#আরোরা (সিজন ২)
#পর্ব_৪
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
অনেক দিন পর আজ আরোরা নেকড়ে রাজ্যে এসেছে। রাজসভায় রাণীর আসনে বসে আছে সে। প্রজারা এসেছে রাণীর সাথে দেখা করতে। তবে মোট প্রজাদের তৃতীয়াংশ নেই এখানে। অধিকাংশ প্রজারাই আরোরার বিপক্ষে চলে গেছে। সেটা ভালো করে বুঝতে পারছে আরোরা। কিন্তু কিছু বলছে না। কারণ এডওয়ার্ড ওর স্বামী কিন্তু এদের কাছে তো শত্রুপক্ষ ছাড়া আরকিছুই না। তাই যার যার জায়গায় সে সঠিক মনে করে নীরবতা পালন করছে আরোরা। সেলিন আরোরার ডানপাশে দাঁড়িয়ে আছে আর মাঝবয়েসী নিক বামপাশের চেয়ারে বসে আছেন। প্রজাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নিজ কক্ষে চলে যায় নিক।
" মহারাণী আপনাকে কিছু কথা বলার আছে। "
আরোরার দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে সেলিন।
" হ্যাঁ বলো।"
" এখানে নয়,আপনার আপত্তি না থাকলে আপনার কক্ষে চলুন।"
আরোরা জবাবে কিছু বলার আগেই আলেক্সার সাথে নিক এলো সভায়। নিককে পাশে পেয়েই আরোরা সঞ্জীবনীর বিষয়টা তুললো।
" আমাকে একটা তথ্য দিতে পারবেন?"
নিক বলে,
" কী বিষয় কুইন?"
" সঞ্জীবনী বলতে কোনো জিনিস আছে আমাদের রাজ্যে?"
নিক চমকাল না। স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বললো,
" হ্যাঁ। তবে আমাদের রাজ্যে নয় সেটা। পাতালপুরীতে আছে সেই অমৃত তরল। জায়গাটা না আমাদের আর না তো ভ্যাম্পায়ারদের। তবে সেই পাতালপুরীতে গিয়ে সেই সঞ্জীবনী রাখার জায়গার দুয়ার সেই খুলতে পারবে যার মন স্বচ্ছ, পবিত্র এবং ভবিষ্যতের রাজা/ রাণী। "
" কিন্তু অমরত্ব লাভ করা ছাড়া সঞ্জীবনী অন্য কোনো প্রয়োজনে কি আসবে? "
" না। তুমি চাইলে গিয়ে আনতে পারো। প্রজাদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিলে কিছুটা। কারণ ওই তরল এক ফোঁটাই সমস্ত জলকে অমৃতে পরিণত করতে সক্ষম। "
আরোরা চুপ করে রইলো। কেমন জানি ঘাপলা মনে হচ্ছে। পাগলটার কথা তো একেবারে ভুল ছিল না তাহলে। এতটুকু যখন সত্যি হয়েছে বাকিটুকুও কি কোনোভাবে সত্যি হতে পারে? এর উত্তর কোথায় পাওয়া যাবে!
" কুইন আরোরা আপনি কি যাবেন পাতালে?"
নিক শুধালো। আরোরা মৃদু হেসে বললো,
" আপনি চাইলে যাবো না হয়।"
" বেশ।"
নিক চলে যেতেই আরোরা নিজেও সভা ভেঙে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরের দিকে এগোলো। সেলিন তার কথা শেষ করতেও পারলোনা। তাই যাবতীয় কাজকর্ম শেষ করে সাবেক রাজা নিকের কাছে যাবে বলে ঠিক করেছে সেলিন। ঘরের বাইরে যেতেই আলেক্সার জুতা দরজার বাইরে দেখে থেমে গেলো। কিছু একটা ভেবে বন্ধ দরজায় কড়া না নেড়ে অন্যপাশের জানালা দিয়ে আড়ি পাতল।
" ও আলেক্সা! তুমি কেনো বুঝতে পারছ না? আমি চাইছি সবাই বুঝুক সবকিছুর জন্য তুমি দায়ী। প্রজাদের বিপক্ষে নিয়ে এই ষড়যন্ত্র তুমি করছ। আমি এখনই প্রকাশ্যে আসবো না। আগে সঞ্জীবনী পেয়ে নেই তারপর.... "
নিক কথাটা বলে মুচকি হাসলো। চমকাল সেলিন। শেষমেশ নিক এইসব ষড়যন্ত্রের মাথা হিসেবে বেরোলো? সেলিন নিজের কানকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না।
" ঠিক আছে আপনার আদেশ শিরোধার্য। তবে সেলিন বেশ বাড়াবাড়ি করছে। "
" বাদ দাও। ও কিছু করতে পারবেনা। "
সেলিন সবকিছু নিশ্চিত হতে ধীরে ধীরে কক্ষের জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার স্বচক্ষে দেখলো দুই শত্রুকে। হ্যাঁ নিক আর আলেক্সা ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। সেলিনের হৃৎস্পন্দনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর কালক্ষেপণ না করে খুব সাবধানে আরোরার কাছে ছুটে গেলো সেলিন।
" অদ্ভুত কথা বলছো এডওয়ার্ড। তোমার স্ত্রী কোথায় গেছে সেটা প্রহরীরা কীভাবে জানবে? তোমাকে বলে যাওয়া কি তার উচিত ছিলো না? "
হেলগার কথায় মনঃক্ষুণ্ন হলেও চেহারায় স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বললো এডওয়ার্ড,
" হয়তো সময় পায়নি বলার। প্রহরীদের জিজ্ঞেস করার কারণ ওরা দেখেছে বেরিয়েছে কখন। "
হেলগা কিছু বলে না। সবকিছু খুব বিরক্ত লাগে উনার। সব মা চান তার ছেলের একটা স্বাভাবিক জীবন হোক। নাতীনাতকুর নিয়ে আনন্দ করতে চান হেলগা। কিন্তু সেসব তো কস্মিনকালেও সম্ভব না। না তার ছেলে কুইন আরোরাকে ত্যাগ করবে আর না আরোরা এডওয়ার্ডের সাথে সুখে সংসার করবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলেন রাজ মাতা। এডওয়ার্ড এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সকাল থেকে প্রাসাদে নেই মেয়েটা এখন রাত হয়ে গেছে তবুও ফিরলো না! এডওয়ার্ড বাইরে বেরোনোর সিন্ধান্ত নিলো। প্রয়োজনে নেকড়ে রাজ্যের বাইরে অপেক্ষা করবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। এডওয়ার্ড মানব রূপেই পাখা ঝাপটিয়ে আকাশে উড়তে লাগলো। কিছুদূর এগোতেই আরোরাকে দেখতে পেলো এডওয়ার্ড। ধূলো উড়িয়ে দ্রুতবেগে ছুটে আসছে শুভ্র রঙের নেকড়ে। এডওয়ার্ড সময় নষ্ট করলোনা। মাটিতে নামলো ঠিক আরোরার সামনে। হঠাৎ এখানে এডওয়ার্ডকে আশা করেনি আরোরা। তাই স্বাভাবিকভাবেই একটু অবাক হয়।
" তুমি এখানে! "
মানবী রূপ ধারণ করেছে আরোরা। এডওয়ার্ড মুচকি হেসে আরোরাকে কোলে তুলে নিলো। থমকাল সে।
" এই কোলে নিলে কেনো? তোমার এই যখন-তখন কোলে তুলে নেওয়া ভালোলাগে না আমার। "
" সবকিছু ভালো লাগবে এমন তো কথা নেই। মাঝে মধ্যে ভালো না লাগলেও আমাদের অনেককিছুই করতে হয়। "
এডওয়ার্ড আকাশে উড়াল দিয়ে বললো। আরোরা কিছু বললো না আর। সেলিন কিছু একটা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা না শুনেই চলে আসায় মনটা এখন খচখচ করছে। কাল আবারো আসবে একবার উলফ প্রাসাদে। আরোরার নীরবতায় এডওয়ার্ড ফের বলে,
" রাগ করলে?"
" উঁহু। "
" তবে? "
" ভাবছি।"
" কী?"
" পরে বলবো। "
" কখন?"
" প্রশ্ন কম করো। প্রাসাদে চলো আগে।"
" ঘরে ফেরার খুব তাড়া! সেদিনের আদর মনে ধরেছে না-কি? আরেক....."
" চুপ করো।"
আরোরা এডওয়ার্ডের ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরেছে। এডওয়ার্ড হেসে দ্রুত উড়তে লাগলো। সম্পর্কটা এবার মনে হচ্ছে সত্যি নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে তবে।
অনেকদিন পর মেয়ে, জামাইকে কাছে পেয়ে সাঁচির মা মেরিনা ভীষণ খুশি আজ। গতকাল সন্ধ্যায় এসেছে সাঁচি ও ম্যাক। হঠাৎ আসায় চমকেছিলেন মেরিনা। তবুও বাসায় থাকা খাবারদাবার দিয়ে যথাসম্ভব আপ্যায়ন করেছেন। ম্যাক বলতে গেলে পুরো এক সপ্তাহের বাজার নিয়ে এসেছে শ্বাশুড়ির জন্য। সেখানে তার জন্য মনমতো অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করতে পারছেন না বলে খারাপই লাগছে মেরিনার। ঘড়িতে সময় রাত ন'টা। খাবার টেবিলে বসে আছে সাঁচি, ম্যাক। মেরিনা খাবার পরিবেশন করছেন। ম্যাকের আনা বাজার দিয়েই কাজ চালাচ্ছেন। ম্যাক মেরিনাকে ভীষণ আন্তরিকতার সাথে বুঝিয়েছে, ছেলেকে আপ্যায়নের দরকার নেই। মা যা তৈরি করে দিবেন সেটাই ছেলের কাছে সেরা। মেরিনার দু-চোখ ছলছল করছিল এসব শুনে। মেয়েটা কপাল করে পৃথিবীতে এসেছিল। নইলে এমন বর ক'জন পায়? মায়ের মন এসব বলে। ভেড়ার মাংসের সাথে গমের রুটি তৈরি করেছেন মেরিনা। সাথে শাকসবজি দিয়ে স্যুপ। মাংস পছন্দ করেন না মেরিনা। তাছাড়াও মিষ্টি আছে শেষ পাতে খাওয়ার জন্য। মেয়ে, জামাইকে খাবার দিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন মেরিনা। লম্বা, ধবধবে ফর্সা মেরিনা। এই বয়সে এসেও চুলগুলো কোমর ছাপিয়ে আছে। ম্যাকের কোনো সন্দেহ নেই যে মেয়ে তার মায়ের থেকেই সৌন্দর্যের ধারা পেয়েছে।
" মা আপনিও খেতে বসুন। "
ম্যাক মেরিনার বললো। সাথে সাঁচিও,
" হ্যাঁ মা।"
" তোমরা খাও। আমি পরে খাবো। তোমাদের কিছু লাগলে দিবো। "
" সেটা আমরা নিজেরাও করতে পারবো মা। আপনি বসুন মা।"
" আচ্ছা বাবা বসছি। তোমরা খাওয়া শুরু করো।"
মেরিনাও খেতে বসেছেন। প্রথম প্রথম ম্যাকের আসল পরিচয়ে ভয়ে আঁতকে থাকতেন মেরিনা। যদিও বিয়ের সময় উনি সত্যিটা জানতেন না তবে পরে সবকিছুই খুলে বলে সাঁচি। যেহেতু এখন মেয়েও ভ্যাম্পায়ার তাই সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন মেরিনা।
চলবে.........................