আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ১২ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


মাথা কাজ করছে না সহনের। কীসের পেছনে এতগুলো বছর নষ্ট করলো সে? শুধু কি সময়? টাকাগুলো তো কষ্ট করেই ইনকাম করা হয়েছিল। রাস্তার পাশ দিয়ে আনমনে হাঁটছে সহন। এরকম অনেক হিসেব মেলাতে ব্যস্ত সে। এতগুলো বছরে কতগুলো টাকা নীলা চেয়ে নিয়েছে তার হিসাব। নীলার কাছে সহন ছিল শুধু টাকা পাওয়ার মেশিন। সহনের অস্থির লাগছে। কী করবে সে? নীলার কাছেই যাবে। ওর সাথে একটা বোঝাপড়ার দরকার আছে। পনেরো মিনিটের মাথায় ফের সহন নীলার ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে দরজা খোলাই আছে। সহন কোনো কিছু না ভেবে সোজা ভেতরে ঢুকে যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও সে প্রস্তুত ছিল না। নীলার জামাকাপড় গুলো সব ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বেডরুমের দরজার দিকেও কিছু জামাকাপরেট অংশ দেখা যাচ্ছে। মাথায় আগুন জ্বলছে সহনের। যাকে অপবিত্র করবেনা বলে এতগুলো বছর স্পর্শ করলোনা, আজ সে কী অবস্থায় আছে? সহন হিংস্র বাঘের মতো এগিয়ে গেলো ওর বেডরুমের দিকে। অতঃপর রাগে,ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করে চেঁচিয়ে উঠলো। 
" নীলা!"
সহনের এমন বাজখাঁই আওয়াজে আঁতকে উঠলো নীলা ও রকি। দু'জনেই অন্তরঙ্গতার চরম মুহুর্তে ছিলো। নীলা বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে টলমল পায়ে দাঁড়িয়েছে। আর রকি সহনকে পুরো পাত্তা না দিয়ে আয়েস করে পাশের টেবিলে রাখা লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে আঙুলের ফাঁকে গুঁজে সুখটান দিতে ব্যস্ত। 
" চেঁচামেচি করছো কেনো সহ..ন? একটু আগেই তো দেখে গে..লে আমি নে...শা করি। এখন আবার এসব দেখ.....তে এসে..ছো বুঝি?"
থেমে থেমে কথা বলছে নীলা। মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে। সহন নিজেকে সামলাতে পারে না। কষিয়ে চড় বসিয়ে দেয় নীলার গালে। তাতে নীলা ক্ষ্যাপাটে বাঘিনীর মতো হুংকার দিয়ে কিছু বাজে গালি দেয়। 
" মাদা**চো*দ*! তোর মতো ছেলেকে কি সত্যি সত্যি ভালোবাসছি আমি? নেহাৎ টাকা-কড়ির মালিক বলেই এতগুলো বছর তোর পেছ*নে নষ্ট করেছি। তোর মতো অক্ষম পুরুষ আমি জীবনে দু'টো দেখিনি। এত বছরে সে*ক্স করা তো দূর কখনো গায়ে হাত পর্যন্ত দিসনি। তাই আমার শরীরের তৃষ্ণা এই রকি মেটায়। যাহ ভাগ এখান থেকে। বউ থাকবে না তোর সাথে। রাতে দিতে না পারলে কেউ থাকে না। "
" ছিঃ! তোর মতো একটা মেয়ের সাথে এতদিন একসাথে ঘোরাঘুরি করিছি ভাবতেও ঘৃণা লাগে। আমি অক্ষম? এর জবাব ভবিষ্যতে পাবি। তোর মতো মেয়েদের জায়গা হলো বে*শ্যা পাড়ায়। থু! শরীরের চাহিদার জন্য যে মেয়ে অন্য পুরুষের সঙ্গ দেয় সে বউ হওয়ারা যোগ্য না।"

সহন নীলার বাসা থেকে বের হয়ে গেলো আবারও। মাথা কাজ করছে না সহনের। একটা মেয়ে তার পরুষত্ব নিয়ে কথা বললো? যাকে ফুল ভেবে বুকে আগলে রাখলো সে এই অপবাদ দিয়েছে ভাবতেই সমস্ত শরীর রাগে হিড়হিড় করে উঠছে তার। অন্য একটা পুরুষের সাথে বিছানায় গেলো নীলা? তা-ও সহনের অগোচরে, দিনের পর দিন!

ঘড়ির কাঁটা টিকটিক আওয়াজ করে রাত এগারোটা বেজেছে জানান দিচ্ছে। তাহমি না খেয়ে বসে ছিলো কিছুক্ষণ। কিন্তু শ্বাশুড়ির বলায় খেয়ে নিয়েছে। নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে মানা করেছেন ফরিদা খান। সেজন্য খাওয়াদাওয়া শেষে সোজা ঘরে এসে শুয়ে পড়েছে। আজকে হয়তো সহন ফিরবে না। এসব ভাবছিল এমন সময় দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো সহন। তাহমি শোয়া থেকে উঠে বসলো। কেমন অদ্ভুত লাগছে সহনকে। প্রতিদিন তো বাসায় ফিরে তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। কিন্তু আজকে রুমে ঢুকেই দরজা আঁটকে দিলো সে। তারপর ওয়ারড্রবের ওপর শার্ট,গেঞ্জি খুলে রাখলো। তাহমি এরমধ্যে বিছানা থেকে নেমেছে। 
" খাবার ডাইনিং টেবিলে ঢাকা আছে। খেয়ে আয়।"
" আমি খাবো না। "
চোখগুলো কেমন রক্তবর্ণ হয়ে গেছে লোকটার। তাহমি শতশত জ্বালাতন করলেও এই চোখের চাহনিতে ভয় লাগছে আজ।
" তোর কী হয়েছে? শরীর কেমন? "
" শরীর! "
সহন অস্ফুটে স্বরে বললো কথাটা। তাহমি কিছু বোঝার আগেই চট করে কোলে তুলে নিলো তাকে। তাহমি অবাক হলো সহনের এমন কাণ্ডে। এরমধ্যে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে তাহমিকে। 
" কী..."
তাহমি কথা শুরু করার আগেই ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে ইশারায় চুপ করতে বলে সহন। তাহমি চুপ করে। সহনকে অস্বাভাবিক লাগছে। মনে হচ্ছে প্রচন্ড রাগে শরীর কাঁপছে। সহন তাহমিকে সময় দিলো না। দু-হাত দু'হাতে আবদ্ধ করে ওষ্ঠ পিষতে লাগলো। তাহমির ভীষণ লাগছে। মনে হচ্ছে এতদিনের সমস্ত রাগ এভাবেই ঝাড়ছে সহন। তাহমি চেষ্টা করলো নিজেকে ছাড়াতে। পারলো না। কিছুক্ষণ পরে ওষ্ঠ ছেড়ে ক্রমশ নিম্নাংশে ওষ্ঠ ছোঁয়াতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সহন। চোখ বন্ধ করে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে তাহমি। সহন তাহমিকে এলোমেলো করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টায় আছে। তাহমি প্রথম সাড়া না দিলেও স্বামীর আহবানে ঠিক থাকতে পারে না। সহনের জংলীপনায় কেটে যায় অনেকটা সময়।

