আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

মনেরও গোপনে (পর্ব ০২)


#মনেরও_গোপনে 
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া 
#পর্ব_২ 



" ওকে। তাহলে রুদ্র গান ধর এবার। মেরে ম্যাহেবুব গানটা দিয়ে শুরু কর। "
সাইকির পাশ থেকে সালান বলে উঠলো রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে। রুদ্র হাসলো স্মিত,গানটা পছন্দের তার। একটা সময় ইউনিভার্সিটিতে এই ছয়জন সব সময় একত্রে চলাফেরা করতো। কিন্তু লেখাপড়া শেষে সে যার জীবনে কর্মব্যস্ততায় ডুবে গেছে। এখন আর বছরেও দেখা হয় না তবে কথা হয় মাঝে মধ্যে। তাই অবশেষে সবাই পরিকল্পনা করে সকল ব্যস্ততা পাশে রেখে আজ অয়নদের বাসায় উপস্থিত হয়েছে। অয়ন পেশায় ডাক্তার, ব্যাচেলর। ছোটো বোন আর মা'কে নিয়ে সংসার। রুদ্র গিটারে সুর তুললো। বাকিরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে। গান ধরলো রুদ্র এবার। 

শুধু মেহবুব কেয়ামত হোগী

আজ রুসওয়া তেরি গালিওঁ মে মহব্বত হোগি

মেরি নাজরীন তো গিলা করতি হ্যায়

তেরে দিল কো ভি সনম তুজসে শিখায়ত হোগি

মেরে মেহবুব...

তেরি গালি ম্যায় আতা সনম

নাগমা ওয়াফা কা গাতা সনম

তুঝসে সুনা না জাতা সনম

ফির আজ ইধার আয়া হুঁ মাগার ইয়ে কেহনে ম্যায় দিওয়ানা

খতম বাস আজ ইয়ে ভেহশত হোগি

আজ রুসওয়া তেরি গালিওঁ মে মহব্বত হোগি

মেরে মেহবুব...

মেরি তারাহ তু আহেন ভরে

তু ভি কিসিসে প্যায়ার করে

অউর রাহে ভো তুজসে পারে

তুনে ও সনম ধায় হ্যায় সিতাম তো ইয়ে তু ভুল না জানা

কি না তুঝপে ভি ইনায়েত হোগি

আজ রুসওয়া তেরি গালিওঁ মে মহব্বত হোগি

মেরে মেহবুব.....

গান শেষে এক ধরনের হৈ-হুল্লোড় লেগে গেলো নিজেদের মধ্যে। আসলে রুদ্র খুব ভালো গান করে। তাই আরেকটা গান গাওয়ার জন্য জোড়াজুড়ি করছে সবাই। শুধু সাইকি একাই তার ব্যতিক্রম। আসলে সাইকি বেশ চুপচাপ স্বভাবের। যদিও আগে এরকম ছিল না। জীবনের কঠিন চপেটাঘাতে চুপ করে গেছে হাসিখুশি মেয়েটা। আসলে আমাদের সবার জীবনেই একটা গল্প থাকে। কারো গল্প বেশি দুঃখজনক আর কারো গল্প তুলনামূলক কম দুঃখজনক। 
" এত ঢং করিস না তো রুদ্র, আরেকটা গান দর ব্যাটা।"
রুদ্রের পাশ থেকে অয়ন খোঁটা দিয়ে বললো। সাথে তাল মেলালো নীলা, সালান, রনি, আবির।
" শোন গান হলো মনের ভালো লাগায় গাওয়ার জিনিস। কিন্তু আমার এখন আর গাইতে ইচ্ছে করছে না। চল তারচেয়ে বরং গল্পগুজব করি নয়তো তোরা কেউ গান গাইতে পারিস। "
রুদ্র বরাবর জেদি স্বভাবের। তাই আর কেউ জোরাজুরি করলোনা রুদ্রকে। কিন্তু বাকিরা সবাই একসাথে সমস্বরে গান গাইতে শুরু করলো। রুদ্র শুধু গিটার বাজাচ্ছে। ত্রিশ বছর বয়সী রুদ্র পেশায় ডাক্তার। ঢাকা শহরে একাই থাকে সে। কারণ পরিবার বলতে আপন কেউ নেই তার। ছোটো থেকে দাদার কাছে মানুষ হয়েছে। কিন্তু তিনিও গত হয়েছেন বছর চারেক আগেই। নীলা বিয়ে করে সুখে সংসার করছে, সালান বাবার টাকায় আয়েশ করছে এখনও। রনি আর আবির দুজনেই প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছে। তবে আবির বিবাহিত রনি এখনো বিয়ে করেনি কিন্তু সামনেই বিয়ে। আর সাইকি আপাতত কিছু করছে না। বড়ো বোনের বাসায় এসেছে সময় কাটাতে। কিছুদিন আগে অবধি একটা ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিল সে। অয়নদের ছাদে আজ হয়তো সারারাত চলবে তাদের গান আর আড্ডাবাজি।

