আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ৪৪ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


" সহন দেখ সরি দেখো সাকিন হাসছে! "
পাশাপাশি শুয়ে ছিলো তিনজন। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে শুয়েছে। হঠাৎ তাহমির কথায় সহন চমকাল, থমকাল। আগেও সাকিন হেসেছে তবে এখন তো বড়ো হয়েছে একটু তাই হাসিটা আরও প্রসস্থ হয়েছে। সাকিনের চার মাস শেষের পথে। দেখতে দেখতে চারটা মাস কেটেও গেছে। 
" কই দেখি আমার বাবাটা হাসছে কেমন করে। "
সহন ও তাহমির মাঝখানে শোয়া সাকিন। হাত-পা অনবরত নেড়ে যাচ্ছে এতটুকু ছেলে। সাথে হাসছে। সহন সাকিনের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। সাকিনের হাসি গেলো তাতে থেমে। তাহমি কটমট করে তাকিয়ে আছে এখন সহনের দিকে। বেচারা সহন অপরাধীর মতো সাকিনের দিকে তাকাচ্ছে একবার আবার তাহমির দিকে তাকাচ্ছে একবার।
" দিলে তো হাসির বারোটা বাজিয়ে! ছেলেটা কতো সুন্দর হাসছিল।"
" আমি তো একটু আদরই করলাম শুধু। বুঝি না তোমাদের মা ছেলের মতিগতি। ভালোবাসতে গেলেও দোষ হয়।"
তাহমি মুচকি হাসলো সহনের কথায়। আসলে সিলিং ফ্যানের অনবরত ঘূর্ণন দেখেই এতক্ষণ হাসছিল সাকিন৷ সহন সাকিনের কপালে চুমু খাওয়ার ফলে ফ্যানের ঘূর্ণন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না বলেই ছেলেটা হাসা বন্ধ করে দিয়েছিল। 
" হয়েছে, আমরা তো সুবিধার না। তাই আমাদের মতিগতি বোঝো না। ঘুমাও এখন।"
সহন বালিশে মাথা রেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
" সাকিনকে একপাশে শোয়ানো যায় না তাহমি? কতদিন তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই না!"
আসলেই সাকিন পৃথিবীতে আসার আগে থেকেই কেমন একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তাহমি ও সহনের মধ্যে। তাহমিও মাঝে মধ্যে বিষয়টা ফিল করে। তাহমির মা-ও সেদিন ফোনে এ বিষয় বলছিল,বাচ্চা হওয়ার পর অনেক মেয়ে বাচ্চা সামলাতে গিয়ে স্বামীর থেকে দূরে সরে যায়। তাই এ সময় উচিত স্বামীকে বুঝিয়ে বলা বিষয়টা এবং যথাসম্ভব নিজেদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখা।
" ঠিক আছে। দাঁড়াও আমি বড়ো কোলবালিশ দু'টো পাশে দিয়ে দিচ্ছি। তোমার ছেলে যে নড়াচড়া করতে শিখেছে, কখন আবার ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে! "

সহন সাকিনকে কোলে তুলে নিলো। সাকিন হাত দু'টো দিয়ে সহনের সামনের চুলগুলো ধরে খেলছে। তাহমি পরপর দুটো কোলবালিশ খাটের যে পাশে সাকিন ঘুমাবে সেই পাশে দিয়ে দিলো। 
" হ্যাঁ ভালো করে দাও বালিশ। "
" হুম হয়েছে এবার। সাকিনকে দাও খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই।"
সহন তাহমির কোলে তুলে দিলো সাকিনকে। গরমে সাদা সেন্ডো গেঞ্জি আর প্যামপাস পরেছে পিচ্চি সাকিন। আধঘন্টা পরে ঘুমাল সে। সহন এতক্ষণ শুয়ে শুয়ে ছটফট করছিল, কখন ছেলেটা ঘুমোবে! সাকিনের নড়াচড়া থামতেই সহন ফিসফিস করে তাহমিকে ডাকতে লাগলো, " তাহমি! এই তাহমি! সাকিন ঘুমিয়েছে? "
" হ্যাঁ ঘুমিয়েছে। এবার তুমিও আমাকে ধরে ভদ্রলোকের মতো ঘুমাও।"
সহন সময় দিলো না তাহমিকে। আস্তে আস্তে সাকিনের থেকে দূরে সরিয়ে আনলো তাকে। তারপর নিজের শরীরের উপর উঠিয়ে শোয়াল তাহমিকে। তাহমির কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। সিজার হওয়ায় সব সময় কেমন ভয় ভয় কাজ করে তাহমির মনে। মনে হয় যদি সেলাইয়ের কোনো সমস্যা হয়! 
