঁইয়ে নিজেই লজ্জা পেল মেয়ের্ট। চোখ বন্ধ করে আপনমনেই হেসে ফেলল।
জ্যোতিকে ডাকতে রুমে এসেছিল কুহু। মেয়েটাকে একা একাই হাসতে দেখে একটু অবাক হল ও। এভাবে একা একা কী দেখে হাসছে! ব্যাপারটা ভালোভাবে বোঝার জন্যে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল। জ্যোতির হাতে ধরে রাখা রুদ্রর ছবিটা দেখে মুখ টিপে হাসল কুহু। মাথায় হালকা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। মুখ দিয়ে শব্দ করার ক্ষমতা তো ওর নেই। তাই হাত দিয়েই জ্যোতির কাধ ধরে হঠাৎ ঝাকুনি দিল। যাতে জ্যোতি ভয় পেয়ে যায়। হলোও তাই, এতো গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকায়, হঠাৎ দেওয়া ঝাকুনিতে ভয়ে একপ্রকার লাফিয়ে উঠল জ্যোতি। ভীত দৃষ্টিতে তাকাল। কুহুকে শব্দহীনভাবে হাসতে দেখে স্বস্তি পেল মেয়েটা। দ্রুত ছবিটা ডায়েরির ভাঁজে লুকিয়ে ফেলল। তারপর চোখ ছোট ছোট করে তাকাল কুহুর দিকে। এখনো বুক কাঁপছে ওর। কুহু সাংকেতিক ভাষায় বলল, ' লুকিয়ে লাভ নেই। দেখে ফেলেছি আমি ভাইয়ার ছবি।'
জ্যোতি উঠে বসে কান টেনে ধরল কুহুর। ঠোঁটে হালকা হাসি রেখেই বলল, 'পাজি মেয়ে! আরেকটু হলেই আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতো।'
কুহু নিজের কান ছাড়িয়ে হালকা দুলে, ঘুরে বসে পড়ল বিছানায়। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। একপলক জ্যোতির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বোঝালো, 'এতো ভালোবাসো আমার ভাইকে? তোমার তো দেখছি তন-মন-জীবন সবটাই রুদ্রময়।'
জ্যোতি হতাশ হয়ে কুহুর পাশে বসে বলল, ' কী লাভ তাতে? ও আমার তন-মন-জীবধ জুড়ে থাকলেও, আমি তোর ঐ পাষাণ ভাইয়ের কোথাও নেই।'
কুহু নিরব রইল। জ্যোতির দু কাঁধে হাত রেখে; ঠোঁট ছোঁয়ালো কাঁধে। তারপর ওভাবেই জড়িয়ে ধরে বসে রইল কিছুক্ষণ। জ্যোতি বলল, 'কিছু বলতে এসেছিলি?'
কুহু সোজা হয়ে বসল। ইশারায় বোঝালো, 'বাবা ডাকছে তোমাকে। ওনার ঘরে যেতে বলেছে।'
সঙ্গেসঙ্গেই উঠে দাঁড়াল জ্যোতি। দ্রুত জরজেটের শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে বলল, 'এতক্ষণ লাগালি কেন বলতে? এইরে, রাশেদ বাবাকে চা দেওয়ার সময়ও হয়ে গেছে। উফ, কী যে করি মাঝেমাঝে।'
এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল জ্যোতি। কুহু তাকিয়ে রইল ওর যাওয়ার দিকে। একটা গম্ভীর শ্বাস ফেলল। মাথা দুলিয়ে ভাবল, ওর ভাইটা এমন কেন? কতটা ভালোবাসে মেয়েটা ওকে। অথচ ছেলেটা ঠিকভাবে তাকিয়েও দেখেনা। জ্যোতিকে দেখতেও তো ভীষণ সুন্দরী, গুনবতীও। ওর রাজপুত্রের মতো ভাইয়ের পাশের একদম যোগ্য রাজকুমারী। বাবা তো জোর করেও ওদের বিয়েটা দিয়ে দিতে পারে না-কি? কেন দিচ্ছেনা?
*
নিয়মমতো নিজের ইজি চেয়ারটাতে গা ছেড়ে দিয়ে বসে ছিলেন রাশেদ। চোখ বন্ধ। দলে কিছু মারপ্যাঁচ চলছে। সেগুলো নিয়েই ভাবছিলেন তিনি। চায়ের কাপ নিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়াল জ্যোতি। খেয়াল করল রাশেদ চোখ বন্ধ করে আছে। মৃদু গলায় বলল, ' রাশেদ বাবা, আসব?'
রাশেদ নিজের গম্ভীর, দৃঢ় কন্ঠে বললেন, 'আয়।'
ভেতরে ঢুকে টি-টেবিলের কাপটা রাখল জ্যোতি। চোখ খুলে সোজা হয়ে বসলেন রাশেদ। চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিলেন। জ্যোতির দিকে না তাকিয়েই বললেন, 'বস।'
জ্যোতি বিনাবাক্যে রাশেদের পায়ের কাছে বসল। রাশেদ চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। খানিকটা সময় নিয়ে নিজেকে স্থির করে বললেন, 'রুদ্র এসেছে?'
