আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ২২ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


নির্দিষ্ট স্থানে বসে মনোযোগ সহকারে পড়ছে অনিমা। আয়ান সামনে বসে খুব সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তাকে। ইদানীং আয়ানের কেমন অদ্ভুত অনুভব হয়। হুটহাট অনিমার কথা ভাবতে ভালো লাগে তার। মেয়েটার বকবক, হঠাৎ করে কাছে আসা,নির্লজ্জতা সবকিছুই মিস করে ভীষণভাবে। নিজের মনকে শান্ত করার বহু চেষ্টা করছে সে। অনিমা নেহাৎ পিচ্চি মেয়ে। সবে এসএসসি দিবে। এই মেয়েকে নিয়ে এরকম অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া ঠিক নয়। তার কেথায় অনিমার বাবার অগাধ সম্পত্তির প্রভাব-প্রতিপত্তি আর কোথায় মধ্যবিত্ত আয়ান!
" আয়ান স্যার একটু দেখুন তো পড়াটা। "
অনিমার ডাকে ভাবনার সুতা ছিড়ে বাস্তবে ফিরল আয়ান। নড়েচড়ে উঠলো সে। 
" কই দেখি।"
" জি স্যার। "
বই এগিয়ে দিলো অনিমা। আয়ান যথাসাধ্য সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলো পড়া। অনিমার ভীষণ ইচ্ছে করে আয়ান স্যারকে একবার জড়িয়ে ধরতে। এতদিন পর্যন্ত সমবয়সী ছেলেদের প্রতি একটা আলাদা ঝোঁক থাকলেও গত দুই মাসে নিজের থেকে প্রায় নয় বছর বয়সী স্যারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোরী মন। সামনেই পরীক্ষা! হাতেগোনা একমাস সময় আছে। তাই যথাসম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে এসমস্ত অবাধ্য ইচ্ছেকে মাটি চাপা দিয়ে রাখছে অনিমা। তাছাড়া আয়ান স্যারের যে কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই তার কি গ্যারান্টি আছে? 
" আচ্ছা অনিমা সামনেই আমার ছোটো বোনের বিয়ে। তুমি চাইলে আমি তোমার বাবাকে বলবো তোমাকে যেতে দেওয়ার জন্য। মানে দাওয়াত করলাম। যদিও তোমার তো তেমন বাধ্যবাধকতা নেই বাসা থেকে। "
পড়ানো শেষে অপ্রয়োজনীয় আলাপ জুড়ে বসলো আয়ান। কী নিয়ে কথা বলবে ভাবতে ভাবতে তৃষার বিয়ের কথা মনে পড়লো আয়ানের। অনিমা ক্ষণকাল চুপ থেকে ভেবে নিলো কিছু একটা। তারপর বললো,
" হ্যাঁ আমি যাবো। আপনি বাবাকে বলবেন। "
" ঠিক আছে। বিয়ের যেহেতু দশ দিন বাকি,আমি তিন কিংবা চারদিন আগে আঙ্কেলকে বলবো।"
" ঠিক আছে আয়ান স্যার। "
আয়ান জবাবে মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। অনিমা তো সেখানেই থমকে গেছে। লোকটার মুচকি হাসিতে কী ছিলো? মায়া নাকি জাদু!

বই পড়ছিল তাহমি। বিকেলের এই সময়টাতে তাহমি বই পরে কাটায়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফ্যান্টাসি গল্পের প্রতি আলাদা এক আকর্ষণ কাজ করে তার। বহুদিন ধরে তাই ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা বইটা পড়ার জন্য হাসফাস করছিল। তবে কিছুতেই কেনা হচ্ছিল না। এইতো গতকাল সহন রাতে বইটা কুরিয়ার থেকে নিয়ে এলো। অনলাইন বুকশপ থেকে অর্ডার করেছিল তাহমিকে না জানিয়ে। হুট করে বইটা হাতে পেয়ে যে কী ভীষণ খুশি হয়েছিল মেয়েটা, সেই খুশিটুকুর সাক্ষী হবে বলেই সারপ্রাইজ দিয়েছে সহন। ড্রাকুলা নামটাই একটা আস্ত ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো জিনিস। তাহমিও বইয়ের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এমন সময় কল এলো সহনের। বিরক্ত লাগলো তাহমির। আপাতত বইয়ের দিক থেকে মনোযোগ সরাতে চাচ্ছে না সে। কিন্তু সহনও যে নাছোড়বান্দা! ননস্টপ কল করে যাচ্ছে সে। অগত্যা বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করলো তাহমি। 
" কখন থেকে কল করছি? কানে কি কম শুনিস ইদানীং? "
" এতো কল দিচ্ছিস কেন তাই বল। "
" ওরে ব্যস্ততা! "
" সহন ঢঙ করিস না। "
" খবিশের মতো করিস না। "
" উফ!"
" কী হলো? আদর লাগবে? ডু ইউ ওয়ান্ট? "
" আই ওয়ান্ট তোর কল্লা। বদের হাড্ডি একটা। বই পড়ছি আমি। "
তাহমির ঝাঁঝাল কথায় ফিক করে হেসে দিলো সহন। তবে নিঃশব্দে! মহারাণী শুনলে দক্ষযজ্ঞ বাঁধিয়ে ফেলবে। 
" আচ্ছা পড় তাহলে। কিন্তু শোন..."
" হু বল।"
" রাতে শাড়ি পরবি? বেবি পিংক কালারের শাড়িতে তোকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। "
সহনের ভালোবাসাময় আবদারে তাহমির মনটা কেমন চঞ্চল হয়ে উঠলো। মুচকি হেসে বললো, 
" বেলীফুলের গাঝড়া এনো, খোঁপায় দিবো।"
" বেশ আনবো। রাখছি। পড়ো এখন।"
ফোন কেটে দিলো সহন। তাহমির ঠোঁটের কোণে সুখময় হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। ইশ মানুষটা কত্ত ভালোবেসে ফেলেছে তাকে! 

