আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

নজর - পর্ব ০৪ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


জহিরুল ইসলাম বিছানায় শুয়ে আছেন। পাশে নিশিতা বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুমে আর-ও আত্মীয়স্বজনও আছেন। মাইসা ইসলাম রেগে নিশিতাকে অনেক কথা শুনিয়েছেন। কেনো এই বিয়েতে রাজি হয়েছিল সে? যেখানে আগেই জানে বিয়েতে বাঁধা সৃষ্টি হতে পারে! রাজি না হলে অন্তত তো সমাজে এরকম নাক কাটা যেতো না তার বাবার। এখন কীভাবে মুখ দেখাবে সোসাইটির কাছে? যা ছিল নিজেদের মধ্যে থাকতো। আর এখন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী সবাই জেনে গেছে মেয়ের সমস্যা আছে! আর কেউ কী কখনো বিয়ে করতে রাজি হবে এই মেয়েকে? আরও কত কথা! নিশিতা শুধু মুখ বুজে কেঁদে যাচ্ছে। ওর বাবা কথা বলতে পারছেন না। দেখে মনে হয় প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেছেন। একদিকে বাবার চিন্তা অন্য দিকে রনির জন্য মারাত্মক দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার। রনির খবর টুকু পর্যন্ত নিশিতা নিবে না। নিশিতা চায় না তার ছায়াও আর রনির উপর পড়ুক। কেননা নিশিতা ভালো করে বুঝতে পেরেছে সেই কালো অবয়বই রনির এই অবস্থার জন্য দায়ী। তাই নিশিতা শুধু মনে মনে রনির জন্য প্রার্থনা করতে থাকে। কিন্তু বাবার সম্মান রক্ষার্থে কী বা করণীয় এখন তার?
" এভাবে সঙ সেজে বসে না থেকে জামাকাপড় পাল্টে ফেল নিশিতা। লোকজন কেমন করে তাকিয়ে আছে। বিয়ের পোশাক পড়ে থেকে আর লাভ কী!"
নিশিতার মায়ের কথা শুনে রেহান বলে,
"যা হচ্ছে তাতে আপুর কী দোষ? তুমি কেন এরকম কথা বলছো?"
" আহ রেহান! চুপ কর তুই। "
নিশিতা রেহানকে চুপ করিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। দরজার কাছে আসতেই দেখে আহনাফ স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। নিশিতা উনাকে দেখে বেশ অপ্রস্তুত বোধ করে। তবুও মুখে এক চিলতে মেকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, 
"স্যার কিছু বলবেন? "
" তোমার আব্বুর সাথে একটু কথা বলা যাবে? মানে দেখা করবো আরকি!"
" হ্যাঁ। তবে উনি কথা বলতে হয়তো পারবেন না। তবুও চলুন।"
নিশিতা আহনাফ স্যারকে জহিরুল ইসলামের পাশে বসিয়ে নিজে জামাকাপড় পরিবর্তন করতে যায়। 

কিছু সময় পর,
" নিশিতা! এই নিশিতা বিয়ের পোশাক কী পাল্টে ফেলেছিস?"
আদ্রিতার ডাকে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেয় নিশিতা। পোশাক বদলেছে শুধু সাজগোছ এখনো তোলেনি। 
" হ্যাঁ। কী হয়েছে? বাবা! উনি ঠিক আছেন?"
" আরে হ্যাঁ। আঙ্কেল আগের চেয়ে সুস্থ হয়েছেন। তুই বরং বিয়ের পোশাক আবার পরে ফেল। আহনাফ স্যারের সাথে তোর বিয়ে। "
" আদ্রিতা! ফাজলামির একটা লিমিট থাকে। এই পরিস্থিতি কীভাবে এরকম মজা করিস তোরা!"
আদ্রিতা আর নিশিতার কথার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হোন নিশিতার বাবা। মাইশা ইসলামকে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। নিশিতা দ্রুত ওর বাবাকে নিজের রুমে ঢুকিয়ে বিছানায় বসতে বলে। 
" মা তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো দিবি?"
" বাবা! তুমি এত শরীর খারাপ নিয়ে কেন আসতে গেলে? আমাকে ডাকলেই চলে যেতাম। হ্যাঁ বলো।"
" আজ যদি তোর বিয়ে না হয় সমাজে আমার মানসম্মান থাকবে না। "
নিশিতা ঠিক কী বলবে বুঝতে পারছে না। এই মুহুর্তে কী বলা উচিত তার বাবাকে? নিশিতা চুপ করে ওর বাবার মুখের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। 
" আহনাফ চৌধুরী তোকে বিয়ে করতে চেয়েছেন।"
নিশিতার কাছে সবকিছু ঘোরের মতো লাগছে। ঠিক-বেঠিক কিছু বুঝতে পারছে না। শুধু বাবার কথায় মাথা নেড়ে সায় দেয় মেয়েটা। কিছু ভাবনার মতোও মস্তিষ্কের অবস্থা নেই এখন ওর। তবুও একটা ভাবনা মাথায় এসে পড়ে। যদি আহনাফ স্যারের অবস্থাও রনির মতো হয়? নাহ! সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিশিতা আহনাফকে কল করে। কিন্তু কয়েকবার রিং হওয়ার পরও সে কল রিসিভ করেননা। 

পরেরদিন সকালে,
আহনাফ চৌধুরীর সাথেই অবশেষে বিয়ে হয়ে গেছে নিশিতার। বিয়েতে বাতি অন কিংবা অফ হওয়া ছাড়া অন্য কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে নিশিতার সকল আত্মীয়রা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। আহনাফ ঠান্ডা মাথার ছেলে। এতকিছুর পরও নিশিতাকে টেনশন করতে বারণ করছে। বাবার বাড়ি ছেড়ে নিশিতা পা বাড়ালো নতুন এক গন্তব্যের দিকে। আহনাফ চৌধুরী সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না নিশিতা। কোথায় বাড়ি, কে কে আছে পরিবারে কিচ্ছু জানে না! ঠিক যেন অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে নিশিতা। সে এটাও জানে না আহনাফ চৌধুরী হঠাৎ কেন তাকে বিয়ে করতে রাজি হলো? 
নিশিতা গাড়িতে বসে আছে। আহনাফ পাশের সিটে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশিতার মন বড্ড ছটফট করছে। কিছুতেই রনির জন্য চিন্তা করা বন্ধ করতে পারছে না। একটু পর আহনাফ নিজের ফোন নিশিতার সামনে ধরে বলে,
" দেখো। রনি এখন আগের চেয়ে সুস্থ আছে। অযথা চিন্তা করতে হবে না। আমি সব খবর দিবো তোমাকে। আর আঙ্কেলও আগের চেয়ে ভালো আছেন। "
নিশিতা ঠিক কী বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। উনি কীভাবে বুঝলেন তার মন এজন্যই আনচান করছিল? অবশ্য এটা কমন সেন্স। একটু ভাবলেই হয়তো বোঝা যায়। তবে ক'য়জন সেটা ভাবে? নিশিতা আহনাফের কথার প্রতুত্তরে শুধু একটা কৃতজ্ঞতা মূলক হাসি দিলো। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একটু পরেই মাগরিবের আজান দিবে। নিশিতা গত কয়েকমাসে কখনো এই সময় বাড়ির বাইরে থাকেনি। আজ কী হবে ভেবেই নিশিতা ভয়ে শিউরে উঠেছে। অবয়বটা আহনাফ স্যারের কোন ক্ষতি করবে না তো? না-কি এই গাড়িটাকেও রনিদের গাড়ির মতো এক্সিডেন্ট করাবে? নিশিতা ভয়ে অস্থির হয়ে আছে। আহনাফ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সূর্যাস্ত দেখায় ব্যস্ত। ড্রাইভার আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছেন। 

একটা সাদা ধবধবে বিল্ডিংয়ের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করালো ড্রাইভার শামসুল আলম। এখনো আজান দেয়নি মাগরিবের। মনে মনে নিশিতা হাফ ছেড়ে বেঁচেছে।বাড়িটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সে। আহনাফের কথায় নিশিতার ঘোর লাগা মুহূর্তের সমাপ্তি ঘটে। নিশিতাকে গাড়ি থেকে নামতে বলে আহনাফ। নিশিতা একটু বিব্রতবোধ করে। অজানা অচেনা জায়গায়, অচেনা মানুষের সাথে মেশার অভিজ্ঞতা নেই নিশিতার। ছোট থেকেই বাসার বাইরে কখনো তেমন যাওয়া হয়ে উঠেনি মেয়েটির। 
আহনাফ প্রথমে গাড়ি থেকে নেমেছে তারপর নিশিতাকে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামতে বলে। নিশিতা ঠিক বুঝতে পারছে না হাত ধরবে না এটা কি করে বলবে? আসলে কি সেটা ভদ্রতা হবে? নাহ অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোকটার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামতে হলো নিশিতাকে। সদর দরজা পেরিয়েও কোন মানুষের উপস্থিতি অনুভব করলো না নিশিতা। এত বড় বাড়িতে কী তাহলে সে একাই থাকে? 
" আমি এই বাড়িতে একাই থাকি। মানুষ বলতে আমি আর শামসুল আলম চাচা। "
নিশিতা আহনাফের কথায় আশ্চর্য হয়ে গেছে। সে কীভাবে তার মনের কথা জানলেন? আসলে ওর এদিকে ওদিকে তাকানো দেখেই যে কেউ বুঝতে পারবে সে মানুষজন খুঁজছে। তাই হয়তো আহনাফ নিজেই বললো কথাটা। 
" ওহ আচ্ছা। "
আহনাফ নিশিতাকে একটা রুম দেখিয়ে বলে এটা তার রুম। সে একাই থাকবে। কেউ তাকে বিরক্ত করবে না। নিজের বাড়ি মনে করে থাকতে পারে। এই কথা বলে আহনাফ রুম থেকে বের হতেই যাবে তখন নিশিতা পেছন থেকে বললো,
"একটা প্রশ্ন করবো স্যার? "
" হুম বলো।"
"কেন করলেন বিয়েটা? "
" ভালোবাসি তাই। এর বেশি কোন কারণ জানতে হবে না এখন তোমাকে। বিশ্রাম করো। এলাম।"

আহনাফের উত্তরে অবাক হয়ে গেছে নিশিতা। ভালোবাসা! কথাটা আওড়াতে আওড়াতে বাইরের দিকে তাকালো নিশিতা। আজান দিচ্ছে। তবে সব জানালা বন্ধ করাই আছে। 

আইসিইউ থেকে নরমাল কেবিনে নিয়ে আসা হয়েছে রনিকে। আগের চেয়ে অবস্থা মোটামুটি ভালো ছেলেটার। তবে জ্ঞান ফিরতেই বাঁধে অন্য বিপত্তি! নিশিতা? নিশিতা কোথায়? এই এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে সে। ডক্টর এই মুহূর্তে রনিকে উত্তেজিত করতে বারণ করেছে বলে তার বাড়ির লোক কিছু বলেনি এখনো। অগত্যা ডক্টর ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে বিশ্রামে রেখেছে রনিকে। এদিকে সবার দৃষ্টির অন্তরালে রনির বেডের পাশেই বসে আছে কালো অবয়বটা অর্থাৎ হুজায়ফা। মুখে তার শয়তানি হাসি। তবে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেনি সে। মেহেরাব এসে এক প্রকার ধরে বেঁধে তাকে বাইরে নেই এসেছে। 

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে মেহেরাব ও হুজায়ফা। হুজায়ফার চোখে মুখে আগুন জ্বলছে। জ্বীনরা তো আগুনের তৈরি সেটাই হয়তো প্রকাশ করছে তার এই শয়তানি রূপ। অন্য দিকে মেহেরাব চুপচাপ হুজায়ফাকে আরও একবার বলে তাদেরকে উত্যক্ত করা বন্ধ করতে। নিশিতাকে যেন ভালো করে সংসার করতে দেয়। আর রনির সাথে তো এখন আর নিশিতার কোন কানেকশন নেই! তাহলে তার কাছে কেন গিয়েছিল সে? হুজায়ফা মেহেরাবের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না বলে। মেহেরাব মুহূর্তেই অগ্নিশর্মা রূপ ধারণ করে। 



চলবে.............................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।