 দুটো প্রাণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। সহন ঘুমিয়ে গেছে। তাহমির উঠে বসতে কষ্ট হলো একটু। সহন এতটা ডিমান্ডিং ভাবতেও পারেনি কখনো। কী হলো হুট করে! ভাবতেই নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলো তাহমি। অথচ লজ্জা তার সাথে যায় না! আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো পোশাক ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে সেগুলো। দ্রুত সেগুলো পরে নিলো মেয়েটা। সহনের দিকে একবার তাকিয়ে, ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই তখুনি ফোনে কল এলো নীলার নম্বর থেকে। তাহমি খুশি মনে ফোনটা হাতে নিতেই বুকটা আঁতকে উঠলো তার। ভেবেছিল সহন হয়তো সবকিছু বাদ দিয়ে তার কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু?  
তাহমি কলটা রিসিভ করে চুপ করে থাকে। নীলার কথা শোনার জন্য। 
" সহন প্লিজ আমার কথা শোনো। তখন আমি নেশার ঘোরে ছিলাম। রকি আমার ড্রিংকসে কিছু একটা মিশিয়ে আমার সাথে সে*ক্স করেছে। আমি যা যা বলেছি তার জন্য সরি। প্লিজ প্লিজ আমাকে মাফ করো বেবি!"
তাহমি দপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। মনে হচ্ছে চোখের সামনে অসংখ্য ছোটো ছোটো পতঙ্গ উড়ে যাচ্ছে। ফোন এখনও কানে। সহনের কথা না শুনতে পেয়ে নীলা আবারও বলতে লাগলো,
" রাগ করলে? অক্ষম পুরুষ বললাম বলে? আমি তো জানি তোমার সবটা। তোমার মতো সুপুরুষ আর কয়জন আছে? "
ফোনটা আর ধরে রাখতে পারলোনা তাহমি। একটু আগে তার সাথে যেভাবে সময় কাটালো সহন নীলার সাথেও তেমন কাটিয়েছে? আর সেজন্য সুপুরুষ বললো মেয়েটা! তাহমি ফোনটা ফ্লোরে রেখেই দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকলো। দ্রুত ঝরনা ছেড়ে দিয়ে পানির নিচে দাঁড়ালো। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। ভালো মতো গোসল করতে লাগলো সে। ওই নোংরা মানুষটার স্পর্শ শরীরে রাখতে চায় না তাহমি। এতদিন যতই যা করুক এটুকু বিশ্বাস ছিল, মানুষটা ওর হক নীলাকে কখনো দিবে না। কিন্তু কই হলো তা? নিশ্চয়ই নীলাকে আজ কাছে পায়নি বলেই বউয়ের সাথে অন্তরঙ্গতা গড়েছে সে।

কাক ডাকা ভোরে দরজায় কলিংবেলের শব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো আয়ান। আয়ানের রুম দরজা থেকে সবচেয়ে কাছে। ছেলেটা সকাল সকাল উঠে নিজের পড়াশোনা কমপ্লিট করে রাখে। যাতে বিকেলে কিংবা রাতে প্রাইভেট নিশ্চিন্ত মনে পড়াতে পারে। 
" আপু এতো সকাল সকাল! তা-ও একা কেনো?"
দরজার বাইরে বড়ো বোনকে দেখতে পেয়ে বিস্মিত জলো আয়ান। তাহমি ঘরে প্রবেশ করে। আয়ান বাইরে রাখা ব্যাগগুলো ভেতরে রাখে। 
" এমনি। এবার কয়েকটা মাস থাকবো। "
বোনের চেহারা দেখেই আয়ান কিছু একটা বুঝতে পেরেছে। তাই কোনো কিছু আর জানতে চাইল না আয়ান। 
" ঠিক আছে। আপাতত ঘরে দিয়ে আসি তোর ব্যাগপত্র। বাকিরা ঘুমিয়ে আছে। "
আয়ানের পিছু পিছু নিজের রুমের দিকে এগোতে লাগলো তাহমি। 

চারদিকে যানবাহনের কর্কশ আওয়াজ। এসব শুনতে শুনতেই প্রতিদিন শুরু হয় শহুরে মানুষের। সহনের ঘুম ভেঙে গেছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সে। দেয়ালঘড়ির দিকে দৃষ্টিপাত করলো সময় দেখার জন্য। এগারোটা বিশ বেজেছে! এত বেলা অবধি কীভাবে ঘুমিয়ে ছিলো সে? তাহমির তো এতক্ষণে মগে পানি নিয়ে আসার কথা! না-কি গতকাল রাতের ঘনিষ্ঠতায় খারাপ লেগেছে মেয়েটার? সহন এসব ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে দৃষ্টিতে করলো। নীলার কথা মনে পড়তেই মেজাজ খারাপ লাগছে তার। নীলার করা অপমানের শোধ নিলো তাহমির উপর। নিশ্চয়ই তাহমির লেগেছে শরীরে! সহন দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে চেক করলো তাহমি আছে কি-না। না থাকায় রান্নাঘর আর ছাঁদে গিয়ে খুঁজে এলো। কিন্তু না,সারা বাড়ির কোথাও তাহমি নেই। এমনকি আলমারিতে ওর শাড়ি কিংবা থ্রিপিসও নেই। মনটা কেমন করছে সহনের। সহন তো গতরাতে একেবারে জোরজবরদস্তি করে কাছাকাছি যায়নি তাহমির। তাহমির নিজেরও স্বায় ছিলো। দু'জনের সম্মতিতে বন্য প্রণয় ঘটেছিল চার দেয়ালের অভ্যন্তরে।
.
.
.
চলবে..........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।