আরোরা - পর্ব ০৯ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (ফ্যান্টাসি, হরর, রোমান্টিক)
#পর্ব_৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



"কী করছেন? আপা এসে যাবে তো!"
" আসার আগেই ছেড়ে দিবো। শোনো আমি রাতে অপেক্ষা করবো বাইরে। এখন চলে যাবো। আসবে তো?"
" না এসে উপায় আছে? কী করে যেনো আমার আমিকে আপনি নিজের করে নিয়েছেন! "
আরোরার কথায় এডওয়ার্ডের হাসি প্রসস্থ হলো। প্রণয়ের অনলে তবে সে একা পুড়ছে না,প্রেয়সীও পুড়ছে গোপনে। 
" বেশ। এনা ঘুমিয়ে গেলেই তুমি বের হয়ে বাসার সামনে থেকো। আমি পাশেই অপেক্ষা করবো।"

এডওয়ার্ডের কথা শেষ হওয়ার আগেই ধুপধাপ শব্দে রান্নাঘর থেকে শোয়ার ঘরের দিকে আসলো এনা। নেহাৎ এডওয়ার্ড দূরের শব্দ সহজেই শুনতে পায় বলে আগেই নিজের জায়গায় গিয়ে বসেছিল।

বাড়ির বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাক। এই বাড়িতে এডওয়ার্ড কেনো প্রবেশ করেছে সেইসব ভাবতে ব্যস্ত সে। এডওয়ার্ড যে কখন তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা-ও টের পায়নি বেচারা। 

" ম্যাক! তুমি এখানে? "
আচমকা এডওয়ার্ডকে দেখে চমকে উঠেছে ম্যাক। এডওয়ার্ড অবাক হলেও এমন ভুত দেখার মতো অন্তত চমকায়নি। ম্যাক কিছুটা সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
" আপনাকে অনুসরণ করে এসেছি কিং। ক্ষমা করবেন। "
" এই তুমি আবার কবে থেকে আমাকে আপনি আপনি করে বলতে শুরু করলে?"
" গতকাল থেকে। আপনি এখন আমাদের রাজা। এই সম্মান আপনার প্রাপ্য। "
" চলো হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি।"
এডওয়ার্ড ম্যাককে ইশারা করে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো। ম্যাকও এডওয়ার্ডের পাশাপাশি হাঁটছে। রাত নামলে কেমন গা ছমছমে রহস্যময়তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে হলিথান শহরের অলিগলিতে। 
" শোনো ম্যাক আমি রাজা হলেও আগের আমিটাই আছি। তাছাড়া হঠাৎ করে তুমি আপনি করে ডাকলেই তো আমি সেই আপনি নিতে পারবোনা। তাই আগের মতোই সম্মোধন রেখে সম্মান বজায় রাখো।"
এডওয়ার্ডের কথায় ভীষণ ভালো লাগছে ম্যাকের। এজন্যই এই মানুষটার প্রতি কোনো হিংসা কাজ করে না। অথচ তার বাবা এডওয়ার্ডকে সহ্য করতে পারে না! 
" ঠিক আছে এডওয়ার্ড। আচ্ছা শোনো আমি একটা সাহায্য চাই তোমার কাছে। "
" সাহায্য? "
ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো এডওয়ার্ড। ম্যাক মুচকি হাসছে। সাথে লজ্জা লজ্জা একটা ভাব আসছে ওর চেহারায়। সেটা দেখেই এডওয়ার্ড বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। ম্যাক লজ্জা পাওয়ার ছেলে নয়। আজ হঠাৎ লজ্জা পাচ্ছে কেনো তাহলে?
" হুম। "
" বেশ বলো ম্যাক,আমি তোমার জন্য কী করতে পারি।"
" আসলে এডওয়ার্ড আমি এক মানবীর প্রেমে পড়েছি। বিষয়টা অদ্ভুত হলেও সত্যি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে আমাকে ভয় পায় এবং আমার হাত থেকে বাঁচার জন্য সারা কক্ষে রসুন ছড়িয়ে রেখেছে। "

ম্যাকের কথায় অবাক হয়নি এডওয়ার্ড। সে তো নিজেও এক মনুষ্য কন্যার প্রেমে মজেছে। কী আছে এই মানুষের মধ্যে? যা হৃদয়হীন পিশাচদের মধ্যেও ভালোবাসার সঞ্চার করতে পারে! 
" বুঝতে পেরেছি। তুমি কি চাচ্ছ আমি রসুনগুলো সরিয়ে দিবো? না-কি তোমাকে রসুন সহ্য করার সাময়িক শক্তি প্রদান করবো? "
এডওয়ার্ডের প্রস্তাবে খুশিতে দু-চোখ চিকচিক করছে ম্যাকের। 
" সম্ভব হলে আমাকেই রসুন সহ্য করার ক্ষমতা দাও। "
" ঠিক আছে। কিন্তু এই শক্তি শুধু তিন প্রহর পর্যন্ত থাকবে। "
" সেটুকু সময় যথেষ্ট এডওয়ার্ড। যদি মেয়েটাকে আজীবনের জন্য কাছে রাখতে পারতাম! "
আফসোসের সুরে বললো ম্যাক। এডওয়ার্ড তার পরিবর্তনে হাসছে। কে বলবে এই ছেলে ক'দিন আগেও মেয়েদের নিয়ে মত্ত ছিলো? 
" পারবে। আগে তাকে বোঝাও তুমি তাকে ভালোবাসো। ভয় কাটাতে পারলেই জয় করতে পারবে সবকিছু। "
" আমি চেষ্টা করবো এডওয়ার্ড। "
ম্যাকের চাহিদামতো তিন প্রহরের জন্য ম্যাককে রসুন সহ্য করার ক্ষমতা প্রদান করেছে এডওয়ার্ড। ম্যাক আর অপেক্ষা না করে এডওয়ার্ডকে বিদায় জানিয়ে মিচবা গ্রামের দিকে উড়ে যাচ্ছে। আরোরা যখন জানতে পারবে এডওয়ার্ডও একজন রক্তচোষা পিশাচ তখন কি সে-ও ম্যাকের ভালোবাসার মানুষের মতোই ভয় পাবে? ভ্যাম্পায়ার বলে কি আরোরা এডওয়ার্ডকে ভয় পেয়ে দূর সরিয়ে দেবে সেদিন? হুট করে এরকম আরো কিছু প্রশ্ন মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠেছে এডওয়ার্ডের। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখুনি অস্থির লাগছে তার।

