#আরোরা (ফ্যান্টাসি, হরর, রোমান্টিক)
#পর্ব_১২
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
" আরোরা! এতো অল্পে ভয় পেলে হয়? তোমাকে অনেক সাহসী হতে হবে। "
এডওয়ার্ডের কথার গভীরতা আরোরা বুঝতে পারেনি। ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাণী হতে গেলে একজন মানুষ হিসেবে অবশ্যই তাকে অনেক সাহসী হতে হবে – এটাই বুঝাতে চেয়েছে সে।
" এতো সাহসী হতে হবে কেনো? আপনি আছেন তো।"
আরোরা কথাটি শেষ করে এডওয়ার্ডের হাতটা একটু শক্ত করে চেপে ধরে। নারী তার ভালোবাসার পুরুষের কাছে নিজেকে সর্বোচ্চ নিরাপদ মনে করে। আরোরাও এখন এডওয়ার্ডকে পেয়ে ভরসা পাচ্ছে। হাতে হাত রাখা শুধু আলিঙ্গন নয় বরং ভরসার জায়গা একটা।
" হ্যাঁ আছি আমি। আরোরা!"
" হ্যাঁ বলুন এডওয়ার্ড। "
" এই যে আমরা একসাথে সময় কাটাচ্ছি, দু'জন দু'জনার জন্য অস্থির হচ্ছি, অনুভূতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেছি এটাকে কী বলে বলো তো?"
আরোরা লজ্জা পেলো। ভালোবাসি কথাটা কি আজ বলেই দিবে এডওয়ার্ড? আরোরার লজ্জায় নুইয়ে যাওয়া মুখটা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে এডওয়ার্ড। আপাতদৃষ্টিতে এডওয়ার্ড যেমন আরোরার সামনে আসলে একদম শান্ত হয়ে যায়। এই যে দূরে দূরে সরে থাকা সে-ও কেবল আরোরার বিশ্বাস অর্জন করার জন্য। এডওয়ার্ডের তো প্রায় ইচ্ছে করে প্রিয়তমার চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দিতে কিংবা কপালে উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু সেসবের কিছুই করে না যদি আরোরার খারাপ লাগে? মেয়েটি তো এখনো বলেনি যে সে এডওয়ার্ডকে প্রিয় পুরুষ হিসেবে বেছে নিয়েছে!
" আপনি বলুন কী বলে।"
" বলবো?"
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে এডওয়ার্ড ও আরোরা। চাঁদের ম্লান আলোয় লজ্জায় লাল হওয়া মুখখানা দেখা যাচ্ছে। এডওয়ার্ডের কাছে অবশ্য সবকিছুই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।
" হুম। "
" এটাকে ভালোবাসা বলে। ভালোবাসো আমাকে? আমার সাথে থাকবে আজীবন আরোরা?"
এডওয়ার্ডের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে আরোরা। ইশ কী সুন্দর করে বললো কথাগুলো! মানুষটার চোখেও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। আরোরা দৃষ্টি সংযত করে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
" হ্যাঁ থাকবো।"
" সত্যি? কখনো ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে না তো?"
এডওয়ার্ড আবেগপ্রবণ হয়ে আরোরার দু'হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করেছে। আরোরা লোকটার পাগলামি দেখে মৃদু হেসে বললো,
" যাবো না, তিন সত্যি করে বললাম। "
" ভালোবাসি আরোরা!"
