বন্য প্রণয় - পর্ব ৩৪ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


সন্ধ্যা নেমেছে। পাখিরা নিজ নিজ গন্তব্যে উড়ে যাচ্ছে। শহরের যন্ত্র মানবেরা কর্মক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে যার যার বাসার দিকে এগোচ্ছে। সারাদিন কাজ করে এই সময়টাতে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। আতাউল খানও তার ব্যতিক্রম নন। অফিস থেকে বেরিয়ে নিজের প্রাইভেট কারে চেপে বসেছেন ভদ্রলোক। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে সাবধানে। অফিসে আজ একটা বড়ো ডিল হয়েছে। সেজন্য ভদ্রলোকের মনটা বড্ড চনমনে আজ। সবার জন্য আইসক্রিম আর ফুচকা কিনে নিয়েছেন অফিস থেকে বেরিয়েই। পাঁচ মিনিট বাদেই বাড়ির সামনে পৌঁছাবেন। 
বসার ঘরে বসে লুডু খেলছে ছেলের বউ ও শাশুড়ী। সহন অবশ্য পাশে বসলেও তার মনোযোগ টিভিতে খেলার সংবাদের দিকে। 
" মামুনি হবে না,হবে না, হবেই না বললাম! "
তাহমি উত্তেজিত হয়ে গেছে। খেলায় টানটান উত্তেজনা এখন। শেষ একটা গুটি আছে দু'জনেরই! ফরিদা খানের ঘনঘন ছয় পরছে বলে তাহমির সন্দেহজনক আপত্তি। ফরিদা হাসলেন তাহমির কথায়। আবারও ছয় মারলেন তিনি। পরপর দুই ছক্কা দুই! 
" কেনো হবে না? আমি তো ইচ্ছে করে ছক্কা মারি না। এমনি পড়লে কি আমার দোষ? "
" উফ! মা তোমরা একটু আস্তে কথা বলবে? একটু মন দিয়ে খবরও শুনতে পারছি না। "
সহন ওদের উচ্চস্বরে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো। তাহমি উঠে গিয়ে টিভির প্লাগ উঠিয়ে ফেলে ভ্রু উঁচিয়ে বলে, 
" এখন ঘরে গিয়ে ফোনে যতো ইচ্ছে খবর শোন যা। উনার জন্য আমরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকবো মনে করছে হুহ্। "
" তাহমি টিভি অন কর বললাম। নইলে কিন্তু তোর খবর আছে। "
" তুই যা নয়তো তোর খবর আছে। "
" তুই টিভি অন কর বলছি! এখুনি করবি,এক সেকেন্ডও সময় দিবো না।"
সহন ঠোঁট টিপে হেসে বললো। 
" তোর সময় আমার লাগবেও না। এই বসলাম আবারও খেলতে। পারলি টিভি অন করিস,বুঝিয়ে দিবো মজা। "
এদের ঝগড়া দেখে ফরিদা নিঃশব্দে হেসে যাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে তাহমিকে বলবে তার একটা নাতীনাতকুর লাগবে। কিন্তু এই মেয়ে তো নিজেই এখনও বাচ্চাদের মতো করে! সে আবার কীভাবে একটা বাচ্চা ক্যারি করবে? অবশ্য বয়স অনুসারে বেবি নেওয়ার মতো আর লালন পালন করার মতো ক্ষমতা আছে তাহমি। ফরিদার ভাবনার আর তাহমি ও সহনের ঝগড়ার ব্যাঘাত ঘটল কলিং বেলের আওয়াজে। নড়েচড়ে উঠলো দু'জন। ফরিদা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। বাবাকে ঢুকতে দেখে তাহমি ও সহন দু'জনই ভদ্র হয়ে বসে আছে। দেখে কেউ বলতে পারবে না এঁরা দু'জন একটু আগে ঝামেলা করছিল। 
" ফরিদা এই আইসক্রিমগুলো তোমরা আগে খেয়ে নাও। তারপর ফুচকা খেও। ওদের দাও তুমিও খাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।"

আতাউল ফরিদার হাতে খাবারগুলো দিয়ে বললেন।
" হ্যাঁ যাও তাহলে।"
 ফরিদা হাতে হাতেই আইসক্রিম দিলো তাহমি ও সহনকে। আইসক্রিম আর ফুচকা সবারই ভীষণ প্রিয়। তাহমির হঠাৎ করে তৃষার কথা মনে পড়লো। মেয়েটা ভীষণ আইসক্রিম পাগল। 

