আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনুগ্রহ করে গল্প সম্বন্ধে আপনার মতামত অবশ্যই প্রকাশ করবেন। আপনাদের মতামত আমাদের এই ছোট প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায়। শীঘ্রই আরও নিত্য নতুন গল্প আপডেট আসছে, সঙ্গে থাকুন। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখক/লেখিকা'র নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত গল্পের ডায়েরি’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখক/লেখিকা'র কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় গল্পের ডায়েরি কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। গল্পের ডায়েরি'তে প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে তা কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

নজর - পর্ব ০৫ - তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া - ধারাবাহিক গল্প


মেহেরাব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সহসাই হুজায়ফার গলা চেপে ধরে। হুজায়ফাও মেহেরাবের গলা চেপে ধরতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করেনি। সহসাই দুইটি স্বত্বার ভিতর দক্ষযজ্ঞ বেঁধে গেল। কেউ কারো থেকে যেন কম নয়। তবে তাদের লড়াইয়ে শুধু দুটি আলোর বিচ্ছুরণ দেখা যাচ্ছে। একটি সাদা অপরটি কালো। মনে হচ্ছে একটি আলো অপর আলোক রশ্মিকে ঢেকে দিতে চাইছে। 
" হুজায়ফা আপনি জানেন আমি চাইলে এক্ষুনি আপনার প্রাণনাশ করতে পারি!"
" হ্যাঁ জানি। তবে এটাও জানি সেটা এখন আপনি কিছুতেই করবেন না। কারণ তাহলে আপনার নীতি ভঙ্গ হবে এবং জ্বীনরাজ্যে একক অধিপত্যে বিস্তার করতে পারবেন না। মানুষের জন্য কোন স্বজাতিকে হত্যা করার মতো নীতিমালা আমাদের বংশে নেই। "
" হুজায়ফা!"
" হা হা হা। আজ আসি,অযথা যুদ্ধ করে লাভ নেই। আর হ্যাঁ রনিকে নিয়ে আমার অন্য ধরনের প্ল্যান আছে। "

হুজায়ফা আর কিছু না বলে বাতাসের সাথে মিলিয়ে যায়। আর মেহেরাব আগুন চোখে তাকিয়ে আছে ওর যাওয়ার পথের দিকে। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ওর ধর থেকে মাথা আলাদা করে দিতে। কিন্তু মেহেরাবের হাত-পা বেঁধে রেখেছে যে তার বাবার তৈরি করা কিছু নিয়ম! 

নিশিতা ফ্রেশ হয়ে এসে একা একা রুমে বসে আছে। বাইরে ঝড় শুরু হয়েছে। প্রকৃতির বিরূপতা বড়ই নিষ্ঠুর লাগছে। একদিকে বৃষ্টি সাথে প্রবল বেগে বাতাস বইছে। তার সাথে বিদ্যুৎ চমকানি ও বজ্রপাত তো আছেই। এরমধ্যে বিদ্যুৎ নেই। মোমবাতির আলোতে সারা ঘরে কেমন একটা আধ্যাত্মিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে নিশিতার কাছে। নিশিতা এক পা এক পা করে জানালার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাইরের আবহাওয়া দেখতে একেবারে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে মেয়েটা। জানালা খুলে বাইরে উঁকি দিতেই দমকা বাতাসে নিভে গেছে মোমবাতি। মুহূর্তেই ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল নিশিতার মেরুদণ্ড বরাবর। মেয়েটা দ্রুত জানালা বন্ধ করে ড্রাইভার শামসুল আলমকে ডাক দেয়। কিন্তু অন্ধকারে কারোই কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন সময় নিশিতা তার কাঁধে কারো শীতল স্পর্শ অনুভব করে। নিশিতা চিৎকার করে উঠার আগেই সেই শীতল হাত ডার মুখ চেপে ধরে। তক্ষুণি রুমে আলো জ্বলে উঠে। নিশিতা চেয়ে দেখে আহনাফ তার মুখ চেপে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। আর শামসুল হক দরজার কাছে। নিশিতা চোখ বড় করে তাকাতেই আহনাফ হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,

" আসলে বিদ্যুৎ নেই। তাই আমি আর শামসুল চাচা জেনারেটর চালু করতে বাইরের ঘরে গিয়েছিলাম। আর সেখানেই ভিজে গেছি। তাই এমন ঠান্ডা হয়ে গেছে শরীর! "
শামসুল আলমও নিশিতার মুখের দিকে তাকিয়ে একমত হওয়ার মতো ইশারা করে। নিশিতা যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। অন্ধকারে ওরকম শীতল হাতের স্পর্শে দম আটকে যাবার যোগাড় হয়েছিল মেয়েটির। 
" আচ্ছা ঠিক আছে। আপনারা কী চা কিংবা কফি খেতে চান? আমি তৈরি করে দিচ্ছি। রান্নাঘর কোন দিকে? "
" আরে না! তোমাকে এসব করতে হবে না। তুমি বরং খেতে চলো। "
আহনাফ ইশারায় শামসুল চাচাকে খাবার পরিবেশন করতে বলে। উনিও সোজা গিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে ওভেনে খাবার গরম করে পরিবেশন করতে লাগলেন। এদিকে আহনাফ নিশিতাকে বললো এমনিতেই ঠান্ডা আবহাওয়া তার মধ্যে জানালা খুলে বাইরে উঁকি দেওয়ার কী দরকার ছিল? নিশিতা একটু ভয় পেয়েই যায়। এমনিতেই কলেজ থেকে আহনাফ তার সাথে কেমন একটা রেগে রেগে ব্যবহার করতো। তার উপর এখন তার বাড়িতে আছে। 
" না মানে। বাইরের কী অবস্থা দেখতে আরকি!"
" হুম বুঝলাম। চলো এবার। শামসুল চাচার খাবার রেডি। "
" উনি তো ডাক দেননি। তাহলে?"
" আমি জানি উনার কোন কাজ করতে কতক্ষণ সময় লাগে হা হা।"
নিশিতা চুপচাপ আহনাফের হাসি দেখছে। কারো হাসি এত নির্মল হতে পারে? এত সুন্দর হাসি মনে হয় জীবনে আর দেখেনি নিশিতা। কই আগে তো সে খেয়াল করেনি! অবশ্য তখন তো কখনো সেরকম ভাবে তাকিয়ে দেখেনি। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ রনির মুখটা নিশিতার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। নিশিতা চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আহনাফের সাথে খেতে চলে যায়। 

দুইদিন পর, 
রনি এখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছে।মাথার আঘাতটা তেমন গুরুতর নয়। তবে ডক্টর বলেছেন হাত ভাঙা সাড়তে বেশ সময় লাগবে । রনির বাবা-মা'য়ের মুখে একটু হলেও স্বস্তির ভাব এসেছে। তবে বিপত্তি বেঁধেছে অন্য জায়গায়। সুস্থ হওয়ার পর থেকেই রনি নিশিতার কথা জিজ্ঞেস করতে করতে প্রায় পাগল করে ফেলেছে ওর বাবা-মাকে। শেষে তারা এক প্রকার বাধ্য হয়ে সবকিছু বলে দিয়েছেন। কিন্তু রনি কোন কিছু বিশ্বাস করতে পারছে না। নিশিতা বিয়ে করে নিয়েছে? তা-ও আবার তার ক্লাস টিচারকে! না! রনি কিছুতেই এইসব কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। রনি তৎক্ষনাৎ তার বাবার কাছে নিজের ফোন চেয়ে নিশিতার কাছে কল করে। কিন্তু নিশিতা কল রিসিভ করেনা। একবার, দুইবার, তিনবার, অনেক বার চেষ্টা করার পরও নিশিতার সাথে কোন যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি রনি। এতকিছুর পর রনির সত্যি এবার মনে হচ্ছে নিশিতা তাকে ঠকিয়েছে। মনে মনে রনি খুব কষ্ট পেলেও তার বাবা-মা'য়ের সামনে তা প্রকাশ করে না। 

মাইশা ইসলাম বসার বসে আছেন এক মনে। পাশেই জহিরুল ইসলাম ও রেহান বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে নিশিতার বিয়েতে তিনি তেমন খুশি হননি। অথচ উনি সব সময় চাইতেন নিশিতার ভালো ঘরে বিয়ে হোক। এই কথা গুলো জহিরুল ইসলাম তার স্ত্রী মাইশাকে বলতেই তিনি রাগে কটমট করতে করতে রান্না ঘরে চলে গেলেন । রেহান চুপচাপ তার বাবা-মায়ের কথোপকথন শুনছিল। ছেলেটা না চাইতেও কেন জানি তার ভেতর থেকেই একটা দীর্ঘশ্বাস চলে আসে। হয়তো তাদের মা বেঁচে থাকলে সবকিছু অন্য রকম হতো! জহিরুল ইসলাম ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েই দীর্ঘশ্বাসের কারণ বুঝতে পেরেছেন। তিনি শুধু রেহানের মাথায় আলতো ছুঁয়ে বাইরে বেরিয়ে যান।

