আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

বন্য প্রণয় - পর্ব ৪৩ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


তৃষা নিজেকে অনিকের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিলো। খিলখিল করে হেসে বললো,
" এসব পরে মশাই। আগে ঠিক করুন নতুন অতিথির জন্য কী কিনবো? এখন তো কিছু পড়তে পারব না বেবি। মানে ও তো এতটুকু থাকবে।"
অনিক কিছুটা ভাবুক হয়ে গেলো তৃষার কথায়। আসলেই তো, পুচকি পৃথিবীতে এলে তাকে কী দিবে? কিয়ৎক্ষণ লাগলো সেটা ঠিক করতে। ফের পুরো উদ্যমে তৃষাকে জড়িয়ে ধরলো অনিক। ঘাড়ে নাক ঘষে বললো,
" সোনার আংটি দিবো নতুন অতিথিকে। উপহার দেওয়া তো ফুরিয়ে যাবে না। বড়ো হলে না হয় আবার তার ইচ্ছে অনুযায়ী কিছু দিবো।"
" হয়েছে থামুন। বেশি আশা করতে হয় না। আগে বেবি পৃথিবীতে সুস্থভাবে আসুক তারপর। এখন যান রেডি হয়ে আসুন আপনিও। আমার সময় লাগবে না কিন্তু! "
অনিক তৃষাকে নিজের বাহুডোর থেকে মুক্ত করে বিছানায় রাখা শার্ট ও প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল চেঞ্জ করতে। 

সকাল থেকে তাহমির শরীরটা কেমন লাগছে। সেজন্য আজ অফিস যায়নি সহন। বাবার বাড়ি এসেছে দু'দিন হলো। সহনও এসেছে সাথে। তাহমির ভীষণ ভয় লাগছে। এমনিতে এতো সাহসী একটা মেয়ে অথচ মা হওয়া নিয়ে তার মনে নানা শংকা কাজ করে। সবচেয়ে বেশি চিন্তা হয় বেবিকে নিয়ে। সে ঠিকমতো পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে তো? তৃষাও সারাক্ষণ বোনের পাশে পাশে থাকছে। অনিক একবার চেকআপ করে গেছে। যতটুকু বুঝতে পারছে হয়তো আজকেই লেবার পেইন উঠবে। সেই অনুযায়ী হসপিটালে আগেভাগে সবকিছু রেডি করে রেখেছে অনিক। তাহমির শ্বাশুড়িও এসেছেন আজকে। তিনি কিছুক্ষণ পর পর এসে দেখে যাচ্ছে তাহমিকে। আমেনা ইসলাম তো মেয়ের থেকে একটু দূরে সরছেন না। তাহমি বলেকয়ে তাকে অন্যন্য কাজবাজ করতে পাঠাচ্ছে। আয়ান তো টেনশনে মাঝে মধ্যে পায়চারি করছে। আয়ানের বাবা বাড়িতে নেই। আসবে আগামীকাল রাতে। সবাই এতটাই উদ্বিগ্ন হয়ে গেছে মনে হয় তাহমি-ই পৃথিবীতে একমাত্র প্রেগন্যান্ট! ( একটা হাহা মার্কা ইমোজি)  

সারাদিন এভাবেই কাটলো সবার। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই যে যার ঘরে গিয়ে শুয়েছে। ফরিদা খান ও আমেনা তাহমির কাছে শুয়েছেন আজ। সহন আয়ানের সাথে ঘুমোবে। তৃষাও চেয়েছিল বোনের সাথে শুতে। কিন্তু দুই মায়ের অভিজ্ঞতা আছে বলে তাহমির অসুবিধা উনারা বুঝতে পারবেন বলে তৃষা আর জোর করেনি।
" আপাই তোর কি বেশি শরীর খারাপ লাগছে? "

বোনের মাথার পাশে বসে আছে তৃষা। ফরিদা খানও বসে অন্য পাশে। আমেনা ইসলাম পাশেই চেয়ারে বসে আছেন। তাহমির অস্থিরতা ক্রমে বাড়ছে। 
" একটু। তুই যা অনিকের কাছে। রাতে কিছু হলে মামুনি তো আছেই। তোদের ডেকে নিবে। "
" হ্যাঁ তৃষা তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।"
ফরিদা খান তৃষাকে বললেন। সবার কথায় তৃষা নিজের ঘরে গেলো। একটা সময় সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। কিন্তু তাহমির চোখে ঘুম নেই। পেটে থেমে থেমে ব্যথা হচ্ছে। শরীরের ভেতর থাকা ছোটো প্রাণটি সে এখন অনুভব করতে পারে। এভাবেই ছটফটিয়ে সারা রাত কাটলো তাহমির। সকাল হতেই ব্যথার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলো। বিষয়টা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় তাহমিকে। ডাক্তাররা চেষ্টা করেও নরমাল ডেলিভারি করতে না পেরে শেষমেশ সিজার করতে বাধ্য হয়। তাহমির কোল জুড়ে ছোট্ট একটি শিশু ভূমিষ্ট হলো। ও.টি রুমের সামনে সবাই অপেক্ষা করছে। এরমধ্যেই মাগরিবের আজান দিতে শুরু করেছে। অপারেশন থিয়েটার রুমের দরজা খুলতেই এগিয়ে আসে তাহমির বাড়ির সবার। একজন নার্স হেসে বলেন,
" আপনাদের পেসেন্টের ছেলে হয়েছে। মা এবং বাচ্চা দুজনেই সুস্থ আছে।" 
সহন খবরটা শুনে খুশিতে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে ফেললো। সবার চোখের আড়ালে শক্তপোক্ত পুরুষের চোখের নোনাজল ঝড়ল তার পিতা হওয়ার সংবাদ শুনে। ছেলে কিংবা মেয়ে হওয়া নিয়ে দুই পরিবারের কারোরই কোনো মতামত ছিলো না৷ যা-ই হবে সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসবে সেটাই ছিলো সৃষ্টিকর্তার কাছে সকলের প্রার্থনা। 

" আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আমরা কখন দেখা করতে পারবো নার্স?"
তাহমির শ্বাশুড়ি হেসে জিজ্ঞেস করলেন। নার্স স্বাভাবিকভাবেই বলে,
" একটু পরই কেবিনে শিফট করা হবে উনাদের। তারপর দেখা করতে পারবেন। তবে বাচ্চার মা আপাতত সেন্সলেস। একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। "
" ঠিক আছে। ধন্যবাদ। এটা আপনি রাখুন,তোমার বখশিশ। "
সহন মানিব্যাগ থেকে দু'টো হাজার টাকার নোট বের করে নার্সের হাতে দিলো। উনি হাসি হাসি মুখেই আবারও অপারেশন থিয়েটারে ঢুকলেন। 

বিকেলের দিকে তাহমির ঠিকঠাক মতো জ্ঞান ফিরেছে। আপাতত গ্লুকোজ স্যালাইনের মাধ্যমে ক্ষুধা নিবারণ করা হচ্ছে রোগীর। পরে ভাত খেতে দিবে। নিজের পাশেই ছোট্ট প্রাণটাকে দেখে তাহমির বুকটা আনন্দে ভরে গেছে। সহন পাশে চেয়ারে বসে এতক্ষণ তাহমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। 
" তুই ঠিক আছিস তাহমি?"
" ঠিক আছি আমি। তুমি চিন্তা কইরো না। দেখেছ? আমাদের ছেলে একেবারে তোমার মতো দেখতে হয়েছে। সেম ভ্রু,সেম চোখ আর নাক! সবকিছুই তোমার মতো। "
সহন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। ছোটো সহনের হাতে নিজের একটা আঙুল রেখে সহন বললো,
" হ্যাঁ, ডবল সহন। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও,তারপর আমরা একসাথে বাসায় ফিরবো।"
" ইনশাআল্লাহ। মা, মামুনি কোথায় সবে?"
" আছে সবাই। আবার আসবে আমি যাওয়ার পরে 
।"
তাহমি মুচকি হাসলো। দেখতে দেখতে কেটে গেলো সপ্তাহখানে। আজকেই বাসায় নিয়ে এসেছে সহন। সবাই খুব খুশি। পিচ্চির নাম রাখা হয়েছে, সাকিন। সাকিনের ছোটো ছোটো হাত-পা গুলো সুন্দর করে নড়াচড়া করছে। বিকেলে অনিমা এবং সত্তার শেখও আসবে বেবিকে দেখতে। আয়ান এসেছে অনিমার কাছে। বেবি দেখতে যাবে কথাটা শুনতেই খুব খুশি হয়েছে অনিমা।
" সত্যি? এখুনি চলো না আমরা।'
" পাগল একটা! এখন না, একটু পরে যাবো। আঙ্কেলকে বলেছি, তুমি রাত করে ফিরবে একটু। একেবারে রাতের খাওয়াদাওয়া করার পরে পৌঁছে দিবো আমি। আঙ্কেলের কাজ আছে পরে যাবেন তিনি। "
" আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে। তুমি বসো,আমি কফি তৈরি করতে বলছি।"
" কোল্ড কফি তৈরি করতে বলো।"
অনিমা হেসে বললো, " ঠিক আছে। "

একটি ছোটো প্রাণকে ঘিরে দুই পরিবারের লোকজনের আনন্দ কমছে না। সন্ধ্যা হতে সবাই বসেছে ড্রইং রুমে। তাহমি ঘরে শুধু সাকিনকে নিয়ে। পাশে অবশ্য সাকিনের দাদি আছেন। সহন ইচ্ছে করে আয়ানকে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করছে। 
" বিয়েটা হলেই দেখবে শালাবাবু, মেয়েদের সামলান কঠিন না-কি সহজ হাহা!"
" হুম দেখা যাবে সেটা। "
" কী নিয়ে গুজরগুজর ফুসুরফাসুর করছো তোমরা?"
তৃষার কথায় চমকে উঠল দু'জন ওরা। সহন হেসে বলে,
" শালাবাবুকে শেখাচ্ছি কীভাবে মেয়েদের মন পেতে হয়।"
" ওও আচ্ছা। এসব না করে চলো আপুর কাছে যাই। সাকিন কি সারাদিন শুয়ে থাকবে শুরু? "
" হ্যাঁ চলো তাহলে। "
.
.
.
চলবে........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।