আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ২৩ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


দু'দিন কেটে গেছে। তাহমির অবস্থা একটু ভালো এখন। চেহারার একপাশ যতটা পুড়েছে চিকিৎসার মাধ্যমে দাগ নিরাময় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ চলবে। কিন্তু কাঁধের অবস্থা খারাপ। জরজেটের পোশাক পুড়ে শরীরের সাথে লেগে বিশ্রী অবস্থা হয়ে গেছিল। তাহমির শাশুড়ী চেহারায় তাৎক্ষণিক পানি ঢালার কারণে একটু হলেও উপকার হয়েছে। আরো চারদিন বার্ন ইউনিটে থাকতে হবে তাহমিকে। তারপর বাসায় যেতে পারবে। যদিও চাইলে এখনও নিতে পারে, সেক্ষেত্রে ইনফেকশনের ভয় আছে। এজন্য সহন হসপিটালেই রাখবে তাহমিকে। দু'দিন ধরে তেমন খাওয়াদাওয়া হয়নি সহনের। তাই দুপুরে আয়ান একপ্রকার জোরাজোরি করে সহনকে খেতে পাঠিয়েছে। গতকাল অনিক এসে দেখে গিয়েছে তাহমিকে। আকস্মিক ঘটনায় সবাই এলোমেলো হয়ে গেছে। তৃষার বিয়েটাও কয়েকদিন পিছিয়ে দিতে চাচ্ছে অনিক। তবে সে বিষয় এখুনি কোনো সিন্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তাহমি এরমধ্যে গতকাল একবার কথা বলেছিল সহনের সাথে। সহনের দু-চোখ ছলছল করছিল।
" কী হয়েছে? তোর চোখ অমন লাল হয়ে গেছে কেন?"
তাহমি দূর্বল কন্ঠে শুধালো। সহন তাহমির ডানহাতের একটা আঙুল ছুঁয়ে আছে। হাতে স্যালাইন লাগানো। 
" কিছু না। তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ ওঠ। আমার একা একা ভালো লাগে না। "
" অশান্তি ভাল্লাগে তোর? আমার ত্যাড়ামি, ঝগড়া মিস করছিস?"
মৃদু হেসে বললো মেয়েটা। সহন নিজের সামলাতে পারছে না। আঙুলেই চুমু খেলো আলতো করে। 
" আমি তোর সবটাই মিস করছি রে। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি চল।"
" যাবো ইনশাআল্লাহ। "

" সহন! ভাতের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে বসে না থেকে খেয়ে ফেল তাড়াতাড়ি। "
মায়ের কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে সহন। মাথা নেড়ে "হু" বলে খেতে শুরু করে। শরীরে খাবারেরও দরকার আছে। খেয়েদেয়ে আবার হসপিটালে যাবে। এখনো চারটা দিন তাহমি এ বাড়িতে থাকবে না! ফরিদা খানের নিজেকে কেনো জানি অপরাধী মনে হয়। সেদিন যদি উনি চা করতে যেতে না বলতেন তাহলে হয়তো এরকম ঘটনা ঘটতো না বলেই ভাবেন উনি। আদতে এমন কিছু নয়। যা হওয়ার সেটা এমনি হয়। তকদিরের লেখা এড়ানো সম্ভব নয়। 

প্রায় সপ্তাহ চলে গেছে। এতগুলো দিন আয়ান স্যার আসেননি পড়াতে। আর না তো একটা মেসেজ পর্যন্ত করেছে সে। এ নিয়ে অনিমার মনে চাপা অভিমান জমা হয়েছে বেশ। তবে লেখাপড়া থেমে নেই তার। দিনরাত প্রাণপাত করে লেখাপড়া করে যাচ্ছে অনিমা। পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ভালো রেজাল্ট করা চাই ওর। বিকেলের রোদ গায়ে মেখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে অনিমা। মনটাকে কিছুতেই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাখতে পারছে না। বারবার ইচ্ছে করছে আয়ান স্যারকে একবার কল দিয়ে জানবে,কেনো সে আসছে না! নিজের সাথে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত আর না পেরে আয়ানকে একটা মেসেজ পাঠাল অনিমা। মানুষটার কি ওর কথা একবারও মনে পড়ে না? সবটাই কি একপাক্ষিক ছিল তবে? 
" আপনারা যা বলবেন তাই হবে মা। তবে আমি চাচ্ছিলাম তাহমি আপু আরেকটু সুস্থ হলে সবকিছু হতো বরং। "
ড্রইং রুমে সোফায় বসে আছে অনিক। আমেনা ইসলামের কথার পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত কথাটি বললো। তৃষা গিয়েছে তাহমির কাছে। গতকালই তাহমিকে বাসায় নিয়ে এসেছিল সহন। তাই সকাল সকাল আয়ান ও তৃষা বোনের কাছে চলে গেছে। অনিক হবু শাশুড়ীর সাথে কথা বলতেই কেবল এসেছে আজ।
" তাহমির রেস্ট দরকার, ও রেস্ট নিবে সময় নেই। কাজকর্ম ওকে কেউ করতেও দিবে না। আগের থেকে তো এখন সুস্থ। বিয়েটায় বাঁধা আসুক আমি চাইছি না। আত্মীয়স্বজনদেরও বলা হয়েছে তো,বুঝতেই পারছো!"
" ঠিক আছে। আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। আমি দিনার সাথে আলোচনা করে নিবো। আপনারা বললেই বিয়ের তোরজোর শুরু করবে ওরা। "
" ঠিক আছে বাবা। "

বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে তাহমি। চোখমুখ এই ক'দিনে কেমন মলিন হয়ে গেছে। চেহারায় আছে ক্ষতের দাগ,হাসিতে প্রাণ নেই যেনো। সহন পাশে বসে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। চেয়ারে বসে আছে আয়ান ও তৃষা। অনিক তৃষাকে না জানিয়েই গিয়েছিল তাদের বাড়িতে। 
" আপাই খেয়ে নাও তুমি। "
" আয়ান তোরা কিছু খাসনি,আমার বাড়ি এসে তোরা না খেয়ে থাকলে কি ভালো লাগে বল?"
" তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হও আপাই। তৃষার বিয়েতে অনেককিছু খাবো আমরা। আর তোমার বাড়ি তো আছেই বলো?"
সহন জোর করে আরেক চামিচ স্যুপ তাহমির মুখে দিয়ে হেসে বললো, " একদম ঠিক। আমার একমাত্র শালিকার বিয়েতে প্রচুর খেতে হবে। বিয়ে বাড়িতে না খেলে পাপ হয় বুঝলে?"
গ্লাসে চুমুক দিয়ে এক ঢোক পানি খেয়ে আর খেলো না তাহমি। খাবারের প্রতি ভীষণ অনীহা জন্মেছে তার। 
" দুলাভাই থামেন তো। সবাই মিলে শুধু আমার বিয়ে বিয়ে করেন। লজ্জা লাগে না বুঝি?"
" এহহ! ঢঙ দেখে মরে যাই। নিজে থেকে বর খুঁজে আনলো তার আবার লজ্জা! সরর নির্লজ্জ মেয়ে। "
আয়ান তৃষার কপালে গাট্টা মেরে দিলো একটা। তৃষা গাল ফোলাল তাতে। তাহমি ওদের ভাইবোনের খুনসুটিতে না হেসে পারছে না। তৃষা তাহমির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। 
" আপাই দেখো, ভাইয়া কেমন করে বলছে আমাকে।"
" সত্যি তো আয়ান! তুই কেনো এভাবে বললি? দেখিস তুই যেনো নিজের পছন্দ করে আবার বিয়ে করিস না। তাহলে কিন্তু আমরা কথা শোনাতে ছাড়বোনা হুহ্। "
সহন বসা থেকে উঠে আয়ানের কাঁধে হাত রেখে হেসে বলে," দুই বোন একজোট হয়ে আমার শালাবাবুকে কথা শোনানো হচ্ছে? আমার শালাবাবু নিরামিষ মানুষ। ওসব পছন্দ করে টরে বিয়ে সে করবে না। তাই না? "
সবাই একসাথে হেসে উঠলো। আয়ান চুপ করে রইলো শুধু। হঠাৎ করে অনিমার কথা মনে পড়ে গেলো। কতদিন হলো দেখা হয় না, কথাও হয় না। মেয়েটা কি তাকে একটুও মিস করে? আচ্ছা একটা মেসেজ পাঠালে কেমন হতো? নিজের বোনের এরকম বিপদ হয়েছে সেটা তো অনিমাকে বললেও পারতো সে। বাসায় গিয়ে মেসেঞ্জারে কল দিয়ে সবকিছু বলবে বলে ঠিক করলো আয়ান। 

