আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ১১ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


স্ত্রী'র অত্যাচারে আজকাল আর বাসায় ফেরে না সহন। প্রায় বন্ধুদের বাসায় থাকে। নীলা অবশ্য নিজের ফ্ল্যাটেও থাকতে বলে কিন্তু সহন সেরকম ছেলে নয়। মাস ছয়েক কেটে গেছে এভাবে। তাহমি পাগলামি করে খুব। মাঝে মধ্যে জোর করে কাছে আসে। কিন্তু প্রথম প্রথম সহন স্বায় দিলেও পরে বিরক্ত লাগতে শুরু করে। শুধু কি কাছে আসা? এইতো কয়েকদিন আগের কথা! সহনের শার্টে কোনোভাবে লিপস্টিপের দাগ দেখতে পেয়েছিল। হয়েছিল কি,সহন রাতে বাসায় ফিরেছে।নীলাকে কিছু টাকা দিয়ে সারাদিন ঘুরেছিল একসাথে। হুট করে নীলা কেমন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল বলে বুকের সাথে ধরতে হয়েছিল তাকে। হয়তো তখুনি লিপস্টিকের দাগটা লেগেছিল। কিন্তু তাহমি এতকিছু শোনার অপেক্ষা করেনি। দাগ দেখা মাত্রই সহনের বুকে কামড়ে দিয়েছিল তাহমি। রাগে,দুঃখে হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছিল মেয়েটার। কামড়ের গভীরতা এতটা ছিলো যে একটা দাঁত বসে গেছে এমন। সহন যতক্ষনে ব্যথার তীব্রতা অনুভব করছে ততক্ষণে তাহমি নিজেই ধাক্কা দিয়ে সহনকে সরিয়ে দিয়েছিল নিজের কাছ থেকে। এতকিছুর পরেও কি এমন মেয়ের সাথে ঘরে থাকা নিরাপদ? হয়তো হুট করে মে*রে দিলো তাকে! এই ভয়ে চুপসে গেছে সহন। মায়ের কাছে বলেছে তাহমিকে যেনো মানসিক ডাক্তার দেখায় দ্রুত। কিন্তু সহনের মা উল্টো বললেন, 
" ডাক্তার তাহমির না,তোর লাগবে। সময় থাকতে সংসারে মন দে।"
মুখ ঝামটি দিয়ে চলে গেলেন ফরিদা খান। বেচারা সহন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তারপর!

তপ্ত দুপুরে বাসে করে দাঁড়িয়ে আছে সহন।সপ্তাহখানেক হবে নীলার সাথে দেখা হয়নি সহনের। এরমধ্যে নীলা তেমন কল করেনি। সেদিন এক বন্ধু বললো,নীলা না-কি একসাথে অনেকগুলো রিলেশনশিপ কন্টিনিউ করে। কথাটি শোনা মাত্র সহন রেগে যায় ঠিক কিন্তু বন্ধুকে কিছু বলে না। নীলার পরিবর্তন সে নিজেও টের পায়। বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে দু'দিন আগে। ফোনেও চার্জ নেই। নিজেদের গাড়ি নিয়ে আসেনি বাড়ি ছাড়ার আগে। বাসায় যাচ্ছে আজ। সন্ধ্যায় না বলেই নীলার ফ্ল্যাটে যাবে বলে ঠিক করেছে সহন। মিনিট পাঁচেক পরে বাস থামলো। ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপলো সহন। দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে শুয়েছিল। সহনের বাড়ি ছাড়ায় তার বাবা-মা মোটেও তাহমির উপর রাগান্বিত নন। বরং উনাদের মতো শিক্ষা হওয়া দরকার বলে মনে করেন ছেলের। 
" তুই এসেছিস! আয়.."
তাহমি এসে দরজা খুলে দিলো। সহন কিছু বললো না। পাশ কাটিয়ে ঘরে চলে গেলো। তাহমি দরজা আঁটকে নিজেও হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে গেলো। ততক্ষণে সহন গোসল করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকেছে। বিছানার একপাশে খাবার রেখে সহন আসার অপেক্ষায় বসে তাহমি। মানুষটাকে কখন কীভাবে এতটা ভালোবেসে ফেলেছে জানে না তাহমি। শুধু জানে বাড়িতে না থাকলে মনটা অস্থির হয়ে যায়। কোনো কিছুতেই শান্তি মিলে না। কিন্তু এভাবে জোরাজোরি করবে কতদিন? দিনশেষে জোর করে কাউকে পাওয়া যায় না। তাহমি পাচ্ছে না সহনকে। 
" আমি খাবো না। সরর একটু ঘুমাবো।"
তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে ফোন চার্জে লাগিয়ে দিল সহন। তাহমি মুচকি হেসে উঠে গিয়ে সহনের সামনাসামনি দাঁড়াল। 
" ক্ষিদে নেই? "
" না। ঠোঁট কামড়ে দিবি? না-কি বুক? যা ইচ্ছে কর। তারপর ঘুমাই।"
সহনের ভাবলেশহীন কথায় তাহমির কিছুটা খারাপ লাগলেও পরক্ষণেই সেই খারাপ লাগা উবে যায়। চঞ্চল মেয়েদেরকে বেশিক্ষণ মন খারাপের অসুখ আক্রান্ত করে রাখতে পারে না। তাহমি পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার স্বামীর দিকে। চুলগুলো থেকে এখনও টুপ টুপ পানি ঝরছে। শুধু লুঙ্গি পরনে তার। লোমশ বুকের দিকে তাকিয়ে কেঁপে ওঠে তাহমি। আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় বুকের মাঝ বরাবর। সহনও কেঁপে উঠল। কারণ এই স্পর্শে কোনো আক্রোশ ছিল না, ছিলো ভালোবাসা।
" খাবি নাকি?"
তাহমি লুঙ্গির দিকে তাকিয়ে দুষ্ট ইশারা করে ঠোঁট টিপে হাসছে। সহন চমকাল। লুঙ্গি শক্ত করে ধরে বললো, " আর বেইজ্জতি করিস না। কিন্তু অল্প খাবো।"
সহন বিছানায় বসে সেন্ডো গেঞ্জি গায়ে দিলো। তাহমি ততক্ষণে হাত ধুয়ে এসেছে। সহন হাত দিয়ে ভাত ছুঁতে যাবে এমন সময় তাহমি চেঁচিয়ে বললো, 
" থাম! আজকে আমি খাইয়ে দিবো।"
" বলির পাঠা আমি? আগেভাগে যত্ন নিচ্ছিস?"
তাহমি হেসে ভাত মাখল ডাল দিয়ে। পাশে ইলিশ মাছ ভাজা। মাছ নিয়ে ভাত এগিয়ে দিলো সহনের দিকে। সহন মুখে নিলো ভাত। মনটা কেমন করে উঠলো। মায়ের পরে এরকম আদর করে তাকে আর কেউ খাইয়ে দেয়নি কখনো। আজ প্রথম তাহমি কোনো প্রকার রাগ দেখাল না তার সাথে। অবশ্য দেখানোর কারণ নেই। নীলার কাছেই তো যায়নি এতদিন। 
সময়গুলো ভালো কাটছে তৃষার। প্রতি সপ্তাহে দু'দিন অনিকের সাথে দেখা হয়। দিনা বেশ খুশি। নিজের ভাইয়ের অগোছালো জীবনে আবারও কারো পদচারণা ঘটেছে বলে। মানুষটাকে দূর থেকে যতটা শান্ত,অল্পভাষী মনে হতো কাছাকাছি যাওয়ার পরে তৃষা তাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছে। অনিক আসলে কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না। গ্রাজুয়েশন শেষ করতে যেহেতু অনেকটা সময় বাকি তাই তৃষা সিন্ধান্ত নিয়েছে ভাইকে অনিকের বিষয় জানাবে। আয়ান নিশ্চয়ই তার বোনের পছন্দের মূল্যায়ন করবে!
 সন্ধ্যা নেমেছে। পাখিরা তাদের আপন নীড়ে ফিরতে ব্যস্ত। পড়তে বসেছে আয়ান। সামনে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা। মাস্টার্স শেষ করে একটা চাকরি করতে হবে। যদিও ছোটখাটো একটা কাজের খোঁজ করে যাচ্ছে সে। 
" ভাইয়া আসবো?"
বোনের কন্ঠে বইয়ের দিক থেকে নজর সরিয়ে দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। আজ হঠাৎ অনুমতি চাওয়ায় অবাক হলো সে।
" তৃষা তোর শরীর ঠিক আছে? "
বোনের কাছে এগিয়ে গিয়ে গালে,কপালে হাত ছুঁইয়ে দেখছে। 
" হ্যাঁ। জ্বর হয়নি তো।"
" নাহ, শরীর তো ভালো। তবে এরকম অনুমতি চাইলি কেন! এমনিতে তো উড়ে এসে চিলের মতো ছোঁ মেরে আমার জিনিসপত্র নিয়ে যাস।"
তৃষা আর আয়ান গিয়ে মুখোমুখি চেয়ারে বসলো। ভাইয়ের বিস্ময় দেখে তৃষা ভেংচি কেটে বললো,
" ভাইয়া তুমি সব সময় এমন ভাবো কেনো? হুহ্! "
" সিরিয়াস কিছু বলবি? কী হয়েছে? কেবল প্রপোজ করেছে? "
তৃষা নড়েচড়ে উঠলো। চোখ পিট পিট করছে। ঘন ঘন ঢোক গিললো বারকয়েক। আয়ান বেশ বুঝতে পারছে নিশ্চয়ই কোনো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। 
" ভাইয়া!"
" হ্যাঁ বল।"
" আমি আমি না মানে আমি একজনকে ভালোবাসি! "
" কাকে?"
" ওহির মামা।"
" ডাক্তার অনিক চৌধুরী?"
" হুম! "

কলিংবেলের শব্দে সোফা হতে উঠে দাঁড়ালো একজন যুবক। সোফায় বসে আছে নীলাসহ আরো দু'জন নরনারী। সামনের টি-টেবিলে হার্ড ড্রিংকস ও কিছু চিপস এবং আইস রাখা। যুবক দরজা খুলে দিতেই সহন কিছুটা অবাক হলো। কারণ এই ফ্ল্যাটে শুধু নীলা ও ওর বান্ধবী থাকে। হয়তো কোনো বন্ধু ভেবে সহন স্বাভাবিকভাবে শুধালো, " নীলা আছে বাসায়? "
" হু। নীলা বেবি দেখো তো কে এসেছে "
লোকটার কথায় নীলা হেলেদুলে এলো দরজার দিকে। ততক্ষণে সহনের সমস্ত শরীর রাগে থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। নীলা সহনকে দেখতেই বড়সড় একটা শক খেলো বটে। এতদিন কথা হয়নি,এরমধ্যে না জানিয়ে সোজা বাসায় আসবে বুঝতে পারেনি সে। 
" সহন! সহন ভেতরে এসো। ওরা আমাদের বন্ধু। "
সহন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে একবার ভেতরে উঁকি দিতেই নেশার সামগ্রী নজরে আসলো। এরমধ্যেই লোকটা নীলাকে সহনের সামনে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগলো। লোকটা অলরেডি ড্রাঙ্ক হয়ে গেছে। নীলার চোখের ইশারায় কিছু বোঝেনি তাই। সহন আর এক সেকেন্ড সময় ব্যায় না করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। এরচেয়ে বেশি সময় ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো নীলাকে গলাটিপে মেরে ফেলতো। মাথা কাজ করছে না সহনের। কীসের পেছনে এতগুলো বছর নষ্ট করলো সে?
.
.
.
চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।