২০!!
বাসর ঘর দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো মিশুর। মিতু ওকে টেনে নিয়ে এসেছে এই ঘরে। কয়েকবার চোখ পিটপিট করে বললো, 'এই ফাজলামির মানে কি?'
মিতু উত্তর দিলো, 'বিয়ে হয়েছে বাসর হবেনা?'
- 'ফাজলামি করবি না। এই সম্পর্কটা থাকবে না, কাজেই এসব নাটক বন্ধ করাই ভালো।'
- 'সম্পর্ক থাকবে কিনা সেটা পরে দেখা যাবে। এরকম একটা হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে বাসর রাতটা মিস করিস না।'
বলেই মুখ টিপে হাসলো মিতু। মিশু ক্ষেপে গিয়ে বললো, 'ইয়ার্কি মারছিস?'
- 'ইয়ার্কি না আপু। এলাকার মেয়েরা সবাই ভাইয়াকে দেখে ফিদা। আর তুই কিনা ভাব নিচ্ছিস? ভাইয়া যেমন হ্যান্ডসাম তেমনি ইউনিক পারসোনালিটি। আমার সাথে বিয়ে হলে সারাক্ষণ ওর কোলের উপর বসে থাকতাম।'
মিশু রেগে বললো, 'খুব শয়তান তো তুই। আমিতো ওকে ছেড়ে দিবো, তুই ওকে বিয়ে করে নিস কেমন?'
মিতু হো হো করে হেসে বললো, 'আমি সেকেন্ড হ্যান্ড ছেলে নেইনা। এনিওয়ে, তুই এখানেই শুয়ে পড়। একটু বাদে তোর মেঘ উড়ে উড়ে এসে বৃষ্টি নামাবে। আমি বরং রুমে গিয়ে ঘুমাই।'
মিশু মুখটা বিকৃত করে দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে পাশের রুমের দিকে যেতে লাগলো। মিতু একটা দৌড় দিয়ে পাশের রুমে গিয়েই দরজা লাগিয়ে দিলো। মিশু কয়েকবার দরজা ধরে টানাটানি করেও লাভ হলোনা। মিতু ভেতর থেকে বললো, 'আজকে আর খুলবো না। আমি ঘুমাবো, ডিস্টার্ব করিস না তো।'
- 'খোল বলছি।'
- 'কোনো লাভ নাই, মিতু একবার যা বলে তাই করে।'
মিশু এরপরও কয়েকবার দরজা ধরে টানলো কিন্তু মিতু কিছুতেই খুলবে না। ভয়ংকর ক্ষেপে গিয়ে মায়ের রুমে এসে দেখলো বাবা মায়ের চুলে বেনী করে দিচ্ছেন। ওনাদের মাঝে ঢুকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করলো না। বাধ্য হয়ে বাসর ঘরে চলে আসতে হলো। রুমে এসে দেখলো মেঘালয় বাবার লুঙি পড়ে বসে আছে সোফার উপর। কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়লো মিশুর। ফিক করে হেসেও ফেললো মেঘালয়কে দেখে।
মেঘালয় মুচকি হেসে বললো, 'শ্বশুরের লুঙি পড়ে কেমন লাগছে আমায়?'
- 'ভালোই মানিয়েছে। কিন্তু লুঙি পড়েছেন কেন?'
- 'একটা প্যান্ট কয়দিন ধরে পড়ে আছি দেখছো ই তো। গোসল করে এটা পড়লাম।'
- 'কালকে বাবাকে বলবো নতুন ড্রেস কিনে এনে দেবে। সেগুলা পড়ে সোজা বাড়ি চলে যাবেন।'
মেঘালয় উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। মিশু চমকে উঠে বললো, 'দরজা লাগাচ্ছেন কেন?'
- 'দরজা খোলা রেখে শোবো?'
- 'আপনি ঘুমান, আমি জেগে বসে থাকবো।'
- 'ওকে।'
মেঘালয় মুচকি হেসে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। শত শত গোলাপের পাপড়ি বিছানার উপর। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছে মনটা। মিশু অজান্তেই বারবার মেঘালয়ের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর গিয়ে সোফার উপর বসে পড়ল। শরীরে বেশ জ্বর, বসে থাকতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। শুয়ে পড়লে অনেক ভালো লাগতো। বিছানার দিকে তাকালেই মেঘালয়ের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা বিছানায় শুয়ে ড্যাবড্যাব চোখে চেয়ে আছে, এমন কেন লোকটা!
মিশুর বিরক্ত লাগছে খুব। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো মাত্র সাড়ে আটটা। গ্রামের ভেতর এখনি যেন নিশুতি রাত নেমেছে। পুরোটা রাত বাকি, কিভাবে যে কাটবে। লোকটাকে বলতেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে, মেয়েটার শরীরে জ্বর সেটাও কি মনে নেই? সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিলো মিশু।
হঠাৎ বিছানার দিকে তাকাতেই দেখলো মেঘালয় শার্ট খুলছে। প্রথমবার চোখ ফিরিয়ে নিলেও আবারো তাকাতে ইচ্ছে করলো। আড়চোখে তাকিয়ে রইলো মেঘালয়ের দিকে। মেঘালয় শার্টের সমস্ত বোতাম খুলে শার্টটা খুলে ফেললো শরীর থেকে। ওর উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়বড় হয়ে গেলো মিশুর। একটা ছেলের বুক এত সুন্দর হয়! ব্যায়ামপুষ্ট বডি আর মাসল দেখেই মুগ্ধ হতে হয়। কি বডি বানিয়েছে বাবাহ!