রাতের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে গোটা শহর। তাহমি ঘুমিয়ে গেছে। সহনের চোখে ঘুম নেই। সে বসে বসে প্রিয়তমার ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখতে ব্যস্ত। এতদিন না দেখে থাকার সাধ আজ পূর্ণ করে নিচ্ছে। কড়া ঔষধ চলে তাই তাহমির ঘুম বেশ গাঢ় হয়। সহনও সেই সুযোগে মনপ্রাণ ভরে দেখে নিচ্ছে শান্ত তাহমিকে। জেগে থাকলে তো আর এরকম শান্ত হয়ে থাকে না। অবশ্য তাহমির চঞ্চলতাই তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। 
রাত আড়াইটার সময় অনিমাকে অনলাইনে এক্টিভ দেখে অবাক হলো আয়ান। ইনবক্সে ঢুকেই দেখল গতকাল বিকেলে সে তাকে মেসেজ দিয়ে রেখেছে। 
"আয়ান স্যার! "
চিন্তাভাবনা বদলে গেলো আয়ানের। লিখতে চেয়েছিল, এতরাতে অনলাইনে কী? কিন্তু এখন সেসব আর লিখবে না। ভেবেচিন্তে রিপ্লাই টাইপ করলো, 
" হুম বলো।"
অনিমা মেসেজ আসতেই তৎক্ষণাৎ সিন করলো এবং রিপ্লাই টাইপ করতে লাগলো। আয়ান অপেক্ষা করছে কী লিখে পাঠাবে তার জন্য। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মেসেজ এলো।
" আমার পড়ালেখার কোনো চিন্তা নেই আপনার? কতদিন পড়াতে আসেননি! "
" তোমার বাবাকে জানিয়েছিলাম,আমার বোন অসুস্থ। "
" ওহ! বাবা আমাকে কিছু বলেনি সেসব। "
" তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে?"
" উমম... না আসলে জিজ্ঞেস করিনি। তবে নিজ থেকে তো বললেন না। "
" কাল থেকে যাবো পড়াতে। এখন ঘুমাও। অনেক রাত হয়েছে। "
আগামীকাল আয়ান স্যারের সাথে দেখা হবে ভাবতেই আনন্দে লাফ মেরে শোয়া থেকে উঠে বসলো অনিমা। তারপর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা বজায় রেখে লিখলো, " ঠিক আছে আয়ান স্যার। শুভ রাত্রি। "
" হু শুভ রাত্রি। "

অনিমা সাথে সাথে অফলাইনে গেলো দেখে আয়ানের ভালো লাগলো। মেয়েটা ওর কথা শুনেছে বলে। অনিমার মুখে আয়ান স্যার ডাকটা বেশ ভালো লাগে। যদিও প্রথম প্রথম কেমন লাগত তবে সময়ের সাথে ভালোলাগা জন্মেছে এখন।
.
.
.
চলবে.........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।