আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ৩৫ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


অনিমা কিছুটা শান্ত হয়েছে। বিষয়টা বুঝতে সময় লাগলেও এখন বুঝে গেছে আয়ান তার সাথে খারাপ কিছু করতোনা। নিজেকে সামলে নিয়ে আয়ানের দিকে তাকাল অনিমা। ক্ষীণ স্বরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললো,
" আমি বুঝতে পারিনি আয়ান। আর কখনো ওরকম করবোনা। এভাবে রাতে ঘরে আসার জন্য জোরাজোরিও করবো না।"
আয়ান আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো অনিমার ললাটে। হেসে বললো, 
" তুমি দুষ্টমি না করলে আমার ভালো লাগবে না। তবে নিজেকে সামলে চলবে,যাতে আমার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে কষ্ট না হয়। আচ্ছা ভয় পেয়েছো খুব? "
" হুম। "
" কষ্ট পেয়েছো?"
" না।"
" কী করলে ভয় কমবে? "
" জড়িয়ে থাকো দুমিনিট। "
অনিমার কথায় জোরে হেসে উঠলো আয়ান। যার স্পর্শে ভয় পেয়েছে আবার তাকেই বুকে জড়াতে চাইছে। 
" ভয় লাগবে না?"
" উঁহু। বুকে না জরালে মনটা শান্ত হবে কীভাবে? জানো না ব্যথা যে দেয় আমরা তার বুকে মাথা রেখেই অশ্রু বিসর্জন দিতে পছন্দ করি?"
আয়ান আলগোছে জড়িয়ে নিলো অনিমাকে। পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো একবার। 
" বাব্বাহ! একেবারে বড়োদের মতো কথা বললে!"
" আমি কি ছোটো আছি? কলেজে ভর্তি হবো ক'দিন বাদেই। "
" ওওও। কলেজে ভর্তি হলে যে বড়ো হয় আগে জানা ছিলো না। "
হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজে লাফিয়ে উঠল অনিমা। চোখের পলকে আয়ানের কোল থেকে নেমে দাঁড়াল। দরজার বাইরে ওর বাবা ডাকাডাকি করছেন। আয়ানও ঘাবড়ে গেছে। 
" অনিমা? কার সাথে কথা বলছো? ভেতরে কে হাসছে?"
গুরুগম্ভীর কন্ঠে ডেকে যাচ্ছে অনিমার বাবা। আয়ান ঘামছে রিতীমত! অনিমাও চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কী করবে বুঝতে পারছে না কেউ। কিন্তু এভাবে চুপ করে থাকলে ঝামেলা বাড়বে বলে কমবে না। 
" অনিমা! আমি স্পষ্ট শুনেছি ভেতর থেকে কোনো ছেলের হাসির শব্দ আসছিল। তাই অহেতুক দেরি না করে দরজা খুলে দিলেই ভালো হয়।"

অনিমা ও আয়ান বুঝতে পারছে আজকে মহাপ্রলয় হবে। কীভাবে সামলাবে সেসব আয়ান?

