#অতঃপর_তুমিহীনা_আমি
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব _১
"এই যে বাবু! কি ভাবছেন? গাড়িতে কি উঠবো নাকি চইলা যাবো?"
গাড়িতে বসে থাকা আসাদকে উদ্দেশ্য করে মায়া বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো কথাটা। আসাদ মায়াকে দেখে একটু অবাকই হয়েছে। মায়ার বয়স আঠারো কি ঊনিশ বছর হবে, এত কম বয়সে কী করে এসব কাজে জড়িয়েছে সেটা নিয়ে একটু ভাবছিল আসাদ।
"হুম গাড়িতে উঠে বসো।"
আসাদ এমনিতে বেশ রাগী লোক। কিন্তু মায়ার চেহারার দিকে তাকিয়ে কেনো যেন আসাদের মায়া হলো। তাই বেশ শান্ত ভঙ্গিতে মায়াকে গাড়ি তে উঠতে বলে আসাদ। মায়া বলা মাত্রই গাড়িতে উঠে আসাদের পিছনের সিটে বসে। আসাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়ি চলছে। মায়া জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রাতের শহর দেখছে।
"আচ্ছা তোমার নাম কি?"
"মায়া।"
এর আগে ও আসাদ বিভিন্ন মেয়েদের সাথে মেলামেশা করেছে। কিন্তু মায়াকে তাদের থেকে আলাদা লাগছে। আসাদ আসলে কম কথা বলে।তাই মায়া কে চুপ থাকতে দেখে আসাদের বেশ ভালো লাগছে। অন্য কেউ হলে কত প্রশ্ন করতো আসাদকে। সেদিন সিনথিয়া নামের একটা মেয়েকে ভাড়া করেছিল আসাদ। গাড়িতে উঠে তার কত প্রশ্ন!
"কী গো সাহেব! বাড়িতে কি বউ নাই? নাকি বাপের বাড়ি গেছে! আর আপনি সেই সুযোগে আমারে ঘরে নিতাছেন?"
সিনথিয়ার এমন প্রশ্নে আসাদ রাগে অগ্নির্শমা হয়ে গিয়েছিল সেসময়। এক পর্যায়ে সিনথিয়াকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল সে।
মায়াকে চুপচাপ দেখে কেনো জানি আসাদের কথা বলতে ইচ্ছে করছে।
"এই মেয়ে তুমি তো একটুও সাজগোছ করোনি দেখছি!"
"আমার নাম মায়া,নাম ধরে ডাকলে বেশি খুশি হবো। আর সাজ? সাজগোছ করার ইচ্ছে নেই আমার। রঙ-চঙ মেখে বাপের বয়সী পুরুষের সাথে শুতে মোটেও ভালো লাগেনা।"
মায়া কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
মায়ার কথাগুলো যেনো আসাদের বুকে লাগলো।আসলেই কি পুরুষতন্ত্রিক সমাজ ই মেয়েদের এই অবস্থার জন্য দায়ী? মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করে আসাদ। তবে মায়ার মধ্যে আত্নসম্মানবোধ দেখে ভালোলাগে আসাদের। সাধারনত এসব পেশার মেয়েদের মাঝে এরকম আত্মসম্মানবোধ দেখেনি আসাদ।
আসাদ ঢাকা শহরের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। বয়স চৌত্রিশ বছর,তবে দেখলে মনে হয় পঁচিশ/ছাব্বিশ বছরের যুবক। গায়ের রং শ্যামলা তবে চেহারার গঠন বেশ সুন্দর। আসাদ বাইরের জগতে যতটা সফল বিজনেসম্যান,ব্যাক্তিগত জিবনে ততটাই অসফল একজন মানুষ।
"আমরা এসে গেছি,গাড়ি থেকে নামতে হবে এবার।"
আসাদ গাড়ি থেকে নামে। মায়াও গাড়ি থেকে নেমে আসাদের পিছনে দাঁড়ায়। শীত আসতে না আসতেই ভালো ঠান্ডা পড়েছে বাইরে। মায়ার বেশ শীত করছে। আসাদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একবার ভাবে গায়ের কোটটা খুলে মায়াকে দেবে। আবার কী যেনো ভেবে আর দিলো না।
"আমার সাথে ভিতরে চলো। আর হ্যাঁ কারো সাথে কোন কথা বলবে না।"
আসাদ মায়াকে আদেশের সুরে বললো। মায়া লক্ষ্মী মেয়ের মতো শুধু চুপচাপ শুনছিলো। আসলে মায়ার শরীরটা হঠাৎ করেই বেশ খারাপ লাগছে।কিন্তু সে কথা বলার মতো কোনো মানুষ পৃথিবীতে নেই মায়ার। আসাদ কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথে একজন মাঝ বয়সী পুরুষ দরজা খুলে দিলেন।
"স্যার আইজ কি এই আফা থাকবো?"
"তোমাকে না কতবার বলেছি বাইরের কারো সামনে কোন প্রশ্ন করবে না? যাও ভিতরে যাও।"
আসাদের কথায় লোকটা সোজা ভিতরে চলে গেলেন। মায়া সবটা নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে দেখছিলো এতক্ষন। আসাদ এবার মায়াকে ইশারা করে বলে,
"আমাকে ফলো করো।"
"ঠিক আছে বাবু।"
শহরের বিখ্যাত ব্যাবসায়ী শাহ-আলম খান গতকাল রাতে খুন হয়েছে। ভিক্টিম তার নিজ বাড়িতেই খুন হয়েছে। উনার স্ত্রী শায়লা খান মেয়ে নিশাত খানকে সাথে নিয়ে উনার বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন।যার জন্য শাহ আলম বাড়িতে একাই ছিলেন। ঘরে কোনো অপরাধের আলামত পায়নি পুলিশ। তাছাড়া কোন পূর্ব শত্রুতার ঘটনাও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা।
"এ নিয়ে শহরের বুকে দুজন বড় ব্যাবসায়ী খুন হয়েছে। প্রথমে রিয়ান রহমান তারপরে শাহ-আলম খান।"
এস.আই.সিফাত তার সামনে বসে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অতন্ত কঠোরভাবে বললেন কথাগুলো।
পুলিশ কর্মকর্তা শাহিন ভয়ে ভয়ে বলেন,
"স্যার আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।"
"শাহিন সাহেব এসব কথা আমাকে বললে তো কাজ হবে না। আমাদের উপর তো জনগনের আস্থা উঠে যাচ্ছে।"
"জ্বি স্যার আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ।"
"প্রয়োজন হলে স্পেশাল ক্রাইম অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।"
"ওকে স্যার। আমরা ডিটেকটিভ অফিসারদের সাথে কথা বলছি।"
আসাদ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সোজা নিজের রুমে প্রবেশ করে। মায়াও আসাদের পিছু পিছু রুমে ঢোকে।
"তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আর শোনো,রুমের বাইরে বেরোবে না।"
"আইচ্ছা।"
আসাদ মায়াকে বসিয়ে রেখে ওয়াশরুমে চলে যায়।
মায়া ততক্ষনে পুরো ঘরটায় ভালো করে নজর বুলিয়ে নিচ্ছে। এমন সময় দরজার বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনে মায়া বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।
"স্যার রাতের খাবার নিয়ে এসেছি। ভিতরে কি আসবো?"
বাইরে থেকে মুনসুর আলী আসাদকে উদ্দেশ্য করে বললো। কথা বলবে নাকি চুপ করে থাকবে সেই নিয়ে দোটানায় পরে গেছে মায়া। মায়া একবার মনস্থির করে দরজা খুলে খাবারটা ঘরে রেখে যেতে বলবে। কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরে আসাদের বারণের কথা। মায়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে শুধু।
এরমধ্যেই আসাদ ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়েছে। মায়া আসাদকে কিছু বলতে চায়! কিন্তু আসাদ তার আগেই মুনসুর চাচার উদ্দেশ্যে বলে,
"দরজার বাইরে রেখে যাও"
"জি ঠিক আছে। "
মুনসুর আলী চলে যান। মায়া একটু অবাক হয়।লোকটা কেমন! খাবারটা দরজার সামনে রাখতে বললো!
"এবার বলো,কি বলতে চাচ্ছিলে?"
"না মানে উনি কতক্ষন ধইরা ডাকতেছিলেন তাই।"
"উনি আমার দেখাশোনা করেন,মনসুর আলী।"
"ওহ আইচ্ছা।"
আসাদ দরজা খুলে খাবারটা তুলে মায়াকে খেতে বলে।
"চাইলে খেয়ে নিতে পারো।"
"না বাবু আমার ক্ষিধা নাই। আমনে খান।"
মায়ার কথার কোনো উওর না দিয়ে আসাদ মনসুর আলীকে ডাকেন,
"চাচা খাবার নিয়ে যাও।"
আসাদ এমনিতে রাতে কিছু খায়না। আজ শুধু মায়ার জন্য খাবার দিতে বলেছিল। মনসুর আলী বাধ্য ছেলের মতো এসে চুপ করে খাবার নিয়ে চলে যান আবার। আসাদ পুনঃরায় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। মায়া আসাদের দরজা বন্ধ করার দিকে তাকিয়ে আছে। আসাদ ফিরে তাকাতেই মায়া অন্য দিকে মুখ ফেরায়। আসাদ বিছানার এক পাশে বসে।
"মায়া যে কাজের জন্য তোমাকে নিয়ে এসেছি তুমি কি তাতে রাজি?"
"আমার আবার মতামত!"
মায়া আসাদের কথায় হো হো করে হেসে ওঠে।আসাদ যদিও এই কাজে প্রথম না। তবু একটা অনুশোচনাবোধ অন্তরে নাড়া দিচ্ছে ওর। আসাদ এবার মায়ার কাছে গিয়ে বলে,
"দেখো মায়া,আমি মনে করি নিজের বউকে স্পর্শ করতে হলেও অবশ্যই তার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। সেখানে আমি তো তোমার অপরিচিত পুরুষ।"
"আমনে মনে হয় ভুলে যাইতেছেন আমি আর পাঁচটা সাধারন মাইয়ার মতোন নাহ। আমার পেশাই নিজেকে বিক্রি করা। সেইখানে কত পুরুষ আইলো গেলো আর আমনে জিগান আমার মত আছে কি না? আমরা পতিতা! আমাগো কোন নিজস্ব মত থাহে না ।"
"তারপর ও বলবো,প্রত্যেকটা মানুষের নিজস্ব মত আছে।"
"তাইলে বাবু আমি যদি বলি আইজ আমি এইসব করবো না,আমনে শোনবেন?"
মায়ার কথা শুনে আসাদ একটু চুপ করে থাকে।আসাদের শরীরে কামনার আগুন আর মনে মায়ার অসহায় মুখটা গেঁথে আছে।
এই মুহুর্তে মায়ার প্রশ্নের ঠিক কি উওর দেবে সেটা নিয়ে দোটানায় পরে গেছে আসাদ। মায়া আসাদের দিকে তাকিয়ে আবারো বলে,
"জানতাম বাবু উওর দিতে পারবেন না! আহেন কাম শুরু কইরা দেন। ফাও টাইম নষ্ট করবেন ক্যান?"
"না,আজ আমরা শুধু গল্প করবো। তোমার যেদিন ইচ্ছে হবে সেদিন ই এসব করবো।"
আসাদের এমন কথা শুনে মায়া অবাক হয়ে তাকায় আসাদের চোখের দিকে। যে চোখে মায়া এতক্ষন তীব্র কামনার আগুন দেখেছে,সেই চোখে এখন শীতলতার আভাস দেখছে। আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষ মায়াকে ছেড়ে দেয়নি। বরং নেকড়ের মতো খুবলেছে।
চলবে........................