" তৃষা! এই তৃষা! আর কতক্ষণ লাগবে তোমার? "
" পাঁচ মিনিট! হয়ে গেছে তো।"
অনিক বসার ঘরে কখন থেকে পায়চারি করে যাচ্ছে! স্কাই ব্লু কালারের শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরে দারুণ লাগছে লোকটাকে। শপিং করতে বেরোবে দু'জন। তৃষার রেডি হতে হতে প্রায় আধঘন্টা পেরিয়ে গেলো। তবুও রেডি হওয়া হলোনা এখনো তার। ছুটির দিন বলেই আজকে অনিকের সাথে বাইরে যাবে বলে ঠিক করেছে তৃষা। ঔষধ নিয়মিত চলছে অনিকের। আগের থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও হয়েছে বটে। যতটুকু সমস্যা আছে ততটা তৃষা মানিয়ে নিয়েছে। চাইলে সহজেই সমস্যার অযুহাত দিয়ে তৃষা অনিককে ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে এতো সহজে কীভাবে ছাড়বে সে? আর যাইহোক, মানুষটা তো ভালোবাসার অভাবেই আজ এরকম হয়েছে। ভালোবাসার কাঙালের মতো বড়ো কাঙাল কি পৃথিবীতে আছে?
" তৃষা! তোমার পাঁচ মিনিট আর শেষ হচ্ছে না আধঘন্টা থেকে। "
তৃষা হন্তদন্ত হয়ে বেডরুম থেকে বেরিয়ে এলো। হোয়াইট এন্ড বেবি পিংক কালারের কম্বিনেশনের থ্রি-পিস পরেছে তৃষা। সাথে ম্যাচিং করে বেবি পিংক কালারের হিজাবও পরেছে। বেচারি এখনো ওড়না নিয়ে টানাটানি করছে ঠিক করার জন্য। সেটা দেখে অনিক ফিক করে হেসে দিলো। তৃষা মুখ বেঁকিয়ে বললো,
" ওমন করে হাসার কী হলো শুনি? "
" হাসবো না বলছো? "
" হ্যাঁ একদম হাসবেন না আমার ওড়না ঠিক করা দেখে। দুষ্ট লোক একটা। "
অনিক তৃষার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওড়নায় হিজাব পিন মেরে দিলো।
" হ্যাঁ বউয়ের কাছে পৃথিবীর সব পুরুষই একটু-আধটু দুষ্ট তো বটেই। তা হলো মহারাণীর? হলে চলুন এগোতে হবে। "
অনিক হাত সামনে বাড়িয়ে দরজার দিকে ইশারা করে বললো। তৃষা মাথা নেড়ে, "হু।" বলে এগোলো সেদিকে।
এমনিতে শুক্রবারে সব জায়গায় একটু বেশি ভীড় থাকে। ছুটির দিনে সবাই আসে কেনাকাটা করতে, ঘুরতে। তৃষা অনিকের সাথে কথা বলে ঠিক করেছে সামনের সপ্তাহে বাবার বাড়ি যাবে তৃষা। অনিকও যাবে সাথে। সেই জন্য বাবার বাড়ির সবার জন্য ও দিনাদের জন্যই শপিং করতে আসা আজকে। শপিংমলে ঢুকেই প্রথমে শাড়ি কিনতে দাঁড়াল তৃষা। রোগা-সোগা একজন লোক দাঁড়িয়ে, উনি দোকানী।
" মামা ইন্ডিয়ান তন্দুজ জামদানী দেখান তো।"
" ঠিক আছে। "
দোকানী একের পর এক শাড়ি বের করলো। দেখেশুনে দু'টো শাড়ি পছন্দ করলো তৃষা। একটা নিজের জন্য আরেকটা তাহমির জন্য।
" ঠিক আছে। মামা প্রিন্ট কাঞ্চিভারাম কাতান শাড়ি দেখান কয়েকটা। মায়ের জন্য নিবো তো সুন্দর দেখে দিবেন।"
" আচ্ছা। "
দোকানী আবারও প্রফেশনাল ভাবে কয়েকটি শাড়ি বের করলেন। যথারীতি পছন্দ করলো তৃষা। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল দামের বেলায়। দোকানদার বললো প্রিন্ট কাঞ্চিভারাম কাতান শাড়ির দাম আড়াই হাজার । তৃষা বলছে দুই হাজার! এরকম কিছুক্ষণ দামাদামি করে নিজের মনমতো দামেই শাড়িগুলো কিনে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো তৃষা ও অনিক। গোটা সময় দোকানে দাঁড়িয়ে অনিক একটা কথাও না বলে বউয়ের দামাদামির ট্যালেন্ট দেখছিল। বাইরে আসতেই মুখ খুললো সে।
" তোমাকে শপিং করতে নিয়ে না আসলে তো জানতে পারতাম না হাজার টাকার জিনিস পাঁচশ টাকায় পাওয়া যায়! "
তৃষা বিজয়ীর হাসি হেসে বললো, " তাহলে এরপর থেকে সব সময় আমাকে নিয়ে শপিং করতে বের হবেন। "
" ঠিক আছে। চলুন মহারাণী, অন্য দোকানে যাই।"
বাকি কেনাকাটা সারতে অন্য জায়গায় যাচ্ছে দু'জন।
আসবে বলার পরেও কেটে গেছে একদিন। আয়ান আসেনি গতকাল রাতে! সেই নিয়ে অনিমার মন খারাপ হয়ে গেছে খুব। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে মন খারাপ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে মেয়েটা। সামনেই রেজাল্ট দিবে এসএসসি পরীক্ষার। সেই নিয়েও একটু-আধটু চিন্তা হচ্ছে তার। তবে বড়ো টেনশনের নাম হলো আয়ান স্যার! হঠাৎ বাড়ির সামনের রাস্তায় নজর পড়লো অনিমার। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান। হাতে সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে লেখা, ❝ আসবো? ❞
অনিমা ভেংচি কেটে ঘরে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল আয়ান এরমধ্যে কয়েকবার কল করেছিল। অনিমা ফোন হাতে নিয়ে আবারও বেলকনিতে এসে দাঁড়াল। কিন্তু সামনে তাকিয়ে আর আয়ানকে দেখতে পেলো না।
" অনিমা!"
