৩০!!
সাদা তুলতুলে পশমী সোয়েটার ও লাল টুপিতে মিশুকে খরগোশের বাচ্চার মতন লাগছে৷ ঠোঁট দুটো অসম্ভব রকমের গোলাপি, কালো জিন্সের উপর সাদা সোয়েটার। মাথায় লাল রঙা টুপি, পায়ে কালো কেডস, কানে সাদা ইয়ারফোন। একেবারে খুকি খুকি ভাব চলে এসেছে চেহারায়।
বাস ছাড়ার পর থেকেই মিশু কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে৷ ছোটবেলার গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে মেঘালয়কে। মিশু ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বকবক করতো। বান্ধবীদের সাথে গল্প করতে করতে নিজের বাড়ি পেড়িয়ে অনেক দূর চলে যেতো। এরপর যখন বুঝতে পারতো বাড়ি পার হয়ে এসেছে তখন আবার ফিরে আসতো। কথা বলতে প্রচুর ভালোবাসে এই মেয়েটা। তন্ময়ের প্রতারণার শিকার হওয়ার পর থেকে হুট করেই কেমন যেন চুপসে গেছে৷ মেঘালয় খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে মিশুর কথাগুলি। মেয়েটা কথা বলার সময় সমানতালে দুহাত নাড়াতে থাকে৷ ভালোই লাগে ব্যাপারটা।
মিশু কথা থামিয়ে বললো, 'এই কি দেখছেন এভাবে?'
- 'তোমাকে আজকে খরগোশের বাচ্চার মতন লাগছে।'
- 'আমার আব্বুকে আপনার খরগোশ মনেহয়?'
- 'ছি ছি আমি মোটেও এরকম বলিনি।'
- 'আমি বুঝি। আমাকে পুতুলের মতন লাগছে না?'
- 'হুম। ইচ্ছে করছে কোলে বসিয়ে নিয়ে আদর করি।'
- 'কোলে উঠি?'
মেঘালয় মুচকি হেসে বললো, 'রাত নামুক। বাসের লাইট নিভিয়ে দিলে কোলে নিবো।'
মিশু লজ্জায় মাথাটা ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। মেঘালয়কেও আজ দারুণ হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে। গালের খোঁচা খোঁচা চাপদাড়ি গুলো আগের চেয়েও সুন্দর দেখাচ্ছে। মিশুর ইচ্ছে করছে গালটা ওর গালের সাথে ঘষে দিতে৷ রাত কখন নামবে?
মেঘালয় বললো, 'আমি এজন্মে কখনও ভাবিনি এভাবে আমার বিয়ে হবে। কি অদ্ভুতভাবে সবকিছু ঘটে গেছে। অবশ্য যা হয়েছে ভালোই হয়েছে৷ শীতকালে এরকম একটা কোলবালিশ দরকার ছিলো।'
মিশু মেঘালয়ের কাঁধে মাথা রেখে বললো, 'আপনি অনেক ভালো।'
মেঘালয় মিশুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, 'তোমার ঠোঁটদুটো এত লোভনীয় লাগছে কেন? ইচ্ছে করছে কামড়ে শেষ করে দেই।'
শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করলো মিশু। কি সব বলে এই লোকটা! একটুও লজ্জা নেই। লাজুক স্বরে আমতা আমতা করে মিশু বললো, 'আমার একটা অদ্ভুত ইচ্ছে আছে।'
মেঘালয় কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো কি ইচ্ছে? মিশু বললো, 'আমার খুব ইচ্ছে একটানা একদিন ধরে শুধু চুমু খাবো।'
মেঘালয় অবাক হয়ে অস্ফুট স্বরে বললো, 'চব্বিশ ঘন্টা! একটানা চব্বিশ ঘন্টা? এটা কি আদৌ সম্ভব?'
- 'হুম। আলতো করে স্পর্শ করলেই সম্ভব। এই একদিন গোসল বন্ধ, রুম থেকে বের হওয়া বন্ধ। এমনকি খাওয়াদাওয়াও বন্ধ, শুধু চুমু খেয়ে থাকবো।'
মেঘালয় হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো, 'ওকে ডান। কক্সবাজারে পৌঁছাতে দাও আগে। তোমার সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করা হবে। আর কিছু আছে?'
মিশু মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললো, 'না।'
- 'আমার আছে। চাপ সামলানোর জন্য প্রস্তুত হও।'
মিশু দুহাতে মেঘালয়ের বুকে কিল বসাতে বসাতে বললো, 'খারাপ। প্রচন্ড রকমের খারাপ।'
- 'তুমি বললে কিছুনা আর আমি বললেই খারাপ?'
- 'হ্যা। আপনি একটা জঘন্য।'
- 'এই জঘন্য লোকটাকেই গ্রহণ করতে হবে।'
- 'চুপ করুন দোহাই লাগে৷ আমার লজ্জা করছে।'
- 'বাহ! তোমার একটানা চব্বিশ ঘন্টা লাগবে সেটা বলতে লজ্জা নাই আর আমি বললে লজ্জা?'
মিশু মেঘালয়ের বুক বরাবর একটা ঘুষি দিয়ে বললো, 'চুপ। একদম চুপ। আমরা খুব অশ্লীল হয়ে গেছি।'
- 'হা হা হা৷ বর বউ বুঝি কখনো অশ্লীল হয়?'
- 'আপনি আমার বর টর না। এবার চুপ করে বসুন তো। একটু শান্তি দিন।'
- 'ওকে। তুমিও আমার বউ টউ না। আমরা একে অপরকে চিনিনা। ডান?'
- 'ওকে ডান।'
দুজনেই মুচকি হেসে দুজনের মত দুদিকে মাথা রেখে বসে গেলো। মিশু একেবারে জানালার কাছে মাথা রেখে বসে পড়লো আর মেঘালয় সিটের একেবারে এক কোণায় বসলো। দুজনের মাঝে এক হাত ফাঁকা জায়গা। কেউ আর কারো দিকে তাকাচ্ছে না। এমন ভাব যেন কেউ কাউকে চেনেও না।
মিশু ইয়ারফোনে গান ছেড়ে দিয়ে জোরে সাউন্ড দিয়ে শুনতে লাগলো। জানালা দিয়ে শিরশির করে বাতাস এসে গায়ে লাগছে। ঠান্ডা লাগলেও ভালো লাগছে অনেক। এদিকে মেঘালয়ের কাছে কোনো ফোনও নেই। সে গালে হাত দিয়ে বসে রইলো চুপচাপ।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। কেউ কারো সাথে কথা বলেনি এখনো। দুজনেই জার্নিটাকে এনজয় করছে। সন্ধ্যা নামার পর বাসের জানালা বন্ধ করে দিতে হলো। মেঘালয় একবার মিশুর দিকে তাকাচ্ছেও না। বাইরে অন্ধকার নেমেছে বলে আর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকাও যায়না। মিশু কান থেকে ইয়ারফোন খুলে মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, 'এক্সকিউজ মি?'
মেঘালয় চমকে উঠে বললো, 'অফ কোর্স।'
- 'হাই, আমি মিশু। আপনি?'
- 'মেঘালয় আহমেদ।'
- 'বাহ! নাইস নেম। ইউ লুকিং সো হ্যান্ডসাম।'
- 'ইউ আর সো হট।'
মিশু ক্ষেপে গিয়ে মুখটা বাঁকা করে তাকালো অন্যদিকে। লোকটা অনেক খারাপ। মেঘালয় হেসে উঠলো মিশুর মুখের ভংগী দেখে। তারপর বললো, 'আপনি কোথায় যাবেন?'
মিশু মেঘালয়ের দিকে না তাকিয়েই বললো, 'কক্সবাজার। আপনি?'
- 'আমিও। হানিমুনে যাচ্ছি।'
- 'আমি জিজ্ঞেস করিনি।'
- 'ওহ আচ্ছা। আপনি দেখতে খরগোশের বাচ্চার মতন।'
- 'থ্যাংকস ফর ইয়োর লেফট হ্যান্ডেড কমপ্লিমেন্ট।'
মেঘালয় হেসে বললো, 'কলা খাবেন?'
- 'হোয়াট?'
- 'ব্যানানা। উইথ ব্রেড।'
বলেই দুষ্টুমি হাসি হাসলো। মিশু হেসে বললো, 'নো, থ্যাংকস।'
এরপর দুজনেই সামনের দিকে তাকিয়ে হাসলো। মিশু বললো, 'আপনি কি করেন জানতে পারি?'
- 'বউয়ের সেবা করি। আপনি?'
- 'বরের সেবা গ্রহণ করি। নাথিং ইলস।'
- 'গ্রেট।'
আবারও দুজনেই মুখ টিপে হাসলো। বাসের লাইট নিভিয়ে দেয়া হলো খানিক বাদেই। এখনো দুজনের মাঝে এক হাত দূরত্ব। যে যার মত বসে আছে চুপচাপ। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো।
রাত নেমেছে। অন্ধকারে এক ধরণের ভালোলাগা কাজ করছে। বাস ছুটে চলেছে দ্রুত গতিতে৷ মেঘালয় ব্যাগ থেকে চাদর বের করে গায়ে জড়িয়ে নিলো৷ মিশু বুঝতে পেরে বললো, 'এক্সকিউজ মি?'
- 'ইয়েস।'
- 'আমি কি আপনার চাদরটা শেয়ার করতে পারি?'
- 'শিওর।'
মেঘালয় একটু কাছে এগিয়ে এসে চাদরটা মিশুর গায়ের উপরেও টেনে নিলো। মিশু একদম মেঘালয়ের শরীর ঘেষে বসে বললো, 'আমি কি আপনার কাঁধে মাথা রাখতে পারি?'
- 'শিওর৷ আমার কাঁধ তো আপনাদেরকে সেবা দেয়ার জন্যই ম্যাম।'
- 'আপনাদেরকে মানে?'
- 'আমার মিসেসকে আর আমার মিশমিশকে।'
- 'ওকে। থ্যাংক্স।'
দুজনেই আবারো মুখ টিপে হাসলো৷ মিশু মাথা রাখলো মেঘালয়ের কাঁধের উপর। মেঘালয় সিটটা লম্বা করে দিয়ে শুয়ে পড়লো। মিশুও শুয়ে পড়লো মেঘালয়ের বুকের উপর৷ দুজনেই শুধু মুখ টিপে হাসছে। মিশু অন্ধকারেই মেঘালয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, 'হেই হোয়াটস ইয়োর প্রবলেম?'
- 'সরি?'
- 'হাগ মি।'
মেঘালয় মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরলো মিশুকে। মেয়েটাও দুষ্টুমিতে কম না। একে অপরকে জড়াজড়ি করে অর্ধশোয়া অবস্থায় সিটে হেলান দিয়ে রইলো৷ অনেক্ষণ এভাবে কেটে যাওয়ার পর মিশু মাথা তুলে বললো, 'এত সুখ সুখ লাগে কেন?'
উত্তরে মেঘালয় নিচু হয়ে নিজের ঠোঁট দিয়ে মিশুর ঠোঁটে মৃদু চাপ দিলো। সুখে ভেসে যেতে লাগলো মিশু। দুহাতে মেঘালয়ের জ্যাকেট খামচে ধরতে লাগলো৷ মেঘালয় একহাতে মিশুর কোমরটা জাপটে ধরে অন্যহাতে চাদরের ভেতরে দুষ্টুমি চালিয়ে যেতে লাগলো৷ আটাশ বছরের এক যুবক আর আঠারো বছরের এক তরুণী, দুজনের সমস্ত সত্তা যেন এক হয়ে মিশে যেতে আরম্ভ করেছে। দুজনের ইচ্ছে, ভালোলাগা, ভালোবাসা সবকিছু একইধারায় মিশে যাচ্ছে। ভালোবাসা আর স্পর্শ যেখানে অটল, বয়স আর অন্যসমস্ত ব্যবধান সেখানে তুচ্ছ।
এরপর আগামীকাল..
—————
৩১!!
কক্সবাজারে বাস পৌঁছালো সকাল সাতটায়। বাস থেকে নেমে সোজা হোটেলে এসে উঠলো ওরা। হোটেলের সৌন্দর্য দেখে রীতিমতো হা হয়ে গেলো মিশু৷ সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে সুইমিং পুলটা। চারিদিকে সাজানো গোছানো পরিবেশ, সামনে নীল সুইমিং পুল আর একটু দূরেই বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত। হোটেলের ছাদ থেকে দেখলে বিস্ময়ে চোখ বড়বড় হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়। মিশু উত্তেজনায় মেঘালয়কে জাপটে ধরছিলো বারবার।
এখনো হোটেলের বাইরে সেরকম লোকজন আসেনি। পর্যটকগণ ঘুমে বিভোর আর দু একজন লোক মাত্র হোটেলে এসে উঠছেন। এই সুযোগে সুইমিং পুলে গোসল করে নেয়া যায়। মেঘালয় রুমে লাগেজ রেখেই মিশুকে নিয়ে সোজা পুলে চলে এলো। একটা কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে খালি গায়ে লাফিয়ে পড়লো জলে।
মিশুকে নামার জন্য বারবার বলার পরও মিশু রাজী হয়নি। মেঘালয় পুলে নেমে কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর মিশুকে একবার ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিলো। পাশেই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে মিশু৷ ক্যামেরা হাতে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলছিলো মেঘালয়ের। মেঘালয়কে সাঁতরানো অবস্থায় দারুণ হ্যান্ডসাম দেখায়, পাক্কা এথলেটদের মতন। ইচ্ছে করে তাকিয়েই থাকি। চোখ ফেরানো মুশকিল। চুলগুলো কপালের উপর বিস্তৃত হয়ে থাকে, ফর্সা গালে টপটপ করতে থাকে জল। বুকের লোমগুলো ভিজে লোভনীয় দেখাচ্ছে৷ যখন নীলের মাঝে সাঁতার কাটতে থাকে, সত্যিই মুগ্ধ হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে হয়।
মেঘালয় পুল থেকে উঠে আসার সময় দুহাতে চুলগুলো ঠিক করছিলো। পাশে এসে বসার পর মিশুর হাত থেকে তোয়ালে নিতে নিতে বললো, 'আজকের সকালটা কেমন ম্যাম?'
- 'অদ্ভুত সুন্দর! আর আপনিও'
- 'হা হা হা। অনেক ফ্রেশ লাগছে, রুমে ঢুকে গোসল সেরে নিও কেমন?'
- 'হুম। তারপর কি করবো?'
- 'তারপর চব্বিশ ঘন্টার প্লান কার্যকর করা শুরু করবো।'
- 'কিহ! এখনই?'
শব্দ করে হেসে উঠলো মেঘালয়। তারপর মিশুকে হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে বললো, 'একটা কিসি হবে?'
- 'ছিইহ্ বাইরে বসে? লোকজন দেখবে না?'
- 'সাহস নেই? আমাদের দেশের মেয়েরা আজকাল টিএসসির মোড়ে বসে চুমু খায় আর তুমি হানিমুনে এসে পারবে না?'
- 'ছিহ্ কি খারাপ আপনি।'
মেঘালয় আবারও হেসে উঠলো৷ হাসার সময় আরো নিঁখুত লাগে ছেলেটাকে। মিশু উঠে দাঁড়িয়ে বললো, 'এখন রুমে যাবো না?'
- 'হুম। আসো।'
মেঘালয় আগে আগে হাঁটতে শুরু করলো। মিশু যাচ্ছে ওর পিছু পিছু। হোটেলে ঢুকে করিডোরে পা রাখা মাত্রই মেঘালয় খপ করে হাতটা টেনে ধরে কোলে তুলে নিলো মিশুকে৷ মিশু বাঁধা দিলেও শুনলো না। বিশাল করিডোর পুরোটাই ফাঁকা। নীল রঙের লাইট জ্বলছে। নীল আলোয় আর বিলাসবহুল হোটেলের গন্ধে একটা ঘোর লেগে আসছে। রুমে এসেই মিশুকে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে এলো।
মিশুকে বাথটাবে শুইয়ে দিয়ে তোয়ালেটা দিয়ে দিলো গায়ের উপর। তারপর মিশুকে বললো, 'হ্যান্ডস আপ।'
মিশু চোখ পিটপিট করতে করতে হাত উপরে তুললো৷ মেঘালয় মিশুর গায়ের টপস টা খুলে দিয়ে একটানে গায়ের উপর থেকে তোয়ালে তুলে ছুঁড়ে মারলো। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো মিশু। এরপর মিশুকে জড়িয়ে ধরে বাথটাবে শুয়ে পড়লো মেঘালয়।
৩২!!
ঘুম থেকে ওঠার পর মিশু একটু নড়তেই মেঘালয় শক্ত করে জাপটে ধরে বললো, 'উহু নড়াচড়া কোরো না তো।'
- 'আমরা বাইরে যাবো কখন?'
- 'যাবো রে বাবু। একটু শান্তিমত ঘুমাও তো এখন।'
মেঘালয়ের চাপে পড়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো মিশু৷ হোটেলে পৌঁছে গোসল সেরে নাস্তা করেই ঘুমিয়ে পড়েছে দুজনে। এখনও ঘুমে।
দুপুর গড়িয়ে এলো। দুপুর দুইটায় মেঘালয় ঘুম থেকে উঠে পড়লো। মিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা দুইদিনেই কেমন ফর্সা হয়ে গেছে। মুচকি হেসে মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো মেঘালয়। তারপর উঠে পড়লো বিছানা থেকে।
ফ্রেশ হয়ে এসে একটা স্কাই কালার গেঞ্জির সাথে কোয়ার্টার প্যান্ট পড়লো। চুল আচড়ে নিয়ে আবারও শুয়ে পড়লো মিশুর পাশে। মিশুর গালে একটা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করার চেষ্টা করতেই ও মেঘালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, 'কামড় দিও না, কামড় দিওনা প্লিজ।'
মেঘালয় হাসতে হাসতে বললো, 'তুমি ঘুমাচ্ছো।'
চোখ মেলে তাকালো মিশু। কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'আমি কি বলেছি একটু আগে?'
- 'কামড় দিতে বারণ করেছো।'
- 'ছিহ আমি খুব খারাপ।'
হেসে ফেললো মেঘালয়। মিশুকে জোর করে টেনে তুলে কোলে বসিয়ে নিলো। মেঘালয়ের কোমরের দুইদিকে দুটো পা দিয়ে পিঠের উপর দুইপা একত্র করে মেঘালয়কে আবদ্ধ করে ফেললো মিশু। দুহাতে জাপটে ধরলো মেঘালয়ের গলা। মেঘালয় এভাবেই ওকে কোলে নিয়ে বেলকুনিতে চলে এলো। বেলকুনিতে দাঁড়ানো মাত্রই স্তব্ধ হয়ে গেলো মিশু।
সামনে যতদূর চোখ যায় শুধু বিস্তৃত সমুদ্র! নীলাকাশ সাগরের নীলে মিশেছে এসে। চোখ ফেরানো দায়। সুইমিংপুল টাও নীল, হোটেলের সামনের দৃশ্যটাও নীল। বেশ উপভোগ্যকর লাগছে দেখতে। মিশু মেঘালয়ের গলাটা জাপটে ধরে বললো, 'আমি কি স্বপ্ন দেখছি?'
মেঘালয় মিশুর ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে বললো, 'স্বপ্নে কি এরকম ফিল করা যায়?'
শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করলো মিশু। মেঘালয় পিছনে পিছিয়ে এসে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। মিশুকে টেনে নিলো নিজের বুকের উপর। দুহাতে কোমরে জাপটে ধরে পিচ্চি মেয়েটাকে নিজের সমানে সমান করে নিলো। তারপর চোখে চোখ রেখে বললো, 'ঘোর ঘোর লাগছে না?'
- 'সিরিয়াসলি। আমি ভাবতেও পারিনি কারো স্পর্শ এতটা উন্মাদনা জাগাতে পারে।'
- 'এখনো শুরুই হয়নি।'
- 'আপনি এমন কেন? বড্ড দুষ্টু।'
- 'দুষ্টুমি না করলে তো আবার বলবা স্বামী অক্ষম। হা হা হা।'
মিশু মেঘালয়ের বুকে দুহাতে মারতে শুরু করলো। মেঘালয় জোরে জোরে হাসছে। হাসি থামছেই না ওর। মিশু ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। মেঘালয় আরো জোরে শক্ত করে চেপে ধরলো বুকের সাথে। বুকের ভেতর পিষে ফেলতে চাইলো মিশুকে। মিশু অনেক চেষ্টা করেও একটুও নড়াচড়া করতে পারলো না। বাধ্য হয়ে হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেকে মেঘালয়ের কাছে সমর্পণ করলো।
লাঞ্চ সেরে মিশুকে নিয়ে বাইরে বের হলো মেঘালয়। সৈকতে এসে মিশুর লাফালাফি আর দেখে কে। দূর থেকেই সমুদ্রের গর্জন ভেসে আসছে। বালির উপর খালি পায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে মিশু বলছিলো, 'সমুদ্র আমাকে ডাকছে, আমি যাচ্ছি।'
দ্রুত ছুটতে আরম্ভ করেছে মিশু। মেঘালয় অবাক হয়ে ওর ছুটে যাওয়া দেখছে। ভাব দেখে মনেহচ্ছে মেয়েটা সোজা গিয়ে সমুদ্রে লাফিয়ে পড়বে। পাগলী মেয়েটা যদি সত্যিই লাফিয়ে পড়ে? মেঘালয় নিজেও একটা দৌড় শুরু করে দিলো৷ ট্যুরিস্টরা হা হয়ে দেখছে ওদের দুজনকে।
মেঘালয় বারবার মিশুর নাম ধরে ডাকছিলো। কিন্তু মিশু কিছুতেই থামছে না। দ্রুত ছুটছে তো ছুটছেই। টেনশন উঠে গেলো মেঘালয়ের। যদি সত্যিই সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ে তাহলে তো....!
লোকজন ওদের দুজনকে দেখছে আর মুখটা হা করে আছে। মেঘালয় দ্রুত গিয়ে মিশুর কাছাকাছি চলে এলো। সমুদ্রের একদম তীরে যেতেই জোরে বিশাল ঢেউ এসে আছড়ে পড়লো তীরে। ঢেউ মিশুকে স্পর্শ করার আগেই মেঘালয় এসে জাপটে ধরলো ওকে। বিশাল ঢেউ গর্জন করে এসে একইসাথে ভাসিয়ে নিলো দুজনকে। সাগরের ঢেউয়ে গা ছেড়ে দিয়ে মেঘালয় মিশুকে বুকের উপর তুলে নিলো৷ অন্যরকম একটা অনুভূতি এসে স্পর্শ করতে আরম্ভ করেছে দুজনকেই। সাগরের গন্ধ বুক ভরে নিতে লাগলো উভয়ে। ঢেউ দুজনকেই একসাথে ভাসিয়ে তীরে নিয়ে এলো৷
বালির উপর জড়াজড়ি করে শুয়ে দুজনে দ্রুত নিশ্বাস নিতে লাগলো। মিশু খিলখিল করে হাসছে৷ মেঘালয় দ্রুত নিশ্বাস নিতে নিতে মিশুর দিকে তাকালো। মিশু হাসতে হাসতে বললো, 'দারুণ ফিল তো৷ আসুন না আবার লাফাই?'
- 'পাগল হইছো? লাফানোর একটা সময় আছে।'
মিশু উঠে বসতে বসতে বললো, 'সমুদ্র খুব সুন্দর করে কথা বলে তাইনা?'
- 'সমুদ্র কথা বলেছে তোমার সাথে?'
- 'হ্যা, খুউউব বলেছে। আমাকে ফিসফিস করে বলেছে, 'তোর বরটা এত হ্যান্ডসাম কেন রে?'
আবারও খিলখিল করে হেসে উঠলো মিশু। মেঘালয় মুগ্ধ হয়ে দেখছে ওর হাসি। আর ভাবছে, মেয়েটা এমন কেন? বড্ড অদ্ভুত!