হুমায়রা পেছনে না তাকিয়েই ছোটার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। পেছনের মানুষটি তখন পেছন থেকে ঝাপটে ধরলো। হুমায়রার কাধের কাপড়ের ব্যাগটি শক্ত করে ধরলো সে। চোখ বন্ধ করে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু হলো। প্রাণ বাঁচানোর আকুল প্রচেষ্টা। ঠিক তখনই ব্যাক্তিটি তার হাতজোড়া শক্ত করে ধরলো, প্রবল স্বরে শুধালো,
"হুমায়রা?"
ভরাট পুরুষালী কন্ঠ কানে আসতে বর্তমানে ধাতস্থ হলো সে। চিরচেনা কন্ঠটি শুনে চোখ খুলতেই অক্ষিগোলক বড় হলো। ফাইজান হতভম্ব দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তা দিকে। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো সে। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একসার। চুলের গোড়া থেকে ঘাম গড়িয়ে চিবুকে এসে জমলো। গলা শুকিয়ে এসেছে। ফাইজানের কপালে তীক্ষ্ণ ভাঁজ। কন্ঠ বিমূঢ়,
"তুমি এভাবে ছুটছিলে কেনো? আরেকটু হলেই তো পড়ে যেতে। তোমার ধারণা আছে কত ডেকেছি তোমাকে! আর ফোন কোথায় তোমার?"
একাধারে অনেক প্রশ্ন ছুড়লো ফাইজান। কিন্তু হুমায়রা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলো না। শুধু হাপাতে হাপাতে মাথাটা ঠেকালো ফাইজানের বুকে। তার হৃদয় এখনো কাঁপছে। নিচু স্বরে বললো,
"আমাকে একটু পানি খাওয়াবেন?"
****
গাড়ির এসির তাপমাত্রা একুশে দেওয়া। শীতলতায় পানি জমছে কাঁচে। হুমায়রা জড়সড় হয়ে বসে আছে। তার সাথে সদ্য কেনা মামের বোতল। বোতলটির মুখটি ফাইজানের হাতে। সে গা এলিয়ে দিয়েছে ধূসর সিটে। নিস্তেজ চাহনী হুমায়রাকে স্থির। এখন অবধি দুজনের মাঝে কোনো কথা হয় নি। নিস্তব্ধতায় ফরিদেরও অস্বস্তি হচ্ছে। সে আর নিজেকে আটকাতে পারলো না। লুকিং গ্লাস দিয়ে হুমায়রার দিকে চেয়ে বললো,
"তুমি ওখানে কি করছিলে হুমায়রা? গাড়ি আসে নি আজ?"
হুমায়রা নিভু স্বরে উত্তর দিলো,
"রহিম ভাইয়ের জ্বর তাই সে আসেন নি। আমি তাই একা একা বাড়ি যাচ্ছিলাম"
"মেইন রোড ছেড়ে?"
হুমায়রার দৃষ্টি নত হলো। একবার আড়চোখে গম্ভীর মানুষটিকে দেখলো। সে গাড়িতে উঠার পর কোনো কথা বলে নি। পুরোটা সময় শুধু তার দিকেই চেয়ে ছিলো। ওড়নার ত্রিকোন হাতে খুটতে খুটতে ধীর স্বরে শুধালো,
"আপনারা এখানে কি করছিলেন?"