ফর্সা বুকটা দেখতেও ভালো লাগছে। রোমশ বুকে কি যেন লুকিয়ে আছে। এর আগে কখনো ছেলেদের বুক দেখে এতটা আকর্ষণীয় মনে হয়নি। মেঘালয়ের পেশির দিকে তাকালেই বুকে কাঁপন ধরে যায়। বুক থেকে পেট অব্দি লোমে বিস্তৃত, আর নাভিটা দেখলে চোখ ফেরানো যায়না। উফফ এত্ত সুন্দর কিভাবে হয় কেউ?
মিশু ঢোক গিলে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো মেঘালয়ের দিকে। মেঘালয় দুহাতে মাথার চুলগুলো ঠিক করলো। হাত দিয়ে চুল আচড়ানোর সময় কপালটা অনেক প্রশস্ত লাগে। চুলের নিচের অংশটা দেখতে বেশি ভালো লাগছে। সিল্কি চুলগুলো ঠিক করার পর মিশুর দিকে তাকালো মেঘালয়। তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।
মেঘালয়ের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ থেকেও তীক্ষ্ণতর হতে লাগলো। কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়েছে। মিশু আবারো ঢোক গিললো। কিন্তু চোখ সরাতে পারছিলো না। একটু নড়তেই ধপ করে পড়ে গেলো সোফা থেকে।
মেঘালয় মুখ টিপে হেসে দ্রুত নেমে এলো বিছানা থেকে। মেঝে থেকে মিশুকে কোলে তুলে নিয়ে বললো, 'পড়ে যাও কেন? গায়ে শক্তি নেই?'
মিশু কিছু বলতে পারলো না। চোখের সামনে মেঘালয়ের রোমশ বুকটা দেখে বুকের ধুকপুকুনিটা বেড়ে যেতে লাগলো। এই নিয়ে তৃতীয়বার কোলে উঠলো, কিন্তু আজকে খুব জোরে স্পন্দন হচ্ছে। হার্ট ফেটে না যায় আবার।
মেঘালয় বললো, 'কি দেখছো?'
মিশু দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো। কোল থেকে নামানোর কথা বলতে গিয়ে টের পেলো গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। শরীর কাঁপছে রীতিমত। মেঘালয় ওকে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিলো। শুইয়ে দেয়ার পরও ছেলেটা মাথা তুললো না। উপুড় হয়ে তাকিয়েই রইলো মিশুর দিকে।
মিশু খেয়াল করলো কেমন কেমন যেন লাগছে। ট্রাকে একবার বস্তার উপরে পড়ে যাওয়ার পরও এরকম অনুভূতি হচ্ছিলো। একই চাদরে জড়িয়ে গিয়েছিলো দুজনে। মেঘালয় টানাটানি করেও চাদর ছাড়াতে পারছিলো না। সেই মানুষটা আজকে সত্যিই একই চাদরের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো। কে জানত এমন হবে?
মিশুর মুখটা ছোট্ট একটু হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ মেঘালয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই ঘোর লেগে গেছে ওর। চোখ সরাতেও পারছে না, বন্ধ করতেও পারছে না। কেমন যেন চিনচিন ব্যথা অনুভূত হচ্ছে বুকে।
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। কম্বল টেনে মিশুর গায়ের উপর দিয়ে দেয়ার পর সে নিজে বিছানায় উঠে পড়লো। পাশে শোয়ামাত্রই মিশুর বুকটা আরো জোরে ঢিপঢিপ করতে শুরু করেছে। ধেৎ ভালোই লাগেনা কিছু।
মেঘালয় বালিশে মাথা রেখে মিশুর দিকে তাকালো। মিশুও মাথাটা কাৎ করে তাকালো মেঘালয়ের দিকে। ধুকপুকুনি বাড়ছে তো বাড়ছে ই, এই অনুভূতিটা ঠিক বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ঘোরের মাঝে চলে গেছে মিশু। মেঘালয় যখন মিশুর কম্বলের ভেতর ঢুকে গেলো মিশু আঁৎকে উঠে বললো, 'আপনি এটা কি করছেন?'
- 'বাড়ে, আমার শীত করছে না?'
মিশু আমতা আমতা করে বললো, 'কিন্তু একই কম্বলে কিভাবে সম্ভব?'
- 'তোমার আব্বু আম্মু আলাদা কম্বল নিয়ে ঘুমায়?'
মিশু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, 'এত খারাপ কেন আপনি? আমার কেমন কেমন যেন ধরিয়ে দিয়েছেন।'
- 'হা হা হা, কি ধরিয়ে দিয়েছি?'
- 'কেমন কেমন। আমার খুব ছটফট লাগছে। আপনার মাঝে কি যেন আছে। মাথা এলোমেলো করে দেয়।'
- 'সিরিয়াসলি? মাথা এলোমেলো হয়েছে?'
- 'তাছাড়া? আমি কখনোই এরকম লুচ্চা ছিলাম না।'
মেঘালয় হো হো করে হেসে বললো, 'তুমি স্বীকার করছো তুমি লুচ্চা? ইয়া মাবূদ। মেয়েরাও লুচ্চা হয়!'
মিশু মুখ বাঁকা করে বললো, 'নেগেটিভ ভাবে নিচ্ছেন কেন? আমি পসেটিভ লুচ্চা।'
মেঘালয় আবারো হেসে উঠলো হো হো করে। হাসতে হাসতে বললো, 'লুচ্চা আবার পসেটিভ ও হয় বুঝি?'
- 'হ্যা হয়। যেমন আপনি একটা পসেটিভ মার্কা ফাজিল ছেলে। আমাকে লুচ্চার মত তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করেছেন। এখন যা বলবো তাই শুনবেন। একদম এদিকে আসবেন না, ওখানেই গুটিশুটি মেরে ঘুমান।'
- 'হ্যা তাতে আমার ই ভালো। আমি আবার লুঙি পড়ে ঘুমালে সকালে লুঙি খুঁজে পাইনা।'
মিশু চোখ বন্ধ করে ফেললো। লজ্জায় অনেক্ষণ নিশ্বাসও বন্ধ করে রইলো ও। অনেক্ষণ পর চোখ মেলে নিশ্বাস নিলো। চোখ মেলেই দেখলো মেঘালয়ের মাথাটা ওর মুখের একদম কাছাকাছি, উপুড় হয়ে আছে লোকটা। মিশু ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দিয়ে বললো, 'এসব কি?'
- 'তোমার পেট ওঠানামা করছিলো না। ভাবলাম মরে গেলে নাকি?'
মিশু থতমত খেয়ে বললো, 'না মরিনি। আপনি কিন্তু আমার কেমন কেমন বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আর একদমই দুষ্টুমি করবেন না বলে দিলাম।'
- 'আমার মত ভদ্র ছেলেটাকে তুমি এভাবে বলতে পারোনা।'
- 'ভদ্র, তবে তলে তলে টেম্পু চালান।'
মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, 'কম্বলের তলে টেম্পু আছে নাকি?'
মিশু ক্ষেপে গেলো। মুখটা বিকৃত করেছে দেখে মেঘালয় হেসে ফেললো। ওর খুব মজা লাগছে মিশুকে জব্দ করতে। মেয়েটা তেলেবেগুনে জ্বলছে ঠিকই কিন্তু আস্তে আস্তে মেঘালয়ের হৃদয়ের সংস্পর্শে এসে যাচ্ছে সেটা কি বুঝতে পারছে সে?
মিশু বললো, 'আপনি কিন্তু অনেক খারাপ।'
- 'তন্ময়ের মত?'
তন্ময়ের নাম শুনে রেগে গেলো মিশু। গতকাল থেকে একবারের জন্যও তন্ময়কে মনে পড়েনি। ওর কথা মনে পড়তেই কষ্টটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো আবারো। মুখটা ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো ও।
মেঘালয় মনেমনে ভাবলো মিশু হয়ত কান্না করছে। তন্ময়ের নামটা টেনে আনা উচিৎ হয়নি। এখন ওকে আরেকটু জ্বালাতন করতে হবে।
মেঘালয় বললো, 'আমার একটা কোলবালিশ লাগবে। কোলবালিশ ছাড়া আমার ঘুম আসেনা।'
মিশু মুখ ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো, 'কোলবালিশ এখন কোথায় পাবো? আমার রুমে আছে। কিন্তু মিতু কিছুতেই দরজা খুলবে না। হয়ত ঘুমিয়েও পড়েছে।'
- 'আমি জানিনা। আমার কোলবালিশ চাই, কোলবালিশ ছাড়া ঘুমাতেই পারিনা আমি।'
মিশু রেগে বললো, 'আপনি সত্যিই অনেক বাজে লোক। এখন আমি কোলবালিশ কই পাবো? আজকে কোলবালিশ ছাড়াই ঘুমান।'
- 'অসম্ভব। রানী এলিজাবেথকে বিয়ে করতে বললেও করা সম্ভব কিন্তু কোলবালিশ ছাড়া ঘুমানো অসম্ভব।'
- 'কিহ! দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে প্রচুর জ্বালাচ্ছেন। কোলবালিশ ছাড়াই আজকে ঘুমাতে হবে আপনাকে। বাড়িতে একটা মাত্র কোলবালিশ, সেটা মিতু নিয়ে ঘুমিয়েছে। আর ওকে ডাকলেও উঠবে না। কাজেই সেটা অসম্ভব।'
মেঘালয় মুখটা করুণ করে বললো,'আমিতো চলেই যাবো। আর কোনোদিনো দেখা হবেনা। আমি তোমার এত উপকার করলাম আর আমাকে একটা রাত শান্তিমত ঘুমাতেও দিবেনা? কোলবালিশ ছাড়া যে আমার ঘুমই হয়না।'
মিশু রেগে বললো, 'কি খারাপ! উপকার করে আবার খোঁটা দিচ্ছেন? অদ্ভুত। আমার বালিশটা নিয়ে ধরে ঘুমান। আমি আজকে বালিশ ছাড়া ঘুমাবো।'
- 'এইটুকুন বালিশ তো আমার পায়ের পাতার সমান হয়ে গেলো। আমার কোলবালিশ ই লাগবে।'
- 'আপনার কত বড় কোলবালিশ লাগে?'
মেঘালয় মুখটা আরো করুণ করে বললো, 'আমার কোলবালিশ টার সাইজ একদম তোমার মতন। ঠিক এত বড়, আমি জড়িয়ে ধরলে বুকে এসে ঠেকে। আমি একটা পা বালিশের উপর তুলে দিয়ে ঘুমাই।'
মিশু অবাক হয়ে বললো, 'কিহ! অবশ্য এত লম্বা মানুষের কোলবালিশ পাঁচ ফুট হওয়াটাই স্বাভাবিক। যাই হোক, আজকে বাদ দিন। আপনার উপকারের প্রতিদানে অন্যকিছু চান।'
- 'চাইবো?'
- 'যেভাবে খোঁটা দিচ্ছেন। যদিও ঋণ কখনো শোধ হবেনা, তবুও অন্তত খোঁটার হাত থেকে বাঁঁচবো। বলুন কি চান?'
মেঘালয় একটু ভেবে বললো, 'আমি একটু শান্তিমত ঘুমাতেই চাই। আর কিচ্ছু চাইনা।'
- 'ঘুমানোর চেষ্টা করুন না। কোলবালিশ আজকে দিতে পারছি না, পা টিপে দিলে ঘুম আসবে? তাহলে টিপে দি?'
মেঘালয় বাঁধা দিয়ে বললো, 'আরে না না। একটা কোলবালিশ হলেই শান্তি। আর কিচ্ছু লাগবে না।'
- 'ভাই আপনি কেন বুঝতে পারছেন না আজকে সেটা সম্ভব না।'
মেঘালয় মুখ টিপে হাসলো। মিশু দারুণ জব্দ হচ্ছে। মজা লাগছে ওর। একটু চুপ থেকে হুট করেই বললো, 'আমার কোলবালিশ টার সাইজ একদম তোমার মত। এরকম কোনো বস্তু হলেই পারফেক্ট। আমি শুধু ধরে ঘুমাবো।'
মিশু মুখ কাচুমাচু করে বললো, 'এত বড় একটা বস্তু এখন কোথা থেকে এনে দিবো বলুন?'
মেঘালয় বললো, 'তুমি আজকের জন্য আমার কোলবালিশ হয়ে যাও না।'
আড়চোখে মেঘালয়ের দিকে তাকালো মিশু। ছেলেটা অনেক বেশি দুষ্টু। কিন্তু এখন যদি ব্যবস্থা না করে তাহলে মনেহচ্ছে সারারাত ধরে জ্বালাতেই থাকবে আর খোঁটা দিতে থাকবে।
মিশু বললো, 'সেটা তো মানুষবালিশ হয়ে গেলো।'
- 'আজকে রাতে মানুষবালিশ ধরেই ঘুমাবো। এখন কি করবে তোমার ব্যাপার। হয় এনে দাও নয়ত সারারাত জেগে গল্প করো আমার সাথে। আমার কিছুতেই ঘুম আসবে না।'
মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই ছেলেটার সাথে সারারাত বসে গল্প করলে মাথাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। খুব অসহ্য লাগছে ওকে। এভাবে জ্বালা সহ্য করার কোনো মানেই হয়না। আজকের রাতটা ঘুমাক, কালকে সেভাবেই হোক বাসায় পাঠিয়ে দিতে হবে। কিন্তু মিতু তো কিছুতেই দরজা খুলবে না তাহলে উপায়?
মিশু আমতা আমতা করে বলেই ফেললো, 'আচ্ছা আমাকে ধরেই ঘুমান।'
মিশুর বলতে দেরি হলেও মেঘালয় এক মুহুর্ত দেরি করলো না। মিশুকে এক টানে কাছে টেনে নিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরলো। মিশুর মাথাটা বুকের সাথে ঠেকে গেলো ওর। মিশুর কোমল শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে একটা পা দিয়ে মিশুর পা দুটো নিজের দুই পায়ের মাঝে ঢুকিয়ে নিলো। ছোট্ট মেয়েটা গুটিশুটি মেরে মিশে গেলো মেঘালয়ের প্রশস্ত শরীরের মাঝে। মিশুর মাথাটা বুকে চেপে ধরে অন্যরকম প্রশান্তিতে চোখ বুজে ফেললো মেঘালয়।
ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটলো যে বুঝে উঠতে সময় লাগলো মিশুর। মেঘালয়ের ব্যায়ামপুষ্ট বডিটার সাথে মাথাটা ঠেকে যাওয়ায় কেমন যেন ধক করে উঠলো ভেতরটা। একটুও নড়াচড়া করার মত সুযোগ কিংবা শক্তি কোনোটাই নেই ওর। একেবারে মিশে গিয়ে চুপটি মেরে রইলো।
মেঘালয়ের পেশিবহুল বাহুর বন্ধনে নিজেকে একেবারে খুকি খুকি লাগছে মিশুর। উন্মক্ত বুকে মাথা ঠেকে যাওয়ায় বুকের লোমগুলো গালে, মুখে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলো। মেঘালয়ের শরীরে একটা অন্যরকম মিষ্টি গন্ধ মিশে আছে। সেই ঘ্রাণ ভেতরে যাচ্ছে আর কেঁপে উঠছে মিশু। অনেক মাদকতাময় সেই গন্ধটা ক্রমশই কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। এই অদ্ভুত অনুভূতি প্রথম অনুভব করছে মিশু। প্রতিটা শিরা উপশিরায় অস্থিরতা কাজ করছে।
এভাবে কতক্ষণ কেটে গেলো কেউই বলতে পারেনা। একটু বাদে চোখ মেললো মেঘালয়। মেঘালয়ের চোখে পানি। মিশুর চোখেও পানি। সত্যিই যে এক স্বর্গীয় সুখ দুজনেই অনুভব করছিলো, অজান্তেই চোখে পানি এসে গেছে।
মেঘালয় বললো, 'রাগ করেছো মিশু?'
খানিকক্ষণ পর মিশু বললো, 'না। কিন্তু কি দরকার ছিলো আমাকে জড়িয়ে রাখার?'
মিশুর ভেজা কণ্ঠ শুনে অবাক হয়ে মেঘালয় বললো, 'কাঁদছো কেন?'
মিশু কোনো কথা বলতে পারলো না। বাম হাতটা শরীরের নিচে চাপা পড়েছে, ডান হাত দিয়ে শক্ত ধরে জাপটে ধরলো মেঘালয়কে।
মেঘালয় বললো, 'ভয় পেওনা পাগলী। আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোনা।'
- 'আমার ভয় হচ্ছে যে। খুব ভয় হচ্ছে। কেন পাগল করতে চাইছেন আমাকে?'
- 'তুমি আমার স্ত্রী, আমার মিষ্টি একটা বউ।'
- 'কিন্তু আমি চাইনা আমার জন্য কখনো আপনার এতটুকুও মন খারাপ হোক।'
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিতেই বিছানার উপর উঠে বসলো মিশু। মেঘালয় ও উঠে বসলো। একটা বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে মেঘালয় আরাম করে বসলো। তারপর মিশুকে টেনে নিলো বুকে। মিশু কোনো বাঁধা দিলো না। কিন্তু মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখেই কেঁদে ফেললো জোরে। কাঁদতে কাঁদতে বললো, 'আমাকে কেন ভালোবাসতে চাইছেন? এটা সম্ভব না।'
- 'কেন সম্ভব না? আমি যদি মানতে পারি তোমার সমস্যা কোথায়?'
- 'আমাদের মাঝে অনেক ব্যবধান, এগুলোর জন্য আপনার একটা সময় খারাপ লাগবে। তখন আমার নিজেকে ছোট মনে হবে।'
মেঘালয় জানতে চাইলো কোনগুলো ব্যবধানকে সমস্যা মনেহচ্ছে মিশুর?
—————
২১!!
প্রচণ্ড কুয়াশার মাঝেও চিন্তিত মুখে বসে আছে মৌনি। দুটো দিন কেটে গেলো অথচ মেঘালয় এখনো নেই। এমনকি ফোনটাও বন্ধ। মেঘ অনেক দায়িত্ববান ছেলে, সুস্থ শরীরে আর নিরাপদ অবস্থায় থাকলে অবশ্যই যোগাযোগ করতো। তবে কি কোনো বিপদ ঘটেছে ওর? ভেবে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেনা।
এমন সময় আরাফ এসে পাশে বসলো। মৌনির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'রুমে যাবেনা মৌনি?'
মৌনি মুখ তুলে তাকালো আরাফের দিকে। ওর চেহারায় চিন্তার রেখা দেখে আরাফের বুঝতে অসুবিধা হলোনা। কি বলবে বুঝে উঠতে না পেরে বললো, 'আমরা কালকের দিনটা দেখি? এরমধ্যে খোঁজ না পেলে একটা ব্যবস্থা নিতে হবে।'
- 'কিন্তু আমার না একদমই ঘুম আসবে না। গতকাল সকালে কল দিয়ে আমাকে বললো কালকে আসবো। অথচ রাত থেকেই ফোন বন্ধ ওর। আজকে সারাদিন ফোনটা বন্ধ। টেনশন হবেনা বলো?'
- 'পাগলী টেনশন করোনা। হয়ত ব্যস্ত নয়ত কোনো সমস্যায় পড়েছে। ঠিকই আসবে দেখো। এত টেনশন নিওনা। রুমে গিয়ে ঘুমাও।'
- 'ভাইয়াকে মিস করছি খুব। ওই মেয়েটাকে নিয়ে কোনো বিপদ হয়নি তো?'
- 'সেরকম হবার কারণ নেই। মেঘের উপর বিশ্বাস রাখো। কালকের দিনটা দেখাই যাক না। আমার বিশ্বাস ও ঠিকই যোগাযোগ করব।'
- 'তাই যেন হয়।'
এরপর অনেক্ষণ দুজনে চুপচাপ। রাত বেড়ে যাচ্ছে দেখে আরাফ উঠে পড়লো। মৌনিকে ওঠার জন্য বলতেই সেও উঠে দাঁড়ালো। দুজনে একসাথে হেঁটে বারান্দা অব্দি আসলো। মৌনি নিজের রুমে যাবে এমন সময় আরাফ পিছন থেকে ডাক দিলো, 'মৌনি...'
মৌনি ঘুরে তাকালো, 'হ্যা ভাইয়া।'
- 'না কিছু না। টেনশন কোরো না, ঘুমাও গিয়ে।'
- 'কিছু বলবে মনেহয়?'
আরাফ আমতা আমতা করতে লাগলো। আসলে ওর তেমন কিছু বলার নেই। কেন ডাক দিলো তাও বলতে পারেনা। মুচকি হেসে বললো, 'কি হলো? হা করে চেয়ে আছো যে? কিছু বলবে?'
আরাফ মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললো, 'না না কিছুনা।'
মৌনি বললো, 'আরো কিছুক্ষণ আপনার সাথে কথা বলবো?'
আরাফ হেসে ফেললো। মৌনি মেয়েটা সবসময় স্পষ্টবাদী। যা বলার সরাসরি বলে দেয়। কিন্তু লজ্জায় পড়তে হয় খুব। আরাফের হাসি দেখে মৌনি আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। বারান্দায় রাখা চেয়ারের উপর এসে বসলো। বাড়িতে এখনো অনেক হৈ-চৈ। বিয়ে বাড়ির আমেজ ছড়িয়ে আছে।
মৌনিকে বসতে দেখে আরাফ ও পাশে এসে বসলো। মৌনির সাথে কথা বলতে অনেক ভালোলাগে। মেয়েটা অকপটে কথা বলে দেয় আর প্রখর আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন। শব্দের উচ্চারণ শুনলে বারবার শুনতে ইচ্ছে করে। মৌনি কথা বলছে আর মুগ্ধ হয়ে শুনছে আরাফ।
২২!!
মিশু বললো, 'আপনার পাশে দাঁড়ালে আমার নিজেকে বনমানুষ বনমানুষ লাগে।'
মেঘালয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, 'কি?'
- 'আপনার যা হাইট, আমার সাথে দাঁড়ালে মনেহয় বিদ্যুতের খুঁটির নিচে বনমানুষ দাঁড়িয়ে'
মেঘালয় হেসে বললো, 'এটা তোমার কাছে ব্যবধান?'
- 'হ্যা। আজকে তো দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছেন না, দুদিন পর একবার হলেও মন খারাপ হবে। মনেমনে ভাব্বেন আমার বউটা কেন লম্বা হলোনা? আপনার ফ্যামিলির লোকজন বলবে মেঘালয়ের বউটা খাঁটো।'
মেঘালয় মিশুর মুখটা ধরে সোজা করিয়ে দিয়ে বললো, 'তুমি নেহা কাক্করের গল্পটা শোনোনি?'
- 'আমি নেহা নই।'
- 'হ্যা তুমি নেহা নও, কিন্তু তুমি মিশু।'
- 'মিশু তেমন কোনো পরিচয় নয়। আমি মিশুর একটা পরিচয় চাই।'
- 'কিরকম পরিচয়?'
মিশু বললো, 'একটা নিজস্ব পরিচয়। একটা মেয়ে বিয়ের আগে বাবার পরিচয়ে বড় হয়, বিয়ের পরে স্বামীর পরিচয়ে থাকে। সবাই মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কার মেয়ে কিংবা তুমি কার বউ? কিন্তু আমি চাই আমার নিজের একটা পরিচয় থাকুক।'
মেঘালয় মুগ্ধ হয়ে বললো, 'তোমার ধারণাকে সম্মান জানাই।'
- 'আর আমার যতদিন না একটা পরিচয় হচ্ছে, ততদিন আমি আপনার ঘরে বউ হয়ে যাবোনা।'
- 'বেশ। যেওনা, কিন্তু ডিভোর্স নামক অভিশাপটা প্লিজ মুখে এনো না। আমি নাহয় অপেক্ষা করি?'
মিশু এক পলক মেঘালয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, 'অপেক্ষা করবেন? আপনার ভালোবাসা কতদিন থাকবে? অপেক্ষা করতে করতে দুদিন পর ঠিকই ভূলে যাবেন।'
- 'সেই পরীক্ষাটা দেয়ার সুযোগটা দেবে?'
- 'কি করতে চাচ্ছেন আপনি?'
- 'তুমি যা চাইবে তাই হবে। কিন্তু ভূলেও ছেড়ে দেয়ার কথা ভেবোনা। আর বাসায় ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার।'
মিশু চুপ করে রইলো। মেঘালয় দুষ্টমি হাসি হেসে আরেকবার মিশুকে বুকে জাপটে ধরলো। ছেলেটার শরীরে কেমন যেন একটা মিষ্টি সুগন্ধ! মিশু একবার মেঘালয়ের বুকে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, 'আচ্ছা আপনার বডিটা এত আকর্ষণীয় কেন?'
- 'আমি রেগুলার জিমে যাই। সেজন্য।'
- 'রেগুলার? আমি যদি রেগুলার জিমে যাই তাহলে আমার ফিগারটাও আকর্ষণীয় হবে?'
মেঘালয় মুচকি হেসে বললো, 'অবশ্যই হবে।'
- 'তখন আপনার পাশে আমাকে মানাবে।'
মেঘালয় দুষ্টুমি করে বললো, 'তুমি স্টার জলসার সিরিয়াল দেখেছো কখনো?'
মিশু মাথাটা দুদিকে নাড়িয়ে বললো, 'না তো। কেন?'
মেঘালয় বললো, 'মৌনির কাছে শুনেছি স্টার জলসায় এক ধরণের সিরিয়াল হয়। যেখানে গ্রামের হাবাগোবা মেয়ের সাথে শহরের হ্যান্ডসাম ছেলেদের বিয়ে হয়। বিয়েটা হুট করেই হয়, একদম আমাদের মত। আমাদের বিয়ের সময় নিজেকে সিরিয়ালের নায়ক মনেহচ্ছিলো।'
মিশু মাথাটা তুলে সোজা হয়ে বসলো। তারপর বললো, 'বুঝলাম। তারপর কি হয়?'
মেঘালয় মুখ টিপে হেসে বলল, 'কোনো কোনো সিরিয়ালে নায়ক তার হাবাগোবা স্ত্রীকে কাজের মেয়ে সাজিয়ে বাসায় নিয়ে তোলে।'
মিশু ক্ষেপে গিয়ে বলল, 'কি বললেন? আমাকে এখন কাজের মেয়ে বানানোর ইচ্ছা হচ্ছে আপনার?'
- 'আহা রেগে যাও কেন? শোনোনা। কোনো সিরিয়ালে বিয়ের পর বাসায় নিয়ে গিয়ে তোলে কিন্তু কেউ মেনে নেয়না। এরপর নায়িকা একেবারে স্মার্ট স্টাইলিশ, আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তারপর.. '
মিশু রেগে বললো, 'আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে? খুব মজা তাইনা?'
- 'হ্যা। সিরিয়ালে কি হয় জানো?'
মিশু আরো রেগে বললো, 'সিরিয়ালে কি হয় আমার জানার দরকার নেই। সিস্টেমে আমাকে ইনসাল্ট করছে আবার বলে কিনা স্ত্রীর মর্যাদা দেবে। রাখুন আপনার ডায়ালগ। সরে বসুন।'
মেঘালয়ের হাসি পেলো মিশুর কথা শুনে। মিশু কিছুটা সরে বসলে মেঘালয়ের গায়ের উপর থেকে কম্বল সরে গেলো। মেঘালয় কম্বল টেনে নিজের গায়ের উপর নিয়ে বললো, 'একদম টানাটানি করবে না। যে একটা পুঁচকে মেয়ে আর গায়ে কত জোর '
মিশু আবারো কম্বলটা টেনে নিজের গায়ে দিলো। মেঘালয় এবার একটানে কম্বল সহ মিশুকে একসাথে টেনে নিয়ে নিজের কোলের উপর বসিয়ে নিলো। মিশু কিছু বুঝে উঠতেই পারছিলো না। মেঘালয় ওকে কোলে বসিয়ে কম্বলটা দুজনের গায়ে জড়িয়ে নিলো। মিশুকে দুহাতে এমনভাবে ধরে রাখলো যে মিশুর নড়াচড়ার ও শক্তি রইলো না। মিশু মুখটা কাচুমাচু করে বললো, 'আপনার শরীরে এত শক্তি কেন?'
- 'শক্তির তো এখনো কিছুই দেখাইনি।'
বলেই ঠোঁট বাঁকা করে হাসলো। মিশু একটু নড়াচড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। মেঘালয় বললো, 'একদম নড়াচড়া করবে না বলে দিচ্ছি। ছোট বাচ্চা, ছোট বাচ্চার মত থাকো।'
- 'কোন এঙ্গেল থেকে আমাকে আপনার ছোট বাচ্চা মনেহয়? আমি খাঁটো বলে?'
- 'তোমার সবকিছুর সাইজ ই ছোট বাচ্চার মতন। যেই এঙ্গেল থেকেই তাকাই না কেন ভূলেও মেয়েমানুষ মনেহয়না।'
মিশু রেগে বললো, 'ছাড়ুন আমাকে। ছেড়ে দিন।'
- 'ইস আস্তে চিল্লাও পিচ্চি। বাবা মা ভাব্বে কি?'
মিশু চোখ পাঁকিয়ে মেঘালয়ের দিকে তাকালো। মেঘালয় ঠোঁট টিপে হাসছে। হাসিটাই মাথা এলোমেলো করার জন্য যথেষ্ট। মিশু আর কিছু বলতে পারলো না। নিজেও হেসে ফেললো। মেঘালয়ের মুখে সবসময় প্রসন্ন হাসি লেগেই থাকে। ঠোঁট দুটো গোলাপের পাপড়ির ন্যায় গোলাপি আভা যুক্ত। মিশু অনেক্ষণ ওর দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থেকে আঙুল দিয়ে মেঘালয়ের ঠোঁট স্পর্শ করে বললো, 'আপনার ঠোঁট দুটো অনেক পিংকি পিংকি। আপনি সিগারেট খাননা কেন?'
- 'আমার ঠোঁট দুটো শুধুই আমার মিষ্টি বউটার জন্য। সিগারেটের কি অত বড় শক্তি আছে যে আমার ঠোঁটের ভার্জিনিটি কেড়ে নেবে?'
মিশু লজ্জায় মাথাটা নামিয়ে ফেললো। মেঘালয়ের হাসি আর ওর চোখের দিকে তাকালেই সমস্তকিছু এলোমেলো হয়ে যায় ওর। একটু আগেই কত জোর গলায় কতকিছু বললো। অথচ এখন ইচ্ছে করছে এই ছেলেটাকে আজীবন ধরে রাখতে। এ কোন যন্ত্রণায় পড়া গেলো রে বাবাহ!
মিশু যখন আনমনা হয়ে এসব ভাবছিলো, মেঘালয় খুব কাছ থেকে তাকিয়ে ছিলো মিশুর দিকে। মিশুর ত্বক অনেক মসৃণ আর লাবণ্যময়। ন্যাচারাল একটা জিনিস মিশে আছে ওর চেহারায়। শহরের মেয়েগুলোকে দেখতে দেখতে অরিজিনাল চামড়া কেমন হয় সেটা ভূলেই গিয়েছিলো মেঘালয়। মেয়েদেরকে দেখলেই বোঝা যায় গালে বিবি ক্রিমের স্তর পড়েছে। এত ন্যাচারাল স্কিন দেখে ভালো লাগছে মেঘালয়ের। ইচ্ছে করছে ছুঁয়ে দিতে। ইচ্ছে করলেই ছুঁয়ে দেয়া যায় কিন্তু দিচ্ছিনা ব্যাপারটার মাঝেও একটা মজা আছে।
মেঘালয় মুগ্ধ হয়ে মিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পাপড়ি গুলো অনেক দীর্ঘ আর ঘন। একটু পরপর যখন চোখের পলক পড়ে,দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে তখন।
মিশুর কথায় চমকে উঠলো মেঘালয়। মিশু বললো, 'এভাবে কি দেখছেন?'
- 'তুমি চুলের যত্ন করোনা কেন?'
মিশু মুখটা অভিমানীর মত ফুলিয়ে বললো, 'আমি একটু অগোছালো। তবে আপনার কোনো হেল্প লাগবে না, আমাকে চেঞ্জ করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট।'
মেঘালয় হেসে বললো, 'তুমি সত্যিই একটা বাচ্চা বুঝলে। বাচ্চাদের মত আচরণ করো, বাচ্চাদের মত কথা বলো।'
- 'হ্যা আমি বাচ্চা। এখন ছাড়ুন তো শুয়ে পড়বো। ঘুম পাচ্ছে অনেক।'
মেঘালয় মিশুকে নিয়েই শুয়ে পড়লো। কম্বলটা টেনে নিলো মাথার উপর। কম্বলের ভেতর চোখ মেলে মিশু দেখলো ঘুটঘুটে অন্ধকার। ও অনেক চেষ্টা করলো মাথা বের করার কিন্তু কিছুতেই পারলো না। মেঘালয় শক্ত করে ধরে রইলো ওকে। মিশুর কাঁধে মুখ গুঁজে দিয়ে জড়িয়ে ধরে রইলো ওকে। মেঘালয়ের দুই পায়ের ফাঁকে পা রেখে গুটিশুটি মেরে রইলো মিশু। মেঘের গরম নিশ্বাস পড়ছে ঘাড়ে, কেমন কেমন যেন লাগছে। ক্রমশই ধুকধুকানি বেড়ে যেতে লাগলো মিশুর।
মেঘালয় তীব্র মাত্রার রোমান্টিক একটা ছেলে, সমস্ত কল্পনা জমিয়ে রেখেছিলো একমাত্র বউয়ের জন্য। ভাবনাগুলো প্রয়োগ না করে বসে থাকবে কেন? মিশুর গালের সাথে নিজের গাল ঘষে দিচ্ছিলো। দাড়ির মৃদু খোঁচায় মিশুর তখন পাগল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। ছেলেটা এত দুষ্টু কেন বুঝতে পারেনা মিশু। একটু নড়ার চেষ্টা করতেই মেঘালয় বললো, 'নড়াচড়া বিহীন থাকা যায়না?'
- 'উহু। আমার কেমন কেমন যেন লাগছে।'
- 'লাগুক। একদম চুপ করে থাকো।'
- 'আমি অসুস্থ।'
মেঘালয় আর দুষ্টুমি করলো না। মিশুকে বুকে নিয়ে বাচ্চাদের মত আগলে রেখে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলো। এরকম করে কেউ কখনো আগলে রাখেনি ওকে। আবেশে ঘুম এসে যাচ্ছে। মেঘালয় আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। চোখ বুজতেই ঘুমিয়ে পড়লো মিশু। কিন্তু মেঘালয়ের চোখে ঘুম নেই। এই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে ঘুমিয়েছে ও, তাও আবার নিজের স্ত্রী। যাকে বিয়ের করার এক ঘন্টা আগেও জানতো না মেয়েটা তার স্ত্রী হবে। খুব অস্থিরতা কাজ করছে ভেতরে।
বাসায় কিভাবে কথা বলে রাজী করতে হবে ভাবতে ভাবতে অনেক রাত হয়ে গেলো। মিশুর জ্বর এখনো আছে। দুশ্চিন্তা হচ্ছে মেঘালয়ের। বুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো। মিশু অনেক আরামে ঘুমাচ্ছে,কোনো নড়াচড়া নেই। মেয়েটাকে ভরসা দিতে পেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো মেঘালয়।