আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ০৫ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


"এসব পরে ভাববে নীলা। আপাতত আমাকে ছেড়ো না। ওই পাগল ডাকাতের সাথে থাকতে পারবো না আমি। "
নীলা মুচকি হাসে। নিজের দর বাড়াতেই অহেতুক ভয় দেখাল সহনকে। আসলে বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলেকে হাতছাড়া করার কোনো ইচ্ছে তার নেই। 
" ঠিক আছে। তুমি রোজা ছিলে না?"
" হুম ছিলাম। তোমার সাথে কফি খেতে গিয়ে ভঙ্গ হলো। এতো এতো চিন্তা হচ্ছিল যে ভুলে গেছিলাম তা-ও নয় কিন্তু... "
নীলার নিজেকে নিয়ে ভীষণ গর্ব হল এই মুহুর্তে। ছেলেটা তার কতটা হাতের মুঠোয় তা আর বুঝতে বাকি নেই। সৃষ্টিকর্তার চেয়ে যদি কোনো মানুষের প্রতি বান্দার মনে বেশি টান সৃষ্টি হয় তখন সেই মানুষের সাথে সম্পর্কে নষ্ট হয়। কারণ সৃষ্টিকর্তার চেয়ে কাউকে বেশি ভালোবাসতে নেই। সহন এর সত্যতা এখন না বুঝলেও পরে হাড়েহাড়ে টের পাবে,পাবেই!
" ইট’স ওকে। "
নীলাকে সামলে নিতে পেরে সহন বেশ মানসিক শান্তি লাভ করেছে। দুজনে আরো বেশ কিছুক্ষণ সময় একসাথে সময় কাটিয়ে অফিসে ফেরত চলে যায় সহন।

দ্বিতীয় পিরিয়ডের ঘন্টা দিয়েছে। লাইব্রেরিতে এতক্ষণ ক্লাস না থাকায় বসে ছিলো তাহমি। চতুর্থ শ্রেনীতে বিজ্ঞান পিরিয়ড এখন। তাহমি সেখানেই গেলো ক্লাস করাতে। রোজার দিনে রোজা না রাখার এক সমস্যা হলো কোথাও দাঁড়িয়ে পানি খেতে গেলে অস্বস্তি লাগে। তাহমি তাই বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত একটুও পানি পান করেনি। বিকেলের দিকে বাসায় ফেরে সে। ফ্রেশ হয়েও আর কিছু খায় না তাহমি। ভালো লাগছে না শরীরটা। কোমরে আর পেটে ভীষণ ব্যথা করছে। এই সময়টাতে যে কতটা অসহ্য লাগে সেটা শুধু মেয়েরাই জানে। 

পুরো একটা দিন কেটে গেছে, তৃষা গতকালের ঘটনার রেশ কাটাতে পারেনি। জানালার পাশে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। গতকাল যখন তৃষা ফের ওহির ঘরে ফিরছিলো তখুনি পেছন থেকে ডাক দিয়েছিল অনিক। 
"আপনি আমাকে পছন্দ করেন? "
এই প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেছিল তৃষা। হুট করে গোমড়ামুখো ডাক্তারের কাছে এমন কিছু আশা করেনি তৃষা। মানুষ যা কল্পনাও করে না হরহামেশা সেসব ঘটে। তৃষা যথাসম্ভব নিজেকে সামলে বলে,
" এটা কী ধরনের প্রশ্ন? আমি কি আপনাকে তেমন কিছু বলেছি কখনো? "
তৃষার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করায় অপ্রস্তুত হয়ে গেছে অনিক। 
" না। তবে আমাকে পছন্দ করে থাকলে ভুলে যাবেন। আমরা একজন অপরের জন্য অনুপযোগী। আসুন এবার।"
অনিক নিজের রুমে ঢুকে গেলো। তৃষা কিছুক্ষণ চুপচাপ সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। সারারাত মেয়েটা শুধু ভেবেছে,লোকটা কেনো এমন কথা বললেন? সে কি নিজেকে তৃষার অযোগ্য ভাবলো নাকি নিজেকে তৃষার অযোগ্য? নাহ,কোনো উত্তর তৃষার কাছে নেই। প্রিয় মানুষটা এভাবে সরাসরি ‘না’ বলার ফলে মনটাই খারাপ লাগছে ভীষণ। 

" রোজা ভাঙলি কেন সহন? "
ঘরে ঢুকে হাতঘড়ি, ওয়ালেট রেখে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দিকে এগোচ্ছিল সহন। তখুনি তাহমির প্রশ্নের সম্মুখীন হয় সে। এই মেয়ে কীভাবে জানলো সে রোজা ভেঙে ছিল? 
" আজাইরা কথা বলবি না। তোর কাজ তুই কর।"
তাহমির বুঝতে বাকি নেই সহন নিশ্চিত নীলার কাছেই গিয়েছিল। কারণ রুমে ঢোকা মাত্রই লেডিস পারফিউমের স্মেইল পেয়েছে তাহমি। শার্টে হালকা কফি পড়ার দাগও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু রোজা ঠিক কী কারণে ভাঙলো সেটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। কফি খেতে গিয়ে নাকি নীলার সাথে সহনের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে? নাহ! নিজের মনকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো তাহমি। ততক্ষণে সহন বাথরুমে চলে গেছে। এরমধ্যেই তাহমির যা ভাবার ভেবে ফেলেছে সে। 
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে গিয়ে শুয়েছে। তাহমি ঘুমিয়ে গেছে এরমধ্যেই। শরীর খারাপ থাকায় না খেয়েই শুয়ে ছিল। সহন সোফায় শুয়ে যথারীতি ফোনে নীলার সাথে টেক্সট করছে। বজ্জাত মেয়েটা আজ কিছু না বলেই ঘুমিয়ে গেছে সেসব ভেবে সহনের মন বেশ ফুরফুরে লাগছে। 

নিশুতি রাত! চারদিকে নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে দূর থেকে ভেসে আসছে নেড়রি কুকুরের ডাক। হুট করে সহনের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুমের মধ্যেই কেমন নিজেকে বন্দী লাগছিল। মনে হচ্ছিল কিছু একটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে আছে। চোখ মেলে তাকিয়ে নিজের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই আঁতকে উঠলো সহন। ঘরে বাতি জ্বেলে সামনেই বসে আছে তাহমি। যেনো তার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় ছিলো মেয়েটা।
" তাহমি! কী করেছিস্ এসব! আমার হাত-পা বেঁধে রেখেছিস কেন?"
বেশ নড়াচড়া করেও হাত পায়ের বাঁধন খুলতেই পারছে না সহন। তাহমি আগের মতো চুপচাপ বসে আছে। সহনের অবস্থা দেখে শুধু ঠোঁট টিপে হাসছে। 
" তোকে সাবধান করেছিলাম না? বলেছিলাম নীলাকে তুই স্পর্শ করবি না?"
সহন ভয়ে চুপসে গেলো। সত্যি সত্যি কি তাহমি এবার তার ঠোঁট কেটে দিবে? সহন আমতা আমতা করে বললো,
" কখন স্পর্শ করলাম? "
" মিথ্যা কথা বলিস না আর। তুই কি ওর সাথে ফিজিক্যাল হয়েছিলিস? রোজা ভঙ্গ করার হেতু কী?"
সর্বনাশা কথায় সহনের চিত্ত কেঁপে উঠল। মেয়েটার কি মানসিক সমস্যা আছে? কই! অনেক বছর তো একসাথেই পড়ালেখা করলো তখন তো এরকম কোনো সমস্যা দেখেনি সহন। তবে তাহমি বরাবরই এমন ডাকাত টাইপের। 
" তাহমি! ভাই তুই কি পাগল হলি? আমাকে তোর এমন মনে হয়? শুধু হাত ধরেছিলাম আরকিছুই না।"
কথাটা বলে জিহ্বা কামড়ে ধরে তাহমির মুখশ্রী পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সহন। ভয়ে সত্যিটা বলেই ফেললো। তাহমি আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো সহনের দিকে। দু'হাতের উপর কতগুলো তেলাপোকা ছেড়ে দিলো। সহন তেলাপোকা ভয় পায় ভীষণ। কলেজ লাইফে এই নিয়ে সবাই বেশ ক্ষ্যাপাতে চাইতো সহনকে। সহন চিৎকার করতেও পারছে না৷ এতো রাতে বাবা-মা তার চিৎকার শুনলে নিশ্চিত এ ঘরে চলে আসবে। এসে যদি শোনে নীলার সাথে দেখা করার অপরাধের শাস্তি এসব তাহলে তার বাবা হয়তো তাকে বাড়িছাড়া করবে।
" তাহলে তোর হাতে এবার ওরা সুড়সুড়ি দিক। দেখ পরনারী স্পর্শ করার শাস্তি কেমন। আমি পাশে বসলেও তোর কলিজায় ঠাডা পড়ে। আর নীলা না ফিলার সাথে শখ করে হাত রাখিস!"
" আর কখনো করবো না। প্লিজ এগুলো সরা।"
" ইশ কেউ যদি তোর এই হাল দেখতো কেমন হতো? আজীবন সবাই জেনে এসেছে মেয়েরা ভীতু,তেলাপোকা দেখলে ভয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। কিন্তু সহন খানও যে এতে কাবু হয় সেটা কেউ জানে না।"
সহন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাহমির দিকে। একবার ছাড়া পেলে এই তাহমিকে যে কী করবে সেটা আছে সহনের মনে।
" আমি আর নীলাকে কখনো স্পর্শ করবো না। তবুও ছাড় প্লিজ।"
তাহমি এবার সহনের ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে ফিসফিস করে বলে,
" ঘরে সুন্দরী বউ থাকতে যে পুরুষ বাইরে ছুঁকছুঁক করে তার কথার কোনো দাম নেই। আজকে ছাড়বো কিন্তু যদি আর কোনো দিন আমি টের পেয়ে যাই,তুই ওই মেয়ের সাথে দেখা করেছিস খবর আছে। আমি সিরিয়ালের ন্যাকা নায়িকা না যে স্বামীর প্রাক্তনকে আপু বলে ঘরে ডাকবো।"
" তুই তো সিরিয়ালের মাফিয়া কুইন।"
সহন খুব আস্তে করে বললো কথাটা। তাহমি শুনলো না। সহনের হাতপায়ের বাঁধন আলগা করে দিলো। নিজেকে মুক্ত পেয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল সে। তাহমি কিছু বোঝার আগেই সহন তাকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো। তাহমির দুই হাত এখন সহনের দুই হাতের কব্জায়। 
" এখন? এখন কোথায় যাবি?"
ঠোঁটের কোণে কুটিল হাসি ফুটিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসের সহিত কথাটা বললো সহন। তাহমি হাসলো একবার। তারপর চকিতে সহনের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের দখলে নিলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য। সহন চমকাল,থমকাল। বিষয়টা বুঝতে পারা মাত্রই ঝড়ের বেগে তাহমিকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পাশের চেয়ারে বসলো। তাহমি শুয়ে শুয়েই মিটমিট করে হাসছে।
" কী ভেবেছিলি? লজ্জায় মরে যাবো? তুই আমার স্বামী। তোর কাছে আবার লজ্জা কীসের? "
" থাম ভাই। তুই মেয়েই না! কিঞ্চিৎ লজ্জা নেই? ভাবলাম তুই ভয় পাবি কিন্তু....."
" মেয়ে কি-না প্রমাণ দিবো?"
তাহমি বিছানা থেকে নেমে একপা একপা করে সহনের দিকে এগোতে লাগলো। সহন ততক্ষণ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। 
" অসভ্য একটা। সরর এখান থেকে। তোকে ছোঁয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। "
" তা থাকবে কেন? ছোঁয়াছুঁয়ি তো সব নীলার সাথে। "
.
.
.
চলবে............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।