" আমিও ভালোবাসি।"
এডওয়ার্ডের ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে আরোরাকে কোলে তুলে নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়াতে। কিন্তু সেটা এখুনি সম্ভব না। আচমকা সবকিছু সহ্য করতে পারবে না মেয়েটা। তবে জড়িয়ে ধরতে ভুলল না সে। আরোরাকে শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। আরোরা লজ্জায়, ভালোলাগার রেশে চোখ বন্ধ করে আছে।
" ম্যাক তুমি কি সত্যি হলিথান শহরের দিকে ঘনঘন যাওয়া আসা করছো আজকাল? "
বাবার প্রশ্নে বিশেষ হেলদোল ঘটেনি ম্যাকের। চেয়ারে বসে পায়ের উপর পা রেখে পাত্রে রাখা লাল বর্ণের নোনা তরল পান করতে লাগলো সে। কিয়াম বিরক্ত হচ্ছে ছেলের আচরণে। এতটা বেয়াদব ছেলে তার বিশ্বাস হচ্ছে না যেনো। কিয়াম বিরক্ত হয়ে ফের বললো,
" ম্যাক! আমি কিছু বলছি তোমাকে। "
" হ্যাঁ শুনছি আমি। ঠিকই শুনেছেন আপনি। আমার দরকার থাকে তাই ওদিকে যেতে হয় এতটুকু। "
" বাহ! বাবা হিসেবে আমাকে কানাকড়ি দামও দাও না তুমি। "
" আপনি আগে সত্যি সত্যি ছেলের ভালো হবে কীসে সেসব ভাবুন তারপর দাম দিবো। এডওয়ার্ডের পেছনে না লেগে নিজের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে করুন এবং আমাকে একটা ভালো জায়গায় পৌঁছে দিন। যেমন রাজা তার সন্তানকে দিয়েছে। "
" তুমি কি সেনাপতি হতে চাচ্ছ?"
" সেটাই তো হওয়ার কথা বাবা। আপনার পরে আপনার জায়গায় তো আমারই থাকার কথা। নয় কি?"
ম্যাকের প্রশ্নে চুপ করে গেছে কিয়াম। সত্যি বলতে এখনই নিজের জায়গায় ছেলেকে বসাতে চায় না সে। চেয়েছিল রাজার জায়গায় ছেলেকে বসিয়ে নিজের জায়গায় নিজেই থাকবে আমৃত্যু। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পাশার দান উল্টেপাল্টে যাচ্ছে। কিয়াম ম্যাকের কথার কোনো জবাব না দিয়ে কক্ষ থেকে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো। ম্যাক ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা লাল তরল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে মুচকি হাসছে।
বর্ষার অঝোর বৃষ্টি চলে গিয়ে প্রকৃতিতে শীতের আগমন ঘটেছে। শীতের মৌসুমে হলিথান ও আশেপাশের শহর,গ্রামে তুষারপাত পর্যন্ত হয়। এ সময় প্রকৃতি কেমন রুক্ষ হয়ে যায়। গাছপালার পাতাগুলো ঝরে যায়। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে সাঁচি। দেখতে দেখতে কতগুলো দিন পেরিয়ে গেলো তবুও সে আর আসলোনা। কিশোরী মন তার প্রিয় পুরুষের স্পর্শ পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। যে স্পর্শ একদিন বিষের মতোই লাগতো আজ তা তীব্র থেকে তীব্রভাবে অনুভব করছে সে। আসলে মানুষ অভ্যাসের দাশ। খুব বাজে একটা অভ্যাস থাকলেও হুট করে সেটা ছেড়ে দেওয়া যায় না। ম্যাক সাঁচির সেই বাজে অভ্যাস বটে। সাঁচির বয়স আঠারো থেকে উনিশে পড়বে আগামীকাল রাতে। হিসাব মতেো আগামীকাল ওর জন্মতিথি। তখনও কি ম্যাক আসবে না? একমাত্র মেয়েকে দিন দিন উদাসী হয়ে থাকতে দেখেও ভালো লাগে না সাঁচির মায়ের।
চাঁদের আলোতে দূর দূরান্ত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। পূর্ণিমার চাঁদের আলো যে কতটা মোহনীয় তা যে দেখেনি সে বুঝবে না। ছোটো পাহাড়ি টিলার উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে আরোরা। আরোরাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দুপাশে পা ছড়িয়ে বসে আছে এডওয়ার্ড। ঘাড়ে মুখ গুঁজে উষ্ণতা ছড়াতে ব্যস্ত সে। রক্তের ঘ্রাণের থেকেও আরোরার শরীরের ঘ্রাণ এডওয়ার্ডকে বেশি মাতাল করে তোলে। দারুণ চলছে ওদের প্রেম। রাত হলে ঘুরতে বের হওয়া আর দিনের বেলায় অপেক্ষা করা এই নিয়ে যেনো বেশ ভালোই আছে আরোরা। তবে শরীরটা ইদানীং কেমন হয়ে গেছে ওর। বেশ খারাপ লাগে। এডওয়ার্ড আরোরার পেটে আলতো করে আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া দিতেই মেয়েটা জোরেই হেসে উঠলো।
" এডওয়ার্ড সুড়সুড়ি কেনো দিচ্ছো? উফ থামো না!"
এডওয়ার্ড মাঝে মধ্যে এমন করে। আরোরাকে এভাবে হাসাতে তার ভারী আনন্দ লাগে।
" আচ্ছা থামলাম। চুপচাপ বসে না থেকে কিছু তো বলতেও পারো? "
" বলতে হবে কেনো? তুমি তো তোমার মতো বসে আছো আর আমি চাঁদ দেখছি।"
" তাই না?"
এডওয়ার্ড আরোরার ঘাড়ে আলতো করে কামড়ে দিয়ে শুধালো। সমস্ত শরীরে অনুভূতির জোয়ার বইতে শুরু করেছে আরোরার। এডওয়ার্ডের একটা বাজে স্বভাব হচ্ছে এভাবে আরোরোকে অনুভূতির জোয়ারে ভাসিয়ে চুপ হয়ে যাওয়া। যদিও আরোরা মুখে কিছু বলতে পারে না কিন্তু মনে মনে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ঠিকই।
" হ্যাঁ তাই তো! "
" দাঁড়াও চাঁদ দেখাচ্ছি.... "
আরোরা কিছু বলার আগেই এডওয়ার্ড সমস্ত ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে বেসামাল করে তুলতে শুরু করেছে। সাথে কোমরে হাতের রুক্ষ স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠছে আরোরা। বেচারি আরোরা টাল সামলাতে না পেরে শুধু ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। এভাবে মিনিট পাঁচেক পেরোতেই আরোরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোলে তুলে বসালো এডওয়ার্ড। ঘোরলাগা দৃষ্টিতে মেয়েটি তার প্রেমিকের কামুকতা দেখতে ব্যস্ত। তবে হঠাৎ করে শরীরে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হওয়ায় ছিটকে দূরে সরে গেলো আরোরা। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকাল এডওয়ার্ড নিজেও।
" আমার সমস্ত শরীরে খুব যন্ত্রনা করছে এডওয়ার্ড। "
এডওয়ার্ড আরোরার দিকে এগোলো।
" কী হয়েছে? দেখতে দাও! "
" না! তুমি এসো না। আমার কেমন জানি লাগছে। এসো না। "
আরোরার উদ্ভট আচরণের কারণ বুঝতে পারছে না এডওয়ার্ড। কথাগুলো বলতে বলতে নিমিষেই চোখের আড়ালে চলে গেছে সে। কিন্তু খুঁজে তো পেতেই হবে ওকে!
আজকাল আরোরা কেমন জানি বদলে গেছে। এনা সেই নিয়ে চিন্তিত। এমনকি এডওয়ার্ড নিজেও। ক'দিন ধরে এডওয়ার্ডের সাথে রাতে দেখা করতে যায়নি সে। এমনকি কীসের জন্য যাচ্ছে না সে নিয়েও মুখ খোলেনি। সেদিন রাতে কী হয়েছিল তা-ও বলেনি এডওয়ার্ডকে। তবে এনা এটুকু খেয়াল করেছে আরোরার শরীর আগের থেকে তূলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে। ক'দিন আগেই তীব্র দূর্বলতায় নুইয়ে পড়েছিল মেয়েটা। কিন্তু মাত্র দুএক রাতের ব্যবধানে কীভাবে এতটা উন্নতি ঘটেছে সেই নিয়ে এনা বেশ অবাক। এমনকি আগের থেকে সুন্দরী হয়ে গেছে সে। চোখগুলো গাঢ় সবুজ রঙের হয়ে গেছে, চুলগুলোও গাঢ় সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এডওয়ার্ড এসেছিল আরোরার বাসায়। এনাকে দু'জনের একজনও কিছু না জানালেও এনা ভালো করে জানে বোনের জীবনে ভালোবাসা এসেছে এবং সেই ভালোবাসার নাম এডওয়ার্ড। তাই বোনের এই হঠাৎ পরিবর্তন নিয়ে আড়ালে এডওয়ার্ডের সাথে কথাবার্তাও বলেছে এনা।
চলবে.........................