আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

আরোরা - পর্ব ১১ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (ফ্যান্টাসি, হরর, রোমান্টিক)
#পর্ব_১১
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



এডওয়ার্ডের অস্থিরতা দূর থেকে দেখছিল হেলগা। কাছে এসে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন তিনি। চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাল এডওয়ার্ড। 
" মা তুমি! "
" হ্যাঁ। কী হয়েছে এডওয়ার্ড? এরকম চিন্তিত লাগছে কেনো?"
" আসলে মা একটা বিষয় নিয়ে চিন্তায় আছি। দায়িত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে কাকে বেছে নিবো সেই নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছি মা!"
ছেলের কথায় অবাক হননি হেলগা। মায়েরা সব বোঝে,সব। যেহেতু ছেলে নিজে থেকে তাকে কিছু জানায়নি তাই জিজ্ঞেস করবেনা হেলগা। হেলগা এমনই প্রকৃতির ভ্যাম্পায়ার। শান্ত ভঙ্গিতে বললেন উনি,
" নিজের সিন্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে এডওয়ার্ড। দূঢ়ভাবে যেকোনো এক দিকে অগ্রসর হও, দু'দিকে একসাথে সমন্বয় করা অনুচিত বলে মনে করছি আমি। "
এডওয়ার্ড তার উত্তর পেয়ে গেছে। এইজন্যই মায়ের সাথে কথা বলে ভীষণ ভালো লাগে এডওয়ার্ডের। মা'কে আলিঙ্গন করে দ্রুত প্রাসাদের ভেতর প্রবেশ করলো এডওয়ার্ড। উদ্দেশ্য ম্যাককে আরোরার কাছে পাঠিয়ে সংবাদ প্রেরণ করা। 

প্রাসাদের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সেলিন এবং আলেক্সা। একদিন বাদেই পূর্ণিমা! অথচ এতদিনেও কোথাও সেই কাঙ্খিত শক্তির পূর্বাভাস পায়নি ওরা। ওয়ারউলফ কিং নিক গম্ভীর মুখে বসে আছে চেয়ারে। আলেক্সা কতটা দায়-দায়িত্বশীল সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই উনার। তবুও কেনো এতটা বিলম্ব হচ্ছে নতুন শক্তির উৎস খুঁজে পেতে বুঝতে পারছেন না তিনি। 
" আলেক্সা তুমি আগামীকাল পর্যন্ত খোঁজ নেওয়া চালিয়ে যাও। আমি আমাদের জ্যোতিষীর সাথে আলাপ করে দেখছি পূর্ণিমার হিসেবে কোনো ভুল হলো কি-না। হিসাব মতো কালকেই পঁচিশতম পূর্ণিমা। "
কিং এর কথায় স্বস্তি পেলো সেলিন। আলেক্সা স্বাভাবিকভাবেই বললো,
" ঠিক আছে। আপনি কথা বলে দেখুন। আমি আর সেলিন সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।"
" বেশ। তোমরা তাহলে এসো এখন। "
" জি কিং।"
কিং আলেক্সা ও সেলিনের গমনপথের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে বিভোর হয়ে গেলেন।

বোনের এরকম অবস্থায় ভীষণ ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছে এনা। গুলিন আরোরাকে তাদের বাসায় নিয়ে এসেছে। নিজ কক্ষে শুয়ে আছে আরোরা। বিছানার একপাশে বসে আছে এনা এবং অন্য পাশে গুলিন। দু'জনেই আরোরার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছে। এনার দু-চোখ ছলছল করছে বোনের চিন্তায়। চোখেমুখে জলের ছিটেফোঁটা দিয়েছে। একটু আগে থেকেই চোখ বন্ধ অবস্থায় পিটপিট করছে আরোরা। কিন্তু এখনও চোখ মেলে কেনো তাকাচ্ছে না সেজন্যই যতোসব চিন্তাভাবনা এনার।
" এনা শান্ত হও। আরোরার জ্ঞান ফিরবে এখুনি। এতটা অস্থির হয়ে থাকলে আরোরা উল্টো তোমাকে নিয়ে চিন্তা করবে তো! "
গুলিনের কথায় চোখ পাকিয়ে তাকাল এনা। সাথে সাথে গুলিন শুকনো ঢোক গিলে ফের বললো,
" এনা আপা শান্ত হও। আরোরার জ্ঞান ফিরবে এখুনি। এতটা অস্থির হয়ে থাকলে আরোরা উল্টো তোমাকে নিয়ে চিন্তা করবে তো! "
" তোকে এতো ভাবতে হবে না আমাকে নিয়ে। "
গুলিন এনার চোখ পাকানিতে চুপসে গেছে। তার উপর মৃদু ধমক খেয়ে আরকিছু বলার সাহসটুকুও শেষ! এরমধ্যেই আরোরা ধীরেসুস্থে চোখ মেলে তাকিয়েছে। বোনকে হুঁশে ফিরতে দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো এনার।
" আরো? আরো তুই ঠিক আছিস?"
এনার দিকে দৃষ্টিপাত করতে আরোরার মায়া হচ্ছে। বেচারি আরোরার চিন্তায় চোখমুখ কেমন করে ফেলেছে। আরোরা ক্ষীণ স্বরে বলে, " ঠিক আছি আমি। শরীর একটু দূর্বল লাগছে শুধু। "
" সব ঠিক হয়ে যাবে বোন।"
" এই যে আরোরা! তুমি তো ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে। তা এখন ঠিক আছো?"
গুলিনকে দেখে চমকাল মেয়েটা। ম্লান কণ্ঠে বললো,
" ঠিক আছি গুলিন ভাই। আপনি....? "
" গুলিন তোকে বাসায় নিয়ে এসেছে। তোরা বস। আমি তোদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসি।"
" এনা আপা আমি চলে যাবো এখন। আরোরা তুমি নিজের খেয়াল রেখো। "
গুলিন যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো। এনা চোখ পাকাল আরেকবার। গুলিন বসে পড়লো তাতেই। 
" খেয়েদেয়ে তারপর যেও।"
গুলিন মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। বেচারাকে এমন অবস্থায় দেখে আরোরার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠেছে। 
দুপুর বেলা। আরোরাদের দোতলা বাড়ির সামনে কালো আলখেল্লা পরে দাঁড়িয়ে আছে ম্যাক। নিজেকে এমনভাবে পোষাকের আড়ালে লুকিয়ে নিয়েছে যাতে সূর্যের আলো না পৌঁছে শরীরে। এডওয়ার্ডের বলা মতো এটাই আরোরাদের বাসা। ম্যাক আরোরার জানালার কাছে উড়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে একখানা চিঠি ছুড়ে মারলো। তারপর দূর আকাশে বাদুড়ের রূপে ডানা ঝাপটে উড়তে লাগলো ম্যাক। 

 কক্ষের এককোনায় লন্ঠন জ্বলছে। লন্ঠনের মৃদু আলোতে এক মানবীর অবয়ব দেখা যাচ্ছে। সেই সন্ধ্যা থেকে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরোরা। আজকে শরীর বেশ দূর্বল লাগছে। তা-ও ভালো এডওয়ার্ড তাকে চিঠি পাঠিয়েছে। নইলে চিন্তায় মরেই যেতো হয়তো সে। কিন্তু এখনো আসছে না কেনো এডওয়ার্ড? চিঠিতে তো লিখেছিল সন্ধ্যার পরে আসবে দেখা করতে! এনা আজ নিজের ঘরে কিছু বইপত্র পড়া নিয়ে ব্যস্ত। নতুন একটা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানতেই এতো পড়তে হচ্ছে। আরোরা সেই সুযোগে এডওয়ার্ডের সাথে ইশারায় অল্পবিস্তর কথাবার্তা সেড়ে নিতে চেয়েছিল। সে আর হচ্ছে কই!