আহনাফের বাড়িতে এসে ভালো কাটছে নিশিতার সময়। এই কয়েকদিন যাবত কালো অবয়বটাকে আর দেখেনি নিশিতা। আর দুর্গন্ধও পায়নি তেমন। তবে তার বদলে সুঘ্রাণটা প্রবল ভাবে পাচ্ছে। তবে এটা আহনাফের বডি স্প্রে'র সুভাসটাও প্রায় সেইম লাগে মেয়েটার কাছে। নিশিতা তো কালকে জিজ্ঞেস করেই ফেলেছিল আহনাফকে যে কী পারফিউম ব্যবহার করেন উনি? প্রত্যুত্তরে আহনাফ বলে সে কোন পারফিউম ব্যবহার করে না। সম্ভবত শামসুল চাচার পারফিউমের সুভাস ওটা! নিশিতা বেশ অপ্রস্তুত বোধ করে তখন। না জিজ্ঞেস করলেও মনে হয় পারতো সে। রনির ভাবনা বারবার মস্তিষ্কে আসলেই শত চেষ্টা করে তা দমিয়ে রাখছে মেয়েটা। আহনাফ গত কয়েকদিনের সমস্ত ইনফরমেশনই দিয়েছে তাকে। তাই নিশিতা শুধু চায় রনি বেঁচে থাকুক। তাছাড়া বিয়েটা যেভাবেই হোকনা কেন এখন সে অন্য কারো বিবাহিতা স্ত্রী! তাই রনির কথা চিন্তা-ভাবনাও করাও এখন অনুচিত। 

শামসুল চাচা বাগান পরিষ্কার করছেন। নিশিতা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। আসলে এ বাড়িতে আসার পর নিশিতার সময় যেন কাটতেই চায় না। একা একা লাগে। আহনাফ তো সারাক্ষণ বাড়ির বাইরে থাকে। অবশ্য সে থাকলেও বা কি? নিশিতা শুধু পড়াশোনা নিয়ে কথা বলে তার সাথে। কিন্তু আহনাফ চেষ্টা করে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার।
" ম্যাডাম ওভাবে কী দেখছেন? "
" না মানে চাচা, আপনি খুব যত্নসহকারে গাছের পরিচর্যা করছেন সেটাই। "
শামসুল আলম একগাল হেঁসে বললেন, 
" এদের সাথে একেবারে মিশে গেছি ম্যাডাম। "
" সেটা তো বুঝতেই পারছি। আচ্ছা আপনার স্যারের মেইন বাড়ি কোথায়? মানে পৈতৃক ভিটা? "
নিশিতার প্রশ্নে একেবারে থতমত খেয়ে গেছে শামসুল। মেয়েটা যে হুটহাট এরকম প্রশ্ন করবে বুঝতে পারেনি বেচারা। নিশিতা শামসুলকে চুপ করে থাকতে দেখে আবারও সেইম প্রশ্ন করলো। কিন্তু এবারও তিনি মুখটা হাঁড়ির মতো করে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু ভেবে বললেন, 
" আজ যখন স্যার আসবেন তখন উনাকে জিজ্ঞেস করে নিবেন। এ বিষয় সঠিক আমিও জানি না। "
শামসুল আলমের শেষের কথাটা নিশিতার ঠিক বিশ্বাস হলোনা। উনি না-কি অনেক আগে থেকেই আহনাফ স্যারের সাথে থাকেন! তাহলে সামান্য পৈতৃক বাড়ি কোথায় সেটা জানেন না? আসলেই আশ্চর্যজনক ব্যাপার।



চলবে...........................
Author, Publisher & Developer

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উফ!
মনে হচ্ছে আপনার ইন্টারনেট সংযোগে কিছু সমস্যা আছে। অনুগ্রহ করে আগে আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ ঠিক করুন এবং তারপর আবার ব্রাউজিং শুরু করুন৷
AdBlock সনাক্ত করা হয়েছে!
আমরা শনাক্ত করেছি যে আপনি আপনার ব্রাউজারে অ্যাডব্লকিং প্লাগইন ব্যবহার করছেন৷ আমরা আপনাকে আপনার অ্যাডব্লকিং প্লাগইন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছি, কারন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা যে রাজস্ব আয় করি তা এই ওয়েবসাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়।