বন্য প্রণয় - পর্ব ২৪ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


" আপনি গতকাল বাসায় এসেছিলেন, সেটা মাত্র শুনলাম আমি। "
ফোনের অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসলো অনিক। শান্তভাবে বললো,
" অভিমান হলো?"
" না। "
" আশ্চর্য! অভিমান হওয়ার কথা ছিল। "
" যেহেতু বিয়ের কথা বলতে এসেছিলেন, সেজন্য আর অভিমান করিনি।"
" এতো উতলা হয়ে আছো বুঝি?"
তৃষা লজ্জা পেলো। এমন করে কেউ কথা বলে? প্রসঙ্গ এড়াতে অন্য কথা জুড়ল সে।
" আপনার ডাক্তারি কেমন চলছে? "
" আগের মতোই! তবে তুমি আসার পরে ধীর গতিতে চলবে কয়েকদিন। প্রথম প্রথম একা থাকতে তো বিরক্ত লাগবে তোমার। তাই আমি সঙ্গ দেবো।"
" ঠিক আছে দেখা যাবে। এখন রাখলাম। "
" ওকে টাটা।"
" হুম। "
কল তবুও কাটলো না দু'জন। মিনিটখানেক চুপচাপ থাকার পরে তৃষা নিজেই কল কেটে দুপুরের রান্নাবান্নার কাজে মা'কে সাহায্য করতে এগোল। 

চৈত্রের তপ্ত দুপুর। গরমে হাসফাস করছে সমস্ত প্রাণি ও উদ্ভিদ কূল। আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি হলেই যেনো স্বস্তি পেতো সবাই। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিল অনিমা। পিংক কালারের গাউন পরেছে সে। চিন্তাভাবনা যখন সম্পূর্ণ অন্য দিকে তখনই ঘরে প্রবেশ করলো আয়ান। আয়ানের উপস্থিতি টের পায়নি অনিমা। আয়ান স্থিরচিত্তে দাঁড়িয়ে দেখছে ষোড়শী কিশোরীকে। এই ক'দিনে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি তার মধ্যে। কিন্তু এই তীব্র গরমে পা পর্যন্ত গাউন পরে? অনিমা পরেছে। এভাবেই কেটে গেলো মিনিট দশেক। এরমধ্যেই অনিমা জানালা থেকে সরে উল্টো ঘুরতেই দেখে আয়ান স্যার দাঁড়িয়ে আছে। দু'জনের চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো আয়ান। অনিমা একইভাবে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকেই পড়ার টেবিলে গিয়ে বসলো। আয়ানও বসলো তবে সময় নিয়ে। 
" কেমন আছো অনিমা?"
" যেমন দেখে গেছিলেন তেমনই আছি।"
অনিমা হেসে বললো। আয়ান চমকাল। কীরকম দেখে গিয়েছিল সেটা ভাবতে লাগল। কিন্তু ভেবে কিছুই পেলো না। শেষমেশ অন্য দিকে আলোচনা ঘুরিয়ে দিলো। 
" পড়ালেখার কী খবর? পরীক্ষার তো কয়েকদিন বাকি!"
" খুব ভালো। আপনার আপু কেমন আছেন? "
অনিমা বই খুলে সামনে রাখল। আয়ান বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বললো, 
" আগের চেয়ে অনেক ভালো, আলহামদুলিল্লাহ। "
এতদিন ঠিকঠাক মতো পড়াশোনা করেছে কি-না ধরলো আয়ান। লেখাপড়ার উন্নতি দেখে বেশ ভালো লাগছে আয়ানের। তবে অনিমা আগের থেকে বেশি খেয়াল করছে আয়ানকে। কেমন ঘোলাটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আয়ানের দিকে। আয়ান সেটা বুঝতে পারলেও ধরা দেয় না। আগে নিজের অনুভূতি নিজে বুঝুক। তারপর অনিমাকে বলা যাবে। তাছাড়া মেয়েটার এসএসসি পরীক্ষা সামনে। 

