৮৬!!
ঠিক যেন স্বপ্নের মত একটা রাত কাটলো। এতটা প্রশান্তি, ভালোবাসা, স্বপ্নে ঘেরা একটা রাত্রি ছিলো, যা প্রতিটা মানুষের আকাঙ্ক্ষা জুরে থাকে। কিন্তু সকালে নাস্তার টেবিলে বসে বাঁধলো বিপত্তি।
বর্ষা আহমেদ বললেন, 'মিশু আজ আমার সাথে হাইকমিশনার অফিসে সাক্ষাতের জন্য যাবে। তোমাকে কোন ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন দেয় দেখো।'
চমকে উঠলো সবাই। মেঘালয় মিশু'র দিকে একবার তাকিয়ে বললো, 'মানে! মিশু যখন বাইরে যাবেই না তাহলে ভাইভায় যেতে হবে কেন?'
মা বললেন, 'বাইরে না যাওয়ার কথা তুলছো কেন? স্কলারশিপ পেয়েছে, অবশ্যই যাবে। আমার ঘরে প্রতিটা ছেলে মেয়ের নিজস্ব ইচ্ছেনুযায়ী ক্যারিয়ার বেছে নেয়ার স্বাধীনতা আছে।'
মেঘালয় ও মিশু একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। মেঘ বললো, 'কিন্তু মিশুর এই স্কলারশিপ নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না।'
মা বললেন, 'তুমি যা মনে করছো তোমার স্ত্রী'র সেটা নাও মনে হতে পারে। অনেকের স্বপ্ন থাকে বিদেশে আন্ডারগ্রাড করার। একটা সুযোগ পেয়েছে, সেটাকে ফেলে দিতে হবে কেন? ভালো ভার্সিটি হলে গবেষণার একটা ভালো সুযোগ পাবে। বিভিন্ন দেশের বন্ধুবান্ধব হবে, বাইরের দেশের ডরমিটরিতে থাকার এক্সপেরিয়েন্স হবে, আরো অনেক দেশ ঘুরে দেখার সুযোগ পাবে।'
কেউ কোনো কথা বললো না। আকাশ আহমেদ মাথা নিচু করে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করছেন। এদিকে কারো মুখে কোনো কথা নেই দেখে কিছুক্ষণপর উনি বললেন, 'আমরা সবকিছুর আগে মিশু'র ইচ্ছেটা শুনি। ওর এমবিশন কি? আর ও ঠিক কোথায় পড়াশোনা করতে চাচ্ছে?'
মিশু গম্ভীর হয়ে গেলো। সবসময় তো ভেবে এসেছে জীবনে বড় হতে হবে। কিন্তু সঠিক কোনো লক্ষ্য কখনো স্থির করা হয়েছিলো কি? লক্ষ্য থাকলেও সে অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। ছোটবেলায় সবারই স্বপ্ন থাকে ডাক্তার হওয়ার। স্যার যাকেই জিজ্ঞেস করবেন, বড় হয়ে কি হতে চাও? একবাক্যে বলবে ডাক্তার। কিন্তু আস্তে আস্তে বড় হওয়ার সাথে সাথে স্বপ্ন বদলায়, জীবনের লক্ষ্য বদলায়। ছোটবেলায় যেটা ড্রিম ছিলো, বড় হওয়ার সাথে সাথে সেটা শুধুমাত্র কল্পনা হয়ে দূরে সরে যায়। এখন কি লক্ষ্য আছে সেটা নিজেই জানেনা মিশু।
মেঘালয় মিশু'র দিকে তাকিয়ে বললো, 'কি ভাবছো এত? আমার কথা ভাবতে হবে না। তোমার ইচ্ছের কথা বলো। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।'
- 'আমি কিছুই ভাবছি না। সত্যি বলতে আমি আমার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারছি না।'
মা বললেন, 'তুমি আজকে সাক্ষাত করে আসো। একটা নতুন অভিজ্ঞতা হবে। এরপর ভেবেচিন্তে একটা সিদ্ধান্ত নিও। লাইফে এমবিশন, হাইয়ার স্টাডি, সাবজেক্ট চয়েস এসব খুবই ইম্পরট্যান্ট।'
- 'আমার বাইরে পড়তে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো। ইচ্ছে ছিলো বলেই তো পাসপোর্ট বানিয়েছি, এপ্লাই করেছি, প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।'
বাবা হেসে বললেন, 'তাহলে তোমার ইচ্ছেই সই। তোমার যা ভালো হবে, সেটাই করো। আমাদের কোনোকিছুতেই আপত্তি নেই। যেকোনো ভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করতে চাইলে করো। পড়াশোনা না করলেও আশাকরি সমস্যা হবে না। কিন্তু আমার মেয়ে হয়েছো যখন, পড়াশোনার সর্বোচ্চ জায়গায় তোমাকে যেতে বলবো। এক্ষেত্রে যত টাকা লাগুক, খরচ করতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু মানুষ হতে হবে।'
মিশু উঠে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো, 'আপনি সত্যিই আমার বাবা। আমার মাঝেমাঝে মনেহয় কোনো স্বপ্নের জগতে আছি। যেখানে আমাদের মা বাবা ই অনেক সময় আমাদের ইচ্ছেটা বোঝেন না, নিজের স্বপ্ন তো দূরের কথা বরং তাদের ইচ্ছেটা চাপিয়ে দেন। সেখানে আপনারা যেভাবে পুত্রবধূ'র ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, দেশের সব বাবা মা যদি আপনাদের মত হতেন!'