"ঢাকা থেকে ফাইজান এসেই ফুপুকে ফোন দিয়েছে। উনি বললেন তুমি কোচিং এ এখনো ফিরোনি। তাই কোচিং এই সরাসরি এলাম। এমা তুমি এখানেও নেই। স্যার বলেছে, দশ মিনিট হয়েছে ছুটি দিয়েছেন। তাই ফাইজান বললো, তুমি এখনো বেশিদূর যাও নি। আমরা তোমার নাম্বারে ফোন দিলাম তুমি ধরো নি। হঠাৎ ফাইজান তোমাকে গলিতে হাটতে দেখলো। তোমাকে ডাকলো, কিন্তু তুমি সাড়া দিলে না। তাই ও তোমার কাছে যেতেই তুমি ভো দৌড়। বেচারা ফাইজানকে যা দৌড়টা দিলে। আবার ব্যাগ দিয়ে মারছিলে অবধি। তুমি বলেই পার পেয়ে গেলে। নয়তো অন্য কেউ হলে যে কি হতো! জনদরদী এমপি সাহেব কি না বউ এর হাতে পিটুনি খাচ্ছে"
বলেই ফরিদ নিজের হাসি আটকাতে পারলো না। ফ্রন্ট সিটে মাথা এলিয়ে গা কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো। ফাইজানের কিঞ্চিত বিরক্ত লাগছে। তার চোখমুখ স্থির। গম্ভীর স্বরে বললো,
"খুব হাসি পাচ্ছে তাই না ফরিদ ভাই"
"দৃশ্যটি ই হাস্যকর ছিলো!"
ফাইজান এবার দৃষ্টি হুমায়রার দিকে ঘোরালো। নিন্মোষ্ঠ ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে মেয়েটির দাঁতে। চোখে মুখে লজ্জিত ভাব। কিন্তু সেগুলোকে উপেক্ষা করে ফাইজান প্রশ্ন ছুড়লো,
"তুমি ছুটছিলে কেনো? তুমি কি কোনো কারণে আতঙ্কিত?"
প্রশ্নটা অকপটেই করলো ফাইজান। হুমায়রা প্রস্তুত ছিলো না এমন প্রশ্নে। সে ফ্যালফ্যাল নয়নে চাইলো ফাইজানের দিকে। ফাইজানের দৃষ্টিতে ধার। সে তার প্রশ্নতে দমলো না। উলটো শুধালো,
"কেউ কি তোমাকে বিরক্ত করছে হুমায়রা? যা তুমি আমাকে জানাওনি"
প্রশ্নের গতি এদিকে যাবে এটা অকল্পনীয় ছিলো। হুমায়রাকে এবার চুপ থাকার সুযোগ দিলো না ফাইজান। কঠিন স্বরে বললো,
"তুমি আমার থেকে কোনো কিছু লুকোনোর চেষ্টা করো না হুমায়রা। ব্যাপারটি আমার নিতান্ত অপছন্দ"
হুমায়রা এবার কিঞ্চিত ঘাবড়ালো। ফাইজান কি সত্যি রেগে যাচ্ছে। মিথ্যে বলতে না, সে আসলেই আতঙ্কিত। কোথাও না কোথাও বর্তমানের কিছু ঘটনা তাকে খুব আতংকিত করছে। যখন তার মনে হয়েছিলো কেউ তার পিছু নিয়েছে প্রথম যে নামটা স্মরণ হয়েছিলো তা হলো আমান ভাই। মানুষটার সেই কথাগুলো সে ভুলতে চাইলেও তার কতৃক সৃষ্ট প্রচ্ছন্ন ভয়টা এখনো হৃদয়ে ঘাপটি মেরে আছে। উপরন্তু তার উপর একবার আক্রমণ। যদিও আক্রমণকারী হাজতে কিন্তু এর পেছনে যে আমান ভাইয়ের হাত নেই কি ভরসা! তারপর হুট করে একদিন মা ফিরে এলো। মায়ের ঠিক এভাবে ফিরে আসাটা তার মন সায় দিচ্ছে না। যুবাইদা তার থেকে কিছু লুকাচ্ছে এই বিষয়ে সন্দেহ নেই হুমায়রার। সব মিলিয়ে সে ভীত, সন্ত্রস্ত। সে দ্বিধায় জর্জরিত। হুমায়রা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ধীরে ধীরে এ যাবৎকালের সব ঘটনাগুলো বললো ফাইজানের কাছে। আমানের নাম শুনতেই ফাইজানের চোয়াল শক্ত হলো। কোমলতা নিমিষেই মিলিয়ে কাঠিন্য প্রকাশ পেলো। গম্ভীর স্বরে বললো,
"তুমি আমাকে জানাও নি কেনো?"
