অন্তর্নিহিত কালকূট
পর্ব ৪০
অনিমা কোতয়াল
.
.
.
আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠল রুদ্রর। হৃদপিণ্ডে যেন হাতুরির আঘাত পড়ল। বিপদের গন্ধ পাচ্ছে সে। এক মুহূর্তও দেরী করল না। অস্থির হয়ে ছুট লাগালো প্রিয়তার ঘরের উদ্দেশ্যে। অন্ধকারে দুবার হোঁচট খেয়েও সামলে নিল। প্রিয়তার ঘরের আগে কুহুর ঘর পড়ে। কী মনে করে আগে কুহুর ঘরের সামনেই থামল রুদ্র। ফোনের টর্চ অন করে উঁকি দিল একবার। ঘুমোচ্ছে কুহু। রুদ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। এবার দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল প্রিয়তার ঘরে দিকে। দরজা ঠেলতেই 'ক্যাচ' শব্দ করে তা খুলে গেল। রুদ্র খেয়াল করল গলা শুকিয়ে গেছে ওর। হাতের তালু ঘামে ভিজে উঠেছে। নিজের অসম্ভব শক্তিশালী নার্ভকেও ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। এরকম অনুভূতি ওর জন্যে নতুন। একদমই নতুন। টর্চ জ্বালানোর সাহস হচ্ছেনা ওর। অনেক কষ্টে সামলালো নিজেকে। কম্পিত কন্ঠে ডাকল, ' প্রিয়? প্রি_"
দ্বিতীয়বার ডাকার সুযোগ পেলোনা। তার আগেই কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ল রুদ্রর বুকে। রুদ্র চমকাল। অসম্ভব কাঁপছে প্রিয়তা। রুদ্র দুহাতে ওকে আগলে নিয়ে বলল, 'কী হয়েছে?'
'কেউ ছিলো ওখানে।'
আঙুল দিয়ে করিডরের দিকে দেখাল প্রিয়তা। রুদ্র একবার তাকাল করিডরে। দু সেকেন্ড চিন্তা করে প্রিয়তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, 'এইমাত্র ঐ পথ দিয়েই এসেছি আমি প্রিয়। কেউ ছিলোনা। রিল্যাক্স।'
'আমি দেখেছি।'
'অন্ধকারে ভুল দেখেছো হয়তো।'
লাইট জ্বলে উঠল। কিন্তু প্রিয়তা ছাড়ল না রুদ্রকে। শক্ত করে জাপটে ধরে রাখল। রুদ্র নিজেই আস্তে করে ছাড়িয়ে নিল ওকে। দু গালে হাত রাখল। অতঃপর যত্ন নিয়ে মুছে দিল দুচোখের জল। এখনো কাঁপছে মেয়েটা। রুদ্র শক্ত করে প্রিয়তার বাহু ধরে বলল, 'ভয় নেই। আমি আছিতো।'
এরমধ্যেই জ্যোতি আর মীরা একসঙ্গে ভেতরে এলো। রুদ্রকে দেখে দুজনেই চমকালো। কয়েক সেকেন্ড বোকার মত তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল মীরা। বলল, 'কী ব্যপার দুলাভাই! কাল থেকেতো ও সবসময় আপনার ঘরেই থাকবে। একটা রাত বউকে ছাড়া থাকা গেলোনা?'
মীরার রসিকতায় হাসি পেলোনা রুদ্রর। রেগে আছে ও। শক্ত কন্ঠে বলল, 'কোথায় ছিলে দুজন?'
রুদ্রর কন্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে গেল মীরা। নিজের গোল ফ্রেমের চশমা ঠিক করে খানিক ইতস্তত করে বলল, 'আমিতো স্টেজের ফুলগুলো সব গোছাচ্ছিলাম। করিডরে আসার সময় জ্যোতি আপুর সাথে দেখা হল।'
রুদ্র ধমকে উঠল, 'সবগুলোকে একসঙ্গেই কাজে যেতে হলো? মেয়েটাকে এখানে একা রেখে চলে গেলে!'
জ্যোতি ভ্রু কোঁচকালো। বিরক্তি নিয়ে বলল, ' আমাদের কী তোমার বউয়ের গার্ড হিসেবে অ্যাপোয়েন্ট করেছো নাকি?'
রুদ্রর ধৈর্য্যর বাঁধ ভাঙল এবার। জ্যোতির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, 'আর একটাও ত্যাড়া কথা বললে আমি ভুলে যাব তুই কে। তুই ভালো করেই জানিস ওর সাথে কেউ একজন থাকাটা কেন প্রয়োজন। জেনেশুনে ন্যাকা সাজবিনা আমার সামনে।'
জ্যোতি কিছু বলল না। কয়েক সেকেন্ড স্থির চোখে তাকিয়ে রইল রুদ্রর দিকে। তারপর প্রিয়তা আর মীরার দিকে একপলক তাকিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। মীরা মাথা নিচু করে বলল, ' আমি করিডরে আছি।'
মীরা বেরিয়ে যেতেই প্রিয়তা তাকাল রুদ্রর দিকে। এতক্ষণ নিজেকে সামলে নিয়েছে। প্রিয়তা দরজার দিকে একপলক তাকিয়ে রুদ্রর দিকে তাকাল। বলল, 'জ্যোতি আপুর সঙ্গে এভাবে কথা না বললে হতো না? আমিতো বাচ্চা না। অন্ধকারে উল্টাপাল্টা ভেবে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এতে ওদের কী দোষ?'
রুদ্র কঠোর গলায় বলল, 'শুরুটা ও করেছে। আর আমার চিন্তার কারণটা তুমি বুঝবেনা, প্রিয়। কিন্তু ওর বোঝার কথা ছিল।'
রুদ্রের দিকে এবার ভালোভাবে তাকাল প্রিয়তা। ঘামে সারা শরীর ভিজে গেছে। সাদা পাঞ্জাবীটা লেপটে আছে গায়ে। চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। সঙ্গে ভীষণ রেগেও আছে। ওর মুষ্টিবদ্ধ হাত, শক্ত চোয়াল আর অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস তাই বলছে। প্রিয়তা রুদ্রর হাত ধরল। আস্তে করে ঘোরালো নিজের দিকে। নরম গলায় বলল, 'এতো চিন্তা কীসের? আপনি থাকতে কেউ আমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।'
রাগ কমল রুদ্রর। শান্ত চোখে তাকাল প্রিয়তার চোখে। পিয়তা মুচকি হেসে চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করল ওকে। রুদ্র এতক্ষণে লক্ষ্য করল প্রিয়তাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে। লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি, কোমরে পড়া খোলা চুল। চোখের জলে কাজল কিছুটা লেপ্টে গেলেও মন্দ লাগছে না। এই দুটো চোখের ওপর শুরু থেকেই মারাত্মক দুর্বল রুদ্র। ওর রাগী দৃষ্টি ধীরে ধীরে প্রেমময় দৃষ্টিতে পরিণত হল। রুদ্রর তাকানোতে লজ্জা পেল প্রিয়তা। মাথা নিচু করে বলল, 'এখন যানতো! বাকি সবাই জেনে গেলে ভীষণ লজ্জায় পড়তে হবে। যা দেখেছে তাতেই সারারাত জ্বালিয়ে মারবে মীরা।'
রুদ্র প্রিয়তার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে আনলো। কপাল থেকে নেমে আসা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে লল, 'আমার বউয়ের কাছে আমি এসেছি। লজ্জা কীসের?'
' এখনো বউ হইনি। কাল হব। যান প্লিজ।'
রুদ্র ঘড়ি দেখল। সত্যিই রাত হয়েছে অনেক। যাওয়ার সময় করিডর, আর বাড়ির আশপাশটা আরেকবার ভালোভাবে চেক করে নিতে যেতে হবে ওকে। প্রিয়তাকে কেউ ছিলোনা বলে সান্ত্বনা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ও নিজেও করিডরে কারো উপস্থিতি টের পেয়েছিল। গত কয়েক মিনিটে কিছুতো একটা ঘটে গেছে এই বাংলোতে। কিন্তু সেটা কী?
-
পরেরদিন দুপুরের পরেই প্রচন্ড ভীড় হলো ভাড়া করা সেই বাংলোতে। উৎসবের কোলাহলে কান পাতা দায় হলো। অতিথি আসতে শুরু করেছে। খাওয়া-দাওয়া চলছে। রাশেদ আমের ভীষণ ব্যস্ত আজ। প্যান্ডেল টানানো আলাদা বিশেষ জায়গায় বসে আছেন তিনি। তবুও ভীষণ ব্যস্ততা। অতিথিরা ওখানে গিয়েই আলাপ করছেন তার সঙ্গে। একজনের পর একজনের আগমন। এক মুহুর্তের জন্যেও ওঠার অবকাশ নেই। তার বাঁ পাশে বসে আছেন জাফর। উচ্ছ্বাস আর ইকবাল খাবার, অতিথি আপ্যায়ন আর পাহারার ব্যপারগুলো ভাগে ভাগে দেখছে। ব্যস্ত সকলেই।
এমনিতে খুব স্বাভাবিক মনে হলেও মোটেও স্বাভাবিক বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছেনা এখানে। কমিশনার মোটামুটি একটা সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছেন। কয়েকজন পুলিশ আছে পাহারায়। অ-স্ত্র হাতে বিয়ে বাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করছে তারা। কিন্তু রুদ্রর পরিকল্পনা মোতাবেক এখানে উপস্থিত ওর দেড়শ সশ-স্ত্র লোক আছে। প্রত্যেকেই লুকিয়ে রেখেছে নিজেদের পি-স্ত-ল। কাজের ফাঁকেই সতর্ক দৃষ্টি রাখছে চারপাশে। রা-ই-ফেল সাইটে রেখে টার্গেট করা সম্ভব, আশেপাশের এরকম সবকটা বিল্ডিং এ ওদের লোক দাঁড়িয়ে আছে। কড়া নজর আছে সেদিকেও।
সেই ঘিয়ে রঙের, লাল কাজের শেরওয়ানিটাই পড়েছে আজ রুদ্র। হাতে লাল পাগড়ি। এতো কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরেও মানসিক শান্তি পাচ্ছেনা ও। মনের মধ্যে খচখচ করছে কাল রাত থেকেই। মনে হচ্ছে কিছু একটা অঘটন ঘটে গেছে ইতিমধ্যে। এক জায়গায় স্থির হয়ে বসতে পারছেনা ও। হেঁটে হেঁটে নিজেও নজর বোলাচ্ছে চারপাশে। ওর পেছন পেছন দুজন লোক হাঁটছে। পাহারা দেওয়ার ভঙ্গিতে। রুদ্র বলেনি ওদের। নিজ তাগিদেই করছে ওরা।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সামনে পড়ল ইন্সপেক্টর আজিজ। দাঁড়িয়ে গেল রুদ্র। আজিজও দাঁড়াল। দুজনেই কৃত্রিম হেসে হাত মেলালো একে অপরের সঙ্গে। রুদ্র হাসিমুখে বলল, 'খাওয়া শেষ? রান্না ভালো ছিল?'
মেকি হাসল ইন্সপেক্টর আজিজ। বলল, 'অসাধারণ ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল রুদ্র আমেরের বিয়ের ভোজ। ভরপেট খেয়েছি।'
'প্রশংসা করলেন নাকি নিন্দা? আমার সম্পর্কে খুব বেশি ভালো ধারণা নেই আপনার। অন্তত আমি সেরকমটাই জানি।'
উত্তর দিলো না আজিজ। চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল, 'ক্রিমিনালদের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও আজকাল পুলিশকে করতে হচ্ছে। ঘোর কলিযুগ! তাইনা?'
রুদ্র ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল, 'এই গোটা নিরাপত্তা আমার স্ত্রীর জন্য। সে ক্রিমিনাল নয়।'
'কিন্তু তার বিপদের আশঙ্কা আছে কেন? তুমি ক্রিমিনাল বলে। তবে একটা কথা ভাবছি। পুলিশের এইটুকু নিরাপত্তা তোমার শত্রুদের ঠেকানোর জন্যে যথেষ্ট?'
রুদ্র আজিজের একদম কাছাকাছি দাঁড়াল। অনেকটা ফিসফিসিয়ে বলল, 'যদি বলি আরও কঠিন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে রেখেছি আমি, তাহলে? বিশ্বাস করবেন?'
মাথা ঝাঁকালো আজিজ। বলল, ' করে ফেললাম। না করার কিছু নেই। মানতে হবে। আইনি ভাবে কীকরে বেআইনি কাজ করা যায়, সেটা তোমার কাছে শেখা উচিত।'
রুদ্র কৌতুকের স্বরে বলল, ' একটা কোচিং সেন্টার খুলব, স্যার? চলবে? মনে হয়?'
হেসে ফেলল আজিজ। গোঁফে আঙ্গুল বুলিয়ে বলল, 'দৌঁড়াবে।' একটু থেমে আবার বলল, 'বাপ ছেলে দুজনেই একরকম। জিভের ডগায় উত্তর সাজানো থাকে।'
এরমধ্যেই ডাক পড়ল রুদ্রর। কাজি তৈরী আছেন। বিয়ে পড়ানো হবে। রুদ্র আজিজের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বলল না। রাশেদের দ্বিতীয় ডাক শুনল। পাগড়িটা মাথায় পরে লম্বা কদমে এগিয়ে গেল প্যান্ডেলের দিকে। রাশেদের আর উচ্ছ্বাসের মাঝে গিয়ে বসল সে।
কাজিকে যখন প্রিয়তার কাছে পাঠানো হল; নিজের অজান্তেই উশখুশ করতে শুরু করল রুদ্র। ভেতর ভেতর কেমন ছটফট করল। দু হাতে হাতের তালু ঘষে ঘষে অস্থিরতা কমানোর চেষ্টা করল। ব্যপারটা খেয়াল করল উচ্ছ্বাস। ঠোঁট চেপে কানের কাছে ঝুকে বলল, 'আরে বলে দেবে, বলে দেবে। এতো প্যারা খাওয়ার কিছু নেই। বাসর তোর হবেই। আই গ্যারান্টি ইট।'
কটমটে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উচ্ছ্বাসকে থামিয়ে দিল রুদ্র। কিছুক্ষণ বাদেই সংবাদ এলো 'কবুল' বলেছে প্রিয়তা। নিজের অজান্তেই মৃদু হাসল রুদ্র। ও কোনরকম দ্বিধা ছাড়াই অনায়াসে 'কবুল' বলে সই করে দিয়েছে কাগজে। সকলেই সন্তোষভরে হাত তুলে 'আলহামদুলিল্লাহ্' বলল। রুদ্র নিজেও মন থেকে আওড়ালো, আলহামদুলিল্লাহ্। প্রথমবারের মতো।
'কনগ্রাচুলেশানস্ বস। বাসর কনফার্মড!' উচ্ছ্বাসের কথায় রাগ করতে করল না রুদ্র। ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলল।
সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হল রুদ্র-প্রিয়তার বিয়ে। কোনরকম বাধা আসেনি। কিংবা এতো কঠোর নিরাপত্তার কারণে আসতে পারেনি। বিয়ে পড়ানোর পর যখন রুদ্র আর প্রিয়তাকে এনে একসঙ্গে বসানো হলো। প্রিয়তাকে বধুবেশে দেখে থমকে গেল রুদ্র। হৃদস্পন্দন তাল হারাল। ঘিয়ে রঙের গরজিয়াস একটা শাড়ি পড়েছে প্রিয়তা। মাথায় ভাড়ি কাজের গাঢ় লাল ওড়না। সাদা আর লাল পাথরের অসাধারণ ভারী সব গহনা। অপূর্ব লাগছে মেয়েটাকে। তবে বেশিক্ষণ তাকায়নি রুদ্র। কঠিন এক ব্যক্তিত্ব আছে ওর। সকলের সামনে বউয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার মতো লোক সে নয়। শুধু সুযোগ বুঝে, সকলের অলক্ষ্যে; প্রিয়তার কানে কানে বলল, 'আমার এই চাঁদকে দেখে আজ আকাশের ঐ চাঁদও লজ্জা পাবে।'
কথাটা শুনে শাড়ি খামচে শক্ত হয়ে বসে ছিল প্রিয়তা। একচুলও নড়েনি।
মিষ্টি খাওয়ানো, আয়না দেখা, সব নিয়মকানুন; কাজকর্ম সাড়তে সাড়তে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাকি গোছগাছের দায়িত্ব কর্মচারীদের হাতে সপে দিয়ে সবাই বেরিয়ে পড়ল আমের ভিলার উদ্দেশ্যে। বাংলোটা কাছেই ছিল। পনেরো মিনিট মধ্যেই আমের ভিলায় পৌঁছে গেলো ওরা।
রুদ্র গাড়ি থেকে নামল, হাত বাড়িয়ে দিল নিজের স্ত্রীর দিকে। প্রিয়তার বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। এতোদিন শুধু নাম শুনেছে। কিন্তু আজ আমের ভিলায় পা রাখবে ও। তাও বাড়ির একজন সদস্য হয়ে, বউ হয়ে। প্রিয়তা খানিক ইতস্তত করে হাত রাখল রুদ্রর হাতে। ওর হাতে মৃদু চাপ দিল রুদ্র। ধীরে ধীরে চোখ তুলল মেয়েটা। আজ সারাদিনে প্রথম তাকিয়েছে রুদ্রর দিকে। পুরোটা সময় চুপচাপ মাথা নিচু করেই বসে ছিল। রুদ্র এমনিতেই অসম্ভব সুন্দর পুরুষ। ঘিয়ে রঙের শেরওয়ানিতে একদম রাজপুত্র লাগছে ওকে। রুদ্রের চোখে চোখ পড়তেই চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করল রুদ্র প্রিয়তাকে। প্রিয়তা মুচকি হাসল। রুদ্রর হাত ধরে নেমে এলো গাড়ি থেকে।
রাশেদ আমের ইতিমধ্যে ভেতরে চলে গেছেন। ওরাও এগোলো বাড়ির দিকে। সদর দরজার কাছে যেতেই রাশেদের দৃঢ় কন্ঠস্বরে থেমে গেল সবাই। রাশেদ সোজা এসে দাঁড়াল প্রিয়তার সামনে। প্রিয়তা মাথা নিচু করে আছে। রাশেদ গম্ভীর কন্ঠে বললেন, 'হাত দাও।'
প্রিয়তা দ্বিধান্বিত হয়ে একবার তাকাল রুদ্রর দিকে। অতঃপর আস্তে করে বাড়িয়ে দিল নিজের হাত। পেছন থেকে নিজের হাতটা সামনে আনলেন রাশেদ। একটা বালা পরিয়ে দিলেন প্রিয়তার হাতে। প্রিয়তা অবাক হল। রাশেদ কন্ঠস্বর গম্ভীর রেখেই বললেন, 'তোমার শাশুড়ির ছিল এটা। আজ থেকে তোমার। আমের ভিলার সৌভাগ্য হয়ে প্রবেশ করো।'
প্রিয়তা তাকিয়ে রইল রাশেদের দিকে। লোকটাকে যত দেখছে মুগ্ধ হচ্ছে ও। এমনও ব্যক্তিত্ব হয়! রাশেদ ইশারা করতেই রুদ্র আবার ধরল প্রিয়তার হাত। রুদ্রর হাত ধরেই আমের ভিলায় প্রথম পা রাখল প্রিয়তা।
' আমের সাহেব।'
ইন্সপেক্টর আজিজের কন্ঠস্বরে থমকে গেল সকলে। পেছন ঘুরে তাকাল। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, ' নতুন বউ সবে ঘরে ঢুকলো। এমন সময় ডিসটার্ব করার জন্যে দুঃখিত। কিন্তু কিছু করার ছিলোনা আমার।'
রাশেদ আমের এগিয়ে এলেন। নির্বিকারভাবে বললেন, ' কী হয়েছে?'
' ঐ বাংলোতে একজন মহিলার লা-শ পাওয়া গেছে। লাশটা একটা ঘরের বাথরুমে পড়ে ছিল। আপনাদের একজন কর্মচারীই সবার আগে দেখেছে লা-শটা। লা-শ নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। আপনারা কষ্ট করে একটু আইডেন্টিফাই করে দিন।'
এইসময় এরকম একটা সংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সকলে। কয়েক সেকেন্ড কোন কথা বের হলোনা কারো মুখ থেকে।
.
.
.
চলবে.........................