আকাশ আহমেদ হেসে বললেন, 'হয়েছে বাবা। কৃতজ্ঞতা আর সম্মানের জায়গাটা ভূলে যেওনা। তাহলে আর কোনো প্রশংসা লাগবে না। তুমি সকাল সকাল বর্ষার সাথে গিয়ে ভাইভা দিয়ে আসো।'
মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, 'আচ্ছা ঠিক আছে।'
এমন সময় মেঘালয় খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, 'আমার কাজ আছে, রুমে যাচ্ছি।'
সবাই তাকালো মেঘালয়ের দিকে। ও কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো। মিশু করুণ মুখ করে তাকিয়ে আছে। মেঘালয়ের কষ্টটা বুঝতে পারছে ও। কিন্তু ওরও যে খুব ইচ্ছে ছিলো দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার। এখন বাবা মায়ের উৎসাহে ইচ্ছেটা আরো বেশি পেয়ে বসেছে। চলে গেলে মেঘ কি খুব বেশি কষ্ট পাবে?
মৌনি বললো, 'আব্বু, ভাইয়া বোধহয় মিশুকে ছাড়তে চাইছে না। দেখেছো কেমন রেগে গেছে?'
বাবা বললেন, 'রাগুক। প্রত্যেকের নিজস্ব স্বপ্ন আছে, লক্ষ্য আছে। আমার কাছে বিয়েটা লাইফের সবকিছু নয়। বরং এটা ছোট্ট একটা অংশ। প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে এসব নিয়ে পড়ে থাকলে জীবনের অর্থটাই থাকলো কোথায়? মেঘালয়ের উচিৎ ছিলো একজন প্রতিষ্ঠিত গ্রাজুয়েট মেয়েকে বিয়ে করা। যেহেতু বিয়েটা দূর্ঘটনাবশত হয়ে গেছে, এখন এই মেয়েটার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে হবে না? সংসারের মত জটিল সমীকরণে এত তাড়াতাড়ি ওকে না বাঁধলেও হয়।'
মৌনি আর কোনো কথা বললো না। বাবা মায়ের চিন্তা ভাবনা অনেক উন্নত। কোনো যুক্তি সেখানে খাটবে না, কোনো উত্তর ও দেয়া যাবে না।
বাবা মিশুকে বললেন, 'বিল গেটসকে তার মা কি উপদেশ দিয়েছিলেন জানো? এমন স্বপ্ন দেখবি যেটা মানুষকে বলতেও ভয় লাগবে। এমন কাজ করবি, যা অন্য কেউ করছে না। বেশিরভাগ মানুষ ঘুরেফিরে একই পথে ক্যারিয়ার গড়ে তোলে। কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। তুই সবার চেয়ে ভিন্ন পথে হাঁটবি, ভিন্ন কাজ করবি। তুই নিজেই পথ তৈরি করবি, মানুষকে স্বপ্ন দেখাবি। মায়ের এই উপদেশ বিল গেটসের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েছে। পৃথিবীজুরে বিপ্লব এনেছে, স্রোতের বাইরে গিয়ে কোটি কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখায় তিনি। এজন্য আমি বলবো, সবসময় স্রোতের হাল ধরে চলার চিন্তা বাদ দাও। স্রোতের বাইরে গিয়ে কঠিন কিছু করবে।'
মিশু মুগ্ধ হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে! চোখের পলক পড়ছে না ওর। প্রত্যেকটা কথা শিরা উপশিরায় প্রতিটা রক্তবিন্দুতে আলোড়ন সৃষ্টি করছে। সত্যিই তো, জীবনটাকে এভাবে ভেবে দেখা হয়না কখনো। জীবনকে নিয়ে উচ্চ আশা করার কথাও অনেকেই ভাবে না।
বাবা বললেন, 'মেঘালয়কে জিজ্ঞেস করলে শুনবে ওর পড়াশোনা করতে কত কষ্ট করতে হয়েছে। ওর পড়াশোনায় আর্থিক সাপোর্ট খুব কম করেছি। ওকে স্কলারশিপে গ্রাজুয়েশন করতে হয়েছে। এতে করে লাভটা কি হয়েছে জানো? সিজিপিএ চারের মধ্যে তিন পয়েন্ট থাকতেই হবে। প্রত্যেক ইয়ারে সিজিপিএ থ্রি পয়েন্ট না থাকলে স্কলারশিপ বাতিল। স্কলারশিপ বাতিল হলে আমরাও ওকে সাপোর্ট দিচ্ছি না। এই চাপে পড়ে মেঘালয় ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে প্রতি সেমিস্টারে রেজাল্ট ভালো ছিলো আর ফুল ফান্ড স্কলারশিপে ওর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট।'
মিশু অবাক হয়ে বললো, 'আপনারা অনেক অদ্ভুত! এজন্যই বলি লোকটা এমন কেন? আজকে বুঝলাম বাবা মা ওনাকে সেভাবেই গড়ে তুলেছেন। স্যালুট তোমাকে আব্বু।'
মিশু কপালে হাত তুলে স্যালুট জানালো। বাবা মা দুজনেই হাসলেন। মা মিশু'র গাল টেনে দিয়ে বললেন, 'তোকে সাংঘাতিক কিউট লাগছে। দেখলেই ইচ্ছে করে গাল টেনে আদর করে দেই।'
মিশু বললো, 'গাল টেনে কিভাবে আদর করে মা? এত জোরে গাল টানলে তো ব্যথা লাগে।'
- 'ওলে বাবালে ব্যথা লাগে? আচ্ছা বাবুতাহ এখন থেকে আলতো কলে গাল তানবো।'
কথাটা বলেই মা আরো জোরে গাল টেনে ধরলেন। মিশু চেঁচাতে চেঁচাতে বললো, 'আম্মু গোওওও, ব্যথা পাচ্ছি।'
- 'যা ছেড়ে দিলাম। তোর আব্বু আম্মু কালকে আসবেন। ফোন করেছিস?'
মিশু উৎফুল্ল হয়ে বললো, 'সত্যি! আমি এখনো ফোন করিনি।'
- 'নতুন বাপ মা পেয়ে পুরনোদেরকে ভূলে গেছিস। কালকে তোর মায়ের কেমন কানমলা খাস দেখবো।'
মিশু হেসে বললো, 'আমার মনেই হচ্ছে না আব্বু আম্মুকে ছেড়ে এসেছি। আপনারা সে অভাবটা বুঝতে দিলেন কখন?'
বলেই মিশু শ্বাশুরি মাকে জাপটে ধরলো। হঠাৎ ই কান্না পেয়ে গেলো ওর। মাথা তুলে বললো, 'আমি রুমে যাই এখন।'
ঘরে এসে দেখলো মেঘালয় গালে দিয়ে বসে আছে। মিশু গুটি গুটি পায়ে কাছে এসে খপ করে মেঘালয়ের গলাটা চেপে ধরে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিলো ওকে। তারপর মেঘালয়ের বুকের উপর বসে দুই পাশে দুই পা রেখে দুইহাতে গলা চেপে ধরে বললো, 'এই সুন্দর মানুষটা, আপনার মন খারাপ?'
মেঘালয় মিশু'র আচমকা এমন আক্রমণে থ হয়ে গেছে। মিশু'র চোখে চোখ রেখে মেঘালয় বললো, 'আমাকে তুই ভালোবাসিস?'
মিশু মেঘালয়ের নাক টেনে ধরে বললো, 'হ্যা বাসি তো। জানেন না?'
- 'সত্যি বাসিস?'
- 'হ্যা রে বাবা সত্যি বাসি।'
মিশু মেঘালয়ের কানদুটো দুহাতে টেনে ধরে গাড়ি স্টার্ট দেয়ার সুরে বললো, 'ভুম ভুমমমম.. গাড়ি চালাচ্ছি। পিপ পিপ পিপ..'
মেঘালয় এক ঝটকায় মিশুকে নিচে ফেলে এমন জোরে ওর কোমরটা চেপে ধরলো সে চেঁচিয়ে উঠলো মিশু। মেঘালয় ওর চোখে গভীরভাবে তাকালো। মিশু চোখ রাঙিয়ে বললো, 'সমস্যাটা কি হ্যা?'
- 'তুই আমাকে রেখে বিদেশে পড়তে যাবি?'
- 'ভালো কোনো ইউনিভার্সিটি হলে ভেবে দেখবো। আব্বু আম্মু'র কথা শুনে মনে হচ্ছে ওরা আমাকে পাঠিয়েই ছাড়বে। আপনি কি চাইছেন?'
মেঘালয় বলল, 'আমাকে সবসময় ভালোবাসবি। যখন তখন আমার বুকের উপর উঠে এরকম গাড়ি চালাবি। তোকে কোলে বসিয়ে আদর করবো। কিন্তু আমি জানি বাবা কি বলেছে। সে শিক্ষাটা আমিও পেয়েছি। জীবনে এসবের বাইরেও অনেক কিছু আছে। আমি কিচ্ছু জানিনা, শুধু জানি ভালোবাসি রে মিশু।'
মিশু মেঘালয়কে শক্ত করে চেপে ধরতে ধরতে বললো, 'আমিও ভালোবাসি মেঘমনি। খুব খুব খুব ভালোবাসি।'
- 'তুই চলে গেলে তোকে ছাড়া থাকবো কিভাবে বল তো?'
মিশু কোনো কথা বললো না। মেঘালয়ের গরম নিশ্বাস গলায় পড়তেই কেঁপে উঠতে লাগলো ও। দুহাতের বন্ধনে শক্ত করে আবদ্ধ করে রইলো ওকে। মেঘালয়ের বুকের ভেতরটা কেঁপে যাচ্ছে। একইসাথে দু ধরণের অনুভূতি। একদিকে আপন করে পাওয়ার সুখ, অন্যদিকে দূরে যেতে দেয়ার যন্ত্রণা।
—————
৮৭!!
ইন্ডিয়া হাইকমিশনার অফিসে সাক্ষাতের জন্য এসেছে মিশু। সাথে বর্ষা আহমেদ ও এসেছেন। হাইকমিশনারের সাথে কথা বলার সময় মিশু'র ইংরেজির দক্ষতা দেখে অবাক হলেন বর্ষা আহমেদ। মিশু সবসময় প্রমিত বাংলা ভাষায় কথা বলে। যেখানে বর্ষা আহমেদ নিজেও মাঝেমাঝে বাংলিশ করে ফেলেন। ওনার কথায় বাংলা ইংরেজি দুটোই বেরিয়ে আসে। সেখানে মিশু সবসময় শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেও এত সুন্দর ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে সেটা মুগ্ধ হওয়ার মতই। তাছাড়া মেয়েটা গ্রামে বড় হয়েছে। ওরকম প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মেয়ে হয়েও এত সুন্দর ইংরেজি বলতে পারাটাও এক ধরণের প্রতিভা বলা যায়। মিশু প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলো হেসে হেসে আর যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার সাথে। একবার ওর রসিকতা দেখে হাইকমিশনার সাহেব হেসে ফেললেন। দেশের বাইরে কেন পড়তে যাওয়ার ইচ্ছে সেটার জবাবে মিশু বললো, 'গবেষণার বিশাল সুযোগ পাবে বলে।'
হাইকমিশনার সাহেব মিশুকে যখন বলতে বললেন ওর নিজের কিছু জানার আছে কিনা। মিশু তখন এমন একটা প্রশ্ন করলো যে টেবিলে বসে থাকা কেউই অনেক্ষণ কথা বলতে পারলেন না।
মিশু বললো, 'আমাদের দেশে বর্তমানে একটা নিয়ম চলছে যে, বাইরে বের হলেই তোকে ধর্ষণ করবো। কোনো মেয়ে ঘরের বাইরে গেলে সুস্থ শরীরে ঘরে ফিরে আসতে পারবে কিনা সেটার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। এখন বাইরে বের হতে ভয় পাই। আচ্ছা, বিদেশেও কি এমন ভয় নিয়ে বাইরে বের হতে হবে?'
বর্ষা আহমেদ অবাক হয়ে মিশু'র দিকে তাকালেন। হাইকমিশনার সাহেব কিছুক্ষণ মিশু'র দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে রইলেন। কোনো কথা বলতে পারলেন না। একজন ফরেইন হাইকমিশনারের সামনে বসে এরকম প্রশ্ন করতে প্রবল সাহস দরকার। আর মেয়েটার সেটা আছে বলেই মনেহচ্ছে।
মিশু উত্তর না পেয়ে ইংরেজিতেই বললো, 'এরকম প্রশ্ন করার আমি দুঃখিত। আসলে এতটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি যে, প্রশ্নটা না করে পারলাম না।'
- 'ঠিক আছে। তোমার প্রশ্ন শুনে আমারও কিছুক্ষণের জন্য খারাপ লেগেছে। অন্যান্য দেশে মেয়েদের নিরাপত্তা অনেক বেশি। কিন্তু তুমি ইন্ডিয়ায় এপ্লাই করেছো কেন?'
- 'আমার IELTS করা নেই। ইংরেজির যেটুকু দক্ষতা অর্জন করেছি, পুরোটাই আমার নিজস্ব প্রচেষ্টায়। তাছাড়া আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ্রহ প্রকাশ করেছি সেগুলো সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র। বাঙালি সংস্কৃতিকে আমি ভালোবাসি, সে কারণেই।'
- 'দেশপ্রেমী?'
মিশু হাসিহাসি মুখে বললো, 'হ্যা। আমি আমার দেশকে অসম্ভব ভালোবাসি। আমার পড়াশোনা যেখানেই হোক, আমি আমার দেশের মানুষের জন্যই সবসময় কাজ করতে চাই। আর যেখানেই যাই, আমার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য সবসময় প্রচেষ্টা থাকবে। বাংলাদেশ আমাকে বুকে ধারণ করে রেখেছে আর এই জন্মভূমিকে আমি আমার আত্মায় ধারণ করছি সবসময়।'
কমিশনার সাহেব মিশুর উত্তরে সন্তুষ্টবোধ করলেন। আরো কিছুক্ষণ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার পর বেরিয়ে আসলো মিশু ও বর্ষা আহমেদ। বাইরে আসার পর শাশুড়ি মা মিশুকে বললেন, 'তোমাকে মাঝেমাঝে আমার খুব অচেনা লাগে।'
মিশু হেসে বলল, 'কেন মা?'
- 'এই যে কখনো খুব তেজি মনেহয় আবার কখনো মনেহয় একেবারেই বাচ্চা।'
- 'হা হা হা। কি যে বলেন মা! আমার খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে। আমাকে মিষ্টির দোকানে নিয়ে যাবেন?'
মা হেসে বললেন, 'বললাম অমনি বাচ্চা হয়ে গেলে। কতগুলো মিষ্টি খাবে তাই দেখবো, চলো।'
৮৮!!
মিশু বাসায় এসে দেখলো মেঘালয় খুব মনোযোগ দিয়ে হিসাব নিকাশ করছে। মিশু এসে আচমকা মেঘালয়ের কোলের উপর উঠে বসতে বসতে বললো, 'আজকে আমি অনেকগুলা মিষ্টি খেয়েছি। আরো দুই কেজি নিয়ে এসেছি। তোমার আম্মুটা কি যে ভালো..'
মেঘালয় থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে মিশু'র দিকে। হুট করে এসে এভাবে কোলের উপর উঠে বসলো আবার বাচ্চাদের মত বকবক করে চলেছে। মেয়েটা কি বড় হবে না? গুরুত্বপূর্ণ হিসাব করছিলো সেটা ভাব্বে না একবার ও?
মিশু মেঘালয়ের নাক টেনে ধরে বললো, 'হা করে কি দেখছেন? জানেন মা বলেছে খুব দ্রুত আমাদেরকে হানিমুনে পাঠাবে।'
মেঘালয় ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়েই আছে। মিশুর ছেলেমানুষি কাজটা খেয়াল করছে মন দিয়ে। মিশু কথা চালিয়েই গেলো, 'আমার একটা টুপি কিনতে হবে। সুন্দর দেখে একটা হ্যাট কিনে দেবেন আমায়?'
মেঘালয় হেসে বললো, 'দিবো। একটা কথা বলবো মিশু?'
- 'হ্যা বলুন।'
- 'তোমার চোখে সমুদ্র আছে। যে সমুদ্রে শতবার অবগাহন করলেও নিজেকে অতৃপ্ত মনেহয়।'
মিশু ভ্রু কুঁচকে বলল, 'আমি বলি কি আমার সারিন্দা বলে কি। আপনার কথা বুঝি না আমি। সহজ করে বলুন।'
মেঘালয় মুখটা কাছে নিয়ে এসে বললো, 'তোমার নিচের ঠোঁট পান করে আমি মাতাল হবো। তুমি আমার রেডওয়াইন।'
মিশু চোখ পাকিয়ে এক লাফে নেমে পড়লো কোল থেকে। মুখ বাঁকিয়ে বললো, 'সাংঘাতিক একটা লোক আপনি। এসব দুই নাম্বার ডায়ালগ শিখেছেন কার কাছে?'
মেঘালয় দুষ্টুমি করে বললো, 'আমার একটা এক্স ছিলো, ওর কাছে।'
- 'ইহ, একেবারে মেরে পুতে রেখে দেবো।'
- 'হা হা হা। কাকে মারবা? আমাকে মারলে তুমি বাঁচবা কি নিয়ে?'
- 'কি আবার? অপশন তো আমারও আছে, তন্ময়কে নিয়ে বাঁচবো।'
মিশু নিতান্তই ফাজলামির ছলে কথাটা বলেছে। কিন্তু মেঘালয়ের এত রাগ উঠলো যে খপ করে মিশুকে ধরে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ধরে দুহাতে ওর মুখটা টিপে ধরলো। মিশু চেঁচাতেও পারছে না, নড়তেও পারছে না। মেঘালয় রেগে বললো, 'খুন করে ফেলবো একেবারে। পুরো দুনিয়া জানে তুই আমার। ভূলেও যদি আর কখনো এই কথা মুখে আনিস, তোকেই মেরে পুতে রেখে দেবো।'
মিশু হকচকিয়ে গেছে। এমন সময় দরজায় মা এসে দাঁড়ালেন, 'মেঘ আসবো?'
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে দিয়ে বললো, 'হ্যা আম্মু আসো।'
বর্ষা আহমেদ ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বললেন, 'এসব কি বলছিস তুই? পুতে রেখে দেবো মানে? তুই রেগে গেলে এসব আজেবাজে কথা বলিস।'
মেঘালয় লজ্জা পেয়ে মাথা মাথা চুলকালো। মিশু হো হো করে হেসে উঠলো। ওর হাসি দেখে মা ভ্রু কুঁচকে বললেন, 'তোকে গালি দিচ্ছে আর তুই হাসছিস? কি অন্যায় করেছিলি?'
মিশু মুখ বাঁকা করে হাত নাচাতে নাচাতে বললো, 'ওনাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম তাই।'
মা একবার মিশু'র দিকে তাকালেন, আরেকবার তাকালেন মেঘালয়ের দিকে। মেঘালয় লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। মা বললেন, 'মেঘ, মিশুর বাবা মা তো কালকে আসবেন। তোরা কোথাও ঘুরতে যেতে চাইলে আজকেই ঘুরে আসতে পারিস। বেয়াই বেয়াইনকে কয়েকদিন রেখে দিবো, তখন তোরা তো ঘুরতে যেতে পারবি না।'
মেঘালয় কাছে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, 'আমার লক্ষী আম্মুনিটা। এত ভালো কেন তুমি?'
- 'হইছে। তোরা আজকে একটা লং ড্রাইভ দিয়ে আসতে পারিস। তোদেরকে বাসায় রেখে আমি আর আকাশ বেয়াই বেয়াইন সহ কক্সবাজার ঘুরতে যাবো।'
মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, 'হানিমুন আমাদের, তোমরা কেন কক্সবাজার যাবা?'
- 'হা হা। হানিমুন একবার হয়ে গেছে না? আমরা কক্সবাজার ঘুরে আসার পর তোরা দেশের বাইরে একটা ট্রিপ দিয়ে আসিস। হসপিটালে থেকে থেকে নিজেও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি বাবা।'
- 'আচ্ছা তাহলে ঘুরে একটু সতেজ হয়ে আসো। মিশুর আব্বু আম্মুর সাথে ঘুরতে গেলে চারজনে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে যাবে।'
- 'বন্ধুত্ব এমনিতেও কম নেই। কিন্তু তুই মিশু'র আব্বু আম্মু বলছিস কেন? মিশু কি আমাকে মেঘালয়ের আম্মু বলে ডাকে?'
- 'সরি আম্মু। আমিও ওনাদেরকে আম্মু আব্বু ডাকি।'
- 'সর এখন। আমার কাজ আছে।'
মা বেরিয়ে যাওয়ার সময় মিশু লাফিয়ে লাফিয়ে বললো, 'আম্মু, আমিও কাজ করতে যাবো?'
মা একবার পিছন ফিরে মেঘালয়ের দিকে তাকালেন। তারপর মিশু'র দিকে চেয়ে বললেন, 'না থাক। কেউ আবার মেরে মাটিতে পুঁতে রেখে দিবে।'
বলেই মুখ টিপে হেসে চলে গেলেন তিনি। মেঘালয় ছুটে এসে মিশুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। দুজনে মিলে শুরু করে দিলো মারামারি। অনেক্ষণ মারামারি চালানোর পর ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরেই শুয়ে পড়লো দুজনে। তারপর খিলখিল করে হাসতে লাগলো মিশু। আর মেঘালয় কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে ওর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো।
৮৯!!
রাতে ডিনার করে লং ড্রাইভে বের হলো মিশু মেঘালয়। মেঘালয় গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মিশু পাশে বসে বকবকানি চালিয়ে যাচ্ছে। গোলাপি রঙের থ্রিপিচ পড়ে মিশু'র চেহারায় একটা গোলাপি আভা চলে এসেছে। মেঘালয়কেও অনেক সতেজ আর ফুরফুরে দেখাচ্ছে এখন।
মিশু বললো, 'আমরা এখন কোথায় যাবো?'
- 'সারারাত গাড়ি চালাবো।'
- 'এমা! আপনার শরীর খারাপ লাগবে না?'
- 'সারারাত বাইরে ঘুরবো, খারাপ লাগবে কেন?'
ক্যাসেটে মৃদু ভলিউমে গান ছেড়ে দিলো মেঘালয়। মিশু গানের সাথে সাথে গুণগুণ করে সুর মিলাচ্ছে। মেঘালয় বললো, 'স্বামী স্ত্রী'র মধ্যে সংসারে কার অবদান সবচেয়ে বেশি?'
- 'অবশ্যই স্ত্রী'দের। তারা সংসার সামলায়, শ্বশুর শ্বাশুরি সামলায় আবার বাচ্চাও সামলায়।'
- 'যে মেয়েটা এতকিছু সামলায় তার নিশ্চয় মাথায় অনেক প্যারা। যেহেতু স্বামীরা তার বউকে সামলিয়ে রাখে তারমানে স্বামীটা পরোক্ষভাবে সবই সামলাচ্ছে।'
মিশু ক্ষেপে গিয়ে বললো, 'যুক্তিটা এমন হলো না যে, গরু খাস খায়, মানুষ গরু খায় তারমানে মানুষ ঘাস খায়? আজব যুক্তি শিখেছেন কোথ থেকে শুনি? এভারেজে বলতে গেলে সংসার চালানোর জন্য স্বামী'র অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সংসার টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে, সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন স্ত্রী'র অবদান সবচেয়ে বেশি।'
- 'সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে দুজনের অবদান সমান হওয়ার কথা না?'
মিশু বললো, 'না। সুখী হওয়ার জন্য এখন স্ত্রী'র অবদান বেশি। ধরুন, একজন স্বামী যদি খারাপ হয়, স্ত্রী সবকিছু সহ্য করেও সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু একজন স্ত্রী যদি খারাপ হয়, একজন স্বামী যত দ্রুত সম্ভব সেই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। কারণ সংসারে শান্তির জন্য একজন মেয়ের ভালো হওয়া আবশ্যক।'
মেঘালয় মুচকি হেসে বললো, 'তাহলে আমি বরং খারাপ হয়ে যাই কি বলো? আরেকটা বিয়ে করলে সহ্য করবে না?'
মিশু ক্ষেপে বললো, 'বিয়ের নাম মুখে আনলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো।'
- 'বাপ রে, এত তেজ! ফেলে দিলে তোমাকে বাসায় নিয়ে যাবে কে?'
- 'আমি একাই হেঁটে হেঁটে চলে যাবো। কিন্তু আপনাকে ফেলে গেলে আপনার কি হবে? কে দেখবে শুনি?'
- 'আমি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিলে শত শত মেয়ে লাইন লেগে যাবে। ওরাই এসে নিয়ে যাবে।'
- 'আপনার ফেসবুকের খ্যাতা পুড়ি আমি। ওরা সব অকামের ঢেঁকি। আপনাকে কেউ আমার মত ভালোবাসবে না।'
- 'তোমার থেকে অনেকেই আছে যারা আমাকে বেশি ভালোবাসবে।'
- 'তাহলে তাদেরকে বিয়ে করতেন। কে বলেছিলো আমাকে বিয়ে করতে?'
- 'আমি কি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম নাকি? তোমার বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্ঠি ধরে বেঁধে বিয়ে দিলো না?'
মিশু ক্ষেপে তেড়ে এসে মেঘালয়ের চুল টানতে টানতে বললো, 'মেরেই ফেলবো আপনাকে। সারাক্ষণ আমাকে জ্বালাবে শুধু।'
মেঘালয় রাস্তার পাশে গাড়ি ব্রেক কষে বললো, 'গাড়ি চালানোর সময় কেউ এমন করে?'
- 'এমন তো আপনি শুরু করেছেন। এখন সরি বলুন।'
মেঘালয় হেসে বললো, 'মেঘালয় কাউকে সরি বলে না হুহ। কারো বেশি ঠেকা হলে সে বলুক গে।'
মিশু আরো রেগে বললো, 'সরি বলবেন আপনি।'
- 'নাহ। বেশি সরি শুনতে ইচ্ছে করলে তোমার তন্ময়কে ফোন দেই। সে সারাক্ষণ সরি বলার জন্য চার পায়ে খাড়া।'
এবার ভয়ানক রেগে গেলো মিশু। মেঘালয় ওর রাগ দেখে হো হো করে হেসে উঠলো। মিশু গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বলল, 'নেমেই যাবো গাড়ি থেকে।'
মেঘালয় বিড়বিড় করে বলল, 'নেমে গেলেই তো বাঁচি।'
মিশু রেগে দাঁত কিড়মিড় করে মেঘালয়ের গলা টিপে ধরে বললো, 'এত খারাপ একটা লোক। সারাক্ষণ আমাকে না জ্বালালে হয় না?'
মেঘালয় হাসতে হাসতে বললো, 'আচ্ছা বাবা সরি। এবার ছাড়ো, তারপর হাসিহাসি মুখ করে আমার পাশে বসে থাকো।'
- 'হাসতে হবে কেন?'
- 'কারণ, না হাসলে তোমাকে পুরাই কাউয়ার মত লাগে। এমনিতেই তো কালা, হাসলে একটু ফর্সা ফর্সা লাগে আরকি'
মিশু এবার গাল ফুলিয়ে একেবারে চুপ হয়ে গেলো। এই বুঝি কেঁদে ফেলবে। মেঘালয় হো হো করে হেসে ওকে বুকে টেনে নিয়ে কপালে একটা আলতো চুমু দিয়ে বললো, 'পাগলী, আই লাভ ইউ।'
মিশু মেঘালয়ের শার্ট খামচে ধরে বললো, 'আমার সাথে সবসময় কেমন কেমন করেন কেন?'
- 'দুষ্টুমি করি পাগলি। আইসক্রিম খাবে?'
- 'হ্যা। কোথায় আইসক্রিম?'
মেঘালয় মিশুকে ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললো, 'নিয়ে যাচ্ছি। আজকে সুন্দর চাঁদের আলো ছড়িয়েছে। শহর থেকে বাইরে গিয়ে চাঁদের আলোয় হাঁটবো।'
মিশু উৎফুল্ল হয়ে বললো, 'আচ্ছা।'
মেঘালয় জোরে গাড়ি ছেড়েছে। মিশু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, 'একটা কথা বলবো মেঘমনি?'
- 'হ্যা বলো।'
মিশু লাজুক স্বরে বললো, 'ভালোবাসি।'
মুচকি হাসলো মেঘালয়।