হঠাৎ আয়ানকে দেখে চমকে উঠল অনিমা। আয়ান বেলকনির বামপাশে দাঁড়িয়ে আছে হাসি হাসি মুখে। এতো জলদি দেয়াল টপকে পাইপ বেয়ে কীভাবে উঠলো লোকটা?
" তুমি এতো জলদি কীভাবে এলে?"
" যেভাবে তুমি আমার মনে প্রবেশ করেছিলে ঠিক সেভাবে। "
আয়ান এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়াল অনিমার। অনিমা মুচকি হেসে সময় নিলো না আয়ানের কোলে উঠতে। বাচ্চাদের মতো দু'পাশে পা দিয়ে জড়িয়ে, হাত দিয়ে গলা আঁকড়ে ধরে ঝুলে আছে অনিমা। আয়ান রাগ করলো না। ওভাবেই হেঁটে গিয়ে বিছানায় বসলো। অভ্যস্ত হয়ে গেছে অনিমার এই অদ্ভুত কাজকর্মে। তবুও মাঝে মধ্যে বিরক্ত লাগে কিন্তু আবার না এসেও পারে না। প্রেমের জ্বালা কী সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আয়ান। অনিমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ানও চুপ করে আছে ও কী করে সেটা দেখতে।
" তোমার কি আমাকে কিস করতে ভাল্লাগে না? "
অনিমা ঠোঁট উল্টে বললো কথাটা। চেহারার অভিব্যক্তি দেখে না হেসে পারলোনা আয়ান। হাসলো মৃদু। ললাটে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো অনিমার। অনিমা তাতে টিউব লাইটের মতো জ্বলে উঠলো!
" এই তো করলাম কিস। তুমি আমার আস্ত এক ভালোলাগার রেশ। তোমার সবকিছুই ভালো লাগে। তবে মাঝে মধ্যে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। "
" মেজাজ কেনো খারাপ হবে ভালোলাগা থাকলে?"
" তা-ও ঠিক! "
আয়ান ভাবনায় ডুবছে এমন মনে হলো অনিমার। ধপাস করে শুইয়ে দিলো আয়ানকে। বুকে নাক ডুবিয়ে ঘষতে শুরু করলো মেয়েটা। আয়ানের সমস্ত শরীরে অজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আলতো করে কোমর চেপে ধরলো আয়ান। অনিমা তার নাকের গতি বাড়িয়ে দিলো। সাথে হাত দিয়ে আয়ানের চুলগুলো দলাইমলাই করতে লাগলো। কেমন একটা ঘোরের মতো লাগছে আয়ানের। অনিমার খোলা চুলের শ্যাম্পুর ঘ্রাণে অন্য রকম কিছু ফিল হচ্ছে আজ। কিন্তু আয়ান নিজেকে সামলে নিলো। আলগা করে দিল কোমরের চাপ। অনিমা মাথা উঁচিয়ে তাকাল আয়ানের দিকে।
" কী হলো? ছাড়লে কেনো?"
" ধরাধরি ভাল্লাগে খালি? ঠিকঠাক মতো ধরলে সহ্য করতে পারবে?"
" সরো তুমি। ভাল্লাগে না বাল। সব সময় এমন করো বাল। ধুর বাল!"
অনিমার হতাশা দেখে আয়ান ঠোঁট কামড়ে হাসলো একটু। আর তাতেই অনিমা গেলো আরো ক্ষেপে। হঠাৎ করে এগিয়ে এসে ঠোঁটে আলতো করে কামড়ে দিলো মেয়েটা। আয়ান বরফের মতো জমে গেছে যেনো। পুরুষ মানুষ! মেয়ে হয়ে এতো আশকারা দিলে সামলানোর ক্ষমতা থাকে কতক্ষণ?
" অনিমা কাছে আসলেই এসব না করে সুন্দর করে কথা বলতে পারো না? মাঝে মধ্যে তো গানও শোনাতে পারো?"
অনিমা উঠে বসেছে। আয়ান শুয়ে আছে। কী মনে হলো মেয়ের,হঠাৎ করে হাসতে লাগলো। আয়ান গেলো ঘাবড়ে! কে জানে এই পাগলি কীসের জন্য হাসছে।
" গান শুনবে?"
আগ্রহসহকারে জিজ্ঞেস করলো অনিমা। আয়ান শান্তভাবে বলে,
" হ্যাঁ। তবে আস্তে আস্তে। তোমার বাবা যাতে না শোনে। আমাদের এভাবে সময় কাটানো মোটেও ভালো নয়।"
অনিমা আয়ানের শেষের কথাগুলো জাস্ট পাত্তা না দিয়ে গান গাইতে শুরু করলো।
এক দিন একলে দ্য হাম-তুম
তুম মুজামেন মেন তুম্মে গাম
এক দিন আকেলে দ্য হাম-তুম
তুম মুঝামেন মেন তুম্মে গাম
মেরে কানন মে আহিস্তা সে
আস রোজ কাহা থা জো তুমনে
কিসি অর সে না ভো কেহনা
তুম মেরে হো মেরে রাহানা
তুম মেরে হো মেরে রাহানা
তুম সাথ মেরা হারদম দেনা
তুম মেরে হো মেরে রাহানা......
.
.
.
চলবে.........................