ঘুমনো অবস্থায় নিজেকে কারো বলিষ্ঠ বাহুতে আবদ্ধ অনুভব করতেই ঘুম ভেঙে গেলো সাঁচির। ম্যাককে দেখে তার পিলে চমকে গেছে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে। কিন্তু ম্যাক শক্ত করে সাঁচির ছোট্ট শরীরটাকে নিজের বুকের মধ্যে আগলে ধরে আছে। 
" এতো নড়াচড়া করে না সাঁচি। আমাকে ভয় কেনো পাচ্ছ বলো? একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখো তো, দেখতে কি অসুন্দর আমি? "
ম্যাকের এরকম কথাবার্তা শুনে মেজাজ খারাপ লাগছে সাঁচির। পিশাচের আবার চেহারা! নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে তার। শেষমেশ একটা পিশাচ তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে? কেনো পৃথিবীতে কি কোনো মানুষ ছিলো না? 
" দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন। আমার অস্বস্তি হচ্ছে এভাবে থাকতে। "
" কিছু করার নেই। তোমার ভবিষ্যত বর ভীষণ কামুক, চাহিদাসম্পন্ন, আবেগপ্রবণ এবং আকর্ষণীয়। সবকিছু তোমাকেও সামলাতে হবে এবং দেখতেও হবে। "
সাঁচিকে এমন কাচুমাচু হতে দেখে ভালোই লাগছে ম্যাকের। কিন্তু সাঁচির অসহ্য লাগছে ম্যাকের স্পর্শ। কখন জানি ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দেয় আবার! 
" বর! আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবোনা । "
" সাঁচি! "
সাঁচির কথায় ম্যাকের চোখমুখ অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। ওর মৃদু ধমকে সাঁচি ভয়ে কেঁপে উঠল। বিষয়টা বুঝতে পেরে ম্যাক নিজেকে শান্ত করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাঁচির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো সে,
" সাঁচি কেনো এ ধরনের কথা বলো? বিয়ে করতে হবে না তোমাকে। বিয়ে না করেও একসাথে থাকতে পারবো আমি। তবুও বেঁচে থাকতে হবে তোমাকে বুঝলে?"
" হু।"
সাঁচি কেবল ভয়ের কারণে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। 
" তোমার সমস্যা হচ্ছে তুমি মনে মনে ভেবে নিয়েছ আমি একটা ভ্যাম্পায়ার। এজন্যই আমার চেহারার দিকে তাকাওনি পর্যন্ত। "
সাঁচি চুপ করে আছে। ম্যাক কীভাবে যে তাকে নিজের সাথে জুড়বে বুঝতে পারছে না। একটু কাছাকাছি যাবে? সেদিন তো সাঁচির চোখেও একটু হলেও বাসনা দেখেছিল ম্যাক। সাঁচিকে বাহুডোর থেকে মুক্ত করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। মেয়েটা ভয়ে বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে আছে ম্যাকের দিকে। কই! এখন তো একেবারে মানুষের মতোই স্বাভাবিক চেহারায় আছে পিশাচটা। এই প্রথম ম্যাকের সুদর্শন মুখাবয়ব খেয়াল করে দেখছে সাঁচি। চোখগুলো কেমন নেশালো, কেমন মাদকতা ছড়াচ্ছে সেই চোখের দৃষ্টি! ম্যাক মুচকি হাসলো সাঁচির অবস্থা দেখে। সাঁচি দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে অন্য দিকে। ম্যাক সাঁচির দুহাত বিছানার সাথে আলতো করে চেপে ধরে নিজের শরীরের অর্ধেক সাঁচির উপরে রেখেছে । সাঁচি সচকিত দৃষ্টিতে ম্যাকের চোখে চোখ রেখে ইশারায় অনুনয় করছে। ম্যাকের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই এখন। প্রিয়তমাকে এতো কাছে পেয়ে নেশা চড়ে গেছে তার। সাঁচির অনুনয় অগ্রাহ্য করে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো ম্যাক। চোখ বন্ধ করে ফেলেছে সাঁচি। প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম ওর। এই বুঝি সুচালো দাঁত বের করে ফেলে পিশাচটা! কিন্তু না মিনিট পাঁচেক ঠোঁটের নেশায় বুদ হয়ে থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে আছে ম্যাক। সাঁচি এখনও চোখ বন্ধ করে আছে দেখে মিটিমিটি হাসছে। এক হাত দিয়ে সাঁচির দু'হাত মাথার সোজা একত্রে চেপে ধরে অন্য হাত সাঁচির উদরে বোলাচ্ছে। মেয়েটা ভয় আর অজানা শিহরণে বারবার কেঁপে উঠছে। খারাপও লাগছে আবার। ভালোবাসলে এভাবে জোর করে শরীরে হাত দিতো? সাঁচি না পারছে চিৎকার করতে আর না পারছে সহ্য করতে। ম্যাক যেনো আজ সাঁচিকে বেসামাল না করে ছাড়বে না। ঠোঁটে আলতো কামড়ে দিয়ে গলায়,ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ম্যাক। কোমর ছাড়িয়ে হাতের স্পর্শ এসে থেমেছে বুকের মাঝ বরাবর। ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস উঠানামার ফলে সাঁচিকে আরও কামুক লাগছে ম্যাকের কাছে। হাতগুলো মুক্ত করে সাঁচির গাউনের চেইন খুলতে লাগলো সে। সাঁচি বৃথা চেষ্টা করছে ম্যাককে আটকানোর। যতটুকু চেইন খুললে গলার সম্পূর্ণ অংশ উন্মুক্ত হয় ততটুকু খুলে থামলো ম্যাক৷ ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে লাগলো গলা থেকে বক্ষ বিভাজনের উপরিভাগ পর্যন্ত। ম্যাকের মাতাল করা স্পর্শে এতক্ষণে সাঁচিও নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। কোনো বাঁধা দিচ্ছে না এখন সে। শুধু তৃষ্ণার্ত পথিকের মতো ছটফট করছে ম্যাককে সম্পূর্ণ রূপে পাওয়ার জন্য। বিষয়টা ম্যাকের বুঝতে সময় লাগেনি। বোঝা মাত্রই সাঁচিকে ছেড়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। সাঁচি আড়চোখে ম্যাকের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। হঠাৎ এই মুহুর্তে এসে দূরে সরে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না সে। 
" কী হয়েছে? এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো? "
ম্যাকের কথায় থতমত খেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে সাঁচি। সত্যি তো কী হয়েছে তার? উফ কামনাবাসনার খেয়ালে ভুলেই গিয়েছিল ম্যাক একজন অপরিচিত এবং একজন ভ্যাম্পায়ার। 
" না মানে কিছু না। আপনি চলে যান।"
" এখন চলে গেলেও আবারও আসবো আমি। আর এভাবেই মাতাল করে দূরে সরিয়ে দিবো। দেখবো কতদিন সহ্য করতে পারো। একদিন নিজে থেকেই এই ভ্যাম্পায়ারকে নিজের করে চাইবে তুমি। কথা দিয়ে ভোলানো আমার ধাঁচে নেই, আমি এভাবেই তোমাকে ভালোবাসা দিবো।"
ম্যাকের কথায় গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে সাঁচির। একে তো পিচাশ হয়ে ভালোবাসার পাগলামি তার উপর এভাবে মাঝ নদীতে এনে বৈঠা নিয়ে হারিয়ে যাওয়া! কী জ্বালায় পড়লো ভেবে কান্না পাচ্ছে ছোট্ট সাঁচির। এই বয়সে অনুভূতিরা যে বড্ড বেপরোয়া হয়। ম্যাক সাঁচির কপালে চুমু খেয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
" আজ আসছি আমি। সাবধানে থেকো সাঁচি। তোমার বালিশের পাশে একটা রূপোর ছোটো ছুরি আছে। সব সময় সাথে রাখবে। কোনো ওয়ারউলফ তোমাকে আক্রমণ করতে এলে ওটা দেখাবে তাহলেই ভয় পাবে। আর হ্যাঁ দিনের বেলায় কোনো ভ্যাম্পায়ার আসে না। তাই ভ্যাম্পায়ারদের নিয়ে কোনো ভয় নেই। তাছাড়া তোমার শরীর থেকে আমার শরীরের সুগন্ধ আসবে। সবকিছু তোমার নিরাপত্তার জন্য। আসছি। "
সাঁচি কিছু বললো না,ম্যাক বেরিয়ে গেছে কক্ষ থেকে। নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলো সাঁচি। বিছানা থেকে শুরু করে চুলগুলো পর্যন্ত এলোমেলো হয়ে গেছে তার। কিন্তু লজ্জা কেনো পাচ্ছে সেই নিয়েও রাগ হচ্ছে মেয়েটার!

জোহানসনের শরীর খারাপ যাচ্ছে আজকাল। হেলগা সেই নিয়ে চিন্তিত। তাছাড়া ছেলের জন্যও চিন্তা হয়। নিজেদের মধ্যেই যে শত্রু আছে সেটা তো হেলগার অজানা নয়। 

হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছে এডওয়ার্ড ও আরোরা। সামনের পুকুরপাড়ে যাবে আজও। কিন্তু আজকে কেমন জানি লাগছে আরোরার। মনে হচ্ছে সেদিনের মতো আশেপাশে কেউ লুকিয়ে তার উপর নজর রাখছে! এডওয়ার্ড আরোরাকে অন্যমনস্ক দেখে জিজ্ঞেস করলো,
" আরোরা? ঠিক আছো তুমি? "
" হ্যাঁ। কিন্তু কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে। মনে হচ্ছে... "
" কী মনে হচ্ছে? "
" মনে হচ্ছে কেউ দেখছে আমাদের। "
" আমি আছি না সাথে? "
" হ্যাঁ আছেন বলেই তো এ-ই রাতে বের হওয়ার ভরসা পেয়েছি। "



চলবে..........................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন