বন্য প্রণয় - পর্ব ৪১ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


" তাহমি বেবি কিক মারলো! "
সহন উচ্ছ্বসিত কন্ঠে তাহমির দিকে তাকিয়ে বললো। বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় আছে তাহমি। সহন পাশেই বসা। ডিনার শেষে যে যার রুমে গিয়ে শুয়েছে। সহনের পাগলামি দেখে তাহমি ঠোঁট টিপে হাসছে। 
" হ্যাঁ মারলো তো। আজকাল প্রায় কিক মারে বেবি।"
" মনে হয় তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। আর কতো দেরি বল তো!"
" এত অধৈর্য হওয়ার কিচ্ছু নেই বুঝেছিস? যখন সে আসবে দেখবি এরকমই লাথি দিবে হুহ্। "
" তাতে সমস্যা নেই। লাথি গুঁতো সবকিছুই সহ্য করে নিবো, তবুও সে তাড়াতাড়ি আসুক।"
তাহমি সহনের বুকে মুখ গুঁজে দিলো। সহন আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। 
" আরকিছু দিন তারপর অপেক্ষার অবসান হবে। "
" ইনশাআল্লাহ। আচ্ছা শোন, সামনে তো আয়ানের বিয়ে! যদিও বেশ দেরি আছে তবুও এখনই বলি, অনিমার জন্য কী কিনবি? "
" সেটা তুই জানিস। আপাতত আমি তো বেকার! তোর স্যালারি থেকেই নিবো টাকা। আমার যদিও কিছু টাকা ব্যাংকে আছে তবে সেটা হুটহাট প্রয়োজনের জন্য রাখা।"
" আরে টাকার কথা কে বললো? আমি বললাম এক্সাক্টলি কী কিনবি সেটা বল।"
" সেসব এখনও ভাবিনি। সময় আছে তো। পরে দেখা যাবে।"
" আচ্ছা ঠিক আছে। "
সহন কথা বলতে বলতে তাহমির ঘাড়ে নাক দিয়ে ঘষতে শুরু করেছে এরমধ্যে। উষ্ণ নিঃশ্বাস আর প্রিয়তমর ছোঁয়ায় লাগামছাড়া লাগছে তাহমির। সহন তাহমির রেসপন্স পেয়ে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চোখ বন্ধ করে আরও উষ্ণতা ছড়াল। কিছু সময় পরে দু'জন দু'জনার ওষ্ঠকে মুক্ত করে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ফেলতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। তাহমি নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রেগন্যান্সির এই স্টেজে এসব করা ঠিক নয়। সহনও বিষয়টা জানে কিন্তু বেচারা দীর্ঘদিন দূরে সরে থাকার ফলে কন্টোললেস হয়ে গেছে। 
" সহন প্লিজ শান্ত হ। বেবির কথা ভেবে একটু কষ্ট কর।"
তাহমির কথায় সহনের হুঁশ ফিরল। কিছুটা দূরে সরে বসে চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো সহন। পরক্ষণে চোখ মেলে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,
" সরি! আমার খেয়াল ছিল না। আচ্ছা তুই থাক আমি একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি।"
তাহমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। সহন বিছানা থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নিজেকে শান্ত করার জন্যই যে ছাদে যাচ্ছে লোকটা সে বিষয় কোনো সন্দেহ নেই তাহমির। বেবি আসলে ওর দিকে তাকিয়ে সব দুঃখকষ্ট ভুলে যাবে দু'জনেই। 

