আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

মনেরও গোপনে (পর্ব ০৯)


#মনেরও_গোপনে 
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া 
#পর্ব_৯ 



এরমধ্যে শরীফ রোগীদের তথ্যের খাতা থেকে খুঁজে সালমান খুরশিদের ফোন নম্বর বের করেছেন। ভালো কথা হচ্ছে সাথে উনার বাড়ির ঠিকানাও আছে! 
" ফোন নম্বর আছে সাথে ঠিকানাও। কিন্তু বিয়ে করবে কিন্তু ভালোবাসতে পারবেনা এটা কী ধরনের কথা ভাইয়া?"
শরীফ খাতাটা রুদ্রর সামনে দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো। রুদ্র ততক্ষণে একবার সালমান খুরশিদের ঠিকানাটায় চোখ বুলিয়ে নিয়েছে। 
" তুমি ভালো করেই জানো শরীফ আমি নবনী ছাড়া আর কাউকে এ জীবনে ভালোবাসতে পারবোনা। "
" তাহলে অন্য একটা মেয়েকে অহেতুক নিজের সঙ্গে জড়ানোর দরকার কী! সে তো বাবার কাছে না খেয়ে নেই যার জন্য আপনার সাথে বিয়ে করবে! বিয়ের পর একটা মেয়ে তার স্বামীর কাছে ভালোবাসা ছাড়া আর কী-বা চাইতে পারে? "
" আমি আমার কোনো দায়িত্ব অপূর্ণ রাখবো না শরীফ। স্বামীর সব দায়িত্ব পালন করবো কেবল মনটা দিতে পারবো না। "
" তোমার যা ভালো মনে হয় করো। মনে হয় না কোনো মেয়ে এরকম প্রস্তাবে রাজি হবে! "
" না হলে ভালোই। আসলে ভদ্রলোকের চেহারাটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। কোথাও যেনো নানুর চেহারার সাথে একটু মিল আছে। "
নানার কথা মনে পড়তেই বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো রুদ্রর। শরীফ আর কিছু বললো না আর। 
ইদানীং প্রতিদিন আদ্রিয়ান রাহির জন্য অফিসের বাইরে অপেক্ষা করে। প্রথম প্রথম রাহির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও আজকাল আর সেই চেষ্টা করে না আদ্রিয়ান। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রাহির গমনের পথে চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে। রাহিও প্রতিদিন গাড়ির সাইডে থাকা আয়নার দিকে তাকিয়ে একপলক দেখে নেয় আদ্রিয়ানকে। কিন্তু যখনই এটা অনুভব করে আদ্রিয়ানের কাছে সে কেবল প্রয়োজন ছিল প্রিয়জন নয় তখনই এক নিমিষে মনকে শক্ত করে ফেলে। অবশ্য এ জগতে সবাই প্রয়োজনেই প্রিয়জন বানায়। 
ভরসন্ধ্যা, বসার ঘরে সোফায় বসে টিভি দেখছেন সালমান খুরশিদ। রিনা বেগম পাশে বসে আছেন ঠিকই কিন্তু তার মনোযোগ অন্য দিকে। আদ্রিয়ানের চেহারার দিকে তাকানো যায় না ইদানীং। একেবারে শুকিয়ে গেছে ছেলেটা। তোশার সাথে বিয়ের কথা বলতে গেলেই এড়িয়ে যায় সে। তাছাড়া সামনে মিহির বিয়ে এসব নিয়ে ভাবুক হয়েছেন রিনা বেগম। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে নড়েচড়ে উঠলেন তিনি। সালমান খুরশিদও স্ত্রী'র দিকে তাকালেন একবার। রিনা বেগম গিয়ে দরজা খুলতেই চমকালেন। ডাক্তার রুদ্র চৌধুরী! 
" আপনি? "
কন্ঠে আকাশসম বিস্ময় নিয়ে শুধালেন রিনা বেগম। এরমধ্যে সালমান খুরশিদও দরজার কাছে উঠে এসেছেন। রুদ্র স্বভাবসুলভ মিষ্টি হেসে বললো, 
" জি আন্টি,কেমন আছেন আপনারা?"
" আরে বাবা তুমি! এসো এসো ভিতরে এসে বসো।"
স্বামীর কথায় রিনা বেগমও যেনো হুঁশ ফিরে পেলেন। এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে কথা বলা ঠিক হয়নি বুঝতে পেরে বললেন, 
" দেখেছেন দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলাম! আমি খুব লজ্জিত, ভিতরে চলুন।"
" সমস্যা নেই। আর আপনিও আমাকে তুমি বলেই সম্মোধন করুন,খুশি হবো।"
রুদ্র বাসার ভিতরে প্রবেশ করেছে। সালমান খুরশিদ নিজে সোফায় বসে রুদ্রকেও বসতে বললেন। রিনা বেগম রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের সাথে কিছু বিস্কুট নিয়ে এলেন। আগে থেকেই চা তৈরি করা ছিল বলে আপাতত এগুলো দিলো। তারপর নিজেও বসলেন সেখানে। রুদ্র ভীষণ চা পছন্দ করে তাই নিরদ্বিধায় চায়ের কাপে চুমুক দিতে শুরু করলো।
" তা বাবা হঠাৎ আমার বাসায় আগমন? আর ঠিকানা কোথায় পেলে তুমি? "
" ঠিকানা পাওয়া বিষয় নয় আঙ্কেল, আসলে সেদিন আপনি যে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন আমি সেই বিষয় কথা বলতে এসেছি। "
" মিহির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। "
মাঝখান থেকে রিনা বেগম বলে উঠলেন। সালমান খুরশিদ একটু দোটানায় পড়ে গেলেন। এরমধ্যে মিহি দৌড়ে বসার ঘরে এসে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু বাবা-মা ব্যাতিত তৃতীয় কারো উপস্থিতিতে লজ্জা পেলো সে। এরকম দৌড়ে না আসলেও বোধহয় হতো। রুদ্র মুচকি হেসে বললো, 
" ইটস ওকে মিহির দানা। আপনার লজ্জা পেতে হবে না। "
রুদ্রর এরকম অদ্ভুত কথায় ভড়কে গেলো মিহি। লোকটা এরকম কেনো? প্রথম দেখায় কেউ এরকম ভুলভাল নামে সম্মোধন করে! 
" এক্সকিউজ মি,আমার নাম তানজিনা ইসলাম মিহি নট মিহির দানা। গট ইট ওকে?"
" ওকে ম্যাম।"
" আচ্ছা বাবা শোনো ভাবি কল করেছিলো আমাকে। এত দিন পর কল পেয়ে একটু এক্সাইটেড হয়ে গেছিলাম। বাই দ্য ওয়ে উনি কে বাবা?"
" তুমি রাজি থাকলে উনার সাথে তোমার বিয়ে হবে মিহি।"
সালমান খুরশিদের কথায় রিনা বেগম, মিহি ও রুদ্র তিনজনই চমকে উঠেছে। যেখানে মেয়ের বিয়ে অন্যত্র ঠিক হয়ে গেছে সেখানে এসব বললেন কেনো ভদ্রলোক! রিনা বেগম ইশারায় সালমান খুরশিদকে চুপ করতে বললেন কিন্তু তিনি মোটেও সেসব গ্রাহ্য করলেন না। রুদ্র ও মিহি নির্বাক হয়ে দু'জন দু'জনার দিকে তাকিয়ে আছে। 
" রুদ্র তুমি বরং মিহির সাথে একটু আলাদা কথা বলে নাও। তোমাদের যদি দু'জন দুজনকে ভালো লাগে তাহলে আমি তোমাদের বিয়ে দিতে রাজি। বিয়ের কথা আগে তোমার সাথে হয়েছিল তাই তুমি আগে অগ্রাধিকার পাবে অবশ্যই। "
স্বামীর কথায় ক্ষেপে উঠলেন রিনা বেগম কিন্তু রুদ্র সামনে থাকায় দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইলেন। বাবার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলোনা মিহি। তবে অন্য কাউকে বিয়ে করাও যা আর লোককে বিয়ে করাও মিহির জন্য সমান। তাই বাবার কথামতো ইশারায় রুদ্রকে নিজের সাথে যেতে বললো মিহি। রুদ্রও মনে মনে যেনো এ সুযোগ খুঁজছিলো। মিহিকে একা পেলে সবকিছু বলা যাবে। তাই মিহির পিছুপিছু রুদ্র ছাঁদে গেলো। রুমের সাথে কোনো বারান্দা না থাকায় ছাদ ছাড়া অন্য কোথায় বসে কথা বলার জায়গা খুঁজে পেলো না মিহি। অচেনা একজন লোকের সাথে রুমে ঢুকে কথা বলা কেমন বেমানান লাগবে বলে মনে হচ্ছিল মিহির। ছাঁদের দক্ষিণ দিকে কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে মিহি,সামনে রুদ্র দাঁড়িয়ে। আশেপাশের বিল্ডিং- গুলোতে বাতি জ্বলছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো দু'জন তারপর সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে রুদ্র নিজেই কথা শুরু করলো। 
" আপনার কোনো পছন্দের মানুষ আছে? "
হঠাৎ রুদ্রর এই কথায় কাটা গায়ে কেমন নুনের ছিটা লাগার মতো অনুভূতি হচ্ছে মিহির। অবশ্য রুদ্র একটা স্বাভাবিক প্রশ্নই করেছে। 
" না তেমন কেউ নেই। আপনার আছে না-কি? অবশ্য থাকলে তো নিজে থেকে বিয়ের কথা বলতে আসতেন না।"
" ব্রিলিয়ান্ট গার্ল। ঠিক ধরেছো,কেউ নেই কিন্তু অতীতে ছিল। আমি আজও তাকেই ভালোবাসি মিহির দানা। তাই আপনাকে বিয়ে করতে পারবো কিন্তু মন থেকে ভালোবাসতে পারবোনা কখনো। কিন্তু বিশ্বাস করুন স্বামী হিসেবে সকল দায়িত্ব পালন করবো অবশ্যই। "
রুদ্রর কথা শুনে বেশ ভালো লাগলো মিহির। মোটেও খারাপ লাগলো না তার। কারণ মিহি নিজেও তার স্বামীকে কখনো মন দিতে পারবেনা।
" আমার কোনো সমস্যা নেই তাতে। কিন্তু কথা হলো যদি ভালোবাসতে না পারেন তাহলে বিয়ে কেনো?"
" আপনার বাবা খুব ভালো মানুষ। উনি একবার আমার বাড়ি গিয়েছিলেন আপনার কথা বলতে। আমি তখন অতীতের জন্য তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে বারবার উনার মুখখানা ভেসে উঠছিল চোখের সামনে। আর মেইন কথা হচ্ছে উনার সাথে আমার নানুর চেহারার বেশ মিল আছে। নানু ছিলেন এ পৃথিবীতে আমার একমাত্র আপনজন। "
" তারমানে আপনার কেউ নেই? "
" নাহ! আমি একাই থাকি একটা বাড়িতে, রাতে শুধু একজন চাচা আছেন উনি রান্নাবান্না করেন।"
মিহি চুপ রইলো আবারও কিছু সময়। তারপর কিছুটা হেসে বললো, 
" ঠিক আছে তাহলে বাবাকে গিয়ে বলুন আমরা রাজি। বিয়ে যখন করতেই হবে তখন না বলে লাভ নেই। আপনাকে না হলেও অন্য কাউকে করতেই হবে, তারচে আপনার একাকীত্বের বন্ধু হবো না হয়।"



চলবে............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।