#আরোরা (ফ্যান্টাসি, হরর, রোমান্টিক)
#পর্ব_১০
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
" মনে হচ্ছে কেউ দেখছে আমাদের। "
" আমি আছি না সাথে? "
" হ্যাঁ আছেন বলেই তো এ-ই রাতে বের হওয়ার ভরসা পেয়েছি। "
এডওয়ার্ড একহাতে পেছন থেকে আরোরার কোমরে হাত রেখে আগলে ধরেছে। আরোরা সামান্য কেঁপে উঠল তাতে। কিন্তু এই স্পর্শ যে তাকে আগলে রাখার জন্য সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না আরোরার।
" ভয় পেও না আরোরা। সময়টাকে উপভোগ করো। "
এডওয়ার্ডের কথায় ভরসা করে নিজেদের দিকে মনোযোগ দিলো আরোরা। দু'জন চুপচাপ হাঁটতে হাঁটতে আবারো সেই পুকুরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। চাঁদের আলোতে ভেসে যাচ্ছে হলিথান শহর। পুকুরের জলে চাঁদের আলোর প্রতিফলন মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে। এডওয়ার্ড আরোরার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে। দু'হাতে আঁজলা করে পানি উঠানোর মতো করে গালে হাত রাখলো আরোরার। লজ্জা লজ্জা লাগছে মেয়েটার। কিন্তু পরক্ষণেই তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে অন্য কিছুর আভাস দিতে লাগলো। এডওয়ার্ডও কিছু একটা বুঝতে পেরে আরোরাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো। আরোরা উত্তেজনা, ভয়ে কাঁপছে। পুকুরের অন্য পাশে ঝোপের ভেতর থেকে গরগর আওয়াজে নড়েচড়ে উঠলো কিছু একটা। এডওয়ার্ড তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করে নিচ্ছে সামনের আসন্ন বিপদকে। আরোরার সামনে কীভাবে কী করবে বুঝতে পারছে না সে।
" এডওয়ার্ড! ওখানে নেকড়ে আছে! আপনার কিছু হলে...."
আরোরা শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে এডওয়ার্ডকে। যেনো এক্ষুনি ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলবে এমন করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে মেয়েটা।
" চোখ বন্ধ করো আরোরা। কিছু হবে না আমাদের। "
এডওয়ার্ডের কথা শেষ হতেই ঝোপের ভেতর থেকে একসাথে তিনটে ওয়ারউলফ বেরিয়ে এলো। চাঁদের আলোয় তাদের হিংস্র দাঁতগুলো ভালো করেই দেখতে পাচ্ছে এডওয়ার্ড। লিওকে চিনতে পারলেও বাকি দু'টো নেকড়েকে চিনতে পারছে না এডওয়ার্ড। নেকড়েগুলো বিকট শব্দে এগিয়ে আসছে ওদের দিকে। আরোরা কিছু দেখছে না। সে কেবল মনেপ্রাণে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছে। এডওয়ার্ড আর সময় নিলো না। এরপর দেরি করলে আরোরার ক্ষতি হতে পারে। মেয়েটার মাথায় আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিতেই চেতনা হারালো। এডওয়ার্ড নিজের শক্তির দ্বারা আরোরাকে শূন্যে শুইয়ে দিলো। এতটা উপরে ভাসছে আরোরা যেখানে কোনো নেকড়ে পৌঁছাতে পারবে না। ওদিকে নেকড়েগুলো রেগেমেগে এডওয়ার্ডের দিকে হামলা করতে গেলে এডওয়ার্ড তার বিশাল ডানা ঝাপটে আকাশে ভাসতে লাগলো। ইচ্ছে ছিলো ওদের সাথে ঝামেলা শেষ হলে আরোরাকে নিয়ে বাসায় দিয়ে আসবে। কিন্তু এভাবে আরোরাকে শূন্যে শুইয়ে রাখা ঠিক লাগছে না। তাই আরোরাকে কোলে নিয়ে ভেসে ভেসে একেবারে বাড়ির সামনে এসে থামলো এডওয়ার্ড। নেকড়েগুলোও যেনো আজকে ক্ষেপে আছে। ওঁরাও আসছে পিছুপিছু। এই অবস্থায় দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলে এনা খারাপ ভাববে আরোরাকে। তাই এডওয়ার্ড জানালা দিয়ে আরোরাকে ফ্লোরে শুইয়ে রেখে নিজেও ঘরের ভেতর ঢুকলো। তারপর আবারও মেয়েটাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো সাবধানে। ওদিকে দূর থেকে হাঁকডাক ভেসে আসছে উলফের। এডওয়ার্ড আর কালক্ষেপণ না করে আরোরার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে ঘর দিয়ে বেরিয়ে শক্ত করে জানালা বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে একটা হেস্তনেস্ত করতেন হবে। কেনো লিও আরোরাকে নিয়ে পড়েছে তার জবাব দিতে হবে তাকে।
" ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল ভ্যাম্পায়ার রাজপুত্র এডওয়ার্ড হাহা!"
