আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

নজর - পর্ব ০১ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


"আঙ্কেল ক'দিন যাবত রাতে ঘুমাতে গেলেই আমার আশেপাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করি। আর সমস্যাটা কেবল অন্ধকারে অনুভব করি। আমার অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয় তখন। মনে হয় অন্ধকারে কেউ আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দেখছে!"
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে থামলো নিশিতা। সামনে বসে থাকা আয়ান চৌধুরী খুব মনোযোগ সহকারে এতক্ষণ নিশিতার কথাগুলো শুনছিলেন। আয়ান চৌধুরী মনোবিশারদ। নিশিতার বাবার খুব কাছের বন্ধু আয়ান চৌধুরি। নিশিতা এবার অর্নাস ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। 
বাবা-মা আর একমাত্র ভাই রেহানকে নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিলো নিশীতার জীবন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে অন্য জায়গায়।
"আচ্ছা নিশীতা এসব ঠিক কতদিন থেকে ফিল করছো?"
ডক্টর আয়ান একটু নড়েচড়ে বসে নিশীতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
"প্রায় ছয় মাস ধরে। প্রথমে ভেবেছিলাম আমার মনের ভ্রম। কিন্তু একটা সময় পর ফিল করি আসলেই কেউ হয়তো আমার রুমে আছে! রাতের অন্ধকারে তার অস্তিত্ব অনুভব করি।"
আপতদৃষ্টিতে নিশীতার কথাগুলো অলিক সপ্ন মনে হলেও আয়ান চৌধুরীর কাছে খুব স্বাভাবিক লাগছে। উনি ভ্রু উঁচিয়ে নিশীতাকে জিজ্ঞেস করলেন,
" আর কোন প্রবলেম আছে কী?"
"প্রবলেম অনেক আঙ্কেল! যখনই আমার এরকম ফিল হয়, মানে আশেপাশে অন্যকাউকে অনুভব করি তখন একটা কঁটু গন্ধ নাকে আসে। তারপর মাঝেমধ্যে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর অনেক ভারী অনুভব হয় শরীর।"
নিশীতা কথাগুলো বলে আয়ান চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
ডক্টর একটু ভেবে বললেন,
"আর কিছু?"
"আরো? হ্যাঁ আছে। একেই তো এই রকম অদ্ভুত ঝামেলায় আছি। এসব শুনে মা বলছেন আমি হলিউড হরর মুভি বেশি দেখি তাই রাতে এই রকমের হ্যালুসিনেশন হয়। আপনারও কি তাই মনে হচ্ছে?"
নিশীতা বেশ জড়তা নিয়ে কথাটা বললো। আয়ান চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
"দেখো মা আমার মনে হয় এটা মেন্টাল কোনো প্রবলেম না।"
ডক্তের কথায় নিশীতা যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। কিন্তু একই সাথে আরো কিছু শোনার আগ্রহে ডক্টরের মুখের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়ান চৌধুরি একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন,
"তুমি বরং একজন ভালো হুজুরের সাথে আলাপ করো নিশীতা। সম্ভবত খারাপ জ্বীনের কবলে পড়তে চলেছো! আমার এক পরিচিত এর এরকম সমস্যা দেখা দিয়েছিলো।"
"কী! আঙ্কেল এখনকার যুগে কে এরকম হুজুর,ফকিরের দরগায় যায়? আপনি একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে এরকম আজগুবি কথা বলবেন ভাবতেও পারছিনা।"
নিশীতা কথাগুলো বলা শেষ করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।
"তুমি যদি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করো তবে এসব অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারেও বিশ্বাস করতে হবে। কারণ, আল্লাহ নিজেই বলেছেন তিনি জ্বীন-জাতি ও মানব-জাতিকে সৃষ্টি করেছেন কেবল তার ইবাদতের জন্য।"