"আপনি ব্যস্ত ছিলেন"
"এতোটাও ব্যস্ত ছিলাম না যে নিজের স্ত্রীর আতঙ্কের কথা শুনতে পারবো না"
হুমায়রা কথা বাড়ালো না। ফাইজান কন্ঠের রোষ সে ভালো করেই উপলদ্ধি করতে পারছে। গাড়ির শান্ত হাওয়া উষ্ণ এবং গম্ভীর হয়ে উঠলো। ফরিদের অস্বস্তি লাগছে। ফলে সে ফাইজানকে বললো,
"ছাড়ো ফাইজান। মেয়েটি এমনিতেই আতঙ্কে আছে। আমরা বরং বাড়ি যাই"
ফাইজান মাথা নাড়ালো। পুরোটা রাস্তা কোনো কথা হলো না দুজনের ভেতরে। এতোদিন বাদে তাদের দেখা হলেও দুজন মৌন। ফাইজানের দৃষ্টি বাহিরের দিকে। তার কপালে শিরাটি দপদপ করছে। চোয়াল এখনো শক্ত। হুমায়রা কিছু বলার সাহস পেলো না। কারণ এখানে দোষটি তার। সে কথাগুলো লুকিয়ে গেছে। কিছু হয় নি ঠিক, কিন্তু হতে কতক্ষণ!
******
বাড়িতে খুব গম্ভীর আবহাওয়া। শামসু মিঞা কিছুদিন যাবৎ বেশ অসুস্থ। কাওছারকে ধরে নিয়ে যাবার পর থেকেই এমন অবস্থা। বৃদ্ধ শরীর যেনো ছেড়ে দিয়েছে সম্পূর্ণ। কারোর সাথে কথা বলেন না, খাওয়া দাওয়া করতে চান না। কিছু খেলেই উগড়ে ফেলেন। ঔষধ খেতেও অনীহা। তার দৃঢ় হাটু যেনো ঝুকে পড়েছে। আগে প্রায় ই হাটতে হাটতে বাজারে যেতেন৷ সমবয়সীদের সাথে আড্ডা দিতেন। চা খেতেন। কিন্তু এখন তেমন নন। সারাদিন নিজ ঘরে শুয়ে থাকেন। প্রতীক্ষিত চোখে তাকিয়ে থাকেন দূর আম গাছটার দিকে। আম গাছে পাতা ঝড়ে গেছে। মুকুল এখনো আসে নি। কারণ বসন্ত এখনো আসে নি। সেই পাতাঝরা মূর্ছানো গাছের পানে তিনি অধীর অপেক্ষায় চেয়ে থাকেন। কিসের এতো অপেক্ষা! মৃত্যুর! স্ত্রীর সাথে কথা বলেন না। রাশাদের সাথেও কথা বলেন না। যদি কথা হয় তাহলে তা হয় ইলহার সাথে। ইলহা তার যত্ন নেয়। সময় করে তার প্রেসার মাপে, ঔষধ বদলে দেয়। খাওয়া দাওয়াটার দিকেও তার নজর। শামসু মিঞা প্রায়ই তাকে শুধায়,
"তুমি কি কাঁচা আম খাইবা? জানো ওই যে ন্যাতা আম গাছডা আছে। ওইহানে পচ্চুর আম হয়। কিন্তু কেউ খায় না৷ কারণ হেব্বি টক। তুমি টক খাও?"