লিও এর গা জ্বালানো কথায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এডওয়ার্ড। মুখোমুখি ভ্যাম্পায়ার কিং ও ওয়ারউলফরা।
" লিও তোদের সমস্যা কী? আরোরার পেছনে কেনো পড়েছিস? তোকে সেদিন সাবধান করার পরেও কেনো আবারও আরোরার উপর আক্রমণ করতে চেয়েছিস?"
এডওয়ার্ডের চোখমুখ ভয়ংকর লাগছে। প্রিয়তমের এই বিভৎস রূপ দেখলে নিশ্চিত আরোরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো। লিও এর সাথে আছে ফ্রেডরিক ও হেলেনা। তারা হচ্ছে নির্বাসিত নেকড়ের দল। মানুষের উপর আক্রমণ, নিজেদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করা এবং আরো অন্যায় করার জন্য তাদের প্রাসাদ থেকে বিতাড়িত করেছিল সাবেক উলফ কিং লিংকন।
" ওই মেয়েকে নিয়ে কী সমস্যা সেটা পরে জানবি তুই, আপাতত তোর স্বরূপ প্রকাশ করতে চাচ্ছি। তোর সাথে শক্তিতে না পারলেও তোর ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরিয়ে তোকে ভেতর থেকে দুমড়েমুচড়ে দেওয়ার কাজটা নিশ্চয়ই করতে পারবো আমরা। "
লিও এর কথা শেষ হতেই তীব্র বেগে এডওয়ার্ড ঝাপিয়ে পড়লো ওদের উপর। চামড়ার পরিবর্তন ঘটে পুরু আবরণে ঢেকে গেছে এডওয়ার্ডের শরীর। চোখগুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে। সমস্ত শরীর থেকে যেনো আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। এডওয়ার্ডের বিবর্তিত শরীর নেকড়ের কামড়েও ছিন্নভিন্ন হবে না সেটা ভালো করে জানে লিও। কারণ একমাত্র রাজা হওয়ার পরেই এই শক্তি তারা অর্জন করে। বিষয়টা বুঝতে পেরে লিও ভয় পেয়ে গেছে। হেলেনার সাথে এডওয়ার্ডের তুমুল লড়াই চলছে। সে এক ভয়ংকর দৃশ্য! কিছু সময়ের ব্যবধানে হেলেনাকে শূন্যে তুলে মাটিতে ছুড়ে ফেললো এডওয়ার্ড। সাথে সাথে ব্যথায় গোঙানির মতো আওয়াজ করে উঠেছে হেলেনা। অবস্থা বেগতিক দেখে লিও আর ফ্রেডরিক। হেলেনার মনে হয় শরীরের কোনো হাড়গোড় ভেঙ্গে গেছে। বেচারি ভালো করে হাঁটতে পারছে না। যার জন্য লড়াই করতে এলো সেই তাকে রেখে পালাচ্ছে দেখে রাগ হচ্ছে হেলেনার। এডওয়ার্ড তার ভয়ংকর রূপ পরিবর্তন করে স্বাভাবিক রূপে ফিরে এসে হেলেনার সামনে দাঁড়াল। হেলেনা ভয়ে ভয়ে তবুও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। একে মেরে কোনো লাভ নেই এডওয়ার্ডের। এই লিওকে কিছু একটা করতে হবে। আরোরার জন্য ভীষণ বিপদজনক হয়ে উঠেছে শয়তান নেকড়েটা।
ঘন কুয়াশার জন্য রোদের আলো দেখা যাচ্ছে না। তবুও সকাল হতেই যে যার কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে গেছে। এনা যথারীতি সকালের রান্না চাপিয়ে দিয়েছে উনুনে। বিকেলে বোনকে নিয়ে সামনের সরাইখানায় যাবে বলে ঠিক করেছে এনা। অনেক দিন হলো বাইরে খাওয়াদাওয়া করা হয়নি। শাকসবজি স্যুপ রান্না হচ্ছে আজ। আরোরার শরীরে শাকসবজির দরকার আছে। কিন্তু মেয়েটা শাকসবজি ভীষণ অপছন্দ করে আজকাল। মাংস ছাড়া কিছু রোচে না তার। বোনের কথা ভাবতে ভাবতে একা একাই হাসছে এনা।
ঘুম ভাঙতেই হুড়মুড় করে উঠে বসেছে আরোরা। গতকাল রাতে কী হয়েছিল খুব করে মনে করতে চাইছে সে। কিন্তু এডওয়ার্ডকে জড়িয়ে ধরার পর কী হয়েছিল কিছুতেই আর মনে পড়ছে না। কীভাবে ঘরে এলো,বিছানায় এলো বুঝতে পারছে না। এডওয়ার্ড! এডওয়ার্ড ঠিক আছে তো? অস্থির লাগছে মেয়েটার। ওড়না দিয়ে মুখ চেপে জোরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। মনে হচ্ছে মানুষটা বুঝি ওকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে বিপদে পড়েছে। কীভাবে খোঁজ পাবে এডওয়ার্ডের? দিশেহারা অবস্থা আরোরার। তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো সে। এনা দেখেছে আরোরা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটা বেরিয়ে গেছে। খোলা চুলে এলোমেলো পায়ে দৌড়ে এসে পুকুরের সামনে দাঁড়িয়েছে আরোরা। নিজকে ধাতস্থ করতে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেললো বারকয়েক। আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে নজর বুলিয়ে দেখছে সে। কোথাও এডওয়ার্ডের চিহ্ন পর্যন্ত নেই! উফ এতটা অসহায় আগে কখনো লাগেনি বলে মনে হচ্ছে আরোরার। চিন্তায় মাথা ঘুরছে......
আরোরাকে টালমাটাল পায়ে এগিয়ে যেতে দেখে পিছন পিছন গুলিন এসেছে। গুলিন আরোরাদের সামনের গলিতে থাকে। ছাব্বিশ বছর বয়সী গুলিনের শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ, চোখগুলো ছোটো ছোটো, গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। পেশায় একজন ব্যবসায়ী সে। পুকুরের সামনে আসতেই আচমকা আরোরাকে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়তে দেখে দৌড়ে কাছে গেলো গুলিন।
আরোরাকে ওভাবে রেখে এসে এডওয়ার্ডের ভালো লাগছে না। প্রাসাদের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সে। মেয়েটা নিশ্চয়ই ওর জন্য চিন্তা করছে? কি কীভাবে যাবে এখন? দিনের আলোতে বাইরে যাওয়া নিয়মের বাইরে। তার উপর এখন এডওয়ার্ড এখন রাজ্যের রাজা। রাজা হয়ে নিয়ম ভঙ্গ করলে সাধারণ জনগণ কী করবে? কিন্তু আরোরার সামনে যাওয়াও দরকার। এডওয়ার্ডের অস্থিরতা দূর থেকে দেখছিল হেলগা। কাছে এসে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন তিনি। চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাল এডওয়ার্ড।
" মা তুমি! "
" হ্যাঁ। কী হয়েছে এডওয়ার্ড? এরকম চিন্তিত লাগছে কেনো?"
চলবে............................