আগের থেকে তাহমির শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে এখন। দাগগুলো আছে তবে ব্যথা একেবারে কমে গেছে। নিয়মিত ঔষধ সেবন ও যত্নের ফলেই এতটা দ্রুত ব্যথা থেকে মুক্তি পেলো তাহমি। সবকিছুই সহনের জন্য। ছেলেটা দিন-রাত এক করে বউয়ের সেবা করে গেছে। এ ক'দিনে সহনকে নতুন করে চিনেছে তাহমি। স্ত্রী'র অসুস্থতায় স্বামীর ভালোবাসা বোঝা যায়। হাতেগোনা আর দুই দিন বাকি তৃষার বিয়ের। ও বাড়িতে তৃষার বাবা-মা, আয়ান সবাই ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছে। আগামীকাল যাবে সহন ও তাহমি। 

বিকেলবেলা। আসরের নামাজ শেষে তাহমির ঘরে এসেছে ফরিদা। সহন একটু কাজে বেরিয়েছে। তাহমি বিছানায় শুয়ে ছিল। শাশুড়ীকে ঘরে ঢুকতে দেখে ব্যস্তসমস্ত ভঙ্গিতে উঠে বসলো। 
" উঠে বসতে গেলি কেনো? "
" সারাদিন তো শুয়ে থাকি মামুনি। আমি তো এখন ভালো হয়ে গেছি। তুমি এসেছো বলে একটু বসলাম। "
ফরিদা খানও তাহমির পাশে বসলেন। 
" কাল তো ও বাড়িতে তোরা দু'জন যাবি,সাবধানে থাকিস তুই। আমরা বিয়ের দিন যাবো একেবারে। "
" ঠিক আছে মামুনি।"
হঠাৎ তাহমির চুলের দিকে নজর গেলো ফরিদার। চুলে আঙুল ছুঁইয়ে দেখলেন একটু।
" তোর চুলে তো তেল নেই একটুও। চুলগুলো অযত্নে শেষ হয়ে গেছে এই ক'দিনে।"
" তাতে কিছু হবে না। "
ফরিদা উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গেলেন।
" পাগলি একটা! দাঁড়া আমি তেল নিয়ে আসছি। তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দিচ্ছি। "
" তুমিও পারো মামুনি। কোনো শাশুড়ী যে এতো ভালোবাসে কেউ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করত না।"
তাহমির পেছনে বসে দু-হাতে তেল নিয়ে চুলে ম্যাসেজ করতে লাগলেন ফরিদা। ভালো করে তেল লাগিয়ে চিরুনি নিলেন হাতে। 
" বিশ্বাস করতে হবে না কাউকে। এরপর থেকে নিজে না পারলে আমাকে বলবি চুলে তেল লাগিয়ে দিতে। "
" ঠিক আছে। "
ছেলের বউয়ের সাথে আরও কিছুক্ষণ আলাপচারিতা সেড়ে ঘর ত্যাগ করেন সহনের মা।

