আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ০৮ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


সহনের দুই হাত তাহমির পিঠে,কখনো- সখনো আবার কোমরে। মোটকথা কিছুতেই আজ তাহমিকে ছাড়বে না সহন। পানিতে ভিজিয়ে একেবারে জ্বর উঠিয়ে দিবে। কিন্তু বোকা সহন এটা ভাবছে না তাহমিকে ধরে রাখতে গেলে তো তার নিজেরও ঠান্ডা লাগবে! 
" তাহলে ধরে থাক। দেখি কতক্ষণ থাকতে পারিস এভাবে। "
হঠাৎ তাহমির এতটা আত্মবিশ্বাসী মনোভাব দেখে চমকাল সহন। 
" দেখতেই থাক শয়তানী। "
সহন আর কিছু বললো না। শুধু তাকিয়ে রইলো লেডি মাফিয়ার দিকে। তাহমির ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি। তাহমি একহাতে সহনের ঘাড় চেপে ধরে আর অন্য হাত কপালে ছুঁইয়ে স্থির করে রেখেছে। তারপর ধীরে ধীরে সেই আঙুলের স্পর্শ কপাল থেকে নাকের ডগায়, সেখান থেকে সোজা ঠোঁটের ওপর এসে থামলো। সহন ততক্ষণে একটু লাগামছাড়া হয়ে গেছে। ভিজে একাকার অবস্থা দু'জনেরই। কালো শাড়ি ভিজে ফর্সা চামড়ার সাথে লেপ্টে আছে। সহন আঁড়চোখে তাহমির বক্ষ বিভাজনের খাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহমি বিষয়টা বুঝতে পেরে শাড়ি দিয়ে আরেকটু আড়াল করলো নিজের শরীর। সেটা দেখে সহন থতমত খেয়ে গেছে। এরমধ্যে হাতের রাশ আলগা গেছে তার। তাহমি চোখ টিপ্পনী দিয়ে সহনের পায়ের উপর পা রাখে। সহন ততক্ষণে তাহমিকে ছেড়ে দিয়েছে পুরোপুরি। তাহমি একহাতে সহনের ঘাড় চেপে ধরে অন্য হাত কাঁধে রেখেছে। সহনের নিঃশ্বাসের গতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরী বউ আশকারা দিলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা দুষ্কর মনে হচ্ছে। তাহমি ধীরে ধীরে সহনের অধরে নিজের ওষ্ঠ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আবেশে সহনের চাহনিতে মাদকতা প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে তাহমি ঠোঁটের সাথে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেওয়ার বদলে সহনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
" দেখেছিস ধরে রাখতে পারলি না? এতো নিয়ন্ত্রণহীন হলে তো যে কেউ... "
তাহমি ঝটকায় সহনকে ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। সহন তখনও সবকিছু সামলে উঠতে পারেনি। কয়েক মিনিট ওভাবেই ওয়াশরুমে ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর এতক্ষণের ঘটনা দ্বিতীয় বার স্মরণ করতেই হকচকিয়ে উঠলো সহন। ছিঃ কী লজ্জা! কী লজ্জা! শত্রুর সাথে রোমান্স করতে যাচ্ছিল সে? উফ! তাহমি ঘাড়ে, কাঁধে ছুঁয়ে দিয়েছে ভাবতেই আশেপাশে তাকিয়ে সাবান হাতে নিলো সহন। তারপর আচ্ছামত ঘষতে শুরু করলো নিজের শরীর। নিজেকে শত্রুর স্পর্শ মুক্ত করা চাই! 

আজ তিন দিন পর তৃষা এলো ওহিকে পড়াতে। দিনা ও ওহি দু'জনেই তৃষাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়েছে। ওহির রুমে এসে সবে বসলো তৃষা। এরমধ্যেই ওহি নিজে থেকেই পড়তে বসেছে। অবাক করা বিষয় হলো কোনো প্রকার প্রশ্ন করেনি ওহি। এমনিতে মেয়েটার প্রচুর খেয়াল। কিন্তু আজকে কেনো প্রাইভেটে না আসার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলো না সে বিষয় ভাবুক হয়ে গেছে তৃষা। 
" আজকে সন্ধ্যায় তোমার আমাদের বাসায় ইফতারি করতে আসতে হবে। কোনো না শুনবো না কিন্তু তৃষা।"
তৃষার ভাবনার বারোটা বাজিয়ে ঘরে ওহির মা দিনার প্রবেশ ঘটলো। চমকাল তৃষা কিছুটা। আজ হঠাৎ সন্ধ্যায় কেনো দাওয়াত? এমনিতেও দিনা ভালো মনের মানুষ কিন্তু রাত-বিরেতে কখনো দাওয়াত করেনি। অবশ্য গত রমজানে তো এ বাড়িতে পড়াতে আসতো না তৃষা।
" আপু রাতে তো বাসা থেকে বেরোনোর অনুমতি নেই। সন্ধ্যায় আসলে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে তো!"
তৃষাদের বাসা থেকে ওহিদের বাসায় আসতে পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিনিট লাগে বাসে। যদিও বাসা থেকে তেমন জোরাজোরি করবে না কিন্তু তৃষা নিজেই চাইছে না রাতে চলাচল করতে। তৃষার কথায় দিনা তেমন একটা পাত্তা দিলো না। ভাইয়ের কথামতো কাজ করছে সে। 
" সেসব আমি বুঝবো। তুমি বরং তোমার মা কিংবা ভাইয়ের সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দিও বাড়ি গিয়ে। যাওয়ার সময় আমাদের বাড়ির গাড়ি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।"
তৃষা জানে ওহিদের নিজস্ব গাড়ি নেই। তবে ওর মামার আছে। কিন্তু আসার সময় তো বাড়ির মধ্যে সেই গাড়ি ছিল না। আর থাকার কথাও নয়। অনিক চৌধুরীর তো এখানে থাকার কথা নয়। সে যাইহোক গাড়ি নেই কথাটা বলে দিনাকে বিব্রত করতে চাচ্ছে না তৃষা। যখন বলেছে পৌঁছে দিয়ে আসবে তাহলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা আছে। 
" ঠিক আছে। আমি বাসায় গিয়ে আম্মুকে কথা বলতে বলবো। "
" যাক তাহলে আজ আমরা একসাথে ইফতার করছি।"
ওহি পড়া বাদ দিয়ে এতক্ষণ দুজনের কথোপকথন শুনছিলো। এ পর্যায়ে সে দুঃখী মুখ করে বলে উঠলো, 
" মা আজকে আমি রোজা রাখতে পারিনি বলে কি তোমাদের সাথে ইফতার করতে পারবো না? "
ওহির প্রশ্নে দিনা ও তৃষা মুচকি হাসলো। বেচারা ওহি মলিন মুখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে । 
" অবশ্যই পারবি। এখন মন দিয়ে পড়াশোনা কর। আচ্ছা আমি এলাম। তুমি পড়াও।"
শেষের কথাগুলো তৃষাকে উদ্দেশ্য করে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো দিনা। পড়াশোনার সময় দিনা এ ঘরে খুব কম আসে।

আসরের আজানের ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত হচ্ছে। সামনেই মসজিদ হয়তো। সেদিক থেকে শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে। পার্কের বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে সহন ও নীলা। আজকে সহন রোজা বলে আর কফিশপে বসেনি। নীলা অবশ্য বলেছিল কিন্তু সহন কোনো প্রকার বুঝিয়ে-সুঝিয়ে না করে দিছে। 
" আমার আর ভালো লাগে না সহন। তুমি সব সময় তোমার বউয়ের সাথে থাকো। ওর সাথে নিশ্চয়ই ইন্টিমেট হও? খুব আদর করো?"
সহন আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন নীলার এ ধরনের কথা শুনে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃদুস্বরে সহন বলে,
" আস্তে কথা বলো নীলা। আর এসব কথা কেউ বলে এভাবে? তাহমির সাথে আমার কোনো কোনো সম্পর্ক নেই। আর হবেও না। "
নীলা খিলখিল করে হেসে উঠে। দুনিয়ার কোনো লাজলজ্জা যেন ওর মধ্যে নেই! তুলনামূলক আস্তে বলে,
" তা অবশ্য ঠিক। তিন-চার বছরেও আমার সাথেই ইন্টিমেট হতে পারলে না তারপর তো অল্প দিনে ওর সাথে! "
নীলার এ ধরনের কথাবার্তা সহনের বিরক্তিকর লাগছে। কথার মধ্যে কোথাও যেনো সহনকে অক্ষম বলে অপমান করলো বলে মনে হলো সহনের। সব মেয়েরা আসলে এক রকম না। কেউ প্রেমিকের স্পর্শ এড়িয়ে চলে আবার কেউ স্বেচ্ছায় উজার করে দিতে চায়। নীলা হলো তেমনই মেয়ে। কতবার যে সহনের সাথে ঘনিষ্ট হতে চেয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। নেহাৎ সহন অতটা আধুনিক নয় বলেই নিজেকে যথাসম্ভব সামলে রেখেছে। 
" নীলা ফিজিক্যাল রিলেশনশিপ শুধু বিয়ের পরের জন্য। ভালোবাসলেই এসব করতে হয়? আমি কী তোমাকে না ছুঁয়ে কম ভালোবেসেছি এত বছর? এই একটা জিনিস বাদে কোনটার অভাব রেখেছি বলো? এটাও পূর্ণ করবো শীঘ্রই, বিয়ে হোক তারপর। "
" তোর মতো সেকেলে মন মানসিকতার ছেলেকে বিয়ে করার জন্য আমি বসে নেই। "
মনে মনে কথাটা বলে হাসলো নীলা। সহন ভাবল তার কথায় ভালো লেগেছে নীলার তাই ঠোঁটের কোণে হাসি। 
" এজন্যই তোমাকে এতো ভালোবাসি সহন। আচ্ছা টাকাগুলো দাও। সন্ধ্যা হতে বাকি নেই বেশি।"
সহন পকেট থেকে দশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল বের করে নীলার হাতে দেয়। নীলাকে দেওয়ার জন্যই নগদ টাকা সাথে নিয়ে এসেছে। নয়তো কার্ডে সব টাকা থাকে সহনের।
" এই নাও। "
" আচ্ছা আমি আসি এখন। আর হ্যাঁ তোমার বউয়ের থেকে দূর থেকো।"
নীলা নিজে থেকেই সহনের ললাটে চুম্বন আঁকে। সহন জবাবে হাতের তালুতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো। নীলার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলো সহন। হঠাৎ করে তাহমির কথা স্মরণ করতেই আঁতকে উঠলো সে। যদি তাহমি কোনো প্রকার জেনে যায় নীলাকে সে এভাবে চুম্বন দিলো তাহলে! না,না এসব আর করবে না। যা করার তাহমিকে ডিভোর্স দিয়ে নীলাকে বিয়ে করার পর করবে। সহন নিজে থেকে এসব করতো না। কিন্তু নীলা আনরোমান্টিক বলে রাগ করে বলেই এতটুকু আদর করা। সহন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ছুঁয়ে দেওয়া মানেই ভালোবাসা নয়,যেটা কেবল স্পর্শে বিরাজমান সেটা প্রেম। প্রেম আর ভালোবাসা এক নয়। এঁরা একে অপরের সমানুপাতিক বটে তবে অভিন্ন। 
.
.
.
চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।