" পৃথিবীর সকল ভদ্রলোকগণ তাদের স্ত্রী’র কাছে যে অভদ্র সেটা কি তুমি জানো সাকিনের মা?"
তাহমির ঠোঁট টিপে হাসছে। 'সাকিনের মা' ডাকটা বড়ো ভালো লাগে শুনতে। তাহমি আস্তে করে সহনের উপর থেকে সরে পাশে বালিশে শুয়েছে। 
" হ্যাঁ জানি তো।"
" তাহলে?"
" কী?"
" কতগুলো মাস ঠিকমতো কাছাকাছি আসো না বলো তো?"
" মাস ছয়েক হবে। তবে ইচ্ছে করে তো করছি না বলো? আমার কেমন একটা ভয় লাগে এখন যদি... "
" ধুর পাগলি! তুমি শিক্ষিত, একজন শিক্ষিকা। কতশত সিজারিয়ান বেবি হচ্ছে চারদিকে। কারো শুনেছ, সেলাই নষ্ট হয়ে গেছে? বোকা বোকা কথা বলো মাঝে মধ্যে। "
সহন কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বললো কথাটা। হাজার হলেও সহন পুরুষ মানুষ। এতদিন দূরে দূরে থেকে যথেষ্ট অধৈর্য হয়ে গেছে লোকটা। তাহমি নিজেও জানে তার এই ভয় সম্পূর্ণ অমূলক। নিজেকে বোঝাতে মিনিট পাঁচেক সময় নিলো তাহমি। এভাবে চলতে থাকলে সম্পর্কে দূরত্ব বাড়বে ব-ই কমবে না। সহন কিছুটা রেগে গিয়ে তাহমিকে আর জড়িয়ে ধরছে না। চুপচাপ শুয়ে আছে। ডিম লাইটের মৃদু আলোতে সাকিনের দিকে তাকাচ্ছে সহন। তারপর আলতো করে সাকিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তাহমি সহনের বুকে মাথা রেখেছে। সহন তবুও চুপ করে রইলো। 
" প্লিজ রাগ করো না। কখনো তো রাগ করোনি তাই তুমি রাগলে ভীষণ অন্য রকম লাগে গো।"
তাহমির কথাগুলোর ভেতর কিছু একটা ছিলো। হয়তো আকুতি কিংবা অসহায়ত্ব। সহন আর রেগে থাকতে পারলোনা। দু-হাতে আঁকড়ে ধরলো তাহমিকে। মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,
" রাগ করিনি আসলে। মেজাজটা চটে গিয়েছিল হঠাৎ। আমিও দুঃখিত। ঘুমাও রাত হলো ভালোই। সাকিন উঠে গেলে তোমাকে আবার বসে থাকতে হবে। "
সাকিন রাতে তিন থেকে চার ঘন্টা ঘুমায় মাত্র। তাছাড়া সে হাত-পা নেড়ে একা একা খেলাধূলা করে। মাঝে মধ্যে আবার অহেতুক কান্নাকাটিও করে। এতটুকু বয়সেই তার মনমতো হাত-পা না নাড়াতে পারলে চিৎকার করে কান্নাকাটি করে। 
" উঠতে অনেক দেরি। এখন বলো আদর কি তুমি শুরু করবা? না-কি আমাকে আগের রূপে ফিরতে হবে? "
সহনের মানসপটে ভেসে উঠলো সেই বাসর রাতের স্মৃতি। এই দস্যি মেয়েটা কীভাবে জোরাজোরি করে তাকে আদর করতে চাইত! ভাবতেই হেসে উঠলো সহন। তাহমির পিঠে হাত রেখে আলতো করে চাপ দিয়ে বললো,
" থাক বন্য রাণী, এখন তো আমি ফুল লোডে আছি তাই আমিই করছি। যখন আমার এনার্জি কম পড়বে তখন তুমি করবে না হয়। তবে তাহমি আমার মনে হচ্ছে আমার রাগ করার জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে এসব বলছো তুমি। "
" উঁহু! আমি নিজেও চাচ্ছিলাম কিন্তু নিজের ভয়টাকে কাটাতে পারছিলাম না। "
" কিচ্ছু হবে না। "
তাহমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। সহনের বুকের উপর তাহমির তপ্ত নিঃশ্বাস যেনো সহনকে আরও জংলী করে তুলতে লাগলো। সহন ক্রমে ক্রমে তাহমির শরীরের উত্তাপ বাড়াতে লাগলো নিজ স্পর্শে। এতগুলো দিনের জমিয়ে রাখা অনুভূতি প্রকাশ করলো দু'জন। ভালোবাসাময় হয়ে উঠলো কিছু মুহুর্ত। 

