আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ০৪ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


ঘড়িতে সময় সকাল সাতটা, বুধবার। অভ্যস্ততা দরুন আজকেও রান্নাঘরে এসে উপস্থিত হয়েছেন ফরিদা। কারণ আটটার মধ্যে আবার আতাউল খানের নাস্তা করতে হবে। সহন নয়টার মধ্যে অফিসে যায় সেজন্য সহনের বাবা আগেভাগে যান। সহনের বাবার প্রচন্ড গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। তাই রোজা রাখতে পারেন না। আর তাহমিরও হায়েজ দেখা দিয়েছে গতকাল। এজন্যই সকাল সকাল নাস্তা তৈরি করার জন্য এসেছিলেন ফরিদা খান।

" সকাল সকাল রান্নাঘরে তোকে কে আসতে বললো তাহমি?"
ছেলের বউয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন ফরিদা। ডিমের খোসা ছাড়িয়ে পাশের বাটিতে রাখছে তাহমি। সহনের মা-ও কাজে হাত দিলেন। 
" কেউ না। আমি থাকতেও যদি সব কাজ তোমার একা করা লাগে তাহলে আমি আছি কেন? "
" ছেলেকে কি বিয়ে করিয়েছি বাড়িতে কাজের লোক লাগবে সেজন্য? তুই বাড়ির বউ।"
" আর তুমি? তুমিই তো সব করো। নিজের সংসার বলেই তো? তাহলে আমিও তেমন করবো। তাছাড়া আজকে থেকে ক্লাস আছে আমার। দশ রমজান পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে। "
ডিমগুলো রেখে টোস্টার মেশিনের দিকে মনোযোগ দিলো তাহমি। ফরিদা জুস তৈরি করছেন। 
" ইশ! তাহলে তো তোকেও রেডি হতে হবে? বেশি বুঝিস আসলে।"
" দুপুরে তো তুমি একাই রান্না করবে মামুনি। আমি এখন একটু সাহায্য করে দিলাম তাই। খারাপ লাগছে তোমার? উঁহু তোমার সংসারে আমি ভাগ বসাবো না একেবারেই। আমি হলাম যুবরাণী আর তুমি হলে মহারাণী। বুঝলে?"
" হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি। তোর সাথে কথা বলে লাভ নেই। যা মনস্থির করেছিস তাই করে ছাড়বি।"
তাহমি হেসে ডাইনির টেবিলের উপর খাবার রাখতে যায়। এক ঘন্টার মধ্যেই সবকিছু তৈরি করে ফেলে শ্বাশুড়ি ও বৌমা। কাজ শেষ হতেই গোসল করতে ঘরে যায় তাহমি। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে গোসল করে যাওয়া অভ্যাস তার। রুমে ঢুকে সোফার দিকে দৃষ্টিপাত করলো তাহমি। সহন এখনো ঘুমাচ্ছে। তিন দিন পর আজকে সহনও অফিসে যাবে। নীলার সাথে দেখা করতে যাবে? নম্বরের বিষয়টা বুঝতে পারলেই তো সবকিছু বুঝে যাবে। এসব ভাবতে ভাবতেই গোসল সেড়ে আসলো তাহমি। কিন্তু ঘরে আসতেই চমকাল। সহন সটান হয়ে বসে আছে বিছানায়। তাহমিকে দেখেও না দেখার ভান করছে সে। তাহমি ভেজা চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে সহনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সহন আনমনে ঢোক গিলে কিছুটা মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার ভান করে বললো, 
" সকাল সকাল তোর বেহায়াপনা দেখতে হবে? রোজার দিনেও তোর এসব করা লাগে? "
সহনের কথায় তাহমি ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে। যেনো কিছুতেই কিচ্ছু যায় আসে না তার।
" ঢং কম কম করবি সহন। স্বামী স্ত্রী কতটুকু কী করলে রোজা ভঙ্গ হয় আমিও জানি তুই নিজেও জানিস। মেইন কথা আমাকে তোর দেখতে ইচ্ছে করে না। তাই এমন করিস। কিন্তু বিশ্বাস কর এ জীবনে আমি ছাড়া আর কাউকে দেখার সৌভাগ্য তোর আর হবে না। এমনকি নীলাকেও না।"
সহন বিছানা ছেড়ে উঠে তাহমিকে পাশ কাটিয়ে আলমারি থেকে তোয়ালে বের করলো। অফিসে যেতে হবে, সেই সাথে নীলার কাছেও। এই মেয়ের সাথে কথা বলে অহেতুক সময় নষ্ট করার মানেই হয় না। কিন্তু সহন পাশ কাটাতে চাইলেও তাহমি ফের তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সহনের চোখে-মুখে বিস্ময়ের ছিটেফোঁটা। মেয়েটা আবার উলটোপালটা কিছু করবে না তো? সহনের ভাবভঙ্গি দেখে তাহমি জোরে হেসে উঠলো। সহন বিব্রত হলো খানিকটা তাতে।
" লজ্জা পাচ্ছিস নাকি ভয়? কিছুই পাস না। আমি তোর স্ত্রী! তোর নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল অবধি সবকিছুই আমার। এমনকি মাথায় যদি উঁকুন থাকতো সেগুলোও আমরাই হতো। বুঝতে পেরেছিস? নীলার সাথে দেখা কর সমস্যা নেই। মেয়েটাকে বোঝা কিন্তু এই ঠোঁট, এই হাত যেনো তাকে স্পর্শ না করে। "
তাহমি সহনের ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে বলে। সহন এক মুহুর্তের জন্য ঘাবড়ে যায় ঠিক কিন্তু পরমুহূর্তেই গর্জে উঠে। 
" আমার হাত, আমার ঠোঁট আমি যাকে ইচ্ছে ছোঁবো তাতে তোর কী?"
তাহমিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো সহন। তখুনি তাহমি তার পা দিয়ে সহনের পায়ে জোরে পা রাখে। ব্যথায় ‘আহহ’ করে উঠলো সহন। তাহমির পায়ে বাইরে বেরোনোর জন্য হিল জুতা পড়া ছিল। 
" ছুঁয়ে দেখিস আমার কী দেখবি। তোর ঠোঁট ব্লেড দিয়ে কুচিকুচি করে কেটে মরিচগুঁড়া দিয়ে দিবো। সরর এখন আমি বেরোবো। "
সহন ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তাহমি চুল ঠিক করে দ্রুত রেডি হয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে রুম ত্যাগ করলো। ডাইনিং টেবিলে বসে খেয়েদেয়ে একেবারে বের হবে। ঘড়ির কাঁটায় ন'টা বাজার আওয়াজে টনক নড়ল সহনের। বউয়ের ভয়ংকর কথায় বরফের মতো জমে গিয়েছিল ছেলেটা। সত্যি কি তাহমি এমন কিছু করবে? না,না ওসব ওর ভাঁওতাবাজি হুহ্। মনে মনে এসব বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বাথরুমে গেলো সহন।

সকাল সকাল কোনো রকম চোখমুখ ধুয়েই টিউশনি পড়াতে এসেছে তৃষা। বাবার ব্যবসায় লস হওয়ার পর থেকেই দু'ভাই বোনকেই টিউশনির রাস্তা বেছে নিতে হয়েছে। তবে আয়ান সন্ধ্যার দিকে একটা ব্যাচ পড়ায় কেবল। সবাই মাধ্যমিকের স্টুডেন্ট ওরা। দলে মোট আটজন। আয়ানের ওদেরকে ওদেরকে পড়িয়েই ভালো ইনকাম হয়। তবে এখন তৃষার বাবার ব্যাবসায়িক অবস্থা আগের তুলনায় ভালো হওয়াতে তৃষাকে টিউশনি বন্ধ করতে বলছে বাড়ি থেকে। কিন্তু তৃষা বলেকয়ে দু'টো টিউশনি করাবে বলে রাজি করিয়েছে বাবাকে। সবারই উচিত আত্মনিয়োগ হওয়া। হন্তদন্ত হয়ে তৃষাকে রুমে ঢুকতে দেখেই চমকায় ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া ওহি। চুলগুলো খোঁপা করা তৃষার,পরনে কামিজ ও সালোয়ার। হাতে ছোটো একটা ব্যাগ। তবে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। 
" ম্যাম আপনি এভাবে তাড়াহুড়ো করে আসলেন কেনো?"
" দেরি হয়ে যাবে তাই। বসো তুমি। "
পড়ার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে বসতে বসতে বললো তৃষা। ওহি বসলো লেখাপড়ার যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে তৃষার সামনে। ওহিদের বাড়িতে শুধু ওহি আর ওর মা থাকে। ওহির আব্বু একজন আর্মি। বাড়ি থেকে পোস্টিং দূরে হওয়ায় মাসছয়েক হলো সেখানেই থাকে। মাঝে মধ্যে ওহির এক মামা আসে এ বাড়িতে। নাম তার অনিক। খুব সম্ভবত ডাক্তার তিনি। তবে তৃষা সঠিক জানে না। তবে লোকটার উপস্থিতি ভীষণ ভালো লাগে তৃষার। কিন্তু সেসব মোটেও অনিককে বুঝতে দিতে চায় না তৃষা। মেয়ে হয়ে অনুভূতি প্রকাশ করলে যদি নির্লজ্জ ভাবে? কিংবা সরাসরি রিজেক্ট করে? নাহ এসবের কিছুই চায় না তৃষা। পড়তে বসার মিনিট পাঁচেক পরেই ওহি বেশ নড়াচড়া শুরু করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ দেখার পরে তৃষা কিছুটা রেগে বললো, " কী হয়েছে ওহি? এরকম করছো কেনো!"
" ম্যাম মামা বলেছিল আজকে ঘুরতে যাবে। "
" কখন বলেছেন? পড়া বাদ দিয়ে যাবেন বলেছেন উনি?"
ওহি দু'দিকে মাথা নেড়ে বললো,
" তা বলেনি।"
" তাহলে পড়ায় মনোযোগ দাও। উনি সম্ভবত প্রাইভেট শেষ হলে যাওয়ার কথা বলেছেন। "
ওহি আর কিছু বললো না। পড়তে শুরু করলো বিজ্ঞান বইয়ের কিছু লাইন। তৃষা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। ডাইনিং টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খেতে যাবে। ওহির মা খুব ভালো মনের মানুষ। তবে এসে থেকে তাকে না দেখতে পেয়েই সরাসরি নিজেই পানি আনতে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে গিয়ে দেখবে বলে ঠিক করে তৃষা। ওহিকে পড়তে বলে তৃষা গেলো ডাইনিং টেবিলের দিকে। ওহির খেয়াল নেই যে মা একটু বাইরে গিয়েছে এবং সেটা তৃষাকে বলতে বলেছিল তার মা। রান্নাঘর ও ডাইনিং টেবিলের আশেপাশে ওহির মাকে না দেখে দ্রুত ওহির রুমের দিকে পা বাড়ায় তৃষা। রোজার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল তৃষা। প্রায় পানি খেতে গিয়ে ফিরে আসে মেয়েটা। ওহিকে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে ওর মা কোথায়,এই ভেবে এগোচ্ছে তৃষা।
" শুনুন! "
হঠাৎ গম্ভীর পুরুষালি আওয়াজে থমকে দাঁড়াল তৃষা। এই কন্ঠ তার পরিচয়, ডক্টর অনিক চৌধুরীর! 
" জি বলুন। "
তৃষা দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে উত্তর দিলো। অনিক এগোল তৃষার দিকে। 
" আপনি আমাকে পছন্দ করেন? "
হঠাৎ অনিকের এরকম প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছে তৃষা। লোকটার মনে কী চলছে বুঝতে পারছে না মেয়েটা। কিন্তু হুট করেই তৃষা অনুভব করে তার সমস্ত শরীর ঘাম দিচ্ছে! 

" নীলা সবকিছুই তো শুনলে। তুমি কি আমাকে ভুল বুঝে ত্যাগ করবে?"
কফিশপে দুই দিকে দু'জন চেয়ারে বসে আছে নীলা ও সহন। মাঝখানে টেবিলের উপর রাখা কফির কাপ দু'টো। দু'জনেই কফি খেতে খেতে কথা বলেছে এতক্ষণ। 
" আমার কি উচিত তোমার সাথে সম্পর্ক কন্টিনিউ করা? তোমার বউয়ের সাথে কথা হয়েছে আমার। কথায় যা বুঝলাম সে তোমাকে আমৃত্যু ছাড়বে না। তাহলে কীসের জন্য আমি থাকবো? "
সহন নীলাকে শান্ত করার জন্য নিজের হাত নীলার হাতের উপর রাখতে চাইলেই তাহমির বলা কথাগুলো মনে পড়ে যায়। একমুহূর্তের জন্য থমকায় সহন। কিন্তু পরমুহূর্তে সবকিছু ভুলে নীলার হাত চেপে ধরে। 
" এসব পরে ভাববে নীলা। আপাতত আমাকে ছেড়ো না। ওই পাগল ডাকাতের সাথে থাকতে পারবো না আমি। "
নীলা মুচকি হাসে। নিজের দর বাড়াতেই অহেতুক ভয় দেখাল সহনকে।
.
.
.
চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।