ইলহা কথার আগা মাথা পায় না। কিন্তু মৃদু হেসে বলে,
"হ্যা, খাই"
এদিকে শামসু মিঞার অবস্থার জন্য আতিয়া খাতুন দায় করে রাশাদকে। রাশাদ কঠিন না হলে হয়তো তার পরিবারটা এমন ক্ষত বিক্ষত হতো না। ঘরের মানুষকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। গ্রামে শামসু মিঞার ছিঃ ছিঃ হচ্ছে। মানুষটা একটু বাঁচতে চায় কিন্তু সেই সুযোগটাও তার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অথচ রাশাদ তার সিদ্ধান্তে অনড়। তার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয় না। কাওছার ছাড়া পেলেও তার স্থান এখানে হবে না, কারণ একটা মানুষকে এক বার সুযোগ দেওয়া যায় বারবার না। পাপকে প্রশ্রয় দেওয়াও পাপ। রাশাদ এই নোংরা মানুষটিকে আর বাড়িতে স্থান দিবে না। আতিয়া খাতুন প্রতিদিন তার সাথে কাওছারের আপিল নিয়ে আসে। আর প্রতিদিন রুঢ়ভাবে সে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে আতিয়া খাতুন স্বামীর কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেন কিন্তু স্বামী উত্তর দেন না। সে তাকিয়ে থাকে আমগাছটির দিকে। ইলহা এসব কিছুর মধ্যে পিষছে। কারণ আতিয়া খাতুন তার কাছে চার/পাঁচ বার কাওছারকে ছাড়ানোর দাবি করেছে। কিন্তু ইলহা সেই কথা শুনলেও রাশাদের সম্মুখে বলে না। কারণ রাশাদ এই ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে নারাজ। সে একরোখা। ইলহাও চায় না মানুষটির উপর অযাচিত বোঝা আসুক। কাওছার কখনোই শুধরাবার নয়। তাকে আনলে আবারো সে একই কাজ করবে। কিন্তু আবার মনে হয় বাবা তো, সন্তান হিসেবে এতোটা উদাসীন হওয়াও কি ন্যায্য! তখন মনে পড়ে নিজের মার কথা। মায়ের কথা আজকাল খুব মনে পড়ে। সকল মেয়ের ই স্বপ্ন থাকে, এই সময়টায় মায়ের কাছে থাকবে তার আদর যত্ন পাবে। কিন্তু ইলহার ভাগ্যে মনে হয় সেটা নেই। মায়ের কন্ঠটাও শোনা নসিবে নেই তার। পরক্ষণে হাত চলে যায় পেটে। মনে মনে আওড়ায়,
"তুই চিন্তা করিস না, ইনশাআল্লাহ আমি তোকে কাঁধছাড়া করবো না। আমি যা পাই নি, সবকিছু তোকে দিবো। দেখিস"
******
ফাইজান বাগানে বসে আছে। চটিহীন হাটতে ভালো লাগে এই ভোরে। হাটাহাটির পর সে পেপার পড়ে। আজ ও হাতে পেপার। চোখ শিরোনামে। ফরিদ তখন ই এলো। সারা রাত সে বাড়ির বাহিরে ছিলো। ফাইজানকে বসে থাকতে দেখেই সে এগিয়ে এলো। পাশের সাদা চেয়ারটা টেনে বসলো। শরীরটা ক্লান্ত। চোখজোড়া নির্ঘুম, রক্তিম। নেত্রপল্লব ঘুমদেবী বসে আছেন পাতা এক করে দেবার ইচ্ছেতে। ফাইজান বললো,
"কেটলিতে চা আছে খেতে পারো"
"আমি ঘুমোবো। চা খেলেই ঘুম ফুরুৎ"
"কাজ কতদূর"
"হয়েছে, কিন্তু একটু তাড়াহুড়ো হচ্ছে না। হিত অহিত হয়ে যেতে পারে"
এবার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো ফাইজানের। চোখ পেপার থেকে তুললো। ফরিদ নিভু স্বরে বললো,
"দেখো দেলোয়ার সাহেব তোমার মামা। আমান তার একমাত্র ছেলে। ছেলের ভবিষ্যত কালকুঠুরীতে কাটবে তিনি মেনে নাও নিতে পারেন। কেতাব চৌধুরীর সাথে উনি মিলে যদি যায়, আমার ভয় বুঝছো তো"
"তুমি কাল হুমায়রাকে দেখেছিলে?"