অনিমাকে পড়াচ্ছে প্রায় সপ্তাহখানেক হয়ে গেছে। এরমধ্যে আয়ানকে অনেকভাবে জ্বালিয়ে মেরেছে অনিমা। কখনো টেবিলের নিচ থেকে পা দিয়ে পা ঘষে আবার কখনো হুটহাট জড়িয়ে ধরে কিস করে। লেখাপড়ার থেকে তার আয়ানের দিকে মনোযোগ প্রবল। নেহাৎ অনিমার বাবা ভালো এবং ব্যস্ত মানুষ বলেই সবকিছু টের পাননি এখনো। কিন্তু টের পেতে কতক্ষণ? একজন বেকার ছেলের সাথে কোনো পরিবার তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে চায় না, চাইবে না। এটাই সমাজের স্বাভাবিকতা। রাতের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে শহরকে। আয়ান আজ নিজে থেকেই রাতে আসবে বলেছিল অনিমাকে। সেজন্য তো অনিমা মহাখুশি। কখন থেকে সেজেগুজে বসে আছে আয়ানের জন্য। বললো পাঁচ মিনিটে আসছে, ছয় মিনিট হলো তবুও আসার নাম নেই! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হিসেব কষছে সে। হঠাৎ বেলকনিতে কিছু একটা পড়ার শব্দে নড়ে উঠলো অনিমা। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝলো নিশ্চিত আয়ান এসেছে। হ্যাঁ আয়ান এলো ঘরে। 
" বাহ আজকে এতো সাজগোজ?"
আয়ান অনিমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো। অনিমা সময় নিলো না উত্তর দিতে। আয়ানের কোলে উঠে বসে বললো, " তুমি নিজে থেকে দেখতে এলে তাই। "
" আমি তো আজকে শুধু দেখতে আসিনি।"
আয়ান অনিমার কোমরে বাম হাত রেখে বললো। ডান হাত অনিমার ঘাড়ে আলতো করে ছুঁতে ব্যস্ত।
 " কী করতে এলে তাহলে?"
" তোমাকে আদর করবো। এতটা কাছাকাছি যাবো যতটা গেলে তুমি তৃপ্তি পাবে।"
আয়ান হেসে বললো। অনিমা ঘাবড়ে গেলো কিছুটা। আয়ানের স্পর্শ কেমন লাগছে হুট করে। অনিমা উঠতে চাইল কোল থেকে কিন্তু আয়ান ছাড়ল না।
" আদর করো ঠিক আছে কিন্তু.... "
" কীসের কিন্তু? শুধু কিস করলে আর জড়িয়ে ধরলে হবে? আজ তোমাকে অন্য কিছু দিবো।"
" ছাড়ো আমি উঠবো আয়ান।"
" কেনো? এইভাবে আদর করলেও তো চমৎকার হবে ! এভাবেই শুরু করি চলো।"
অনিমা লজ্জায় নুইয়ে গেলো। চোখ তুলে তাকাতে পারছে না আয়ানের দিকে। চেনা আয়ানকে বড্ড অচেনা লাগছে আজ। ভয় লাগছে মেয়েটার। হঠাৎ করেই মনে পড়ে গেলো বান্ধবীর কথা। ক'দিন আগেই বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড জোর করে ধর্ষণ করেছিল বান্ধবীকে। অনিমা খুব ছটফট করতে শুরু করেছে এখন। চেহারায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। 
" আয়ান এসব কিছু করবো না। প্লিজ ছাড়ো!"
" উঁহু! তুমিই তো বলো তোমাকে আদর করি না? সারাক্ষণ পাগল হয়ে থাকো। আসো সব কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছি। "
আয়ান কোমর থেকে উদরে, উদর থেকে ধীরে ধীরে বক্ষ বিভাজনে এসে থামাল তার হাত। অনিমা করুন চোখে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ান বুঝেও বুঝল না কিছু। পেছন থেকে কামিজের চেইন খুলে ফেললো এক টানে। অনিমার দু-চোখ ছলছল করছে। আয়ানের দৃষ্টি এড়ায়নি সেটা। 
" আমি এসব করতে চাই না। প্লিজ জোর করো না। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে তোমার স্পর্শ। "
" ভয় লাগছে? "
অনিমা চুপ করে রইলো আয়ানের প্রশ্নে। ততক্ষণে চোখ গড়িয়ে জল আয়ানের হাতে পরেছে। বিষয়টা আর এগোলো না আয়ান। কামিজের চেইন আঁটকে কোল থেকে পাশে নামিয়ে বসালো অনিমাকে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে অনিমা। আয়ান হাসছে ওর অবস্থা দেখে। বাচ্চা মেয়ে এমনিতে উতলা হয়ে থাকে। অথচ জানেই না এতো উতলা হলে কী করতে হয়। এটাও জানে না পুরুষ মানুষকে এতটা পোড়াতে নেই। পোড়াতে গেলে যে নিজেকেও পুড়তে হবে সেসব বোঝার ক্ষমতা অনিমার নেই। আয়ান বিছানা থেকে উঠে টেবিলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো অনিমাকে। অনিমা সময় নিলো না পানি পান করতে। ঢকঢক করে সবটুকু পানি নিঃশেষ করে ফেললো। আয়ান একটু দূরে বসেছে। সময় দিলো কিছুটা অনিমাকে,যাতে স্বাভাবিক হতে পারে। মিনিট পাঁচেক পরে অনিমাকে টেনে আবারও নিজের কোলে বসালো। অনিমা চুপ করে আছে। চোখে চোখ রাখছে না।
" খুব বেশি খারাপ লেগেছে? সরি অনিমা। আমি আসলে ইচ্ছে করে এমন করেছি। "
অনিমা চোখ তুলে তাকাল আয়ানের দিকে। কিছুটা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আয়ান বুকে জড়িয়ে নিলো। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ফের বললো,
" লক্ষ্মীটি কেঁদো না। আমি তোমাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম সব সময় আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কতটা কষ্টকর হয়। তুমি বোঝো না,সব সময় ওরকম পাগলামি করলে আমি লাগামছাড়া হয়ে যাই? পুরুষ মানুষ আমি! নিজের প্রেমিকার এতো কাছাকাছি এসে, আশকারা পেয়েও নিজেকে সামলে রাখি কেবল তোমাকে পবিত্রভাবে পাবো বলে। তুমি একটু সাহায্য করবে না? পাগলামি করো কিন্তু এমনভাবে নিজেকে আমার সাথে আনবে না যাতে আমার সমস্যা হয়।"
অনিমা কিছুটা শান্ত হয়েছে। বিষয়টা বুঝতে সময় লাগলেও বুঝে গেছে আয়ান তার সাথে খারাপ কিছু করতো না। 
.
.
.
চলবে.........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন