আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

মনেরও গোপনে (পর্ব ১২)


#মনেরও_গোপনে 
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া 
#পর্ব_১২ 



রুদ্র গাড়ি থেকে নেমে মিহিকে নামানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মিহি রুদ্রর হাত না ধরে একা একা নামলো।
" ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।"
" স্বাগত মিহির দানা। "
" আবারও! "
" ভুল হয়ে গেছে মিহির দানা। "
রুদ্রর দাঁত বের করা হাসি দেখে মিহির গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে একেবারে। শরীফ গেট পেরিয়ে বাসার দরজার তালা খুলে এরমধ্যেই ভিতরে প্রবেশ করেছে। রুদ্র মুখ টিপে মিটিমিটি হাসতে হাসতে দরজার দিকে এগোচ্ছে আর মিহি তার পিছু পিছু হাঁটছে। 

নিজের ঘরে মনমরা হয়ে বসে আছেন মিহির মা। বাসার সবাই রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করেছে শুধু মাত্র রিনা বেগমই অভুক্ত রয়েছেন। 
" মা ভিতরে আসবো?"
রাহি দরজার বাইরে হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়ের কথা ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে ছিলেন রিনা। রাহির কথায় ভাবনার ছেদ ঘটলো। 
" হ্যাঁ এসো।"
রাহি খাটের পাশের টেবিলের উপর ভাতের প্লেট রেখে বিছানায় শ্বাশুড়ির পাশে বসলো। 
" মা আপনি না খেয়ে থাকলে আপনার শরীর খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া মিহি যদি জানতে পারে আপনি এরকম করছেন তাহলে কি ও ওই বাড়িতে ভালো থাকতে পারবে?"
" আমার খেতে ইচ্ছে করছে না রাহি। তুমি মিহিকে কিছু জানিও না। "
" আচ্ছা মা আপনি, আমি সবাই তো বাবার বাড়ি ছেড়ে এসেছি তাই না? এটাই তো প্রাকৃতিক নিয়ম, মেয়েরা বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে নিজের সংসার গুছিয়ে নিবে। তাছাড়া মিহির শ্বশুর বাড়ি তো কাছেই।"
" তা ঠিক বলেছো। তুমি খাবার রেখে যাও,আমি অল্প খেয়ে নিবো। তোমার শ্বশুর কি খেয়েছেন?"
" হ্যাঁ তিনি খাবার খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিয়েছেন। টিভিতে খবর দেখছেন দেখে এলাম।"
" তাহলে তুমিও গিয়ে শুয়ে পড়ো।"
" ঠিক আছে মা, খেয়ে নিবেন কিন্তু। "
রিনা বেগম মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন তিনি। রাহি শ্বাশুড়ির ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েই মিহিকে কল দিলো। দু'টো রিং হতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ করলো। 
" ভাবি আমি এখন এমনিতেই কল দিতাম,সবাই কেমন আছেন? "
" হ্যাঁ ভালো আছেন। তুমি খেয়েছো রাতে? "
" না রান্না শেষ হলো মাত্র। তুমি খেয়েছো?"
" হ্যাঁ কিন্তু রান্না কি তুমি করলে?"
রাহির কন্ঠে বিস্ময় সেটা বুঝেই হাসলো মিহি।
" আরে না, চাচা আছেন উনি করেছেন।"
" তাই বলো। তা তোমার বর কোথায়? "
" ডাইনিং রুমে গেলো মনে হয়। লোকটা ভীষণ বজ্জাত। "
" তাই না-কি! তা এখনো তো বিছানায় গেলেই না তার আগেই কী আদর শুরু করেছে? "
রাহি দুষ্টমি করে বললো। মিহি লজ্জা পেলো কিছুটা। 
" ধ্যাৎ! কীসব বলো না তুমি। এমনিতে খুব ক্ষ্যাপায় আমাকে। কতবার বলেছি আমার নাম মিহি কিন্তু বজ্জাত লোকটা বারবার মিহির দানা বলেই ডাকছে!"
" রসিক মানুষ মজা করে একটু তাতে রাগের কী আছে ননদী? "
" মজা না ছাই!"
" হাহা! আচ্ছা রাখছি এখন রাতের জন্য শুভকামনা রইলো।"
" ভাবি!"
রাহি ফোন কেটে পিছন ফিরে তাকাতেই চমকালো। আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে পিছনে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলো না-কি! 
" তুমি এখানে? "
" তুমি কোথাও খুঁজতে গিয়ে এখানে গলার আওয়াজ পেলাম।"
" আচ্ছা চলো ঘরে যাই।"
আদ্রিয়ান রাহির পেছন পেছন ঘরে এসেছে। কিন্তু বিছানার দিকে তাকাতেই রাহির চোখ ছানাবড়া! পুরো বিছানায় বইয়ের ছড়াছড়ি। আদ্রিয়ান বইপ্রেমি মানুষ কিন্তু সমস্যা হলো বই পড়ে সব বিছানায় এলোমেলো করে রাখে। রাহি আদ্রিয়ানের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো একবার। আদ্রিয়ান সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দরজা আঁটকে দিলো। রাহি বিছানা গুছিয়ে বইগুলো সব শেলফে রেখে দিলো। 
" এবার শুয়ে উদ্ধার করো আমাকে, বাতি নিভিয়ে এসো।"
রাহি শুয়ে পড়েছে এরমধ্যেই। আদ্রিয়ান রুমের বাতি নিভিয়ে বাধ্য ছেলের মতো রাহির পাশে শুয়েছে।
" রাহি!"
" হ্যাঁ বলো।"
" আমার শাস্তি কি শেষ হবে একজীবনে? "
" জানি না আমি। তুমি যতবার আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করো ততবারই তোশার বলা কথাগুলো মনে পড়ে যায়। "
" বিশ্বাস করো তোশার সাথে কোনো খারাপ সম্পর্কে লিপ্ত হইনি আমি। আর না তো খারাপভাবে স্পর্শ করেছি।"
" স্পর্শ তো করেছো!"
রাহির এই কথার উত্তরে বলার মতো কোনো যুক্তি নেই আদ্রিয়ানের কাছে। রাহি ফিরে এসেছে মাসখানেক হলেও এখনো আদ্রিয়ানকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। তোশা আদতে না থাকলেও তোশার বলা প্রতিটি কথা আদ্রিয়ান ও রাহির মধ্যে অদৃশ্য দেয়াল হয়ে জুড়ে আছে। 

রাতের খাবার রান্না করা শেষে রহমান চাচা ও রুদ্র মিলে টেবিলে পরিবেশন করেছে। তারপর মিহিকে ডেকে নিয়ে এসেছে রুদ্র। বিয়ের ভারী গয়নাগাটি ও পোশাক পাল্টে মিহি হালকা গোলাপি রঙের একটা থ্রিপিস পরেছে। রুদ্রও পাঞ্জাবি পাল্টে টি-শার্ট আর লুঙ্গি পরেছে। ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে মিহি। রুদ্র বসে গেছে আগেই, রহমান চাচা প্লেটে খাবার দিচ্ছে। 
" কি হলো দাঁড়িয়ে রইলে কেনো? খেতে বসো।"
" হ্যাঁ বসছি,চাচা খাবেন না?"
রহমান চাচা মুচকি হেসে বললেন,
" আমি বাসায় গিয়ে তোমার চাচির সাথে খাবো মা। তোমরা শুরু করো। এই বয়সেও স্ত্রী'র প্রতি অগাধ ভালোবাসা দেখে সত্যি অবাক হয়েছে মিহি। এই যুগে একজন মানুষে আজীবন আসক্ত থাকা আগুনে পা দিয়ে হাঁটার সমান। মিহি রুদ্রর পাশের চেয়ারে বসে খেতে শুরু করলো। কিন্তু লজ্জার কারণে বেশি খেতে পারলোনা। কয়েক লোকমা ভাত মুখে দিয়েই প্লেটে হাত ধুয়ে বসে রইলো। রুদ্র তখনও খাচ্ছে, কিন্তু মিহির বিষয়টা দেখেছে ঠিকই। 
" চাচা ফ্রিজে আইসক্রিম আছে না?"
রহমান চাচা তখন রান্নাঘরে গ্যাসের চুলো পরিষ্কার করছিলো। রুদ্রর কথায় ফ্রিজ খুলে দেখে বললো,
" হ্যাঁ আছে তো,নিয়ে আসবো না-কি? "
" হ্যাঁ এসো।"
লোকটা কী ভাতের সাথে আইসক্রিম খাবে না-কি! মনে মনে ভাবলো মিহি। রহমান চাচা আইসক্রিম নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো। 
" মিহির দানা খাবে না-কি আইসক্রিম? "
মিহি চুপ করে আছে। এভাবে খাবো কি-না জিজ্ঞেস করলে কী বলা যায় খাবো? জোর করে খেতে বলতে পারেনা লোকটা? 
" এই মিহির দানা! "
" না না আমি খাবো না আপনি বরং ভাতের সঙ্গে খান।"
" কী বললে? ভাতের সাথে আইসক্রিম! এটা তোমার জন্য আনতে বলেছি বোকা মেয়ে। "
" আমি মোটেও বোকা নই।"
" ঠিক আছে বুদ্ধিমতী তরুণী। ভাত তো খেলে না আইসক্রিম অন্তত খেয়ে নাও। মেয়েরা তো ফুচকা, আইসক্রিম, ভেলপুরি, চকলেট এসব পছন্দ করে। "
" হ্যাঁ আমিও করি। আপনি তো মনে হয় মেয়েদের উপর পিএইচডি করেছেন। "
" তা করিনি কিন্তু জানি আরকি। তুমি কি জানো তুমি আমার চেয়ে কত বছরের ছোটো? "
মিহি চোখ বড়ো বড়ো করে শুধালো,
" কত? "
" বেশি না ছয় বছরের বড়ো। "
" ছয় বছরের বড়ো!"
" হ্যাঁ তাতে ওমন করে বলার কী হয়েছে মিহির দানা? "
" কিছু না। "
রুদ্র খাওয়া শেষে আইসক্রিমের বাটিটা নিজের দিকে নিলো। মিহি আড়চোখে তাকিয়ে আছে সেদিকে। 
" তুমি তো মনে হয় খাবে না তাহলে আমিই খাই।"
রুদ্র চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করছে হাতে মিহির খুব ইচ্ছে করছে খেতে কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছেনা সেটা। এমনিতেই আইসক্রিম খুব প্রিয় মিহির। এতোটাই প্রিয় যে শীতের মৌসুমেও আইসক্রিম খেতে দুবার ভাবে না। মিহির ভাবসাব দেখে রুদ্র বুঝতে পেরেছে এই মেয়ে লজ্জায় মুখ ফুটে খাওয়ার কথা বলতে পারবেনা। তাই নিজে থেকেই আবারও সাধলো।
" আচ্ছা বেশি খেতে হবে না অল্প একটু খাও।"
রুদ্র আইসক্রিমের বাটি মিহির দিকে এগিয়ে দিলো কিছুটা। মিহি ইতস্ততভাবে চামচটা হাতে নিলো এবার। 
" আহা খাও তো। খাবার খেতে এত লজ্জা করলে চলে? দেখে তো মনে হয় না এমনিতে এত লজ্জাবতী তুমি। "
রুদ্রর শেষ কথাটায় মিহি ক্ষ্যেপে গেলো কিছুটা। এক চামচ আইসক্রিম মুখে দিয়ে রুদ্রকে কিছু বলতেই যাবে এমন সময় রহমান চাচা বলে উঠলো,
" আমি যাচ্ছি তাহলে রুদ্র বাবা,মিহি মা গেলাম।"
"
" জি চাচা, সাবধানে যাবেন।"
" চাচা খাবার প্যাকেট করে নিয়েছেন তো? "
" হ্যাঁ রুদ্র বাবা নিয়েছি।"
" ঠিক আছে। "



চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।