ইদানীং সত্তার শেখের শরীরটা বিশেষ ভালো যাচ্ছে না। যদিও তিনি মুখে কিছু কাউকে বলেননি কিন্তু শরীরের অবস্থা দেখে বেশ বোঝা যায়। প্রায় শহরের বাইরে কোথাও চলে যান তিনি। অনিমা জিজ্ঞেস করলে বলেন, ডাক্তার মাঝে মধ্যে হাওয়া বদল করতে বলেছেন তাকে। সেজন্য শহরের বাইরে গিয়ে ঘুরে আসে। অনিমারও খুব ইচ্ছে, বিয়ের পর সবাইকে একসাথে নিয়ে ঘুরতে যাবে। দু’মাস পরেই পরীক্ষা। দেখতে দেখতে এই সময়টাও কেটে যাবে। তাই লেখাপড়ার দিকে ভালো করে মনোযোগ দিয়েছে অনিমা। রেজাল্ট খারাপ হলে সবাই পেয়ে বসবে একেবারে। আজকাল আয়ানকে ভীষণ কাছে কাছে রাখতে ইচ্ছে করে অনিমার। মনে হয় কতো তৃষ্ণা বুকে জমে আছে মনখুলে কথা বলার জন্য। সেদিন আয়ান অকারণে কেমন করে কথা বলে গেলো কিন্তু আর সরি-টরি বললো না। সেই নিয়ে অনিমার একটু-আধটু অভিমান হয়েছিল ঠিক কিন্তু পরে সেসব উবে গেছে। মানে রাগ কিংবা অভিমান যা-ই হোক সেটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারে না মেয়েটা। সত্যি কাউকে ভীষণ ভালোবাসলে হয়তো এমন-ই হয়! 
সন্ধ্যা নেমেছে শহরের বুকে। খানিকক্ষণ আগেই মাগরিবের নামাজ শেষ হলো। টিভিতে ইসরায়েলের উপর ইরানের আক্রমণ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেইসব নিউজ খুব মনোযোগী হয়ে দেখছে অনিমা। পুরো বাসা খালি। কী করবে একা একা? সারাদিন ফোন ঘাঁটতে আর কতোই বা ভালোলাগে!
বাবাও বাড়িতে নেই। বাসায় কাজ করে রাহিমা আপা আছে শুধু। বয়স বিশের ঘরে তার। কিন্তু সে থাকলেও নিজের কাজে বিজি। ছাদে গিয়ে মাদুর পেতে ঘুমাচ্ছে সে। ঘরের মধ্যে না-কি তার ঘুম আসে না,কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে। যদিও মাত্র সন্ধ্যা হয়েছে কিন্তু রাহিমার বরাবরই তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস। পরে অবশ্যই জেগে উঠে অনিমার খাবারদাবার দিবে। অসময়ে কলিংবেলের আওয়াজ শুনে নড়েচড়ে উঠলো অনিমা। এমন সময় তো কারো আসার কথা নয়! তবুও কেউ যে এসেছে সেটা তো নিশ্চিত। অনিমা হাতে থাকা রিমোট সোফায় রেখে দরজা খুলতে এগিয়ে গেলো। 
" তুমি! "
দরজা খুলে আয়ানকে দেখে চমকাল অনিমা। আয়ান মুচকি হেসে গাল টেনে দিলো অনিমার। 
" কেনো খুশি হওনি? "
" সেটা নয়। এমন সময় তো কখনো আসো না তাই। আচ্ছা বাসায় কিন্তু আব্বু নেই। বলতে গেলে আমি একা। এখন তুমি আসবে? নাকি চলে যাবে?"
আয়ান বুঝতে পারছে অনিমা কেনো এ কথাটা বললো। অনিমাকে অবাক করে দিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো আয়ান। যথারীতি চমকাল অনিমা। আয়ান চোখ টিপ্পনী দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো। 
" আমাকে কি তোমার একেবারে নিমপাতা মনে হয়? একটুও মিষ্টি কি নেই আমার ঝুড়িতে?"
" আমি কেনো বললাম সেটা তুমি ভালো করেই জানো। যাইহোক বসো এখানেই। আমি শরবত নিয়ে আসি। বাইরে থেকে এলে তো।"
অনিমা আয়ানকে সোফায় বসতে বলে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। মেয়েটা কেমন গম্ভীর হয়ে কথাবার্তা বলছে। পরিচিত অনিমার মতো দুষ্টমি নেই তার স্বরে। আয়ানের মোটেও তা ভালোলাগছে না। যদিও আজকে অন্য একটা উদ্দেশ্যে এসেছে এখানে। তবুও আজকে অনিমার অভিমান ভাঙাবে আয়ান। আয়ান এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছিল। শরবত হাতে নিয়ে অনিমা ফিরে এভাবে আয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফের বললো, 
" কী হলো? দাঁড়িয়ে খাবা? বসো। "
" ওহ হ্যাঁ। বসছি। তুমিও বসো। "
আয়ান বসলো, অনিমাও অন্য সোফায় বসেছে। শরবতে চুমুক দিতেই প্রাণ জুড়িয়ে গেলো আয়ানের। এই গরমে ঠান্ডা তরমুজের শরবত জাস্ট ওয়াও! 
" কী হলো? ওই সোফায় গিয়ে বসলে কেনো? আমার পাশে এসে বসো।"
আয়ান গ্লাস টি-টেবিলের ওপর রেখে দিলো। অনিমা চুপ করে আছে। আয়ানের কাছ থেকে নিজের পাগলামি দূরে রাখতে চায় সে। 
" থাক। তুমি কি রাতে খেয়ে যাবে? না মানে তাহলে আমি তোর জন্য কিছু রান্না করতে বলতাম রাহিমা আপাকে।"
" উনি কোথায়? দেখছি না তো।"
" ছাদে গিয়ে ঘুমিয়ে আছে। "
" ও আচ্ছা। হ্যাঁ রান্না করতে বলো তাহলে। আমি আজকে থাকবো বাসায়। "
আয়ানের কথায় অনিমা হকচকিয়ে গেল। কথাটা ঠিক বিশ্বাস হলো না। তাই অনিমা নিজে থেকে আবারও শুধালো, 
" তুমি রাতে থাকবে?"
" হ্যাঁ। কোনো সমস্যা? "
আয়ান বেশ স্বাভাবিকভাবেই বললো। তাতে অনিমা আরও ভড়কে গেছে। থতমত খেয়ে বললো সে,
" আমার কোনো সমস্যা নেই। আচ্ছা তুমি বসো। আর বিশ্রাম নিলে ঘরে গিয়ে শো কিংবা ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি রাহিমা আপাকে ডাকতে গেলাম।"
" ঠিক আছে যাও। তবে সাবধানে যেও ছাদে। "
" হুম। "
আয়ানকে বসার ঘরে রেখেই অনিমা ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বেলে ছাদে গেলো। এমনিতে ছাদে বাতি আছে কিন্তু রাহিমা ঘুমানোর জন্য নিভিয়ে রেখেছে। মেয়েটা যে কীভাবে ছাদে অন্ধকারে ঘুমায় বুঝে আসে না অনিমার।

" ছেলেটার পছন্দ আছে বুঝলে আয়ানের মা। যেমন মেয়ে ভালো তেমন মেয়ের বাবা। "
তৃষার বাবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন এতক্ষণ, মাত্র বিছানায় এসে শরীর এলিয়ে দিলেন। তৃষার মা'কে উদ্দেশ্য করে বললেন কথাটা। 
" হ্যাঁ। সত্তার ভাই একেবারে মাটির মানুষ। আজকাল বড়লোকদের যে অহম, সেখানে অনিমার পরিবার একশোটার মধ্যে একটা।"
.
.
.
চলবে..........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন