এই অনিমাকে তো সে চেনে না। যা বলছে তাই করছে! না বেশি কথা বলছে আর না তো অন্যমনস্ক হচ্ছে। মেয়েটা কি খুব কষ্ট পেলো? কীভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত আয়ানের? কথা বলবে এসব বিষয়? নাকি বলবে না! উফ এতো এতো দোটানা কেন থাকে জীবনের সব ক্ষেত্রে?
" অনিমা তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? "
" না স্যার। "
অনিমার সহজসরল স্বীকারোক্তিতে আয়ান আরও চিন্তায় পড়ে গেল। এই মেয়ে তো এক কথার উত্তর দিতো এতগুলো বাক্য ব্যয় করে! হলো কী মেয়েটার!
" তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?"
কৌতুহলী হয়ে ফের শুধালো আয়ান। অনিমার আবারও এক কথায় উত্তর, " না।"
আয়ান আর কোনো প্রশ্ন না করে চুপচাপ পড়া শেষ করে। যাওয়ার আগে একবার অনিমার দিকে দৃষ্টিপাত করে, চুপচাপ বইগুলো গুছিয়ে রাখছে সে। আয়ান আনমনে নিজ গন্তব্যে ফিরতে অগ্রসর হতে শুরু করে।
" দুপুরে অমনি কল কেটে দিয়েছিলি কেনো?"
ঘরে ঢুকেই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে তাহমিকে প্রশ্ন করলো সহন। ভরা পূর্ণিমা আজ। তাহমি সেই পূর্নিমার আলোয় নিজেকে বিলীন করতে চাচ্ছে। চাঁদের আলো গায়ে মেখে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে তার।
" ঘুমিয়ে পড়। "
তাহমির সংক্ষিপ্ত উত্তর অসহ্য লাগছে সহনের। অফিস থেকে ফিরলো তবুও তার দিকে কোনো খেয়াল নেই মেয়েটার। সহন বাইরের পোশাক নিয়েই পেছন থেকে উদরে হাত রেখে জড়িয়ে নিলো তাহমিকে। তাহমি কেঁপে উঠল কিছুটা। ঘাড়ে থুতনি রেখেছে সহন। ফলে উষ্ণ নিঃশ্বাসে তাহমিরও কেমন কেমন লাগছে।
" আই ওয়ান্ট টসটসে চুমু! "
তাহমি বাইরের দিকে তাকিয়েই বললো,
" আগে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে তারপর। "
" ঠিক আছে ম্যাম।"
তাহমির ভাল্লাগছে না। কোথাও সহন জেদ করে বলবে, না! আগে চুমু তারপর সবকিছু। কিন্তু সে ভদ্রলোকের মতো বউয়ের কথা মেনে নিলো। এভাবে কথা শুনলে ঝগড়া কীভাবে করবে? নাহ ঝামেলা চাই মানে চাই!
সহন যেনো আজকে ঝড়ের বেগে খাওয়া শেষ করে রুমে এলো। তাহমি ইচ্ছে করেই আজকে একা একা খেয়ে নিয়েছে। যাতে সহন একটু হলেও মন খারাপ করে ত্যাড়ামি করে। তাহমি এখনও একইভাবে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সহন এসে আর কথাবার্তা না বলে কোলে তুলে নিলো তাকে। তাহমি চমকাল।
" এই! এই সহন কী করছিস? ছাড় বলছি।"
" কেন? চুমু দিবি না?"
" ধ্যাৎ! কীসব বলে সব সময়। আমি ঘুমাবো।"
বিছানায় শুইয়ে দিলো তাহমিকে। নিজেও বসলো পাশে। বোঝার চেষ্টা করছে মেয়েটার কী হয়েছে! নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাহমির দিকে।
" তুই কি ঝগড়া করতে চাইছিস? দেখ,আমি এখন খুব মুডে আছি। কোমর ব্যথার ঔষধটা কাজে লাগাতে হবে না? অহেতুক টাকা নষ্ট করার ছেলে নই আমি। "
এই রে সহন বুঝলো কীভাবে সে ঝগড়া করতে চাচ্ছে? তারমধ্য আবার দুষ্ট দুষ্ট কথা বলছে। উফ! ছেলেটা মিচকে শয়তান একটা।
" আজকে কিচ্ছু হবে না। কিচ্ছু না মানে কিছুউউউউউউ না আআআ!"
সহন জোর করার মানুষ না। তাহমি যে ইচ্ছে করে এমন করছে সেটাও সহন বুঝতে পারছে। এবার সে-ও টাইট দিবে।
" ঠিক আছে। শুভ রাত্রি। "
সহন বালিশে শুয়ে সোজা হয়ে চোখ বন্ধ করলো। তাহমি একজায়গায় শুয়ে আছে এখনও। ভাল্লাগে না! না হলো ঝগড়া আর না তো রোমান্স। তাহমিও সহনের পাশে শুয়েছে।
" সহন? এই সহন?"
বারকয়েক ডাকার পরেও সহন সাড়া না দেওয়ায় তাহমি আর ডাকল না৷ মানুষটা ঘুমিয়ে গেছে আসলেই।
মায়ের কাছে বোনের বিষয় বলেছে আয়ান। আমেনা অমত করেনি তবে তৃষার বাবার মতামত নিয়ে চিন্তিত সবাই। তবে আমেনা বুঝিয়ে বলায় তেমন আপত্তি করেননা তৃষার বাবা। তবে ছেলের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে চান। সেই অনুযায়ী পরশু অনিক আসবে তৃষাদের বাসায়। সবকিছুর মধ্যে তৃষার বড্ড অস্থির অস্থির লাগছে। অনিককে কি তৃষার বাবামায়ের পছন্দ হবে? সকাল হতেই তৃষা তাহমিকে কল করে। ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো তাহমির। ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা হাতে নিয়ে না তাকিয়েই কল রিসিভ করে কানের পাশে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
" হ্যালো! "
" আপাই কেমন আছো তুমি? "
" ওহ তৃষা! কেমন আছিস তোরা?"
বোনের কথা শুনে শোয়া থেকে উঠে বসলো তাহমি। পাশে তাকিয়ে দেখলো সহন নেই পাশে।
" আমরা ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি? "
" আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। হঠাৎ এতো সকালে কল? সবকিছু ঠিক আছে তো!"
" হ্যাঁ ঠিক আছে। মা হয়তো তোমাকে কল দিয়ে বলবে কিন্তু আমিই বলছি তার আগে, কালকে ডাক্তার সাহেব আসবেন আমাদের বাড়ি। তুমি কিন্তু আজকে বিকেলেই চলে আসবা।"
" ওয়াও! গ্রেট নিউজ তৃষা। ইশ আমার ছোটো বোনটার বিয়ের কথা হচ্ছে ভাবতেই ভীষণ আনন্দ লাগছে রে। আমি তোর দুলাভাইকে বলছি।"
" আচ্ছা আপাই। রাখছি তাহলে!"
" আচ্ছা। "
তৃষার সাথে কথা বলা শেষে সারা ঘরে সহনকে খুঁজল তাহমি। ওয়াশরুমেও নেই। গেলো কোথায় এতো সকালে! মনটা কেমন খচখচ করছে। সহনকে কল দিবে ভাবতেই দেখল বালিশের পাশে ফোন রাখা। তারমানে আশেপাশে কোথাও গেছে নিশ্চিত। তাহমি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলো। এখন থেকে একটু সংসারে মনোযোগ দিবে। শাশুড়ীকে রান্না করতে দিবে না।
" মামুনি তুমি সরো। আজকে থেকে রান্নাবান্না আমি করবো। আমার স্কুল তো নয়টার পরে শুরু হয়। আমি একেবারে সকাল সকাল উঠে সবকিছু করে ফেলবো।"
ফরিদা খান স্বহাস্যমুখে বললেন, " এতো কষ্ট করে তোকে রান্না কেনো করতে হবে শুনি? যতদিন গায়েগতরে শক্তি আছে আমিই করবো সবকিছু। "
" না না না! তাহলে আমি এখন খাবো না কিচ্ছু। না খেয়ে অনশন করবো।"
" ওমা! না খেয়ে কেন থাকবি? আচ্ছা শোন,আমরা মিলেমিশে রান্না করবো। কাজগুলো বরং ভাগাভাগি করে করবো। কী বলিস?"
তাহমি খিলখিল করে হেসে উঠলো। এবার ঠিক আছে।
" হ্যাঁ। তাহলে ঠিক আছে। আচ্ছা তোমার ছেলেকে দেখলে বেরোতে? "
লুচি তেলের কড়াইয়ে ছাড়তে ছাড়তে বললো তাহমি। ফরিদা আলুর খোসা ছাড়িয়ে রাখলেন বাটিতে।
" হ্যাঁ। বললো তো হাঁটতে বেরিয়েছে। "
" ওও আচ্ছা। মামুনি আমার ছোটো বোনটার বিয়ের কথাবার্তা হবে কালকে। ছেলে আসবে বাসায়, আব্বু কথা বলবে।"
" বাহ! ছেলে কী করে? "
" ডাক্তার। আমরা বিকেলে যাবো মামুনি?"
" হ্যাঁ, যাবি না কেনো? "
" তুমি এতো ভালো কেনো বলো তো? শাশুড়ীদের এতো ভালো হতে নেই। "
" আমি তাহলে দজ্জাল শাশুড়ী এখন। "
" ওই যে বউকে মেরে ফেলে বাংলা সিনেমায় সেই দজ্জাল শাশুড়ী? "
তাহমির কথায় ফরিদা হেসে উঠলো। এরমধ্যেই সহন ফিরল বাসায়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই স্ত্রী ও মায়ের হাসির শব্দ শুনে সে-ও এগিয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে।
" কী ব্যাপার? দু'জন এতো হাসাহাসি করছো যে!"
সহনকে দেখে তাহমির চোখদুটো শীতল হয়ে গেছে। মনটাও স্থির হয়ে গেছে।
" কিছু না। তুই ফ্রেশ হয়ে আয়, ততক্ষণে নাস্তা তৈরি হয়ে যাবে। আর শোন,অফিস থেকে ছুটির ব্যবস্থা কর। কালকে তাহমির বোনের বিয়ের কথাবার্তা হবে। সেজন্য আজকে বিকেলেই তাহমি যাবে ওর বাবার বাড়ি। তুই অফিস থেকে সরাসরি ওদের বাসায় চলে যাস বরং।"
" বাহ ভালোই তো। ঠিক আছে মা। "
সহন তাড়াতাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তাহমি ও ফরিদাও খাবার দ্রুত প্রস্তুত করতে হাত চালু করে কাজে মন দেয়।
.
.
.
চলবে........................