ইদানীং ভীষণ এক জ্বালায় পড়েছে সাঁচি। কোথাও যেনো একটু শান্তি পায় না সে। ঘুমাতে গেলেও ঘুম নেই, খেতে গেলেও ক্ষিদে নেই। ম্যাককে খুব করে মনে পড়ছে সাঁচির। অথচ ম্যাক আর আসেনি। কিন্তু মাঝে মধ্যে বাতাসের সাথে ঠিকই ম্যাকের আওয়াজ ভেসে আসে। এই যেমন গতকাল রাতে যখন ম্যাকের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণগুলো মিস করেছিল তখন সাঁচি শুনতে পেলো,
 " খুব মনে করছো? আসবো নাকি? উঁহু! আরো অপেক্ষা করতে হবে তোমাকে... আরো!"

এসব শুনে সাঁচির ভয় লাগছিল সাথে লজ্জাও। লোকটা কোথায় বসে বসে এসব বলছে? না-কি দূরে বসেও সবকিছুই শুনতে পায় পিচাশরা? নাহ কোনো উত্তর মেলেনি সাঁচির প্রশ্নের। তবুও সাঁচি মনে মনে কিছু প্রশ্নের নিজস্ব উত্তর সাজিয়ে নিয়ে মনকে শান্ত করে রাখে। যেমন এখন রাখছে। এই রাতে ভীষণ ভীষণ করে যে ম্যাককে সে মিস করছে তা কি ম্যাকের অজানা? মোটেও না। লোকটা জেনে-বুঝে দূরে বসে মজা নিচ্ছে।

পাশাপাশি হাতে হাত রেখে গা ঘেঁসে হাঁটছে দু'জন। আগামীকাল পূর্ণিমা, চাঁদের আলো তা জানিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীবাসীকে। 
" সন্ধ্যায় এলেন না কেনো?"
কণ্ঠে প্রিয়তমার অভিমান স্পষ্ট তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না এডওয়ার্ডের। মুচকি হাসলো সে। আধো আলোতে আরোরা বিষয়টা বুঝতে পারেনি অবশ্য। 
" একটু কাজ ছিলো তাই দেরি হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দাও।"
ইশ কতো সহজে ক্ষমা চাচ্ছে! অথচ যতটা সময় আরোরা অস্থির হয়ে ছিলো সেই হিসাবের কী হবে? 
" বেশ দিলাম। সেদিন আমাকে রেখে চলে গেলেন, একবারও ভাবলেন না আমার চিন্তা হবে? "
" আরোরা আমার একান্ত সমস্যা না থাকলে আমি তোমার সাথে তোমার বাসায় থাকতাম তখন।"
" ঠিক আছে সেটাও মানলাম। "
" নাহ মুখে মেনেছি বললেও মেনে যে নাওনি সেটা তোমার কথায় বুঝতে পারছি । এখন বলো তো কী করলে অভিমান কমবে? "
এডওয়ার্ডের বোকা বোকা কথায় মেজাজ খারাপ হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো হাসি পাচ্ছে আরোরার। কীভাবে অভিমান ভাঙাবে সেটা কেউ জিজ্ঞেস করে? এই লোককে কে ভালোবাসতে বলেছিল? অবশ্য সে তো এখনো মুখে কিছু বলেনি।
" কিছু করতে হবে না। "
আরোরার সোজাসাপটা উত্তরে যেনো আহত হলো এডওয়ার্ড। সত্যি হয়তো মান-অভিমান ভাঙানোর কৌশল তার জানা নেই বলেই মনে হচ্ছে আরোরার। 
" ঠিক আছে। চলো। "
" কোথায়? "
" পুকুর পাড়ে! "
আরোরা ভয়ে কেঁপে উঠল। সেদিনের রাতের ঘটনা মুহুর্তেই ভেসে উঠলো স্মৃতিপটে। 
" না, আর কখনো ওখানে যাবো না আমরা।"
" আরোরা! এতো অল্পে ভয় পেলে হয়? তোমাকে অনেক সাহসী হতে হবে। "



চলবে............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।