নিশিতা ঠিক উনার সাথে কথা বাড়াতে চাইছে না।তাই কোন রকম কথা বলে চলে যাবে ভাবে।

"আচ্ছা আজ আসছি আঙ্কেল।"
"ঠিক আছে। সাবধানে থেকো।"
নিশীতা ডাক্তার আয়ানের চেম্বার থেকে বের হয়ে আসে।
লোকটা যে কীভাবে রোগীদের চিকিৎসা করে! ধুর।
নিশীতা মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে ভার্সিটির দিকে রওনা দেয়।
.
ক্লাসে সবাই যে যার মতো আড্ডা দিচ্ছে। আজকের আড্ডার মেইন টপিক কলেজে নতুন টিচার এসেছেন। উনি নাকি ভিষণ রাগী আর কড়া ধাঁচের লোক। আজ তিনি প্রথম ক্লাসে আসবেন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এসব নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।এরমধ্যেই নতুন টিচারের আগমন ঘটে ক্লাসে।
আহনাফ চৌধুরী সমাজবিজ্ঞানের নতুন প্রভাষক। উনাকে দেখেই মেয়েদের মাঝে কথা শুরু হয়ে গেছে। তবে লোকটাকে বেশ রাগী লাগছে। সবার সাথে পরিচয় দিয়ে ক্লাস করতে শুরু করেন উনি। কিছুক্ষণের মধ্যে নিশিতা সেখানে পৌঁছে। তবে লেইট হওয়ার কারণে নিশাতাকে একটু কড়া ভাবেই প্রশ্ন করেন আহনাফ। 
"এই মেয়ে ক্লাস শুরু হয়েছে আধঘন্টা ওভার! এত দেরি করে এলে কেন? "
"দুঃখিত,স্যার"
প্রথম দিন হওয়ার সুবাধে সেদিন আর তেমন কিছু বলেনি আহনাফ। নিশিতা তবুও মন দিয়ে ক্লাস করতে পারেনি। ক্লাস শেষে আনমনে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করে নিশিতা। সব সময় কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করে মেয়েটার ভিতরে। আনমনে হাঁটার ফলে উল্টো দিকে যে গাড়ি আসছিল তা খেয়াল করেনি সে। অঘটন ঘটবার আগেই রনি হেঁচকা টানে নিশিতাকে রাস্তার পাশে নিয়ে আসে। 
" এই মেয়ে মন থাকে কোথায় তোমার? আরেকটু হলেই তো!"
নিশিতা রনিকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। ঘটনার আকস্মিকতায় রনি নির্বাক দর্শকের মতো নিশিতাকে দু'হাতে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে রনি জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে তার!
" আমার কিছু ভালো লাগে না রনি। আমার কী হয়েছে? "
"আরে পাগলি সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার পরই তোমাকে আমার বাড়ি নিয়ে আসবো। বুঝি তো আমার বউটা আমাকে ছাড়া আর থাকতে পারে না। "
নিশিতা রনির বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বুকে কয়েকটা ঘুষি মারে।
" ধুরর তুমি সব সময় মজা করো। বিয়ের আগেই বউ! কত ঢং ছেলের। "

নিশিতা ভেংচি কেটে উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে। রনিও নিশিতার পিছনে পিছনে হাঁটতে শুরু করেছে। 

" ভালোবাসলে একটু আধটু ঢং,ন্যাকামি এসব করা লাগে। তুমি তো একটা বেরসিক মেয়ে। "
" চুপ! একটুও ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করবা না এখন। খুন করে ফেলবো একেবারে। "

নিশিতা রনির কলার ধরে কথাটা বলে। রনি হাঁটু গেড়ে বসে বলে 
"অলরেডি খুন হয়ে গেছি তো! "
 নিশিতা "ধ্যাৎ" বলে বাসায় চলে আসে। রনি অফিসে চলে যায়। রনি আর নিশিতার সম্পর্ক প্রায় চার বছরের। কলেজের সিনিয়র ছিল রনি। ভালো লাগা, ধীরে ধীরে কথা বলা তারপর আরকি? প্রেম! রনির পরিবার নিশিতার কথা জানলেও নিশিতা এখনো তার পরিবারে কিছু জানাতে পারেনি।

"মেয়েটা ইদানীং কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। "

কথাটা বলে জহিরুল ইসলাম মাইশা ইসলামকে আরও বলেন নিশিতার কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে বলে। মাইশা ইসলাম বলে হয়তো লেখাপড়ার টেনশনে। তাছাড়া মেয়ে বড় হয়েছে। বাইরে কোনো সম্পর্কেও জড়াতে পারে! জহিরুল ইসলাম তার স্ত্রী মাইশা ইসলামের কথায় সহমত পোষণ করে। এর মধ্যে কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পায় দু'জনেই। নিশিতার মা গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।

"এসেছিস মা। তোর সাথে খাবো বলে এখনো বসে আছি। "
" কেন বাবা? অলরেডি তিনটা বেজে গেছে! এখনো কেন খাওনি তুমি? "
" জানিসই তো তোর বাবার বেশি বেশি। "

মাইশা ইসলাম একটা মুখ ঝামটি দেন। নিশিতার বাবা হাসি মুখে নিশিতাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে। তারপর একসাথে খাবে বাবা মেয়ে দুজনে। 
নিশিতা নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর বাবা মেয়ে খেতে খেতে টুকটাক কথাবার্তা বলে। খাওয়া শেষে নিশিতা নিজের রুমে চলে যায়। 

সন্ধ্যে হতেই ব্যস্ত নগরীর মানুষগুলো কেমন নীড়ে ফেরা পাখিদের মতো বাড়ি ফেরার তাগিদে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। মাগরিবের আজানের শব্দে নিশিতার ঘুম ভেঙে গেছে। দুপুরে খাবার পর ঘুমানো একপ্রকার অভ্যাস মেয়েটার। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে জানালা বন্ধ করে দিয়ে রুমের বাতি অন করে সে। কিন্তু বাতি অন করার সাথে সাথেই আবার নিজে থেকেই অফ হয়ে যায়। আর সেই সাথে নিশিতা কেমন একটা দুর্গন্ধ অনুভব করে। এটা প্রায় প্রতিদিন ঘটে তার সাথে। মাগরিবের আজানের আগে জানালা বন্ধ না করতে পারলেই এরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটে তার সাথে। কথাটা বেশ কয়েকবার মাইশা ইসলামকে বললেও তিনি উল্টো নিশিতাকে বকাবকি করেন। আর জহিরুল ইসলামকেও বলে মেয়েকে আরও বেশি করে হলিউড মুভি দেখতে উৎসাহ দিতে। তাই নিশিতা এখন আর কাউকে কিছু বলে না এসব নিয়ে। 



চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।