আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ১০ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


তাহমি সহনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয় সহনের ঠোঁটে। চোখগুলো সহনের কোটর ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম! কোথায় স্বামী কিংবা প্রেমিক তার শখের নারীর সামনে এমন করে কিস করে আর এখানে তো তার নিজস্ব নারী নিজে থেকেই তাকে পিষিয়া ফেলিতেছে! সহন দু'হাত দিয়ে তাহমিকে সরানোর চেষ্টা করলো একবার। কিন্তু তাহমি যেন বন্য প্রেমে মত্ত! স্পর্শে আদুরে নমনীয়তার বদলে আছে রাগ ও জেদের বহিঃপ্রকাশ। শীঘ্রই সহনও নিজের সমস্ত জেদ ভুলে তাহমির সাথে তালে তাল মিলিয়ে ওষ্ট পিষ্টকরণে অংশগ্রহণ করলো। এই মেয়েটা জোর করে কাছে এলেও কেনো জানি সহন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিছুক্ষণ পরে তাহমি নিজেই সহনকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো বিছানায়। প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে সহনের দিকে দৃষ্টিপাত করলো তাহমি। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে সহন। চোখেমুখে কামুকতা স্পর্শ! এই মুহুর্তে এসে এভাবে ছেড়ে দেওয়াটা মোটেও ভালো লাগলো না সহনের। তাহমি সেটা বুঝলো বলেই অধর কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো তার।
" পরনারীর সংস্পর্শে আর যাবি না। তোর বউ তোর জন্য যথেষ্ট। "
সহন নিজেও শোয়া থেকে উঠে বসেছে। খারাপ লাগছে ভীষণ। মনে হচ্ছে নীলাকে ঠকাচ্ছে সে! এত বছরেও নীলা চাইলেও সহন কখনো এতটা ঘনিষ্ঠ হয়নি তার সাথে। অথচ কেনলমাত্র তাহমি জংলীপনা করলো বলেই সব মেনে নিতে হলো? সে তো চাইলেই তাহমিকে আটকে দিতে পারতো। পুরুষ মানুষ না চাইলে কোনো নারী তাকে এভাবে স্পর্শ করতে পারে না। তাহলে কি তাহমি তার স্ত্রী বলেই অবচেতন মন এসব মেনে চুপচাপ আছে? সহনের নীরবতা তাহমি একেবারে খেয়াল করে না। বিছানা থেকে নেমে সোজা ওয়াশরুমের দিকে এগোলো সে। স্বামীর সাথে অন্য কারো এতটা ঘনিষ্ঠতা সহ্য করতে পারে না কোনো স্ত্রী। তাহমিও পারছে না। শক্ত খোলসের মধ্যে নরম তাহমিকে সহনের সামনে প্রকাশ করতে চায় না বলেই নিজেকে আড়াল করলো সে। এদিকে সহন বসে বসে এতগুলো প্রশ্নের উত্তর হাতড়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন এত্তগুলা কিন্তু উত্তর অজানা।

বারান্দা জুড়ে পিনপতন নীরবতা। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে দু'জন নরনারী। দুজনের দৃষ্টি আকাশপানে। রাতের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেনি এখনও শহরকে। ঘড়ির কাঁটায় কেবল সাড়ে সাতটা বেজেছে। ইফতারের শেষে অনিক চলে গেছিলো ডাইনিং রুম থেকে। তখনই দিনা জানায় তৃষাকে,অনিক তাকে কিছু বলতে চায়। দোনোমোনো করতে করতে অনিকের ঘরে এসেছিল মেয়েটা। ঘরে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখল গম্ভীর পুরুষটি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। সেদিন স্পষ্ট দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ওসব বলে এখন আবার কী বলতে চাচ্ছে লোকটা? সময় যেনো থমকে গেছে মনে হচ্ছে তৃষার। কয়েকশো কোটি বছর ধরে যেনো এভাবেই দু'জন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে। নিজে থেকে কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারছে না মেয়েটা।
" সেদিন ওভাবে বলার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। জীবনের অনেকগুলো বছর পেরিয়ে এসেছি তো,কার মনে আমার জন্য কীরকম অনুভূতি বেশ ভালো করে বুঝতে পারি এখন। "
তৃষা চুপ করে রইলো। দু'জন দু'জনার দিকে তাকিয়ে আছে ঠিকই। অনিক ফের দৃষ্টি বাইরে ছড়িয়ে দিলো। কিন্তু তৃষা অনিকের মুখশ্রীর দিকে নিবদ্ধ। আবারও কথা বলতে শুরু করলো ডাক্তার সাহেব। 
" আপনি আমার জীবনে এলে আমি ধন্য হতাম কিন্তু আমি আপনার যোগ্য নই। আমার একটা অতীত আছে। "
তৃষা অবাক হলো অনিকের কথায়। তারমানে অনিকও তাকে পছন্দ করেন? তৃষা চনমনে হয়ে উঠলো। 
" তার মানে আপনাকে পাওয়া এখন আমার হাতে? "
" হ্যাঁ। আপনি চাইলে আমি আপনার হতে বাধ্য। তবে.. "
" তবে কিচ্ছু নেই। আপনার অতীত সম্পর্কে আমার জানার কোনো আগ্রহ কিংবা ইচ্ছে কিছু নেই। "
অনিক বিস্ময় তাকাল তৃষার দিকে। তৃসার ঠোঁটের কোণে মিহি হাসির রেখা। 
" আবেগ দিয়ে নয় বিবেক দিয়ে ভাবুন তৃষা। আপনার বয়স কম।"
" আমার বয়স কম? আপনার তুলনায় কম তবে বোঝার মতো বয়স আমার হয়েছে। "
" কিন্তু আপনার পরিবার? তারা আমার অতীত সম্পর্কে অবগত হলে কি আমার সাথে আপনার বিয়ে দিতে সম্মতি দিবেন!"
" আমার পরিবার ঠিক আমার মতোই। "
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো অনিক। কিছুটা চিন্তা মুক্ত হয়েছে। 
" তবুও আপনার অন্তত জানা উচিত। আমি ডিভোর্সি! "
" তাতে কী হয়েছে? বর্তমান শুধু আমাকে দিলেই হবে। তবে মনের মধ্যে অন্য একজন থাকলে এগোবেন না।"
" আপাতত আপনি ছাড়া মনের মাঝে আর কারোরই স্থান নেই এবং থাকবেনা। "
তৃষার ভীষণ সুখ সুখ লাগছে। ইশ মানুষটা কী সুন্দর করে কথাটা বললো!
" বেশ। তাহলেই হবে। আর আমি মনে করি এসব কথা আমার পরিবারের কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই। যেখানে আমি সংসার করবো সেখানে আমার ইচ্ছেই চূড়ান্ত। তাছাড়া এই সমাজে ছেলেদের ডিভোর্স নিয়ে কেউ এতটা মাথা ঘামায় না ডাক্তার সাহেব। "
" ডাক্তার সাহেব! "
ফিসফিস করে বাক্যটি দু'বার আওড়াল অনিক। মেয়েটার সবকিছুই কেমন ভালো লাগে। 
" কিছু বললেন? "
" উমম না তো।"
তৃষা মুচকি হাসলো। অনিক মাথা চুলকাচ্ছে। 
" এতো লজ্জা? "
" লজ্জা? সেটা বুঝবেন বিয়ের পর। আপাতত আপনার গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইলাম। "
তৃষা লজ্জা পেয়ে স্থান ত্যাগ করলো। সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করলো অনিক। আবেগের বয়সে শখ করে ভালোবেসে বিয়ে করে ঠকে গিয়েছিল মানুষটা। এতো বছর পরে যে তার জীবনে আবারও ভালোবাসা ধরা দিবে ভাবেনি কখনো সে।