ঘড়িতে সময় রাত তিনটে বেজে পনেরো মিনিট। বিছানার মাঝখানে বসে আছে তৃষা। হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেছে। অনিক পাশের ঘরে ঘুমায় এখন। দিনে দিনে সম্পর্কে দূরত্ব বেড়েছে। একটা সময় সবকিছু এতটাই অসহ্য লাগছিল তৃষার,যে স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক থেকে দূরে সরে এসেছে সে। শুধু বাইরের লোকজনের সামনে ওরা নিজেদের সাথে কথা বলে। এমনিতে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। তবে অনিক আগের মতো তৃষার কাছাকাছি আসতে চায় না এখন। বিষয়টা নিয়ে তৃষা মাঝে মধ্যে ভাবে কিন্তু তেমন সিরিয়াস ভাবেও না। বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো তৃষা। আজকে হঠাৎ অনিকের জন্য ভীষণ মায়া হচ্ছে তার। যাইহোক, মানুষটা তো ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার ভয়েই এমন আচরণ করে। তৃষা অনিকের ঘরের সামনে গিয়ে দেখে দরজা খোলা আছে। তবে রুম অন্ধকার! ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে ঘরে ঢুকল তৃষা। বেচারা তৃষার ওড়না বুকের উপর রেখে ঘুমোচ্ছে। তৃষার দু-চোখ ছলছল করে উঠলো। কী করবে সে? একবার তো চায় সবকিছু মানিয়ে নিয়ে থাকবে কিন্তু অনিকের পাগলামি শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে পারে না। আবার একেবারে ছেড়ে দিতেও তো পারছে না তৃষা। তৃষা ফোনটা বালিশের পাশে রাখল। এখন ঘরে অল্পস্বল্প আলো দেখা যাচ্ছে। সেন্ডো গেঞ্জি পরা অনিক,পরনে লুঙ্গি। মাথার উপর সিলিং ফ্যান ঘুরছে অবিরত। তৃষা কী মনে করে হঠাৎ অনিকের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তারপর নাকের ডগায় তারপর গালে। পরিশেষে অধর কোণে ছোঁয়াল ওষ্ঠ। অনিকের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে তাকাতেই এভাবে তৃষাকে কাছাকাছি দেখে চমকাল সে। কিন্তু কিছু বললো না। নিষ্ক্রিয় হয়ে শুয়ে রইলো। তৃষার কেমন ঘোরের মতো লাগছে। দীর্ঘদিন প্রিয়তমকে কাছাকাছি পায়নি সে। তাই আজ না চাইতেও মন অন্য কিছু চাইছে। অনিক ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে তৃষার মতিগতি কী! তৃষা নিজের ওড়না খুলে বিছানার এক পাশে রাখল। তারপর অনিকের পাশে শুয়ে পড়লো। অনিকের ইচ্ছে করছে স্ত্রীকে আলিঙ্গন করতে। কিন্তু তার চেয়ে ভয় হচ্ছে দ্বিগুন। যদি আবারও রেগে গিয়ে কিছু বলে তৃষা? কিংবা বিরক্ত হয়! নাহ এই ভেবে নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করলো অনিক। তৃষা অনিকের বুকের উপর হাত রেখে চুপ করে শুয়ে রইলো। অনিকও চুপ করে আছে। 
" কী হয়েছে তৃষা? কিছু লাগবে? "
অনিকের সহজসরল প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল তৃষা। লোকটার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে না এখন তার সমস্যা আছে কোনো। অথচ একটু বাইরের কেউ এলেই শুরু করে পাগলামি। তৃষা সেসব ভুলে মাথা নেড়ে বললো,
" হুম। "
" কী? আমাকে না-কি অন্য কিছু? "
" আপনার কাছে যখন এসেছি তখন আপনাকেই লাগবে। "
" সহ্য করতে পারবে পাগলামি? "
" এভাবে বলবেন না। আমার ইতস্তত লাগে ভীষণ। "
অনিক উত্তর পেয়ে গেছে। তৃষাকে আষ্টেপৃষ্টে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো সে। বন্ধুর সহযোগিতা নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখিয়ে বেশ কিছুদিন যাবৎ ঔষধ সেবন করছে অনিক। এবার সে নিজে থেকেই চাচ্ছে সুস্থ হতে। কারণ এই অসুস্থতা নিয়ে তার পক্ষে তৃষাকে আঁটকে রাখা সম্ভব নয়। অতীতের প্রভাব বর্তমানে ফেলে সবকিছু নষ্ট করতে চায় না অনিক। 

ভোর হতেই মায়ের নম্বর থেকে কল আসায় বুকটা ধুকধুক করতে শুরু করেছে তাহমির। ফোন হাতে নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। সহন আলতো করে তাহমিকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
" কল রিসিভ করছিস না কেন? হয় কথা বল নয়তো সাইলেন্ট করে রাখ। ঘুমোতে দে একটু, রাতেও ঘুমাতে দিসনি।"
সহনের কথায় মেজাজ বিগড়ে গেলো তাহমির। পিঠে এক কিল বসিয়ে দিলো সে। 
" অসভ্য একটা তুই। মনে হচ্ছে আমি জোর করে তোকে ঘুমাতে না করেছিলাম। আম্মা কল দিছে। কথা বলে নিচ্ছি।"
সহন তাহমিকে ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। তাহমি কল রিসিভ করে ফোন কানের কাছে ধরে বললো,
" আসসালামু আলাইকুম মা। কী খবর তোমাদের? "
" ওয়া আলাইকুম আসসালাম। খবর ভালো নাকি খারাপ আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। তোর আদরের ভাই যা করছে তাতে শান্তিতে আর থাকতে পারছি কোথায়! তার উপর তৃষার জন্য তো চিন্তা আছেই!"
তাহমি মায়ের কন্ঠে স্পষ্ট অভিযোগ শুনতে পাচ্ছে। কী করলো আয়ান? 
" কেনে মা? আয়ান কী করেছে? "
" কী করেছে আমি নিজেও জানি না। মিনিট দশেক আগে ওর ছাত্রীর বাবা কল দিয়েছিলেন। বললো উনাদের বাসায় যাতে এখুনি আমি এবং তোর বাবা যাই। আয়ান না-কি সারা রাত উনাদের বাসায় ছিলো। মানসম্মান কিছু থাকলো না তাহমি।"

তাহমি অবাক হলো কিছুটা। তার ভাই তো এমন নয় যে রাত কাটাবে মেয়েদের সাথে! তা-ও নিজের ছাত্রীর সাথে? ভালোবাসা কিংবা ভালোলাগা থাকলেও তো তৃষা অথবা তাকে কিছু জানাতো। না-কি ছেলেটাকে ওরা ফাঁসিয়ে দিলো কেউ? 

" মা তুমি শান্ত হও একটু। আব্বুকেও শান্ত থাকতে বলো। বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।"
" আমরা যাচ্ছি। পরিস্থিতি কেমন জানি না কিছু। তেমন হলে সহনকে পাঠাতে হবে। আমরা কী করবো! শুনেছি ভদ্রলোক অনেক বড়োলোক। যদি আয়ানের ক্যারিয়ার শেষ করে দেন?"
" মা! এসব নেগেটিভ দিকগুলো জাস্ট ভুলে যাও। কিছু হবে না। ঠিকানা টেক্সট করে দাও,আমরা একটু পর আসছি ওখানে। "
" ঠিক আছে তাহমি। রাখছি।
.
.
.
চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।