আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

অন্তর্নিহিত কালকূট - পর্ব ৫৪ - অনিমা কোতয়াল - ধারাবাহিক গল্প


অন্তর্নিহিত কালকূট
পর্ব ৫৪
অনিমা কোতয়াল
.
.
.
এরমধ্যেই পাঁচদিন কেটে গেছে। খুঁজে পাওয়া যায়নি ইকবালকে। তাকে খোঁজায় চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেননি রাশেদ। কিন্তু লাভ হয়নি। ছেলের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে ছুটে এসেছিলেন ইকবালের বৃদ্ধা মা। কান্নাকাটি করে গেছেন। তার চাচাতো ভাইয়েরা থানায় ডায়েরি করেছে গত পরশু। এদিকে পুলিশও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছে। তবে ফলাফল শূণ্য।

সকাল দশটার দিকে আমের ফাউন্ডেশনে এসে উপস্থিত হলো ইন্সপেক্টর আজিজ। তিনতলায় বিল্ডিংয়ের সামনে বড়বড় করে 'আমের ফাউন্ডেশন' লেখা সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডটা পড়ে বরাবরের মতোই বিদ্রুপের হাসি হাসল আজিজ। সরাসরি রাশেদের কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ভেতরে তাকিয়ে দেখল, নিজের চেয়ারে বসে ফাইলে কিছু দেখছেন আমের। রুদ্র, উচ্ছ্বাস, জাফর তিনজনই উপস্থিত। আজিজ প্রবেশের অনুমতি নিতেই যাচ্ছিল তার আগেই রাশেদ বলে উঠলেন, 'আসুন ইন্সপেক্টর।'

আজিজ স্পষ্ট দেখল তার দিকে না তাকিয়েই রাশেদ তার উপস্থিতি টের পেয়েছে। মনে মনে আরো একবার লোকটার অদ্ভুত ইন্দ্রিয়ের প্রশংসা করতে বাধ্য হলো আজিজ। বাকি তিনজন একপলক আজিজের দিকে তাকিয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আজিজ মুচকি হেসে ভেতরে গিয়ে বলল, 'ভালোই হলো, চারজনই আছেন এখানে।'

'বসুন,' রাশেদের দৃষ্টি তখনো ফাইলে।

আজিজ একটা চেয়ার টেনে বসল। রুদ্র ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল। নিজেকে সে কাজে ব্যস্ত রেখেই বলল, 'চা, কফি নাকি ঠান্ডা কিছু?'

আজিজ ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে বলল, 'চা।'

দরজার কোণে রঞ্জু দাঁড়িয়ে ছিল। রুদ্র তাকাতেই রঞ্জু চলে গেল। চা আনতে হয়তো। আজিজ হাসিমুখেই রাশেদের দিকে তাকাল। বলল, 'আবার আরেকটা কেইস। এবারও আপনারই ফাউন্ডেশনের লোক। কাকতালীয় ঘটনা যেন পেছনই ছাড়েনা আমাদের। তাইনা আমের সাহেব? স্যরি, রাশেদ বাবা।'

এতক্ষণে ফাইল থেকে চোখ সরালেন রাশেদ। চশমাটা খুলে তাকালেন আজিজের দিকে। নিজের সেই বজ্র কন্ঠে বললেন, 'সেভাবে ভেবে দেখলে জগতে যা ঘটে সবই কাকতালীয় ইন্সপেক্টর। সেসব ছাড়ুন। ইকবালের কোন খবর?'

'বিশেষ কিছু না। তবে গতকাল ইকবালের ঘরটা সার্চ করেছিলাম আমরা। দেখে মনে হলো আমরা পৌঁছনোর আগেই কেউ একজন ওখানে পৌঁছেছিল। এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সরিয়েছে।'

কথাটা শুনে রুদ্র আর উচ্ছ্বাস একে অপরের চোখের দিকে তাকাল। কেইসটা পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছুতেই ইকবালের ঘরে সার্চ করেছে ওরা। দল সম্পর্কিত সমস্ত কাগজ এবং অন্যান্য তথ্য সরিয়ে দিয়েছে। পুলিশের হাতে কিছু আসার সম্ভাবনা নেই। রাশেদ বললেন, 'তো সেখানে আমার করণীয়?'

আজিজ গোঁফে আঙুল বুলিয়ে বললেন, 'করণীয় কিছুই নেই। কিন্তু যেহুতু আপনার ফাউন্ডেশনেই কাজ করতো তাই জানিয়ে রাখলাম। তবে ওর ঘরে একটা পি-স্ত-ল পাওয়া গেছে। ওয়াশরুমে।'

উচ্ছ্বাস দেঁতো হেসে বলল, 'ওয়াশরুমে পি-স্ত-ল? বিশাল ব্যপার! তেলাপোকা মারতে রেখেছিল বোধ হয়।'

আজিজ হেসে ফেলল। হাসিটা দীর্ঘস্থায়ী না করে বলল, 'সে যে কারণেই রাখুক। পি-স্ত-লটা লিগ্যাল ছিলো না। এ বিষয়ে আপনার কী মতামত, রাশেদ বাবা?'

রাশেদ নির্বিকারভাবে নিজের চশমাটা খুলল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলল, 'আগেও বলেছি, ওরা আমার এখানে কাজ করে। কিন্তু কাজের বাইরে কে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কেন করছে, কার কাছে কী আছে এসব আমার দেখার বিষয় না। ওটা দেখা আপনার কাজ। আপনিই দেখুন।'

মাথা ঝাঁকাল আজিজ। বুঝল এই লোককে দিয়ে নিজের মনের মতো একটা শব্দও উচ্চারণ করাতে পারবে না। সে যত চেষ্টাই করুক। আজিজকে চুপ থাকতে দেখে রাশেদ আবার প্রশ্ন করলেন, 'আর কিছু বলবেন?'

'না। এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম খবরটা দিয়ে যাই।'

রাশেদ উত্তর দিলেন না। রঞ্জু চা নিয়ে এলো। আজ বেশ সময় নিয়ে বসে বসে চা-টা শেষ করলেন আজিজ। চা খাওয়ার সময়টা ভালো খরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন আমের ফাউন্ডেশনটা। খেয়াল করলেন উপস্থিত প্রত্যেকটা লোকের গতিবিধি। প্রত্যেকটা আসবাবপত্র, এমনকি দেয়ালও। সবকিছুই কত সহজ, সরল, স্বাভাবিক। যেন জীবনের কোনরকম জটিলতা এরা বোঝেনা। নিতান্তই নিরীহ মানুষ। কথাগুলো চিন্তা করে মনে মনে ভীষণ হাসি পেল আজিজের।

রুদ্র আর আজিজ একসঙ্গেই বের হলো। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আজিজ প্রশ্ন করল, 'কোথায় যাবে এখন?'

'মিল ফ্যাক্টরিতে।'

'আরেকটা থিওরি ভেবেছি বুঝলে?'

'বুঝলাম।'

'শুনবে না কী থিওরি?'

রুদ্র বাঁকা হেসে বলল, 'শোনানোর জন্যেই তো বললেন। বলে ফেলুন। কান খোলাই আছে।'

আজিজ শীতল চোখে রুদ্রের দিকে একবার তাকিয়ে বলল, 'এবারে বিশ্বাসঘাতকতা তাহলে ইকবাল করল? লা-শটা কোথায় রেখেছো বলোতো?'

সিঁড়ি শেষ হল। জীপের সামনে এসে দাঁড়াল দুজন। রুদ্র নিজের রোদ চশমাটা শার্ট থেকে বের করে বলল, 'থিওরি আপনার। কোথায় রেখেছি সেটাও আপনিই বলুন।'

আজিজ রুদ্রের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইল। বিষাদপূর্ণ হাসি হেসে বলল, 'প্রফেশনালি তুমি আমার শত্রু হলেও,পার্সোনালি আমার তোমাকে ভীষণ পছন্দ রুদ্র। তাই বলছি, আমার আগের থিওরিগুলো প্রমাণ করতে না পারলেও একটা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি। এবং তা হবে।'

রুদ্রও তাকাল আজিজের দিকে। চোখে অদ্ভুত কৌতুক খেলছে ওর। মুখে বলল, 'জ্যোতিষচর্চাও করছেন নাকি আজকাল? ভালো। তা কী ভবিষ্যৎ দেখলেন শুনি?'

আজিজ ঠান্ডা, স্থির কন্ঠে বলল, 'তোমাদের বিনাশকাল চলে এসেছে রুদ্র। এতে কোন সন্দেহ নেই যে সোলার সিস্টেমের ধ্বংস খুব নিকটে। আর তোমারও।'

আজিজের এমন ভয়ংকর ভবিষ্যদ্বাণী কোন প্রভাব ফেলল না রুদ্রর ওপর। নির্বিকারভাবে রোদ চশমাটা চোখে পরতে পরতে বলল, 'সেদিনটা আপনার উৎসবের দিন হবে, স্যার। কিন্তু আমার নাম রুদ্র। যার নামেই ধ্বংস আছে, তাকে ধ্বংসের ভয় দেখাচ্ছেন? যেদিন আমি শেষ হবো, সেদিন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।'

কথাটা বলে আর অপেক্ষা করল না। জিপে উঠে বসল রুদ্র। জিপ স্টার্ট দিয়ে হাত তুলে একটা স্যালুট দেখাল আজিজকে। অতঃপর বেরিয়ে গেল। তপ্ত শ্বাস ফেলল আজিজ। রুদ্রর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে একবারের জন্যে চিন্তা করল এই ছেলেটা আর পৃথিবীতে নেই। অনুভব হল পৃথিবীটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে!

-

রুদ্র আমের ভিলায় ফিরল সন্ধ্যার পর। সারাদিনে অনেকরকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়। ইন্সপেক্টর আজিজের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই ওর। ও ভাবছে ইকবালের কথা। আজিজের থিওরিটা অর্ধেক সত্যি ছিল। সত্যিই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ইকবাল। সেটাও ওরা জানতে পেরেছে ইকবালের ঘর থেকে সব ইনফরমেশন সরানোর সময়। ওর ঘরে কিছু কাগজপত্র আর পেনড্রাইভ পাওয়া গেছে। যেটা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ইকবাল তথ্য পাচার করেছিল। কিন্তু আরেকটা সত্যি হচ্ছে ওরাও ইকবালকে মারেনি। আর না নিখোঁজ করেছে। তাহলে সে কোথায়? এখানে দুটো সম্ভাবনা আছে। এক, ইকবাল পালিয়েছে। দুই, ইকবালকে তারাই মেরে ফেলেছে বা গুম করেছে যাদের হয়ে ও কাজ করছিল। কিন্তু কাদের হয়ে কাজ করছিল ইকবাল? ডার্ক নাইটের হয়ে? নাকি ব্লাক হোলের হয়ে? ডেলিভারী দেওয়া অ-স্ত্রের সঙ্গে ওকে এটা নিয়েও মাথা ঘামাতে হবে এখন। 

শওকত মীর্জা নামটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সম্রাটের খবরও নেওয়া হয়নি অনেকদিন হলো। সবদিকেই নজর বাড়াতে হবে। কথাগুলো চিন্তা করতে করতে বসার ঘরে এলো রুদ্র। প্রিয়তা, উচ্ছ্বাস, কুহু, জ্যোতি চারজনই বসে আছে। বোঝাই যাচ্ছে চা-নাস্তার আড্ডা হবে এখন এখানে। রুদ্রর উপস্থিতি লক্ষ্য করে থেমে গেল ওরা। রুদ্র প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, 'প্রিয়, আমার কফিটা রুমে দিয়ে যাও প্লিজ।'

প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে বলল, 'দিয়ে যাও মানে কী? যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন। এখানে বসে সবার সঙ্গে খাবেন।'

'আজ না। ক্লান্ত আমি।'

প্রিয়তা উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলল, 'সবার সঙ্গে বসে আড্ডা দিলে ক্লান্তি চলে যাবে। আর আপনি কেমন বিশ্রাম নেবেন আমার জানা আছে। সেইতো গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানবেন আর ভাবনার সমুদ্রে ডুব দেবেন। আজ সেসব হবেনা। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।'

রুদ্র ক্লান্ত কন্ঠে বলল, 'প্রিয় প্লিজ?' 

কিন্তু প্রিয়তা গলল না। কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রুদ্রের দিকে। সে দৃষ্টি উপেক্ষা করার ক্ষমতা রুদ্রর নেই। তাই হতাশ শ্বাস ফেলে বলল, 'ফাইন।'

বলে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ল। প্রিয়তা পেছন থেকে বলে উঠল, 'গেঞ্জি আর ট্রাউজার বের করে রেখেছি। বিছানার ডান সাইডে পাবেন।' 

রুদ্র যেতেই প্রিয়তা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বসে পড়ল সোফায়। কুহু ইশারায় স্যালুট দেখাল ওকে। জ্যোতি এতক্ষণ গালে হাত দিয়ে দেখছিল সবকিছু। হঠাৎ বুকের ভেতর কেমন করে উঠল ওর। অদ্ভুতরকম উত্তাপ অনুভব করল সারা শরীরে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, 'আমি গিয়ে দেখি চা কতদূর হলো।'

প্রিয়তা বলল, 'তুমি বসো, আমি যাই।'

জ্যোতি বাঁধা দিয়ে বলল, 'না, তুমি বসো। আমিই যাচ্ছি।'

বলতে বলতেই চলে গেল জ্যোতি। যেন পালাল। উচ্ছ্বাস ফোন স্ক্রোল করছিল। এবার চোখ তুলে বলল, 'এই ডানপিটেকে সোজা তুমি-ই করতে পারো বউমনি। তোমার দৌলতেই আমাদের সঙ্গে আজকাল আড্ডা দিতে বসছে। এগুলো আমাদের কল্পনারও বাইরে ছিল। ডাবল স্যালুট।'

প্রিয়তা উচ্ছ্বাসের পিঠে সজোরে এক চাপড় মেরে বলল, 'কিন্তু তোমাকে তো সোজা করতে পারছিনা। এখন তোমাকে সোজা করতেও তো কাউকে একটা আনা দরকার। কী বলো? কথা বলব রাশেদ বাবার সঙ্গে?'

উচ্ছ্বাস শব্দ করে হাসল। পুনরায় ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি দিয়ে বলল, 'আমার মতো ক্রি-মি-নালকে কে বিয়ে করবে বউমনি? সবাইতো আর তুমি নও।'

প্রিয়তার মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে গেল। বুঝতে পারল কথাটা বলা ঠিক হয়নি। উচ্ছ্বাস যতই হাসিখুশি থাকুক। যতই চারপাশটা মাতিয়ে রাখুক। মনের ঘা-টা এখনো তাজা। কুহুও মলিন মুখ করে তাকিয়ে রইল উচ্ছ্বাসের দিকে। সেটা দেখে উচ্ছ্বাস বলল, 'তোর আবার কী হলো? নীরব ছ্যাঁকা দিলো নাকি? চোখমুখ কালো করে রেখেছিস কেন?'

কুহু কিছু না বলে এগিয়ে এসে বসল উচ্ছ্বাসের পাশে। ওকে জড়িয়ে ধরে বসে রইল চুপচাপ। উচ্ছ্বাস হাসল। কুহুর মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে বলল, 'এতো তেল মেরে লাভ নেই। তোর পেছনে লাগা বন্ধ করছিনা।'

কুহু আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে রইল উচ্ছ্বাসকে। যেন নিজের তীব্র আলিঙ্গনেই ভাইটার সকল দুঃখ মুছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে মেয়েটা। ইশ, যদি সত্যিই তা সম্ভব হতো! প্রিয়তা লম্বা এক শ্বাস ফেলল। সকলের সামনে হাসি মুখ থেকে সরেই না ছেলেটার। কিন্তু একান্তে না জানি কী চরম যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পার করে চলেছে। সেই যন্ত্রণা কল্পনা করতে গিয়ে ভেতর ভেতর শিউরে উঠল প্রিয়তা।
-

সেদিন নাজিফা চলে যাওয়ার পর আর কোনরকম যোগাযোগ করেনি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে। উচ্ছ্বাসের ভীষণ ইচ্ছে থাকলেও যোগাযোগের কোনরকম চেষ্টা করেনি। কী দরকার? নিজের অনিশ্চিত জীবনে নাজিফাকে জড়ানোটাই ওর প্রথম ভুল ছিল। নাজিফা নিজেই যেহেতু সেই ভুলটা থেকে বেরিয়ে এসেছে। ওরও উচিত হবেনা আবার নাজিফাকে নিজের সঙ্গে জড়ানো। তবে ভেতরে ভেতরে গুমরে যাচ্ছিল ছেলেটা। বাড়ির সবাই বুঝতে পারতো কোনো মানসিক অশান্তিতে ভুগছে উচ্ছ্বাস। কিন্তু ওকে দিয়ে হাজার চেষ্টা করেও কিছু বলাতে পারেনি। তবে প্রাণোচ্ছল উচ্ছ্বাস ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল কোথাও একটা। চেহারার সেই উজ্জ্বল জ্যোতি যেন নিভে যাচ্ছিল দিনে দিনে।

এরপর দীর্ঘ একটা মাস কেটে গেল। রাত তখন দুইটা ত্রিশ। আমের ভিলার করিডরের ব্যালকনিতটায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল উচ্ছ্বাস। আরও একটা নির্ঘুম রাত পার হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। ফোনের রিংটোনে ভাবনায় ছেদ ঘটে ওর। ফোনটা বের করে স্ক্রিনে তাকাতেই চমকে ওঠে। দীর্ঘ একমাস পর অতি পরিচিত নাম্বারটা থেকে কল পেয়ে ভেতরসহ কেঁপে উঠল ওর। ব্যপারটা বিশ্বাস করতেই মিনিট খানেক লেগে যায়। ততক্ষণে কেটে গেছে কলটা। আবার বাজল। কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে কল রিসিভ করে উচ্ছ্বাস। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে, 'বলো।'

ওপাশ থেকে কোন উত্তর এলোনা। কেবল ঘনঘন নিঃশ্বাসের শব্দ। উচ্ছ্বাস আবার বলে, 'নাজিফা?'

আরও দশ সেকেন্ডের নীরবতার পর নাজিফা বলে, 'একটাবারও মনে পড়েনি আমার কথা?'

উচ্ছ্বাস হালকা হাসে। মৃদু গলায় বলে, 'তোমরা কী মনে হয়? আমি এক্সের দুঃখে কেঁদে ভাসানোর ছেলে? আর আজকালকার যুগে ব্রেকআপের পর কে কাকে মনে রাখে?'

নাজিফা হতাশ গলায় বলে, 'তুমি কী কোনদিন সিরিয়াস হবেনা উচ্ছ্বাস? আমি মরে গেলেও হয়তো হেসে উড়িয়ে দেবে।'

উচ্ছ্বাস সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, 'আমার আয়ু তোমার হোক।' 

উচ্ছ্বাসের অনায়াসে বলে দেওয়া কথাটায় থমকে যায় নাজিফা। কিছুক্ষণ কাটে অসহ্যকর এক নীরবতায়। নাজিফা বলে, 'আজ আমাকে দেখতে এসেছিল উচ্ছ্বাস। হয়তো পছন্দও করেছে ওনারা।'

উচ্ছ্বাস চুপ থাকে কয়েক সেকেন্ড। বুকটা ভার হয়ে আসে আবার। চোখ জ্বলে ওঠে। কোনমতে বলে, 'তোমাকে অপছন্দ করবে এমন বোকা আছে না-কি?'

নাজিফা অধৈর্য গলায় বলে, 'উচ্ছ্বাস আমি অন্যকারো হয়ে যাবো!' 

'আমার হতে চাইলে কই?' কথাটা বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠে উচ্ছ্বাসের।

'আমি অনেক ভেবেছি উচ্ছ্বাস। চেষ্টাও করেছি। ভেবেছিলাম কষ্ট হলেও পারব। এই একটা মাস কষ্ট হলেও বেঁচে ছিলাম। কিন্তু আজ যখন ওরা আমাকে পছন্দ করে গেল, তখন থেকেই আমার দম আটকে আসছে। যখন ভাবছি আমি আর তোমার থাকবনা,,আমার চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আসছে। তোমার কষ্ট হচ্ছেনা উচ্ছ্বাস? একটুও হচ্ছেনা? আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে তুমি?'

'এই প্রশ্নটার কী আর কোন গুরুত্ব আছে নাজিফা?'

'আছে! অবশ্যই আছে। আমি অনেক ভেবেছি। অতীত সবার সাথে। কিন্তু আসলতো বর্তমান তাইনা? অতীতকে ভুলে চাইলেই এগিয়ে যাওয়া যায়। তাহলে তুমি কেন পারবেনা? তুমি এসব ছেড়ে দাও উচ্ছ্বাস। ফিরে এসো ঐ জগৎ থেকে। বিশ্বাস করো, আমি সব ভুলে যাব। আমার টাকাপয়সা লাগবেনা, আয়েশি বাড়িও লাগবেনা। সৎ পথে উপার্জন করে তুমি যদি আমাকে শুধু নুনভাতও খাওয়াও, আমি সেটাও হাসিমুখে খেয়ে নেব। কোনদিন কোন অভিযোগ করব না। আই প্রমিস। প্লিজ উচ্ছ্বাস ছেড়ে দাও ওসব।'

উচ্ছ্বাস স্তব্ধ হয়ে শুনছিল নাজিফার অনুরোধ। এই মেয়েটা ওয জন্যে বুকে এতোটা ভালোবাসা পুষে রেখেছে? এতোটা! এতো ভালোবাসাকে গ্রহন করার ক্ষমতা কী উচ্ছ্বাসের মতো অভাগার আছে? নেইতো! তাই নাজিফা কথা থামাতেই উচ্ছ্বাস কাঁপা গলায় বলে, 'সেটা সম্ভব নয় নাজিফা।'

'উচ্ছ্বাস!' নাজিফার কন্ঠে ন-গ্ন বিস্ময়।

'হ্যাঁ নাজিফা। কোনকিছুর বিনিময়ে-ই সেটা সম্ভব না।'

'আমার বিনিময়েও নয়?'

নাজিফার কাতর কন্ঠে বলা কথাটা উচ্ছ্বাসকে অস্থির করে তোলে। কিন্তু মুহূর্তে-ই নিজেকে শক্ত করে নেয়। কঠিন ভাষায় জবাব দেয়, 'না।'

নাজিফা চুপ হয়ে যায়। উচ্ছ্বাসের এমন কঠোর বয়ানে হয়তো সেদিন প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিল মেয়েটা। ফোন কাটার আগে কাঁদতে কাঁদতে কেবল একটা কথাই বলেছিল, 'একদিন তোমার আফসোস হবে উচ্ছ্বাস। ভয়ংকর আফসোস হবে। আমাকে হারানোর যন্ত্রণা তোমাকে শেষ করে দেবে।'

উচ্ছ্বাস কোন জবাব দেয়নি। সেদিন সারারাত ঐ মুক্ত বারান্দায় দাঁড়িয়েই কাটিয়ে দিয়েছে ও। এরপর কেটে যায় আরও দুটো সপ্তাহ। উচ্ছ্বাস তখন নিজেকে সামলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু ওকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে আরও একটা নিষ্ঠুর খবর এসে পৌঁছালো। খবর এলো সামনের সপ্তাহে নাজিফার বিয়ে। নাজিফার বাবা নিজে রাশেদ আমেরকে এসে দাওয়াত দিয়ে গেলেন। বিয়ের কার্ড দিয়ে গেলেন। আর এই খবরটা পেয়ে রুদ্র, প্রিয়তা, কুহু, জ্যোতি কারোরই বুঝতে বাকি থাকেনা উচ্ছ্বাসের এমন হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ। কিন্তু এই বিষয়ে কেউ ওর সঙ্গে কোনরকম আলাপ করতে পারেনি আর। সেই সুযোগটাই দেয়নি ছেলেটা কাউকে।

প্রিয়তার সঙ্গে বিয়ের পর থেকে রাতে আর বারে যায়না রুদ্র। কিন্তু ঐদিন গেল।উচ্ছ্বাসের সঙ্গে। রুদ্র মাত্র দু পেগ নিলেও উচ্ছ্বাস একের পর এক গ্লাস ফাঁকা করে যাচ্ছিল। কথার মাঝে রুদ্র বলে ওঠে, 'তোদের ছাড়াছাড়িটা হলো কেন?'

উচ্ছ্বাস গ্লাসে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে যায়। না বোঝার ভান করে বলে, 'কীসের?'

'তুই জানিস আমি কীসের কথা বলছি। আমার সামনে ওভার স্মার্ট সাজতে আসিস না।' রেগে যায় রুদ্র।

উচ্ছ্বাস মাতলামোর হাসি দিয়ে বলে, 'একটা ক্রি-মি-নালকে কে বিয়ে করবে বস? সবার কপাল তোমার মতো সোনায় বাঁধানো নাকি?' 

রুদ্র ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। এরপর আস্তে করে বলে, 'শুধু এটাই কারণ ছিল?'

'হুম।'

'এরমধ্যে আর ফোন করেনি?'

'করেছিলতো।'

'কী বলল?'

উচ্ছ্বাস ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে। তাচ্ছিল্য করে বলে, 'ছাড় তো। প্রেম সারাজীবন কজনের টেকে? স্বাভাবিক ব্যাপার। চল বাড়ি যাই।'

'তুই আমাদের দল ছেড়ে দে।'

রুদ্রর কথায় উচ্ছ্বাস দাঁড়াতে নিয়েও বসে পড়ে উচ্ছ্বাস। হতবাক হয়ে বলে, 'কী?'

রুদ্র উচ্ছ্বাসের চোখে চোখ রেখে বলল, 'ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলে কতোটা কষ্ট হয় আমি বুঝি। প্রিয়কে যখন চট্টগ্রাম ছেড়ে এসেছিলাম তারপরের সেই বারোটা দিন আমি কীভাবে পার করেছি সেটা শুধু আমি জানি। সেই একই কষ্ট তোকে পেতে দেবনা আমি। তুই আমাদের দল ছেড়ে দে।'

'পাগল হয়ে গেছিস তুই? মাথা ঠিক আছে?'

'সব ঠিক আছে। আমি জানি তুই আমাদের দলের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একজন। কিন্তু তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তোর জীবন। তোর অভাব যেভাবেই হোক আমি পূরণ করে নেব। কষ্ট হবে। কিন্তু পারব। কাল সকালেই আমি কথা বলব বাবার সাথে। গুলশানের বাইরে একটা ফ্ল্যাটও দিয়ে দেব তোকে। নাজিফাকে নিয়ে ওখানে_'

উচ্ছ্বাস বাঁধা দিয়ে বলে, 'থামবি তুই? তোর কী মনে হয় তুই বললেই আমি দল ছেড়ে দেব? এতো সহজ?'

'যদি বের করে দেই?' কঠোর শোনায় রুদ্রের গলা।

উচ্ছ্বাস মলিন হেসে বলে, 'তবুও নাজিফাকে বিয়ে করব না। ভাবব ওর জন্যেই আমি তোদেরকে হারিয়েছি। সবচেয়ে প্রয়োজনের সময় সঙ্গ দিতে পারিনি রাশেদ বাবার।'

রুদ্র কিছু বলার ভাষা পায়না। ও জানে উচ্ছ্বাস শুধু মুখেই বলছেনা। সেটা ও করে দেখাবে। বিকেলে নিজে গিয়ে নাজিফার সঙ্গে কথা বলেছিল ও। ইউনাইটেড হসপিটালে। নাজিফা নিজের সিদ্ধান্তে অটল। উচ্ছ্বাসকে নাজিফা প্রচন্ড ভালোবাসে সেটা সত্যি। কিন্তু সেই ভালোবাসার জন্যে ও নিজের নীতি ছাড়বে না সেটাও সত্যি। বুকে পাথর চেপে হলেও নিজের আদর্শকে আকড়েই বাঁচবে নাজিফা। কিন্তু নাজিফাকে কীভাবে বোঝাবে এই ছেলে প্রাণ ত্যাগ করতে পারবে, কিন্তু রুদ্র আর রাশেদকে ত্যাগ করতে পারবে না।

নাজিফার বিয়ের তিনদিন আগের কথা। সন্ধ্যাবেলা আমের ফাউন্ডেশন থেকে বেরিয়ে সোজা পার্কে চলে যায় উচ্ছ্বাস। যেখানে বসে ও আর নাজিফা একান্ত সময় কাটাতো। ইউনাইটেড হসপিটালের কাছেই। লেকের এক সাইডে দাঁড়িয়ে চুপচাপ সিগারেট টানছিল ও। এগারো মাসে নাজিফার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো হাতরে দেখছিল ও। যার স্মৃতি হাতরে বেড়াচ্ছে, তিনদিন পর সে অন্যকারো ঘরে থাকবে। অন্যকারো বউ হয়ে। অন্যকারো ঘরোনী হয়ে। নাজিফা অন্যকারো সংসার সামলাবে। অন্যকারো সুখের কারণ হবে। সিগারেটের সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতরটাও অদ্ভুতভাবে জ্বলছিল সেদিন উচ্ছ্বাসের। স্মৃতির একেকটা পাতা সেই অসহ্য জ্বালাকে আরও বাড়িয়ে চলেছিল। পেন্সিলে লেখা লাইনের মতো যদি স্মৃতিদেরও মুছে ফেলা যেতো, পৃথিবী থেকে মুক্তি পেতো হাজার জীবন্ত লাশ।

 অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঐ সময়ই পেছন কেউ এসে জাপটে ধরল ওকে। প্রথমে চমকে উঠলেও নাজিফার স্পর্শ আর কান্নার শব্দ চিনতে ভুল হয়না উচ্ছ্বাসের। নাজিফার কান্নার কথা চিন্তা করে উপলব্ধি করল ওর চোখটাও ভেজা। স্মৃতির রাজ্যে বিচরণ করতে করতে কখন চোখ ভিজে উঠেছে নিজেও বুঝতে পারেনি। কিন্তু হঠাৎ নাজিফার উপস্থিতিতে উচ্ছ্বাস হতবাক হয়ে বলে, 'নাজিফা?' 

বলে নাজিফার থেকে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। নাজিফার দিকে ঘুরতেই নাজিফা আবারও জড়িয়ে ধরে ওকে। শব্দ করে কাঁদতে থাকে। কিছুক্ষণের জন্যে হতভম্ব হয়ে গেলেও নিজেকে সামলাতে বেশি সময় নেয়না উচ্ছ্বাস। কোনমতে নাজিফাকে ছাড়িয়ে ওর দু বাহু ধরে বলে, 'কী করছো?'

নাজিফা ফুঁপিয়ে বলে ওঠে, 'এতোই যখন ভালোবাসো তাহলে কেন করছো এরকম? কেন?'

উচ্ছ্বাস ছোট্ট একটা ঢোক গেলে। নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রেখে বলে, 'তিনদিন পর তোমার বিয়ে নাজিফা। এখানে কী করছো? বাড়ি যাও।'

নাজিফা ব্যাকুল স্বরে বলে ওঠে, 'আমি এই বিয়ে করতে চাইনা উচ্ছ্বাস। প্লিজ তুমি সবটা ছেড়ে দাও। প্লিজ! আমিতো তোমাকে রাশেদ বাবার সাথে যোগাযোগ শেষ করে দিতে বলছিনা। শুধু ওনার হয়ে কাজ করা ছেড়ে দাও প্লিজ। আমার একটা কথা শোন। আমি তোমার সঙ্গে থাকতে চাই উচ্ছ্বাস। আমি আমার মনপ্রাণ সব তোমার নামে করে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া অন্যকারো সঙ্গে কীকরে থাকব বলো? আমি মরে যাব। আমার জন্যে হলেও এইটুকু করো প্লিজ। আমাকে বাঁচাও।'

নাজিফার কথাগুলো ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয় উচ্ছ্বাসকে। অদ্ভুত যন্ত্রণায় সমগ্র শরীর কেঁপে ওঠে। নাজিফা শক্ত ব্যক্তিত্বের মেয়ে। নিজের আত্মসম্মানের সঙ্গে একচুলও আপোষ করেনা সে। কোনদিন করেনি। সেই মেয়েটা এরকম অবস্থা কীভাবে সহ্য করবে ও? কিন্তু নাজিফা যেটা চাইছে সেটা সম্ভব নয়। কোনভাবেই নয়। উচ্ছ্বাস লম্বা একটা শ্বাস ফেলে। নিষ্ঠুর হয়ে বলে, 'সেটা সম্ভব না নাজিফা। তুমি বিয়েটা করে ফেলো। আমি জানি প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হবে তোমার। বিশ্বাস করো আমারও হবে। খুব কষ্ট হবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্বাস করো। তখন আর কষ্ট হবেনা। একটা সময় তুমিও সুখে থাকবে তোমার নতুন জীবন সঙ্গীর সাথে। সে রাণীর মতো রাখবে তোমাকে। বিশ্বাস করো, আমি বলছি।'

'আর তুমি?'

'আমার ঝাঁসির রাণীর সুখ দেখে আমিও সুখে থাকব।'

নাজিফা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। চিৎকার করে বলে ওঠে, 'চাইনা আমি এরকম সুখে থাকতে। তোমাকে ছাড়া সুখে থাকার দিনটা আমার জীবনে কোনদিন না আসুক। যে জীবনে তুমি থাকবেনা সেই জীবন আমার নরকের চেয়েও বেশি যন্ত্রণার হোক।'

উচ্ছ্বাস অস্থির হয়ে নাজিফাকে কাছে টেনে বলে, 'এভাবে বলেনা। তুমি সুখে না থাকলে যে আমি কীকরে বেঁচে থাকব বলো? তোমার থেকে দূরে থাকলেও এইটুকু জেনেই তো শ্বাস নেব যে তুমি ভালো আছো। সুখে আছো। ভালো থাকার সেই ছোট্ট কারণটাও আমার কাছ কেড়ে নেবে তুমি? পারবে?'

তখনই এক অবিশ্বাস্য কাজ করে বসল নাজিফা। উচ্ছ্বাসের পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। হিঁচকি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল, 'আমি পারব না। বিশ্বাস করো আমি পারব না। প্লিজ আমার কথাটা শোন। আমাকে এভাবে জীবন্ত লাশ করে দিওনা। একজন ক্রি-মি-নালের সঙ্গে আমি জীবন কাটাতে পারব না। কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতেও পারব না। তোমাকে ছাড়া অন্যকারো হওয়া আমার কাছে মৃত্যুর সমান। মেরে ফেলোনা আমাকে। প্লিজ, দয়া করো আমার ওপর, প্লিজ।' 

উচ্ছ্বাস যেন বরফের মতো জমে গেল। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে ছিল ওর। সবকিছুই অন্ধকার মনে হয় ওর কাছে। গা গুলিয়ে ওঠে। নাজিফার এমন হৃদয়বিদারক আকুতি উচ্ছ্বাস কীকরে ফেরাবে? অপরদিকে নাজিফা যা চাইছে তা কোনদিন সম্ভব না। উচ্ছ্বাসের প্রাণের বিনিময়েও না। ভাগ্যের অদ্ভুত লেখনীতে ওদের কপালেই লেখা ছিল এমন নির্দয় মৃত্যু যন্ত্রণা!
.
.
.
চলবে................................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।