সবকিছুর মধ্যে অনিমার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে ভালোমতো। সামনের সপ্তাহেই বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে দুই পরিবারের লোকজন। সত্তার শেখের শরীরটা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। সেই নিয়ে অনিমার ভীষণ চিন্তা। বাবাকে রেখে কীভাবে শ্বশুর বাড়ি চলে আসবে সেসব ভেবে মন খারাপ হয়। আবার আয়ানকে ছেড়ে দূরে থাকতেও আর ইচ্ছে করে না। মেয়ের চিন্তাভাবনা সত্তার শেখ ভালো করেই বুঝতে পারেন। তাই দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে নিজের ঘরে ডেকে পাঠালেন অনিমাকে। অনিমা শান্তভাবে এসে বাবার পাশে বিছানায় বসলো। 
" কী রে মা? এভাবে চিন্তা করতে করতে তো মুখখানা তোর শুকিয়ে গেছে। সামনে বিয়ে এখন চেহারা এমন হলে চলো?"
মেয়ের মাথায় হাত রেখে শুধলেন সত্তার শেখ। অনিমা হুহু করে কেঁদে উঠলো হঠাৎ করে। মেয়ের এমন কাণ্ডে চমকালেন, থমকালেন তিনি। ছোটো মেয়েটা কখন এতো বড়ো হয়ে গেলো তার? বাবাকে রেখে যাওয়ার জন্য মনটা যে তার কতটা খারাপ সেটা বুঝতে বাকি নেই সত্তার শেখের।
" বাবা তুমি একটু ভালো করে ডাক্তার দেখাও। তোমার এই অবস্থায় কীভাবে তোমাকে ছেড়ে যাবো আমি? "
" প্লিজ মা কাঁদিস না। আমি ঠিক হয়ে যাবো। বয়স হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে ধরে। সেই নিয়ে এতো চিন্তা করতে হয়? আয়ান তো কবে থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছে বল? ছেলেটা যোগ্য বলেই তো সবকিছু মেনে নিলাম। দেখছিস তো আয়ান কোম্পানির হাল ধরার পরে বেশ উন্নতি হয়েছে ব্যবসায়। "
অনিমার চোখের পানি মুছিয়ে দিলেন সত্তার শেখ। অনিমা বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন সত্তার। 
" আমি জানি বাবা,তোমার জহুরির চোখ। কাচ ও হিরার পার্থক্য তুমি বুঝতে পারো।"
" হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। আয়ানের পরিবারের সবাইও খুব ভালো। দেখিস তোর কোনো সমস্যা হবে না। "
" সেটা আমি জানি বাবা। তুমি সুস্থ থাকলে আমার আর কোনো চিন্তা নেই। "
মেয়ের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। 
" ঠিক আছে। যা ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নে। বিকেলে আয়ান আসবে বললো,বাসায় ভালোমন্দ রান্না হবে ওদের। তোর হবু শ্বাশুড়ি যেতে বলেছেন। "
" ঠিক আছে বাবা। তুমিও রেস্ট নাও।"
অনিমা বাবাকে রেখে নিজের ঘরের দিকে এগোলো। দেখতে দেখতে কতগুলো দিন কেটে গেলো! এই তো মনে হয় আয়ানের সাথে পরিচয় হলো সেদিন। কিন্তু মাঝখানে পেরিয়ে গেছে প্রায় তিনটে বছর! 
.
.
.
চলবে......................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।