রাত নেমেছে শহরের বুকে। তাহমি আগেভাগে খাবার খেয়ে রাতের ঔষধ খেয়ে নিয়েছে। সহন বাসায় ফিরলো রাত দশটায়। তাহমির ভীষণ মন খারাপ লাগছিল। দুপুরে বেরিয়ে রাতে ফিরলে কী ভালো লাগে? ডিনার করে ঘরে এসে দরজা আঁটকে দিলো সহন। তাহমি মুখ গোমড়া করে শুয়ে আছে। সহন বাইরের পোশাক বদলে হাতমুখ ধুয়ে আসলো। আজকে যে তার ঘরণী রাগ করবে সেটা আগেই বুঝেছিল সে। কিন্তু কী করবে? এতদিন বাসায় থাকায় কোনো কাজ করতে পারেনি। আজকে তাই একটা দরকারি কাজে এতক্ষণ বাইরে থাকতে হয়েছিল। তাহমিকে চুপ করে থাকতে দেখে পাশে উঠে বসলো সহন। নড়েচড়ে অন্য দিকে এগিয়ে শোয়ার চেষ্টা করলো তাহমি৷ কিন্তু সহন দিলো না সেদিকে সরতে। 
" রাগ করেছো? না-কি অভিমান? "
তাহমি চুপ করে রইলো তবুও। সহন ঝুঁকে ললাটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তবুও তাহমি তার দিকে দৃষ্টিপাত করলো না। কিছু একটা ভেবে পাশের টেবিলের উপর থেকে একটা গোলাপ নিয়ে এসে দাঁড়াল সহন। 
" আমি আমার একমাত্র ঝগরুটে এবং রোমান্টিক বউটাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। সে কি আমাকে একটুও ভালোবাসে?"
তাহমি ফিক করে হেসে উঠলো সহনের দিকে না তাকিয়েই। এবার ফিরলো সহনের দিকে। হাতে লাল গোলাপ দেখে মুচকি হাসলো। উঠে বসলো তাহমি।
" ইয়েস! আই লাভ ইউ টু।"
গোলাপ ফুল হাতে নিলো তাহমি। সহন মাথা চুলকে পাশে বসলো। কেমন কেমন করছে লোকটা। তাহমি ঠিক বুঝতে পারছে না সহনের কী হয়েছে! তাই নিজে থেকে জিজ্ঞেস করলো, 
" কী হয়েছে তোর? এরকম ছটফট করছিস কেনো?"
" একটা কথা বলবো?"
অস্বস্তি নিয়ে প্রশ্ন করলো সহন। তাহমি অবাক হলো তার আচরণে। বিস্ময় নিয়ে শুধালো, " হ্যাঁ বল। "
" আমি তোকে জড়িয়ে ঘুমালে কষ্ট হবে তোর?"
" এই কথা? "
" উঁহু। "
" তাহলে?"
" কতদিন হলো..."
তাহমি ঠোঁট টিপে হাসছে এবার। পুরুষ মানুষ এভাবে কী বলতে পারে ঠিক বুঝে ফেলেছে তাহমি। 
" কী হলো বলবি তো?"
সহন বলতে পারছে না। তাহমি তো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এখন কীভাবে বলবে সে আদরের কথা? 
" কিছু না। আয় ঘুমোতে আয়। কালকে আবার ও বাড়িতে যেতে হবে তো।"
" হ্যাঁ। তুই বাতি নিভিয়ে শুতে আয় তাহলে। "
সহন তাহমির কথামতো বাতি নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে দিলো। কিন্তু পরক্ষণেই অবাক হলো। তাহমি এক হাত সহনের বুকে রেখেছে। অন্য হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সাহস পেয়ে বুকে রাখা হাতটা ধরে নিচের দিকে নামিয়ে দিলো সহন৷ তাহমি তার আঙুল দিয়ে সহনের উদরে স্লাইড করছে। সহন আর স্থির থাকতে না পেরে তাহমির দিকে ফিরে শুয়েছে। ডিম লাইটের মৃদু আলোতে ভেজা ঠোঁট জোড়াকে নিজের ঠোঁট দিয়ে আঁকড়ে ধরে মধু পান করতে লাগলো সে। সাথে এলোমেলো ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে তাহমিকে। মিনিট পাঁচেক পরে থামলো দু'জন। হঠাৎ মনে হলো মেয়েটা এখনো বেশ দূর্বল। সহন নিজেকে শান্ত করে নিলো সময় নিয়ে। তাহমিকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে রইলো চুপচাপ। তাহমি বুঝতে পারছে না হঠাৎ কী হলো। তাই নিজে থেকে জিজ্ঞেস করলো, " কী হয়েছে? "
" আজকে না। কিছুদিন পর। ঔষধ খাচ্ছিস,রাতে ঘুম দরকার তোর।"
তাহমি বুকে আস্তে করে কামড়ে দিলো সহনের। সহনের খারাপ লাগছে। মেয়েটাকে উত্তে**জিত করে দিয়ে এভাবে দূরত্ব বাড়িয়ে কষ্ট দিলো। তারচে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে কাছাকাছি না আসাই উচিত ছিল। 
.
.
.
চলবে.........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন