আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

আরোরা - পর্ব ১৯ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


#আরোরা (ফ্যান্টাসি, রোমান্টিক)
#পর্ব_১৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া



আরোরাকে নিজের বক্ষপিঞ্জরে আগলে নিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো এডওয়ার্ড। আরোরা সবটুকু ভালোলাগা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে। 
" আরোরা আমাকে ছেড়ে যাবেনা তো?"
" কোথায় যাবো তোমাকে রেখে? "
এডওয়ার্ড নিজের মনের ভয়ের কথা প্রকাশ করতে পারছেনা। আরোরা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে এডওয়ার্ডের গলা। 
" কিছু না। এসো।"
আরোরাকে ইশারায় লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে এডওয়ার্ড। দু'জন দু'জনার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। দু'টি প্রাণ ও দেহের মিলন ঘটছে আজ এই নিশিতে। 

ঝড় উঠেছে বাইরে। প্রকৃতি তার বিরূপতা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ভীষণ। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মেঘেরা ভয়ংকর গর্জন করছে। এনা রীতিমতো ভয়ে ভয়ে দরজা-জানালা আঁটকে দিয়ে বিছানায় বসে কাঁপছে। এমন প্রাকৃতিক দূর্যোগ আগে কখনো দেখেনি সে। একটু আগে পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো ছিলো কিন্তু আচমকা কী হলো?

বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন হেলগা। মনটা অস্থির লাগছে উনার। এডওয়ার্ডের জন্য চিন্তা হচ্ছে । হুটহাট কোথায় যায় ছেলেটা সেসব হেলগা না জানলেও এটুকু জানে তার ছেলের জীবনে কেউ এসেছে। এবং খুব সম্ভবত সে কোনো মানবী৷ হলিথান শহরে এর আগে কখনো এডওয়ার্ড এতো যাওয়া-আসা করেনি। কিন্তু গত কয়েকমাসে নজরকাঁড়ার মতোই যাওয়া-আসা করেছে সে। জোহানসনকে নিয়ে হেলগার চিন্তা হয়, পাশাপাশি প্রজাদের নিয়ে। একজন মানবীকে কীভাবে এতগুলো ভ্যাম্পায়ারের মধ্যে অক্ষত রাখবে ভবিষ্যতে! 
" রাজমাতার জয় হোক।"
আচমকা কিয়ামের গলা শুনে চমকাল হেলগা। কিন্তু সেটা কিয়ামকে বুঝতে না দিয়ে দৃঢ়তা বজায় রেখে পেছন ফিরে তাকালেন তিনি।
" সেনাপতি কিয়াম! আপনি এখন?"
" জি রাজ মাতা । মহারাজ সম্পর্কে কিছু বলার ছিলো। "
এডওয়ার্ডের বিষয়? হেলগা আগ্রহী হয়ে উঠলো এডওয়ার্ডের বিষয় বলবে বলে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলেন তিনি। কী হচ্ছে না হচ্ছে সেসবে যেনো উনার কোনো হেলদোল নেই এমন মনোভাব উপস্থাপন করার ন্যায় বললেন, 
" বলো।"
" মহারাজ শহরের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে। "
" ঠিক আছে। তুমি এখন যাও আর হ্যাঁ কথাটা এখুনি পাঁচ কান করার দরকার নেই। "
" ঠিক আছে। "
কিয়াম চলে যেতেই ফ্লোরে বসে পড়েছে হেলগা। একমাত্র পুত্র তাদের না জানিয়ে বিয়ে করেছে তা-ও একজন মানুষকে? ভীষণ খারাপ লাগছে হেলগার। 

নিশুতি রাত। বাইরের ঝড়ের সাথে কক্ষের ভেতরেও বয়ে গেছে ছোটখাটো একটা ঝড়। সেই ঝড়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে দু'টি প্রাণ। দুজন দুজনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। এডওয়ার্ড ঘুমিয়েছে। আচমকা আরোরার ঘুম ভেঙে গেছে। অন্ধকার কক্ষেও সবকিছু দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট আরোরার কাছে। চারদিকে নজর বুলাতে গিয়ে আচমকা ওর মনে হলো এডওয়ার্ডের হৃদপিণ্ড চলছে না। চমকে উঠলো আরোরা। দ্রুত এডওয়ার্ডকে ছেড়ে উঠে বসলো সে। এডওয়ার্ডের নাকের সামনে আঙুল ধরে পরীক্ষা করে দেখছে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কি-না। কিন্তু আরোরা অবাক হলো তখন যখন দেখল নিঃশ্বাস নেওয়া স্বত্বেও এডওয়ার্ডের হৃদপিণ্ড চলছে না। মনের ভেতর অজানা ভয় কাজ করছে ওর। নানান প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এডওয়ার্ডকে কি ডাকবে? নাহ! আরোরা কিছু একটা ভেবে কিছু মন্ত্র পাঠ করে এডওয়ার্ডের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই চমকে উঠে। বিশাল কালো রঙের ডানা আর সুচালো দাঁতে কী বিভৎস লাগছে লোকটাকে। আরোরা দ্রুত চোখ বন্ধ করে আবারও তাকায়। এবার সবকিছু ঠিক আছে। আসলে আরোরা মায়াবিদ্যা প্রয়োগ করে এডওয়ার্ডের প্রকৃত রূপ দেখে ফেলেছে। রাগে-দুঃখে সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে আরোরার। এতো বড়ো ধোঁকা? একজন ভ্যাম্পায়ারের সাথে মিলিত হয়েছে নেকড়ে কুইন ভাবতেই ঘৃণা লাগছে নিজেকে। বিছানা থেকে নেমে ফ্লোরে বসে চিৎকার করে উঠতেই ঘুম ভেঙে গেলো এডওয়ার্ডের। কাঁচা ঘুম ভেঙে এরকম স্ত্রী'র অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে সে। কী হচ্ছে বুঝতে চেষ্টা করলেও কিছু বুঝতে পারছে না এডওয়ার্ড। আরোরার পাশে গিয়ে বসতেই যাবে এমন সময় আরোরা রেগেমেগে বলে,
" খবরদার! কোনো রক্তচোষা পিশাচ আমার আশেপাশে আসবে না। তুমি আমাকে ঠকিয়ে আমাকে কলুষিত করেছো। একজন পিশাচের সাথে একজন নেকড়ের সঙ্গম প্রকৃতিও মেনে নেয়নি। কীভাবে করলে এডওয়ার্ড? কেনো! তোমরা আমার জাত শত্রু। তোমাদের ধ্বংস করাই আমার জীবনের লক্ষ্য। চলে যাও এখান থেকে। আর কখনো ফিরো না। আর তোমার রাজাকে বলে দিও আমি শীঘ্রই যাবো তার রাজ্যে মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে। "

এডওয়ার্ড থমকাল, চমকাল আরোরার কথায়। কীভাবে সবটা জানলো সে? আর না জানারও বা কী আছে? এখন সে শক্তিশালী নেকড়ে। ইচ্ছে করলে আগেই সব বুঝতো। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ বলে খেয়াল করেনি আগে। এডওয়ার্ড আরোরাকে মানাতে চাইলো।

" আরোরা আমি জানি না তোমার পরিবারের সাথে কী করেছিলো আমার পূর্ব পুরুষ। কিন্তু আমরা তো কিছু করিনি, আমি তো কিছু করিনি। তবে কেনো আমাকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করবে? প্রয়োজনে শাস্তি দাও তবুও বিচ্ছেদ যন্ত্রণা সইতে পারবোনা। "

" তাহলে মৃত্যু যন্ত্রণা সহ্য করার জন্য প্রস্তত হও ভ্যাম্পায়ার কিং এডওয়ার্ড! আমার তো তোমার সাজসজ্জা দেখেই বোঝা দরকার ছিল তুমিই কিং!"

আরোরা এডওয়ার্ডকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আক্রমণ করতে লাগলো। যদিও এডওয়ার্ড আঘাত করা না পর্যন্ত প্রাণে মারতে পারবে না আরোরা কিন্তু জাদুশক্তি ব্যবহার করে ঘায়েল করতে পারবে নিশ্চিত। আরোরা এডওয়ার্ডের কোনো কথা না শুনে বারকয়েক শক্তি প্রয়োগ করাতে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো এডওয়ার্ড। ফলশ্রুতিতে থেমে গেলো মেয়েটি। ভালোবাসা এবং ঘৃণা যখন একইসাথে হৃদয়ে অবস্থান করে তখন সেই হৃদয় ভয়ংকর হয়ে উঠে। আরোরারও তেমন হচ্ছে এখন৷ এডওয়ার্ডকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে খারাপ লাগছে ঠিক কিন্তু নিজের বাবামায়ের হাসিখুশি মুখখানা মনে করে নিজেকে শক্ত করে নিচ্ছে সে।
" আরোরা তোমার ইচ্ছে হলে আরো মারো কিন্তু আমাকে দূরে সরিয়ে দিও না। আমি কথা দিচ্ছি ভবিষ্যতে কখনো আমাদের দুই প্রজাতির মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে না। "
" এডওয়ার্ড আজকের পর থেকে আমাদের সম্পর্ক শুধু শত্রুতার। এসো তুমি এখন।"
এডওয়ার্ডকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে। নিজের রাজ্যের উপর কতবড় বিপদ আসতে চলেছে আঁচ করতে পারছে এডওয়ার্ড! 

" তারপর কী হলো ম্যাক? "
বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে জিজ্ঞেস করলো সাঁচি। সাদা রঙের গাউনে ঝলমল করছে সারা শরীর। লম্বা চুলগুলো ভীষণ সুন্দর লাগছে। গত কয়েকবছর আগে কীভাবে আরোরা ও এডওয়ার্ডের বিচ্ছেদ হয়েছিল সেইসব ম্যাকের কাজ থেকে শুনছিল সাঁচি নিজেই। সেই সাথে নিজেদের ভালোবাসার গল্পও বলেছে ম্যাক। সাঁচি একজন ভ্যাম্পায়ার ঠিক ম্যাকের মতোই। দুই বছর আগে সাঁচি ম্যাকের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে না পারায় অবশেষে সাঁচিও ভ্যাম্পায়ার হওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছিল। তারপর কিয়ামের বিরুদ্ধে গিয়ে সাঁচিকে বিয়ে করে ম্যাক। দু'জনে বেশ সুখেই সংসার করছে। কিন্তু আরোরা এবং এডওয়ার্ডের জীবনের টানাপোড়েন দেখে সাঁচি সবকিছু শুনতে চেয়েছিল ম্যাকের কাছে।
" তারপর এডওয়ার্ড কোনোরকমে প্রাসাদে ফিরে যায়। আরোরা ঠিক কয়েকদিন পরেই আক্রমণ করে বসে এই রাজ্যে। অগুনিত ভ্যাম্পায়ার খুন হয় নেকড়ের হাতে। এডওয়ার্ড সব সময় আরোরাকে বোঝানোর চেষ্টা করতো কিন্তু আরোরার মন ও মস্তিষ্কে আজ পর্যন্ত শুধু প্রতিশোধের অনল জ্বলছে। সমস্ত রাজ্যের পিশাচদের মারতে পারলেও এডওয়ার্ডকে মারা আরোরার পক্ষে সম্ভব না। কারণ এডওয়ার্ড আরোরাকে আঘাত না করলে সে এডওয়ার্ডকে কিছু করতে পারবে না। "
" এখন বুঝতে পেরেছি কেনো ওদের বিয়ে হলেও আলাদা থাকে। আচ্ছা ম্যাক কী হয়েছিল আরোরার পরিবারের সাথে। "

" সে অনেক লম্বা গল্প। সংক্ষিপ্ত আকারে বলছি, সে অনেক বছর আগের কথা। আমাদের দুই বংশের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো তখন। কিন্তু একদিন নেকড়েদের সপরিবারে আমাদের প্রাসাদে আমন্ত্রিত ছিলো। "



চলবে............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।