' না, আসেনি এখনো।'
আবার কিছুক্ষণের নিরবতা চলল। নিরবতা ভেঙ্গে রাশেদ আবার বললেন, 'এবার বিয়ের কথা ভাবতে পারিস তো।'
জ্যোতি কী বলবে ভেবে পেলোনা। সে তো বিয়ের জন্যে এক পায়ে রাজি। কিন্তু পাত্র তো একমাত্র রুদ্র-ই হওয়া চাই। রাশেদ রুদ্রর সাথে ওর বিয়ের কথা পাকা করে ফেললেই তো পারে। কিন্তু মুখে অনেকটা অপ্রস্তুত ভাব নিয়ে বলল, 'এখনই বিয়ে করতে চাইছিনা রাশেদ বাবা।'
' আচ্ছা।' খুব সহজভাবে বলে ফেললেন রাশেদ।
এরমধ্যেই রাশেদের দরজার সামনে এসে উপস্থিত হল রুদ্র আমের। একপলক জ্যোতির দিকে তাকাল। চোখাচোখি হতেই রুদ্র দৃষ্টি সরিয়ে নিল রুদ্র। রাশেদের উদ্দেশ্যে বলল, 'বাবা আসব?'
' হ্যাঁ এসো।'
রুদ্র ভেতরে এলো। জ্যোতিও দাঁড়িয়ে গেছে ততক্ষণে। রুদ্র জ্যোতির দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলল, 'বাবা কিছু কথা ছিল আপনার সাথে, প্রয়োজনীয় কথা।'
রাশেদ বুঝলেন, দলের ব্যপারে কিছু বলতে চায় রুদ্র। সেখানে জ্যোতির উপস্থিতি চাইছেনা ও। রাশেদ জ্যোতিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, 'তুই কুহুর কাছে যা। আমার আপাতত আর কিছু বলার নেই।'
জ্যোতি মাথা নাড়ল। একপলক রুদ্রর দিকে তাকিয়ে চলে গেল রুম ছেড়ে। রুদ্র গিয়ে দরজাটা আটকে দিল। এরপর এসে বিছানায় বসে বলল, 'বাবা_'
কথাটা শেষ করার অবকাশ পেলোনা রুদ্র। তার আগেই রাশেদ আমের নিজের শক্তিশালী কন্ঠস্বর ব্যবহার করে বললেন, ' সবুজ আর খোকনকে এভাবে কেন মারলি?'
থমকে গেল রুদ্র। চুপসে বসে রইল একদম। ও চায়নি রাশেদ এটা জানতে পারুক। এদের ব্যপারে ও রাশেদকে কিছু বুঝতে দিতে চাইছিল না। কিন্তু রাশেদ জানলো কীকরে? রুদ্র নিজের জবাব সাজিয়ে নিতে নিতেই রাশেদ বললেন, 'তোমার কী ধারণা? তুমি না চাইলে আমি কিছু জানতে পারব না? জন্ম দিয়েছি আমি তোমাকে। তোমার প্রতিটা শিরা-উপশিরা আমার মুখস্থ। তাছাড়াও, তোমাকে 'রুদ্র আমের' আমি নিজের হাতেই বানিয়েছি। কাজেই নিজেকে আমার চেয়ে বেশি চালাক মনে করার কোন প্রয়োজনীয়তা দেখছি না।'
কথাটা শেষ করে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন রাশেদ। রুদ্র বুঝতে পারল, এখন মিথ্যে বলে আর কোন লাভ নেই। রাশেদ সবটাই জানেন। ভুলটা ওরই ছিল। আগেই বোঝা উচিৎ ছিল, যার কাছ থেকে ও কথা লুকিয়ে গেছিল সে রাশেদ আমের। নিজেকে সামলে নিয়ে রুদ্র বলল, ' বাবা ওরা_'
এবারেও রুদ্রকে থামিয়ে দিলেন রাশেদ। বললেন, ' আমি জানি ওরা কী করেছে। ওদের মৃ-ত্যুদণ্ড দেওয়াতেও কোন ভুল ছিলোনা। কিন্তু এরকম মৃ-ত্যু? কয়েক সেকেন্ডেও প্রাণ নেওয়া যায় রুদ্র।'
রুদ্র কিছু বলছে না। মাথা নিচু করে বসে আছে চুপচাপ। রাশেদ থামতেই রুদ্র বলল, ' কিন্তু স্বপনকে আমি মা-রিনি বাবা।'
' আমি সেটাও জানি।' বলে চায়ে আরেকটা চুমুক দিলেন রাশেদ।
রুদ্র তবে খানিকটা চিন্তিত স্বরে বলল, ' কিন্তু ওকে কে মারল?'
রাশেদ খালি চায়ের কাপটা টি-টেবিলে রাখলেন। নিঃসংকোচ, নির্বিকার কন্ঠে বললেন, 'ওকে আমি মে-রেছি।'
.
.
.
চলবে...........................