আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

মনেরও গোপনে (পর্ব ১৮)


#মনেরও_গোপনে 
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_১৮



এরকম করে কাউকে ভালোবাসার কথা শুনলেও হয়তো রুদ্র হাসতো! কিছু কথা অজানা থাকাই ভালো, নিজের সব কথা বলতে নেই। এমনকি খুব ভালো বন্ধু কিংবা ভালোবাসার মানুষকেও না। কারণ মানুষ বদলায়, বদলায় সম্পর্ক।

ছবির মতো সুন্দর গ্রামের ছোটো একটা টিনের দোতলা ঘরের জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে সকালের মৃদু রোদ এসে গায়ে লেগেছে মিতুর।
রোদের আলো মুখময় খেলা করার কারণে ঘুমটা কেমন আলগা হয়ে গেলো তার। কিন্তু হঠাৎ করে 
 মায়ের কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো মিতুর। বিছানা থেকে হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। ছয় বছর বয়সী মেয়েটা বয়সের তুলনায় অনেক কিছু ভালো বুঝতে পারে। তাই এক মুহুর্ত দেরি না করে মায়ের ঘরে দৌড়ে চলে গেলো মিতু। যা ভেবেছিলো তাই! মিতুর বাবা তার মা'কে মেরেছে। সুমি মাটিতে পড়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে আর সবুজ এখনো গালমন্দ করে চলেছে। মিতু ভয়ে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইলো। যতক্ষণ সবুজ ঘর থেকে বেরিয়ে না যাবে ততক্ষণ এরকমই দাঁড়িয়ে থাকবে মিতু।
" কতবার বলছি তোরে বাপের বাড়ি গিয়া কিছু টাহাপয়সা নিয়া আয়,তা তো যাবিনা। তাইলে পইড়া মাইর খা আরকি।"
সবুজ আরেকবার লাথি দিলো সুমিকে। সুমি ব্যথায় ককিয়ে উঠলো। 
" পিঠে আর লাথি দিও না,আমার আর সহ্য হইতেছে না। "
মায়ের কান্নাজড়িত কথাগুলো মিতুর কলিজায় বিষাক্ত তীরের মতো বিঁধছে। ইচ্ছে করছে বাবা নামক মানুষটাকে বটি দিয়ে এক কোপে ঘাড় নামিয়ে দিতে। কিন্তু ছোটো বলে মারা তো দূর কোনো কথা অবধি বলতে পারে না সে। একদিন অবশ্য মায়ের হয়ে কথা বলেছিল মিতু। কিন্তু সেদিন ছোটো মিতুকেও বাবার থাপ্পড় খেতে হয়েছিল। 
" সহ্য না হইলে বাপের বাড়ি যা, নইলে শহরে গিয়া বড়ো গাড়ির নিচে পইড়া মর।" 
সবুজ আর কোনো কথা না বলে ঘর থেকে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো। বাবা প্রস্থান করা মাত্রই মিতু মায়ের পাশে এসে হাঁটু গেড়ে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। সুমি মৃদু হাসার চেষ্টা করে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে,
" কাঁদিস না মা, আমরা অনেক দূরে চইলা যামু। "
" কই যামু মা? বাবা কী আমাদের যাইতে দিবে?"
মেয়ের হাত ধরে আস্তে করে উঠে বসে সুমি। দু-চোখ মুছে সবকিছু বিবেচনা করে চোখেমুখ শক্ত করে বলে,
" কাইলকা যামু আমরা, দরকার হইলে মা-মেয়ে গাড়ির নিচে পইড়া সত্যি মরমু তা-ও এই জালিমের হাতে মাইর খামু না। "
মিতু মা'কে জড়িয়ে ধরে। মায়ের কষ্ট সহ্য হয় না তার। সুমি মেয়ের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই বয়সে কোথায় স্কুলে যাবে,খেলাধুলা করবে কিন্তু সেসবের কিছু মিতুর কপালে নেই। 

এলার্ম ঘড়ির আওয়াজে ঘুম ভাঙলো মিহির। চোখ খুলে সবার আগে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। আজ ক্লাস আছে ভার্সিটিতে। বিছানা ছেড়ে উঠে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। রুদ্র আগেই হসপিটালে চলে গেছে। মিহি নয়টার আগে ঘুম থেকে উঠে না কিন্তু রুদ্রর নয়টার মধ্যে হসপিটালে যেতে হয় বলে আগেভাগে চলে যায় সে। রহমান চাচা সকালে এসেই নাস্তা তৈরি করে দিয়ে চলে যান। তবে মাঝে মধ্যে মিহির সাথে গল্প করার জন্য থেকে যান। দুপুরের দিকে আবার বাসায় যান। ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি একটা বাসন্তী রঙের থ্রিপিস পরে মিহি,হাতে ব্রেসলেট, কানে ছোটো দুল। চুলগুলো বরাবরই খোলা রাখে মিহি আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নাস্তা না করেই বেরিয়ে গেলো মিহি। আজকাল ঘুমটা একটু বেশি হচ্ছে মিহির সেই নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তার। রুদ্রর বাসা থেকে মিহির ভার্সিটি কাছে হওয়াতে বেশি সময় লাগলো না পৌঁছুতে। ক্যাম্পাসে গিয়ে দাঁড়িয়ে অহনাকে ডাক দিলো। 
" অহনা! "
অহনা মিহিকে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে এসেছে।
" কেমন আছিস?"
" ভালোই, ক্লাস করবি না?"
" আজ স্যার নেই, অবশ্য অন্য কোনো স্যারকে বললে নিশ্চিত ক্লাস নিবেন। কিন্তু ইচ্ছে করছে না রে।"
" এটা কোনো কথা! আমি আরো কত তাড়াহুড়ো করে এলাম।"
" খেয়ে এসেছিস তো?"
" উঁহু খাইনি। "
" চল ক্যান্টিনে গিয়ে খাবি।"
" আরে এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না। "
অহনা ও মিহিকে দূর থেকে দেখতে পেয়ে রউফ এগিয়ে এলো। রউফ ওদের ক্লাসমেট তবে ডিপার্টমেন্ট আলাদা। 
" কী খবর তোদের? মিহির তো বিয়ের পর দেখা মেলা দুষ্কর হয়ে গেছে। "
" ধ্যাৎ কী যে বলিস! আমি তো ভালো আছি,অহনা কেমন আছে তা জানি না। "
" হ্যাঁ আমিও ভালো। রউফ চল ক্যান্টিনে যাই মিহি না খেয়ে এসেছে। "
 মিহি অহনার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকালো। একদিন সকালে নাস্তা করেনি সেটা কি জনে জনে বলতে হবে! কিন্তু কিছু বললো না মিহি। তিনজনে একসাথে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো। মিহি একটা স্যান্ডউইচ খেলো কেবল। রউফ যদিও খেয়ে এসেছিলো তবুও আবারও একবার নাস্তা সেড়ে নিলো। অহনা চুপচাপ ওদের খাওয়া দেখছিলো। 
" যখন ক্লাস হবে না তখন আর বসে কী করবি? তারচেয়ে বাসায় চলে যা বরং।"
রউফ মিহিকে বললো কিন্তু মিহি বাসায় যাবে না বললো। অহনার মাথায় তখন দুষ্ট বুদ্ধি ঘুরছিলো। হুট করেই বলে উঠলো,
" আচ্ছা শোন না আমার সাথে একটু হসপিটালে যাবি?"
" সেকি হসপিটালে কেনো?"
রউফ আবারও দুজনের কথার মধ্যে নাক গলানোতে অহনা বিরক্তি নিয়ে বললো,
" তোর বউয়ের বাচ্চা হয়েছে সেটা দেখতে। "
" হুঁশ বিয়ে করলাম না আবার বউ,বাচ্চা। বুঝতে পেরেছি অহনা আপার মেজাজ চটে যাচ্ছে। মিহি আমি গেলাম। "
" ঠিক আছে যা।"
রউফ চলে যেতে মিহি আর অহনা ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে সোজা রিকশায় চড়ে বসলো। 
" কোন হসপিটালে যাবি? "
" সামনেই।"
" কেনো যাবি তা তো বললি না তখন।"
" তোর স্বামীকে দেখতে যাবো।"
" স্বামী! "
" তাহলে কী ভাসুর? "
" অসভ্য মেয়ে কোথাকার। "
বিয়ে হয়েছে দু’মাস হয়ে গেছে মিহি ও রুদ্রর। তবুও এতদিনেও স্বামী কথাটা কেমন অচেনা ঠেকলো মিহির। তবে রুদ্র স্বামী হিসেবে খারাপ না। মানুষটার অতীত থাকলেও মিহির প্রতি সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছে। সব সময় মিহির সাথে খুনসুটি করে লোকটা। এতে অবশ্য মাঝে মধ্যে মিহির বিরক্ত লাগে কিন্তু তবুও রুদ্র চুপ থাকে না। এইতো গতকালই মিহি সন্ধ্যায় বিরিয়ানি রান্না করেছিল। কিন্তু লবনে একটু বেশি হওয়ায় রুদ্র যতক্ষণ জেগে ছিলো ততক্ষণই ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করে গেছিলো।
রিকশা থামলো সানরাইজ হসপিটালের সামনে। মজার কথা এতদিনেও মিহি জানে না তার স্বামী কোন হসপিটালে চাকরি করে। অহনা রিকশাওয়ালা মামাকে ভাড়া মিটিয়ে অহনা ও মিহি হসপিটালের ভেতরে প্রবেশ করলো। অহনা রিসিপশনের সামনে গিয়ে মিহিকে বললো,
" তুই একটু ওইদিকে গিয়ে দাঁড়া আমি আসছি।"
" ঠিক আছে। "
মিহি রিসিপশনের বিপরীত দিকে গিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনের স্ক্রিনে মনোযোগ দিয়েছে। অহনা রিসিপশনের মেয়েটিকে রুদ্রর চেম্বারের কথা জিজ্ঞেস করলে সেই মেয়েটি বলে আগে থেকে সিরিয়াল না রাখলে হুট করে এসে রুদ্র চৌধুরীর চেম্বারে যাওয়া যায় না। সব রোগী দেখা শেষ হলপ তবেই যাওয়া যাবে। 
" সবই বুঝলাম কিন্তু আপনি ডাক্তার সাহেবকে কল দিয়ে বলুন উনার স্ত্রী মিহি এসেছে তাহলেই হবে। "
অহনার মুখে স্ত্রী কথাটা শুনে মেয়েটি হেসে বললো, 
" ম্যাডাম আপনি এসেছেন আগে বললেই হতো। সোজা গিয়ে ডান দিকে স্যারের রুম।"
" ঠিক আছে ধন্যবাদ। "
রিসিপশন থেকে মিহির কাছে গিয়ে মিহিকে নিয়ে রুদ্রর রুমের দিকে এগোতে লাগলো অহনা। কপাল ভালো আজকে তেমন রোগী নেই চেম্বারের সামনে। মিহি তখনও ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিলো। রাহি কিছু ছবি পাঠিয়েছে সেগুলো দেখছিলো। 
" মিহি ভেতরে আয়।"
মিহি আশেপাশে না তাকিয়ে চেম্বারের ভেতরে ঢুকলো। রুদ্র মিহিকে দেখেই হকচকিয়ে গেলো। শরীফ হেসে সালাম দিতেই মিহি চমকালো।
" আসসালামু আলাইকুম ভাবী।"
" তুমি! "
" তুমি চেম্বারে এসেছো কেনো? শরীর ঠিক আছে তো!"
রুদ্র চেয়ার থেকে উঠে এসে মিহির সামনে এসে বললো। মিহি ঘটনার আকস্মিকতায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। একবার অহনার দিকে তাকিয়ে ফের রুদ্রর দিকে দৃষ্টিপাত করলো মিহি।
" আমার কিছু হয়নি আমার বান্ধবীর মনে হয় বুকে ব্যাথা।"
" আরে না আমি ঠিক আছি। আসলে দুলাভাইয়ের থেকে ট্রিট নিতে এসেছি। "
" ওহ আচ্ছা তা কী ট্রিট লাগবে শালিকা?"
মিহি মনে মনে খুব রেগে গেছে অহনার উপর। কিন্তু এখানে বসে কিছু বললো না। রুদ্র নিজের চেয়ারে বসে অহনাকেও বসতে বললো। মিহি বসলো না, শরীফ আর মিহি দাঁড়িয়ে আছে। 



চলবে.............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।