আজ শুক্রবার,বেলা তিনটে বেজেছে। সম্পর্কের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সেরকমভাবে ঘুরতে যাওয়া হয়নি অনিক ও তৃষার। শাড়ি পরে কখনো প্রিয়তমর সামনেও আসা হয়নি। তাই আজকে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান হতেই শাড়ি পরে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছে তৃষা। সাদা-কালো মিশেলের একটা সিল্কের শাড়ি পরেছে তৃষা সাথে কালো হিজাব। ঠোঁটে লাইট লিপস্টিক, চোখে কাজল এতটুকু সাজগোছ যথেষ্ট। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে আইলাইনারের লাস্ট ফিনিশিং দেখে নিলো সে। এরমধ্যেই মেসেজ এলো অনিকের।
" শাড়ি পরে আসবে আজ?"
তৃষার মাথায় হঠাৎ দুষ্ট বুদ্ধি এলো। ঠোঁট কামড়ে হেসে মেসেজের রিপ্লাই দিল, " চেয়েছিলাম।"
" তাহলে? "
" মা বললো শাড়িতে ভালো লাগে না। "
" ওওও। "
" হু।"
" বেশ এসো তাড়াতাড়ি। আমি আছি তোমাদের বাড়ির সামনের মাঠে। "
" তবুও বলতে পারলেন না,শাড়ি পরে আসো!"
অনিক তৃষার মেসেজ দেখে হাসলো। মেয়েটা তাহলে তার না বলা কথা বুঝে ফেলতে সক্ষম হলো।
" হাহা! এসো তাড়াতাড়ি। "
" আসছি,দাঁড়ান একটু।"

ফোনের কনভারসেশন থামিয়ে হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে মা'কে বলে বাসা থেকে বেরুলো তৃষা। বাসা থেকে ঠিক পাঁচ মিনিট হাঁটলে ছোটো একটা মাঠ পড়ে। ওখানেও ক'দিন পর দালানকোঠা উঠবে। দূর থেকে তৃষাকে দেখেই কেমন শীতলতা বয়ে গেলো হৃদয়ে। আনমনে তাকিয়ে সামনে এগোতে লাগলো অনিক। 
" মুখে মাস্ক পরে নিতে। "
" মাস্ক পরলে নিঃশ্বাস নিতে অস্বস্তি লাগে আমার। "
তৃষার হাত আলগোছে নিজের হাতে নিয়ে নিলো অনিক। অনিক যখন তৃষার হাত এভাবে ধরে রাখে তৃষার তখন মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত হাতে হাত রেখেছে সে।
" আমার কেমন জেলাস ফিল হচ্ছে তৃষা। অন্য কেউ তোমার সৌন্দর্য দেখবে বলে।"
অনিকের বাচ্চামিতে তৃষা অধর এলিয়ে দিলো। 
" তাহলে এরপর থেকে বোরকা পরবো বরং। "
" সত্যি? ইশ এতদিন এই লক্ষ্মী মেয়েটা কোথায় ছিলো! "
" ওই যে সামনের বাড়িটা দেখছেন ওখান থেকে সোজা গিয়ে বামদিকের জলপাই রঙের বিল্ডিংয়ের মধ্যে একটা রুমে ছিলাম আমি। "
দু'জনেই হাসতে হাসতে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। আজ ঠিকানা বিহীন গন্তব্যে ছুটবে গাড়ি। কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই ওদের। 

" মামা একটা বেলীফুলের গাজরা দিন আর সাথে দু'টো গোলাপ।"
ফুলের দোকানীকে বললো সহন। দোকানী হেসে সেগুলো এগিয়ে দিলো সহনের দিকে। 
" এই লন মামা। ষাট টাকা দেন।"
" সত্তর টাকা হয়েছে না?"
" দশ টেহা লাগবো না আমার। "
লোকটার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলো সহন। খুশি হয়ে একশো টাকার একটা নোট জোর করে হাতে গুঁজে দিয়ে বাড়ির দিকে এগোলো। সামনের গলি পেরোলেই সহনের বাসা। গলির মোড়ে ঢুকতেই মায়ের নম্বর থেকে কল এলো। থমকে দাঁড়াল সহন। মা তো দরকার ছাড়া এখন কল দিবে না! দ্রুত কল রিসিভ করলো সহন। 
" সহন সহন তুই তাড়াতাড়ি আ্যম্বুলেন্স নিয়ে বাসায় আয়। তাহমির অবস্থা ভালো না! আগুন আগুন লেগেছিল রান্নাঘরে.... "
সহন আরকিছুই শুনতে পারলো না। ফোন পকেটে রেখে ছুটলো বাড়ির দিকে। হাত থেকে পড়ে গেলো ফুলগুলো! 

হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে তাহমিকে। করিডরে বসে আছে ফরিদা খান, তাহমির বাবা ও সহনের বাবা। আয়ান,সহন পায়চারি করছে অবিরত। তাহমির মা খবরটা সহ্য করতে না পেরে সেন্সলেস হয়ে গেছেন। বাসায় উনাকে দেখছে তৃষা। সহন বারবার গিয়ে দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে তাহমিকে কিন্তু পারেনি। ডাক্তার এখনো কিছু জানাননি বলে চিন্তিত সকলে। কাঁধ, চেহারার একপাশ পুড়ে গেছে, ভেতরে হয়তো আরও ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান করছে সহন। বাকিটা ডাক্তার জানাবে বলে অপেক্ষা করে আছে সবাই। 
.
.
.
চলবে.........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।