#মনেরও_গোপনে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_২৫
বাইরে থেকে লক করা না, মানে ভেতরে মিহি আছে। গতরাতের সুখকর স্মৃতি রোমন্থন করতেই আনমনে হেসে উঠলো রুদ্র। নিশ্চয়ই মেয়েটার কিছু মনে নেই ভেবে ঠোঁটের কোণের হাসি আরও প্রসস্থ হলো। এরমধ্যেই মিহি বাথরুম থেকে বেরোলো। কিন্তু বিছানার দিকে না তাকিয়ে সোজা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসে ভেজা চুলগুলো মুছতে লাগলো। রুদ্র বিষয়টা খেয়াল করে মিহির পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। মিহি অবশ্য আনমনে তাকিয়ে ছিলো আয়নার দিকে।
" কী হয়েছে? এরকম দৃষ্টি নিচে রেখে চলছো কেনো?"
রুদ্রর উপস্থিতিতে মিহি খুব বিব্রতবোধ করছে। কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছে। কেনো যে রাতে ঠান্ডা লাগাতে গেলো!
" না মানে আসলে.."
" ব্যথাও দিলে তুমি আর এড়িয়েও যাচ্ছো তুমি!"
" আপনার কোনো লাজলজ্জা নেই? "
মিহি আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। রুদ্র সেদিকে তাকিয়ে হাসলো।
" আছে বলেই তো যখন তুমি ঠোঁটে আমার স্পর্শ চাচ্ছিলে তখন আমি সরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো ছাড়লে না। উপরন্তু আমার পিঠের কী অবস্থা করেছো দেখো।"
রুদ্র পিছনে ফিরে দাঁড়ালে মিহি আয়নায় দেখলো নখ বসে গেছে সমস্ত পিঠে। কী লজ্জার কান্ড! অবচেতন অবস্থায় এসব কীভাবে করলো ভেবেই মরমে মরে যাচ্ছে মেয়েটা। লোকটা নিশ্চয়ই খুব ব্যথা পেয়েছিলো তখন? পেলে পেয়েছে তাতে কী হুহ্?
" চাইবোই তো,আপনি আমার একমাত্র স্বামী। বেশ করেছি নখ বসিয়ে দিয়েছি। আপনি কী করেছেন? ঠোঁট ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে আমার। "
রুদ্র আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে দেখলো মিহিকে। আসলেই তো!
"এতকিছু কী খেয়াল থাকে না-কি তখন? ভালোবাসার সময় এরকম একটু-আধটু হয়। "
" আপনি একটা যাচ্ছে তাই। ঘরের বাইরে গেলে সবাই কী ভাববে? ইশশ! লজ্জায় মরেই যাবো আমি। "
" হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। একটু কিস করেছি আরকিছুই না। তাছাড়া এসব সবাই করে, নতুন কিছু না। "
মিহি চিরুনি রেখে রুদ্রর দিকে দৃষ্টিপাত করলো। লোকটা কি সত্যি বলছে? আসলেই কিছু হয়নি গতরাতে! অবশ্য মিথ্যা কেনো বলবে।
"নির্লজ্জ লোক একটা, তারমানে আমাদের ফুলসজ্জা হয়নি?"
" না মিহির দানা। তুমি এখনও ছোটো বুঝলে,আগে বড়ো হও তারপর এসব করবো।"
" আমি ছোটো? মাস্টার্সে পড়া মেয়েকে পৃথিবীর আর কে ছোটো বলেছে আমার জানা নেই।"
" তারমানে তুমি চাচ্ছিলে সবকিছু হোক? সমস্যা নেই তাহলে আজকে রাতে কন্টিনিউ করবো।"
" ধ্যাৎ! অসভ্য লোক।"
মিহি ভেংচি কেটে দরজার দিকে দৌড়ে চলে গেলো। রুদ্র একটু গলা উঁচিয়ে বলেলো,
" এখন থেকে মনে মনে না ডেকে এমনিতেই ডাক্তার সাহেব বলে ডেকো,ভালোই লাগে শুনতে।"
" ঠিক আছে ডাক্তার সাহেব, তাড়াতাড়ি নিচে আসুন।"
রুদ্র গোসল করার জন্য বাথরুমে গেলো। গত রাতের পাগলামির কথা ভাবতেই বারবার হাসি পাচ্ছে মিহির। এরমধ্যে বসার ঘরে উপস্থিত হলো মিহি। শরীফ, আর রহমান চাচা বসে গল্পগুজব করছেন। সুমি আর মিতুর কথার আওয়াজ আসছে ডাইনিং টেবিলের দিক থেকে। যদিও সুমি আগেভাগে খেতে চায়নি কিন্তু রহমান চাচার বলায় আর না করেনি। এখন মিতুকে খাইয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটা এসব খাবারে শান্তি পায় না।
" শরীফ ভাই কী খবর?"
" এইতো ভাবি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন? "
" হ্যাঁ ভালোই। চাচা আপনারা খেয়েছেন তো?"
শরীফ এক নজর মিহির দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে কথা বললো। মিহি বিষয়টা বুঝতে পেরে বেশ অস্তিত্বতে পড়েছে। মনে মনে রুদ্রর উপর খুব রাগ হলো তার। একটুও বুদ্ধি নেই না-কি লোকটার? রহমান চাচাও অন্য দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো,
" আমি খাইনি,ওদেরকে খাইয়েছি। মিতুকে খাওয়াতে গেলো সুমি।"
" আচ্ছা চাচা।"
মিহি বসার ঘর পেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো। এখানে বেশিক্ষণ আর থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না। মিতুকে খাওয়ানোর জন্য বেশ বকাবকি করছে সুমি।
" আমি এগুলান খামু না মা। আমারে পান্তা ভাত আর কাঁচা মরিচ দাও। এইসব রুডি, ফলমূলে পরানে শান্তি পাই না। "
" ওগুলান কই পামু! এগুলাই খাইতে হইবো। "
মিহিকে দেখে চুপ করলো সুমি। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে শুধালো,
" এহন কেমন আছেন আপা?"
" কেনো কী হয়েছিলো আমার! "
মিহি কিছুটা চমকালো। অসুস্থ হয়েছিল বলে তো কিছু মনে পড়ছে না। তাহলে কী গতরাতে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার বিষয়টা সুমিও জানে?
" আরে কাইলকা রাইতে ভাই হঠাৎ আইসা কইলো আপনের শরীল খারাপ খুব। গিয়া দেখলাম জামাকাপড় ভেজা,উনি কইলেন সেগুলো পাল্টাইয়া দিতে। তারপর পাল্টাইয়া দিয়া আমি আমার ঘরে আসছিলাম। "
রুদ্র এতটা ভালো! ভাবতেই মিহির মনে রুদ্রর প্রতি খুব শ্রদ্ধা জাগলো মনে। অনুমতি না নিয়ে তাকে বাজেভাবে দেখার কথাও ভাবেনি মানুষটা।
" আসলে আমার সেসব মনে ছিলো না। এখন ঠিক আছি। মিতু কী বলছিলো? পান্তা ভাতের কথা কী জানি বললো।"
" আর বইলেন না আপা,মাইয়া আমার শহরের খাওনদাওন পছন্দ করে না। "
" আমি চাচাকে বলে দিবো ভাত বেশি রান্না করতে। রাতে পানি দিয়ে রাখবে, সকালে সেগুলো খাইয়ে দিও ওকে।"
" আপা আফনে এত্তো ভালো! আল্লাহ আফনের ভালো করুক।"
মিহি হেসে মিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। সত্যি আজ নিজেকে খুব সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। রুদ্রকে পেয়ে জীবনটা ভালোবাসাময় হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
কথামতো বিয়ের আগেই তোশাদের বাড়ি গিয়েছিলো রাহি ও আদ্রিয়ান। দেখতে দেখতে তোশার বিয়ে হয়ে যায়। তোশা বেশ স্বাভাবিকভাবেই ওদের সাথে কথাবার্তা বলছে সেই ক'দিন। তবে আদ্রিয়ানও খুব সতর্ক ছিলো রাহির ব্যাপারে। কিন্তু তোশা আসলেই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলো। তাই হাসিমুখে বিয়ে করে নিজের সংসারে পাড়ি জমিয়েছে সে।
পড়ন্ত বিকেলে চন্দ্রিমা উদ্যানের একপাশে হাতে হাত রেখে বসে আছে আদ্রিয়ান ও রাহি। দুজনের মুখেই হাসির রেখা ফুটে আছে। আশেপাশে ওদের মতো আরো অনেক কাপল আছে। তবে ওদের আনন্দ আলাদা। একটু আগেই প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট হাতে পেয়েছে রাহি। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এখানে এসে বসেছে দু'জন। এত বছর পর মা হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে ভাবতেই রাহির মনে আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
" রাহি!"
" হ্যাঁ বলো।"
" কী চাও বলো।"
" হঠাৎ করে কী চাইবো? "
" তুমি আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো খবরটা দিলে,আমি বাবা হচ্ছি রাহি! তাই আমার সন্তানকে ধারণ করার জন্য উপহার দিতে চাই তোমাকে। "
" আমার শুধু তোমাকে চাই। "
" আমি তো আছি তোমারই, ইনশাআল্লাহ আজীবন থাকবো। "
" তাহলেই হবে। তুমি থাকলে শাড়ি,গয়না,বই সব অটোমেটিক পেয়ে যাবো।"
রাহি দুষ্টমি করে হেসে বললো কথাটা। আদ্রিয়ানও রাহির দুষ্ট কথায় হাসলো। রাহির কপালে উড়ে আসা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো আদ্রিয়ান।
" বুদ্ধিমতী বউ আমার। চলো এবার বাসায় ফিরতে হবে। বাবা-মা কতটা খুশি হবেন ভাবতেই খুব এক্সাইটেড লাগছে। "
" হ্যাঁ, মিহিও খুব খুশি হবে।"
" তা তো বটেই। বাসায় গিয়ে কল দিয়ে জানিও বরং।"
" আচ্ছা। "
রাহির হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় উঠলো আদ্রিয়ান। গাড়িতে উঠতেই যাবে এমন সময় হঠাৎ রাহি বললো,
" শোনো না। "
" কী হলো? "
" আমি বেলুন কিনবো।"
রাহি একটু ভয়ে ভয়ে বললো কথাটা। না জানি বাচ্চাদের মতো বেলুন কিনতে চাওয়াকে কেমন ভাববে আদ্রিয়ান। কিন্তু আদ্রিয়ান মুখে কিছু না বলপ সোজা বেলুন বিক্রেতার কাছে গিয়ে দশটা বেলুন কিনে নিয়ে এসে রাহির হাতে দিলো।
" এই নাও। আরকিছু লাগবে? "
" আপাতত লাগবে না, চলো।"
রাহি হাসিমুখে গাড়িতে উঠে আদ্রিয়ানের পাশে বসলো আর বেলুনগুলো পিছনের সিটে রাখলো। ভালোবাসা আসলেই সুন্দর। ভালোবাসার মানুষের কাছে কোনো রাখঢাক রেখে কিছু চাওয়া লাগে না।
চলবে............................