"হ্যা"
"এখন আমার কি আমার স্ত্রীর আতঙ্ক দূর করা উচিত হয়। এমনিও সে বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে"
ফরিদ মাথা নাড়ালো। সে আর কথা বাড়ালো না। বলে লাভও হবে না। তাই উঠে দাঁড়ালো। যেতে যেতে বললো,
"হুমায়রার প্রতি তুমি খুব দায়িত্বশীল, ভালো লাগছে"
বলেই যাবার জন্য পা বাড়াতেই ফাইজান বলে উঠলো,
"তোমার কখনো রাগ হয় না ফরিদ ভাই?"
ফাইজানের প্রশ্নে অবাক কন্ঠে শুধালো,
"কেনো বলতো?"
"এই যে আমি হুমায়রার প্রতি এতো দায়িত্বশীল হলেও হাফসার প্রতি বরাবর ই ছিলাম একটা বিকারহীন মানুষ"
ফাইজানের এহেন কথায় মৃদু হাসলো ফরিদ। গাঢ় স্বরে বললো,
"হয়, রাগ নয় আফসোস। আফসোস আমার বোনটা ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলো। আমি তোমাকে দোষাচ্ছি না। ভালোবাসা তো জোড় করে হয় না। তুমি তাকে সেই ভালোবাসা দতে পারো নি, যা ওর প্রাপ্য ছিলো।"
"অথচ এই ভুল মানুষটার জন্যই সে আজ নেই"
ফাইজানের কন্ঠে দৃঢ় অপরাধবোধ। ফরিদ কিছুক্ষণ মৌন রইলো। হয়তো কথাটির জন্য৷ প্রস্তুত ছিলো না। তারপর মৌনতা ভেঙ্গে বললো,
"সে মারা গিয়েছে কারণ তার ভাগ্যে তেমন মৃত্যুই ছিলো। মৃত্যুতে তো মানুষের হাত থাকে না। পুরোনো কাসন্দি ঘেটে কি লাভ। শত্রু তো আমারও ছিলো। থাক, আমি ঘুমাবো"
ফরিদ পা বাড়ালো ঘরের দিকে। তার চোখজোড়া জ্বলছে। এই জ্বলন কি ঘুমের নাকি বুকের ছাই চাপা দহনে বুঝতে পারলো না সে।
****
ঘরে ফিরলো ফাইজান। হুমায়রা তখন আয়নার সম্মুখে চুল মুছছে। কেবল গোসল সেরে এসেছে সে। তার মুখখানা ভেজা, স্নিগ্ধ। তাদের চোখাচোখি হলো আয়নার ভেতর। ফাইজানের কিছু সময় তাকে দেখলো। তারপর দ্রুত পায়ে তার কাছে গেলো। পেছন থেকে দৃঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরলো। মুখ গুজলো হুমায়রার কাঁধে। মেয়েটিকে ভোরের শিশিরের ন্যায় লাগছে। নিষ্পাপ, কোমল। হুমায়রার সারা অঙ্গে তড়িৎ প্রবাহিত হলো যেন। কেঁপে উঠলো ঈষৎ। ফাইজান তখন বললো,
"তুমি আর ভয় পাবে না। ভূলে যাবে না, তোমার স্বামী ফাইজান ইকবাল"
হুমায়রা স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। ফাইজানের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস তার শরীরকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। রক্তের স্রোত বইলো মেরুদন্ড বেয়ে। এর মাঝেই হুমায়রার ফোনটা বেজে উঠলো কর্কশ ভাবে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছেড়ে দিলো ফাইজান। হুমায়রা স্ক্রিনে দেখলো "ভাইজান" ভেসে আছে। ফোনখানা ধরতেই ভেসে এলো কান্নার সুর। ভাঙ্গা, মূর্ছিত স্বরে ভাইজান বললো,
"দাদা আর নাই".......
.
.
.
চলবে......................................................................