" রাহি তোমাকে দুপুরেই একবার ওয়ার্নিং দিলাম তারপরও আবার এক বিষয় ঘ্যানঘ্যান করছো?"

রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে দু'জনেই ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ে ছিল। কিন্তু রাহি কিছুতেই নিজের মনের খচখচানিটা দূর করতে পারছিলো না বলেই সরাসরি প্রশ্ন করেছিলো আদ্রিয়ানকে,লেডিস পারফিউমের সুভাস কেনো এসেছিলো! আর সেই প্রশ্নেই আবারও চটে গেলো আদ্রিয়ান। 
" তুমি রাগ না করে উত্তরটা সরাসরি বলতে পারছো না? "
" সামান্য পারফিউমের সুভাস নিয়ে এত সন্দেহ তোমার! রাস্তায় কতশত মহিলা চলাফেরা করে। আমি তো আকাশ দিয়ে চলাফেরায় করি না যে সেখানে কোনো মহিলা থাকবে না। "
" না মানে প্রতিদিনই তো বাইরে যাও তখন তো..."
" রাহি! রাহি প্লিজ একটু স্বাভাবিক হও। এত সন্দেহ ভালো না। আমার অসহ্য লাগে তোমাকে ইদানীং, তুমি কী সেটা বুঝতে পারো না?"
আদ্রিয়ান বরাবর স্পষ্টভাষী, কখনো মন রক্ষার্থেও মিথ্যা কথা বলে না। কিন্তু তোশার কথাটা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে যাচ্ছে সে। কারণ তোশা যে আদ্রিয়ানের জন্য কতটা পাগল সেটা রাহিও জানে। তাই তোশার সাথে কফিশপে গেছিলো জানলে সমস্যা আরো বাড়বে। তোশা প্রায় আদ্রিয়ানকে এখানে সেখানে ডেকে পাঠায় কিন্তু আদ্রিয়ান যায় না। কিন্তু আজ মনটা ভীষণ অস্থির থাকায় কি ভেবে যেনো কফিশপে গিয়েছিল সে।
" তুমি কি আমাকে আর ভালোবাসো না?"
নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে অসহ্য লাগে কথাটা শুনলে যেকোনো মানুষই কষ্ট পাবে। রাহিও তেমনই কষ্ট পাচ্ছে এখন। ছলছল নয়নে শুধালো রাহি। রাহির সব কথাই কেমন বাড়াবাড়ি মনে হয় আজকাল। তাই শান্ত হয়ে কথা না বলে বরং আরো রেগে গেলো আদ্রিয়ান। 
" কী করলে মনে হবে আমি তোমাকে ভালোবাসি? সারাদিন ভালোবাসি ভালোবাসি বললেই কী ভালোবাসা হয়!"
" কিছু করতে হবে না, ঘুমাও তুমি সরি।"
" আর কখনো ভালোবাসার কথা বলবে না আমার সাথে। আর এরকম অহেতুক সন্দেহ করে আজাইরা প্রশ্নও করবা না। "
রাহি মুখে কিছু বললো না আর মাথা নাড়ালো কেবল। আদ্রিয়ান অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পাশে থাকা বাতিটা নিভিয়ে দিলো। রাহি সিলিং এর দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে আছে। নিঃশব্দে আঁখি যুগল বেয়ে ঝরে পড়ছে অশ্রু। পাশে শুয়ে একটা মানুষ কাঁদছে অথচ টের অবধি পাচ্ছে না আদ্রিয়ান। অথচ একটা সময় কোনো দিন চোখে পানি আসতে দিবে না বলে কথা দিয়েছিল লোকটা। ভাবতেই কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।

এতক্ষণে ওইঘর থেকে কথা কাটাকাটির আওয়াজ স্তব্ধ হয়েছে। ঘুমানোর চেষ্টা করলেও ঠিক ঘুমোতে পারছিল না এতক্ষণ মিহি। ভাবিকে খুব ভালোবাসে মিহি আর ভাইকেও। দু'জন দু'জনাকে যথেষ্ট ভালোবাসে তবুও সময়ের আবর্তনে সম্পর্কে মরিচা ধরে গেছে। আসলেই কি সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের রসায়ন বদলে যায়? কি জানি উত্তর খুঁজে পায় না মিহি। এরমধ্যে ফোনে একটা এসএমএস এলো। ফোনের নোটিফিকেশনের শব্দে স্ক্রিনে তাকালো মিহি। আগামীকাল ক্লাস আছে ইউনিভার্সিটিতে সেটাই টেক্সট করে জানালো অহনা। অহনা মিহির ক্লাসমেট সাথে বন্ধুও বটে। মিহির মনটা অস্থির হয়ে গেছে আদ্রিয়ান আর রাহির ঝগড়ার কারণে। কিছু একটা করতে হবে বলে মনে মনে দৃঢ় সংকল্প করলো মিহি। কিন্তু নিজের জন্য কী করবে ভেবে উঠতে পারলোনা। এভাবেও মানুষ কাউকে ভালোবাসতে পারে? শুধু একটু স্পর্শ আর একটা ছাতা ব্যস এতটুকুই! ফোন বালিশের পাশে রেখে বাতি নিভিয়ে চোখ মুদলো মিহি। সহসাই চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেদিনের বৃষ্টি ভেজা দুপুরের এক শিহরণ জাগানো ঘটনার কথা। 
ভরা আষাঢ় মাস। শহর-গ্রাম সব জায়গায় বৃষ্টির পানিতে থৈথৈ জল। মিহি তখন অনার্স প্রথম বর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছিলো। পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরছিলো মিহি। অটোতে করেই বেশিরভাগ সময় চলাফেরা করে মিহি। সেদিনও অটোতে ছিল, হঠাৎ অটো থেমে গেলো মাঝপথে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সামনে। সেইজন্যই অটো থামতে বাধ্য হয়েছে সেটুকু বুঝলো মিহি। কিন্তু অত সময় বসে থাকতেও ইচ্ছে করছিলো না। হুট করেই মাথায় এলো একটা দুষ্ট বুদ্ধি। আজ খালি পায়ে হেঁটে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফিরবে। যেই ভাবা সেই কাজ। অটোর ভাড়া মিটিয়ে ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে ভালো করে আঁটকে অটো থেকে নেমে গেলো মিহি। গাড়িগুলো তখনও দাঁড়িয়ে। কিছুটা পথ হাঁটতেই গাড়ি চলা শুরু করলো। অবশ্য সেদিকে বিশেষ খেয়াল করলো না মিহি। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে বারবার চোখের পাপড়ি ঝাপসা হয়ে আসছিলো বলে হাত উঁচু করে বারবার চোখ মুছে নিচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে চমকে উঠলো মিহি। কিন্তু সেদিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার আগেই ঘটনা যা ঘটার ঘটে গেলো। পাশে তাকিয়ে কেবল গাড়ির জানালার বাইরে নীল রঙের শার্ট পরিহিত একজন লোকের হাত দেখলো। জ্যামে গাড়ি আঁটকে ছিলো এতক্ষণ নিশ্চিত লোকটার। মিহিকে ভিজতে দেখে জানালা দিয়ে চোখের পলকে হাতে ছাতা ধরিয়ে দিয়ে গেলো। বিষয়টা একেবারে অবাকই হওয়ার মতো। মিহিও অবাক হলো সাথে বিস্ময়। পরিচিত কেউ ছিল কি গাড়িতে? না-কি অচেনা কেউ! 

অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টের পায়নি মিহি। ছাতাটা এখনো খুব যত্ন করে রাখা আছে। কী কারণে, কেনো লোকটার স্পর্শ এখনও অনুভব করে মিহি জানে না। অতটুকু সময়ে কারো স্পর্শ আদৌও অনুভব করা যায় বলে ভাবতেও অদ্ভুত শোনাবে। তবুও এটা সত্যি মিহির কাছে। 



চলবে.............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।