#আরোরা (ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক)
#পর্ব_১৩
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
" আরোরা! কী হয়েছে তোমার? আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ কেনো এভাবে? "
সন্ধ্যা নামতেই এডওয়ার্ড আরোরার সাথে দেখা করতে ওদের বাসায় এসেছে। তবে আরোরা এনাকে বারবার নিষেধ করেছিল যেনো এডওয়ার্ডকে বাসায় ঢুকতে না দেয়। এনা অবাক হয় আজকাল আরোরার কঠোরতায়। যে মেয়েটা ফুলের মতো কোমল ছিলো সেই মেয়ে কেমন লোহার ন্যায় কঠিন আচরণ করছে! লন্ঠনের আবছা আলোতে আরোরার চেহারার অভিব্যক্তি বুঝতে চেষ্টা করছে এডওয়ার্ড। খাটের সামনাসামনি চেয়ারে বসে আছে এডওয়ার্ড, আরোরা বিছানায় পা দুলিয়ে বসে আছে। ওদের দু'জনকে একান্তে কথা বলতে দিতে চায় বলে এনা নিজের কক্ষে বসে আছে।
" আমার কিছু হয়নি এডওয়ার্ড। তুমি আর এখানে এসোনা। আমার পক্ষে তোমার সাথে কোনো সম্পর্কে এগোনো সম্ভব না। "
কণ্ঠে দৃঢ়তা বজায় রেখেই বললো আরোরা। এডওয়ার্ডের বুকের বামপাশে কেমন চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। এই একরত্তি মেয়েটা আজ তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে? কিন্তু এই মেয়েকে ছাড়া জীবন অতিবাহিত করা যে ভ্যাম্পায়ার কিং এডওয়ার্ডের জন্য অসম্ভব সেটা কি জানে সে?
" আরোরা! "
অস্ফুটে স্বরে বলে উঠলো এডওয়ার্ড। ধীর পায়ে চেয়ার থেকে উঠে বিছানার একপাশে বসলো সে। আরোরা ঠায় বসে আছে নিজের জায়গায়।
" এডওয়ার্ড চলে যাও প্লিজ! "
আরোরা অনুনয় করলো নাকি ভালোবাসা ফিরিয়ে দিলো সেই নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গেছে সে। এডওয়ার্ড আর কোনো কথা না বলে আরোরার কোমরে হাত দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো ওকে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেয়েটা।
" আরোরা আমি বুঝতে পারছি, তুমি ঠিক নেই। কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যেকোনো পরিস্থিতিতে তোমার সাথে থাকবো। আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। কীভাবে যাবো বলো তো? আমার হাতে তো অন্য কোনো উপায় নেই। আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতেই পারবোনা। "
এডওয়ার্ডের আবেগপ্রবণ কথায় আরোরার বুকটা হুহু করে উঠেছে। ইচ্ছে করছে এই বুকে মাথা রেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু সেই উপায় আর নেই তার। তবুও খানিকটা এডওয়ার্ডের বুকে মুখ গুঁজে রইলো সে। এডওয়ার্ড তার অনুভূতির বেড়াজালে আবদ্ধ করার জন্য গভীরভাবে আলিঙ্গন করে। আরোরার মাথার তালুতে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো সে।
" ভালোবাসলেও সবাই একসাথে থাকতে পারে না এডওয়ার্ড। আমি তোমাকে আমৃত্যু ভালোবাসবো কিন্তু তোমার সাথে থাকতে পারবোনা। কেনো পারবোনা সেই উত্তর আমি দিতে পারবোনা এখন।"
এডওয়ার্ড চুপ হয়ে গেছে। কী বলবে? বুকের ভেতর ভীষণ দমবন্ধ হওয়ার মতো কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আরোরার ভালোবাসা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই তার। আপাতত দূরে সরে গিয়ে আরোরার উপর নজর রাখাই এডওয়ার্ডের সমীচীন বলে মনে হয়।
নিশুতি রাত! অস্থিরতা গ্রাস করেছে সাঁচিকে। বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করতে করতে দেয়ালঘড়ির দিকে বারবার তাকাচ্ছে সে। জীবনে আজই প্রথম নিজের জন্মদিনের জন্য এতটা উদগ্রীব হয়ে গেছে সাঁচি। ওর অবচেতন মস্তিষ্ক বারেবারে জানান দিচ্ছে আজকে ম্যাক আসবে, আসবেই! খোলা জানালার কপাট বাতাসে দোল খেয়ে মাঝে মধ্যে কেমন একটা শব্দ করছে। শনশন করে বাতাস বইছে বাইরে। চাঁদের আলোয় ঘর আলোকিত হয়ে গেছে। দু'দিন আগেই পূর্নিমা গেলো। সাঁচির ভাবনায় এরকম আরো অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু বিচরণ করছে এখন। একবার মনে হচ্ছে ম্যাকের জন্য অপেক্ষা করবে, না ঘুমিয়ে। আবার কখনো মনে হচ্ছে যদি সত্যি সত্যি লোকটা না আসে? হঠাৎ দেয়ালঘড়ির টুংটাং আওয়াজে ভাবনার সুতো ছিঁড়ল সাঁচির। রাত বারোটা বেজে গেছে! কিছু একটা হবে ভেবে হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। অদ্ভুতভাবে বসা মাত্র জানালা থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকারে কিছু একটা ঘরে প্রবেশ করেছে। কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে সাঁচির কক্ষে মোমবাতি জ্বলে উঠলো। সাথে কিছু ফুল ও সাঁচির প্রিয় খাবারগুলোও উপস্থিত হলো। ছোটো সাঁচি শুধু বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তবে তার অবচেতন মস্তিষ্ক ভালো করেই জানে এসব ম্যাকের কাজ।
" শুভ জন্মদতিথি আমার মনের রাণী! "
আচমকা সামনে ম্যাককে দেখে চমকে উঠে সাঁচি। ধড়ফড়িয়ে উঠে বুক, অস্থির হয়ে উঠে চিত্ত। সাঁচির অবস্থা দেখে মুচকি হাসলো ম্যাক। সাঁচি মন্ত্র মুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে সেই হাসির দিকে। এতো সুন্দর কীভাবে হয় কেউ!
" আপ আপনি!"
" হ্যাঁ আমিই। তুমি তো মনে মনে আমার জন্য অপেক্ষা করেই জেগেছিলে। "
" ইশ! মোটেও না। "
সাঁচি বিষয়টা লুকিয়ে যাওয়ার জন্য বললো। ম্যাক খেয়াল করছে আজকে আর সাঁচির মাঝে আগের মতো ভয়ডর নেই। ম্যাক সাঁচির কাঁধে থুতনি রেখে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কিছু বলছে। ম্যাকের উষ্ণ শ্বাস-প্রশ্বাসে শরীর ঝিমঝিম করতে শুরু করেছে মেয়েটির।
" তাহলে কেনো বারবার আমার নাম স্মরণ করেছিলে? তুমি যতবার আমার নাম স্মরণ করো ততবারই আমি টের পাই,বুঝলে? "
ম্যাকের কথায় দু-চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে সাঁচির। লোকটা কতো খারাপ! এতবার মনে করার পরেও তবে কেনো এতদিন সে আসেনি?
" তাহলে এতদিন আসেননি কেনো?"
" দূরত্বে ভালোবাসা বাড়ে, ভালোলাগা কমে। আমি দেখতে চেয়েছিলাম তোমার প্রতি আমার ভালোলাগা না-কি ভালোবাসা! "
" কী বুঝলেন? "
সাঁচি কণ্ঠ খাদে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো। ম্যাক আলতো করে কানের ছিদ্রে জিহ্বা ছুঁইয়ে দিয়ে আবারও ফিসফিস করে বললো,
" ভালোবাসি আমি এবং তুমিও ভালোবাসো আমাকে। "
ম্যাকের এমন আচরণে সমস্ত শরীরে তীব্র অনুভূতিরা লুটোপুটি খেতে শুরু করেছে সাঁচির। ভালোবাসি বলার সাথে এমন উষ্ণ স্পর্শ ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে ছোট্ট সাঁচিকে। সে ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে,
" ভালোবাসি কিনা জানি না কিন্তু কিছু তো আছে। "
" যা আছে তাতেই চলবে আমার সাঁচি। বাকিটা আমি আদায় করে নিতে জানি।"
চোখে চোখ রেখে বললো ম্যাক। ঠোঁটের কোণে তার দুষ্ট হাসি। সাঁচি লজ্জায় দৃষ্টি নত করলো। ম্যাক সাঁচিকে কোলে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে সামনের টেবিলের পাশে রাখা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
" এবার কিছু খেয়ে নাও। আমি তোমার জন্য রান্না করেছি এগুলো।"
ম্যাক অন্য চেয়ারে বসে ভাতের সাথে কবুতরের মাংসের ঝোল মাখছে। সাঁচি তো নিজের চোখ,কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই লোক ওকে খাইয়ে দিবে? এমনকি নিজের হাতে রান্না পর্যন্ত করে এনেছে? সাঁচি কিছু বলতেই পারলোনা। ম্যাক খাইয়ে দিতে লাগলো ওকে। লক্ষ্মী মেয়ের মতো সে-ও খেয়ে নিলো খাবার টুকু।
" আপনি খাবেন না?"
সাঁচি ওড়নায় মুখ মুছে শুধালো। ম্যাক একটু ঝুঁকে চোখ টিপ্পনী কেটে বললো,
" আমিও খাবো তবে তোমাকে। এখনও কি ভয় করবে?"
সাঁচির কেমন লাগামছাড়া লাগছে এসব কথা শুনে। কী বলবে? মনে মনে তো সেটাই চায় মেয়েটা। কিন্তু তবুও কিছু ভয় তো থাকেই। সাঁচি চুপ করে আছে। ম্যাক কালক্ষেপণ না করে আবারো কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো সাঁচিকে। নীরবতা যে সম্মতির লক্ষ্মণ সে নিয়ে ম্যাকের কোনো সন্দেহ নেই। আসন্ন মুহুর্তের কথা ভেবে সাঁচির দিশেহারা অবস্থা প্রায়। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে সে। ম্যাক সাঁচির গলায়, ঘাড়ে উষ্ণতা ছড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেছে। হাতের স্পর্শে আর ঠোঁটের ছোঁয়ায় সাঁচির মরে যাওয়ার মতো সুখ অনুভূত হচ্ছে এই মুহুর্তে। ম্যাকের উন্মত্ততা সাঁচিকে থেকে থেকে অস্থির করে তুলছে। অল্প কিছুক্ষণ সময়ের ব্যবধানে ম্যাক আস্তে আস্তে অনাবৃত করে ফেললো সাঁচিকে। সাঁচি লজ্জায় তাকাতে পর্যন্ত পারছেনা। ম্যাক হেসে হাতে তুড়ি মেরে মোমবাতি নিভিয়ে দিয়ে তমসায় প্রেয়সীকে নিজের করতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।
কক্ষের এক দিক থেকে অন্য দিকে পায়চারি করছে নিক। মন মানসিকতা খারাপ তার। জ্যোতিষীর হিসেবে তিন দিন আগেই ওয়ারউলফ সম্রাজ্ঞী তার পূর্ণ শক্তি ফিরে পেয়েছে। তবুও আলেক্সা এবং সেলিনা তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু কেনো? তার কি নিজের লক্ষ্যের কথা কিছু মনে নেই? কিন্তু শক্তি অর্জনের চল্লিশ প্রহরের মধ্যে সবকিছু মনে পড়ার কথা। যদিও চল্লিশ প্রহর হতে এখনো সময় বাকি আছে। আর কতকাল এই সিংহাসনের দায়িত্ব সামলাতে হবে সেই নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করলো নিক।
চলবে.........................