সামনে ঈদ। সেই জন্য নীলা সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবারও সহনের কাছে শপিং করার জন্য টাকা চেয়েছে। তাহমির গোয়েন্দাগিরির জন্য তারপর আর নীলার সাথে দেখা করেনি সহন। তবে তাহমির জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে গেছে। কীভাবে তাহমির থেকে মুক্তি পাবে সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না বেচারার। তাছাড়া বাব-মা’র বিষয়ও আছে। উনারা দু'জন তো তাহমি বলতে এক ঢোক জল বেশি খান। আজকে বিকেলে তাহমির সাথে বেরোতে হবে। ঈদ উপলক্ষে এখুনি কেনাকাটা করতে বলেছেন আতাউল খান। বাবার নির্দেশমাফিক তাই বেলা সাড়ে তিনটায় বাসা থেকে বের হয়েছে দু'জন। অফ হোয়াইট কালারের শার্ট পরেছে সহন,সাথে কালো জিন্স। তাহমি হিজাব পরেছে শাড়ির ওপর,কালো রঙের শাড়ির সাথে কালো হিজাব। 
" শোন আমি বেশি হাঁটাহাঁটি করতে পারবো না। যা কেনার একটা মল থেকেই কিনিস।"
সহন গাড়ি থেকে নেমেই ফরমান জাড়ি করলো। তাহমি চিরাচরিত ভাবেই ফোঁস করে উঠলো। দ্রুত পা বাড়িয়ে শপিং মলের দিকে হাঁটতে লাগলো।
" আমি যেখানে যেখানে যাবো তুইও সেখানে সেখানে যাবি। রোজা মনে হয় ও একলা রাখে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু বললেই ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে। "
সহন চুপ করে গেলো। এই মেয়ের সাথে ঝগড়া করার মতো এনার্জি কিংবা ইচ্ছে কোনোটাই নেই তার। সিড়ি দিয়ে শপিং মলে ঢোকার সময় এক যুবতীর সাথে ধাক্কা লাগলো সহনের। ফলে উনার ব্যাগটা ফ্লোরে পড়ে যাওয়ায় ভদ্রতার খাতিরে সহন ব্যাগটা তুলে দিয়ে সরি বলে আবারও হাঁটা শুরু করলো। তাহমির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখলো রণচণ্ডী রূপে তার দিকে তাকিয়ে আছে সে। বিষটা বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো তার। সহন পেছন ফিরে তাকিয়ে সেই যুবতীকে ডেকে বললো,
" এক্সকিউজ মি!"
মেয়েটা দাঁড়িয়ে গেলো। সহন এগিয়ে গেলো সেদিকে। তাহমি দাঁড়িয়ে আছে রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মেয়েটা কিছু বোঝার আগেই সহন তার হাত থেকে ব্যাগটা আবারও ফ্লোরে ফেলে দিয়ে দ্রুত তাহমির কাছে ফিরে এলো। এতক্ষণে মুখে হাসি ফুটেছে তাহমির। অন্যদিকে যুবতী মেয়েটি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সহনের চলে যাওয়ার পথের দিকে। তাহমি শপিং মলের ভেতরে ঢুকেছে সাথে সহনও।
" শান্তি হয়েছে তোর? আল্লাহ জানে তোর হাত থেকে কীভাবে রক্ষা পাবো আমি। "
তাহমি কিছু বললো না শুধু হাসলো। সেই হাসিতে সহনের গায়ে আরো জ্বালা ধরে গেলো। নেহাৎ তাহমির পাগলামি ভয় পায় বলেই এমন কান্ড করলো সে। কে জানে রেগে গিয়ে যদি এখানে বসেই লিপ কিস করে বসতো! এরকম একটা বউ থাকলে তার আর শত্রুর দরকার হয় না। সহন রাগে,দুঃখে শপিং মলের দেয়ালের সাথে কিছুক্ষণ পরপর নিজের মাথা ঠুকছে আর হাঁটছে। আশেপাশের লোকজন সেগুলো দেখে ভীষণ মজা পাচ্ছে সাথে তাহমি নিজেও।
.
.
.
চলবে.....................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।